#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৩৭.
বেশ কিছুদিন পরের কথা,
সবেমাত্রই বিকালের টিউশনটা সেরে বাসার উদ্দেশ্যে ধীরগতিতে পা চালাচ্ছে চাঁদ।আপনমনে আশপাশের পরিবেশ দেখতে দেখতে হাটছে সে।ঢাকা ভার্সিটির রাস্তাগুলো তার খুব পছন্দের।বিশেষ করে যানযটহীন রাস্তার একটু পর পরই কৃষ্ণচূড়ার ছায়াতল বেশ প্রশান্তি অনুভব করায় তাকে।চোখ তার জুড়িয়ে যায় প্রকৃতির এই শান্ত রূপে।রাস্তাগুলো গাছপালার ছড়াছড়ির দরুনই এতোটা শান্ত এতোটা নির্মল অনুভূত হয়।রোদের প্রকোপও কম থাকে এখানটায়।বেশ কিছুক্ষণ ধরেই অন্যসব দিনের থেকে কিছুটা অন্যরকম লাগছিলো চাঁদের।তবে বেশি একটা তোয়াক্কা না করে সে তার মতো করে হেটে যাচ্ছিলো।কিন্তু নিজের পাশে আকস্মিক কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিকে ভুত দেখার মতো চমকে তাকাতেই শুনতে পায় এক পুরুষালি চমৎকার কন্ঠস্বর,
“হেই নীলাম্বরী!”
কপাল কুচকে বুকের মাঝ বরাবর বাম হাত রেখে নাকমুখ ফুলিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে চাঁদ বলে,
“আপনি!”
মুচকি হেসে ছেলেটা বলে,
“যাক চিনেছো তাহলে”
“আপনি আমায় ফলো করছিলেন এতক্ষণ যাবৎ?”
“ফলো কোথায় করলাম নীলাম্বরী?আমিতো জাস্ট পর্যবেক্ষণ করছিলাম তুমি মেধাবীর পাশাপাশি কতটা পরিশ্রমীও”
“পর্যবেক্ষণ করা শেষ?এবার আসতে পারেন”
বলেই পা বাড়াতে নিলে চাঁদের সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে ছেলেটা বলে,
“এই এই নীলাম্বরী?কোথায় যাচ্ছো?নিশ্চয়ই বাসায়?চলো পৌঁছে দেই”
থমথমে কন্ঠে চাঁদ জবাব দেয়,
“কোনো প্রয়োজন নেই।আর না আমি আপনার থেকে কোনোপ্রকার হেল্প চেয়েছি।দেখি সরুন”
বলেই পাশ কেটে যেতে নিলে আবার ঐ পাশ আটকে দাড়াতেই চাঁদ বিরক্ত হয়ে বলে,
“দেখুন মি.!”
ঠোট প্রসারিত করে ছেলেটা মুচকি হেসে বলে,
“আহিন।আহিন মোহাম্মদ শেখ”
বিরক্তিকর ভাবভঙ্গি নিয়েই চাঁদ বলে,
“যাই হোক!আপনি রীতিমতো আমাকে ডিস্টার্ব করছেন।কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?”
“না ম্যা’ম,একদমই না!আমিতো শুধু আপনাকে বিরক্ত করছি।ই!ভটি!জিং তো আর করছিনা তাইনা?যে আপনি গিয়ে আমার নামে কে!স করে দেবেন আর পুলিশ এসে আমাকে তুলে নিয়ে যাবে।তাছাড়া নিলেও দু’মিনিটের মাঝেই আবার বেরিয়ে আসবো।অথবা বলতে পারো পুলিশ তোমার কে!সটাই নেবে না”
বলেই একদফা হাসে আহিন।আহিনের কথায় চরম বিরক্ত হয়ে চাঁদ বলে,
“হতেই পারে আপনার বাবা ঢাকাশহরের মেয়র।তার মানে এই নয় আপনি যারতার সাথে মিসবিহেভ করে বেড়াবেন।আমি কিন্তু যেই সেই মেয়ে নই মি.আহিন।তাই আমার সাথে ভুল করেও উল্টাপাল্টা কিছুর চিন্তাও করবেন না”
বুকের বা পাশে হাত রেখে আহিন বলে,
“হায়!তোমার এই ঝাঁসিকিরানি রূপেইতো ম!রে যাই নীলাম্বরী!আর তোমার মুখে আহিন শুনে কি যে ভালো লাগছে,উফ!কী আর বলবো”
ভ্রু কুচকে চশমা চোখে ভালো করে এঁটে নিয়ে চাঁদ বলে,
“আপনিতো যথেষ্ট অভদ্র!”
নিজের ভাবভঙ্গি ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খানিকটা গাম্ভীর্যপূর্ণ কথাই আহিন বলে,
“আমি একজন পলিটিশিয়ানের ছেলে নীলাম্বরী।সেইসাথে নিজেও একজন পলিটিশিয়ানই।আর একজন পলিটিশিয়ান বড়জোর ইগোয়েস্টিক হতে পারে অভদ্র নয়”
অতঃপর চাঁদের দিকে খানিকটা হেলে আবারও বলে,
“তবে তোমার জন্য একটু নাহয় অভদ্র হলামই!”
বলেই পেছনে চেপে মৃদু হাসে।আহিনের এরূপ কান্ডে গা রিরি করে উঠে চাঁদের।সে প্রচন্ড মেজাজ খারাপ করে বলে,
“আপনি কেবলই অভদ্র নন।অভদ্রতামিতে পিএইচডি করেছেন নিশ্চয়ই!নাহলে এমন উদ্ভট ধরণের ব্যবহার একজন মার্জিত পলিটিশিয়ান মোটেও করতে পারেনা”
“ঐ যে বললাম না?তোমার জন্য সব হতে রাজি নীলাম্বরী।সব!কেবল তোমার জন্য এবং তোমার কাছেই।অন্যসবার কাছে আহিন শেখ,আহিন মোহাম্মদ শেখ ইজ নট অনলি আ পোলাইট এন্ড জেন্টাল গায় বাট অলসো আ রেসপন্সিবেল পলিটিশিয়ান”
কিছুটা দূরে চেপে নিজের ডান হাত তার আর আহিনের মাঝে রেখে আহিনের দিকে তাক করে চাঁদ বলে,
“এবং এই তার নমুনা?”
এ কথা শুনেই আহিনও কিছুটা দূরে চেপে যায়।তা দেখে চাঁদ বলে,
“আমার দেরি হচ্ছে মি.আহিন।পথ ছেড়ে দাড়ান”
“শিওর নীলাম্বরী”
বলেই চাঁদের সামনে থেকে সরে দাঁড়ায় আহিন।অতঃপর চাঁদ স্বস্তির শ্বাস ফেলে আগে বাড়ে।কিন্তু তার পাশে দিয়ে আহিনকে হাটতে দেখে পা জোড়া থামিয়ে তার দিকে ঘুরে বলে,
“সমস্যা কী আপনার?এভাবে আটকে রেখে বিরক্ত করছেন কেনো?”
আশ্চর্য হয়ে আহিন বলে,
“তোমায় আটকে রেখেছি নাকি আমি?না পথ ধরে দাঁড়িয়ে আছি?”
“আপনি আমায় ফলো করছেন”
“আমিতো তোমার পিছু আসছিনা।পাশে হাটছি”
“কেনো হাটবেন?”
“আমার ইচ্ছা।রাস্তাটাতো তোমার নয়”
“রাস্তাটা আপনারও নয়।আর না আমি আপনার কোনোপ্রকারের বোন হই যে এভাবে আপনি আমার গা ঘে!ষে হাটার চেষ্টা করবেন!”
বেশ থমথমেভাবে আহিন বলে,
“তোমার আর আমার মাঝে যথেষ্ট দূরত্ব আছে নীলাম্বরী।না হলেও দু’হাত জায়গা ফাকা আছে।আর কী বললে?বোন?বোন কেনো হতে যাবে তুমি আমার?তুমিতো হবে আমার…. ”
চাঁদের ঝাঝালো স্বরে থামতে বাধ্য হয় আহিন,
“থামুন!অনেক্ক্ষণ ধরে আপনার ননস্টপ উদ্ভট কথাবার্তা শুনেই যাচ্ছি।এবার কিন্তু আমার ধৈর্য সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে মি.আহিন”
বুকে হাত রেখে চোখজোড়া বন্ধ করে আহিন বলে,
“হায়!এভাবে ডেকোনা।ডেকোনা গো আমার নীলাম্বরী!আমি দিশে….”
বাক্যটুকু সম্পূর্ণ করার পূর্বেই আহিনের ফোন বেজে উঠে।বেশ বিরক্তবোধ করে আহিন এতে।তবুও দাতে দাত চেপে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ফোনটা বের করে হাতে নেয় সে।অতঃপর রিসিভ করে ওপাশের কথা শুনে সে কেবল বলে,
“ঠিক আছে”
চাঁদকে সেভাবেই স্থির থেকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহিন মুচকি হেসে ভ্রু উচিয়ে বলে,
“আমার অপেক্ষা করছিলে নাকি নীলাম্বরী?সুযোগ পেয়েও যাওনি যে?”
চাঁদ বোকা বনে গিয়ে বলে,
“হোয়াট!”
আহিন খানিকটা উচ্চস্বরে বলে,
“জাস্ট কিডিং নীলাম্বরী।তবে তোমার সুবিধাই হলো।আমার মিটিং পড়ে গেছে আর্জেন্ট।তাই যেতে হচ্ছে।আরেকদিন তোমায় সময় দেবো কেমন?আজ যাচ্ছি।তবে পরবর্তীতে তোমায় সঙ্গ আমি অবশ্যই দেবো।আর হ্যা সাবধানে যেয়ো।রিকশা করে দেবো?”
“আমার নিজের হাত,পা এবং গলা আছে”
খানিকটা চেচিয়ে কথাটা বলেই দ্রুত পা চালায় চাঁদ।চাঁদের এরূপ কথা আর হাটার গতি দেখে ফিক করে হেসে দেয় আহিন।চুলে হাত বুলিয়ে খানিকটা চুল এলোমেলো করে দিয়ে নিজেই নিজেকে বলে,
“শেষে কিনা তুই এক চাশমিশ পড়াকু মেয়ের প্রেমে পড়লি আহিন?”
অনেক্ক্ষণ যাবৎ প্রণয়ের ফোন বেজে চলেছে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষ করে বেশ কিছুক্ষণ আগেই বাড়িতে ফিরে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকেছে সে।মাত্রই শাওয়ার শেষ করে থ্রি কোয়ার্টার পরে খালি গায়ে গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে বেরিয়ে এসেছে।চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে ফোনের কাছে এসে দেখে অরণের হোয়াটসঅ্যাপে চারটা মিসড কল।তা দেখে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতেই আবারও ভিডিও কল আসে অরণের।অতঃপর কল রিসিভ করে ঠিকঠাকভাবে নিজের দিকে ফোন রাখতেই ফোনের ওপাশে অরিনকে দেখে কপাল কুচকে সাথে দাতে দাত লাগিয়ে কল কেটে দিয়ে নাক ফুলিয়ে অডিও কল দেয় অরণকে।অতঃপর রিসিভ করে অরণের বোন অরিন এবং শুনতে পায় প্রত্যেকবারের ন্যায় সেই একই ঝাঝালো আর ক!র্কশ কন্ঠস্বর,
“তোমার সাহস দেখে আমি দিন দিন অবাক হচ্ছি অরিন!আজ কিন্তু অতিরিক্তই করে ফেলেছো।তুমি কি চাচ্ছো আমার আর তোমার ভাইয়ের সম্পর্কটা নষ্ট হোক?নষ্ট করতে চাচ্ছো আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্ব?”
মলিন কন্ঠে অরিন আস্তেসুরে বলে,
“আমি এমনটা কেনো চাইবো প্রণয়?”
খানিকটা উচ্চস্বরেই প্রণয় বলে,
“কী প্রণয় হ্যা?কী প্রণয়?ন্যূনতম ম্যানার নেই?বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানোনা?আমি তোমার বড় ভাইয়ের বন্ধু জেনেও কোন সাহসে তুমি আমার নাম ধরে ডাকো?”
“সবার সাথে গম্ভীরভাবে শান্তসুরে কথা বলেন আমার সাথে কেনো এতোটা নির্দ!য় প্রণয়?”
“দেখো মেয়ে বারবার নাম ধরে ডেকে মাথায় র*ক্ত উঠিয়ে দিচ্ছো তুমি।ঠিক এজন্যই,এজন্যই আমি তোমাদের বাসায় কম যাই।যেদিন থেকে তোমার এসব পাগলামি শুরু হয়েছে সেদিন থেকে শান্তিমতো শ্বাস নিতে পারছিনা আমি অরিন!এবার থামো!খবরদার যদি এরপর আমায় বিরক্ত করতে দেখেছি তো।দূরে থাকবে আমার থেকে।এতেই তোমার মঙ্গল”
“আপনার কাছে থাকার চেষ্টায় যদি আমার অমঙ্গল হয় তবে অমঙ্গলই শ্রেয় প্রণয়”
অরিনের কথা শুনে মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায় প্রণয়ের।সে তৎক্ষনাৎ কলটা কেটে দেয়।অপরপাশ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরিন ভাবে সেই প্রথমদিনের কথা,যেদিন প্রণয়কে নিয়ে নতুনকিছু অনুভব করেছিলো সে।যেই অনুভূতি আগে কখনো,কারও জন্য অনুভব করেনি।এই একটা ছেলে তার সবটা জুড়ে বসবাস করে।এই একটা ছেলেকেই তার কিশোরী মন বেছে নিয়েছে।সে চায় আজন্ম এই একজনকেই তার মন চাইতে থাকুক।সে তার নাইবা হলো,তবুও তাকে চাইতে চায় সে।তাকে চাইতে গেলেও মনে একধরণের প্রশান্তি ছেয়ে যায় অরিনের।এতো ভালো লাগা কাজ করে কেনো ছেলেটার জন্য?কেনো এতো উন্মাদনা এই ছেলেটাকে নিয়ে?তার মতো আর কত নারী এই ছেলেকে বারবার,হাজারবার চায়?তাদের মধ্য থেকে কেউ কি আছে অসাধারণ?অনন্য?অতুলনীয়?যে কেবলই একজন হয়?যার দ্বিতীয় কোনো জুড়ি নেই?যাকে প্রণয়ও চাইতে পারে?প্রণয়ও কি কাউকে চায়?চায় কি?চাইলেও কেনো চায়?সে কাউকে চাইতে পারেনা।সে আজন্ম এমন নারী-বি!দ্বেষী থাকুক এটাই চায় অরিন।কেনোনা সে জানে প্রণয় তার কখনোই হবেনা।প্রণয় তার নাই বা হোক।সে যেনো অন্য কারোও না হোক এই কামনাই সবসময় করে অরিন।
শুক্রবার,
জুমার দিন।পবিত্র এই দিনে মন এবং মস্তিষ্ক দুটোই শান্ত থাকে,ভালো থাকে।মনকে আরেকটু ভালো করতেই জুমার নামাজ আদায় করেই বাসে উঠে চড়েছে চৈত্র।উদ্দেশ্য তার চোখ জুড়াতে,মন ভালো করতে।বাসে একটা সিটও খালি নেই তাই দাঁড়িয়ে থেকেই ঠোটে হাসির রেখা টেনে চোখ বন্ধ করে বাসের উপরের চাকতিতে হাত রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে চৈত্র।কোনো হেলদুল নেই।নেই কোনো পড়ে যাবার ভয়।ভয় শুধু একটাই,মেয়েটাকে কি শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগবে?সে কি কয়েকটা হার্ট বিট মিস করবে?নাকি অজ্ঞা!ন হয়ে মাটিতেই লুটিয়ে পড়বে?এতো অস্থিরতা কাজ করছে কেনো?সে কি এখনই জ্ঞা!ন হারাবে নাকি?
ঘেমে নেয়ে সাদা পাঞ্জাবিটা চুপচুপ হয়ে লেপ্টে আছে চৈত্রের প্রসস্থ বুক এবং কাধের দিকে।বার বার হাত ঘড়ি দেখছে সে।এতক্ষণে তো মেয়েটার এসে পড়ার কথা।এখনো আসছেনা কেনো?নিশ্চয়ই তার জন্য নিজেকে মিষ্টিভাবে তৈরি করছে?কথাটা ভাবতেই ঘর্মাক্ত মুখশ্রীতেও ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি।হাসিটুকু বজায় রেখেই সে চোখজোড়া বন্ধ করে কল্পনা করে তার কল্পনাবিলাসীকে।কি অপূর্ব লাগছে তাকে!নীল শাড়িতে ঠিক যেনো চৈত্রের রূপা।কিন্তু সেতো হিমু সেজে আসেনি।ইশ!আসা উচিত ছিলোতো!কিন্তু তার তো কোনো হলুদ পাঞ্জাবী ই নেই।আফসোস করতে করতেই তার পাশে এসে কেউ দাড়াতেই ঝট করে চোখ খুলে হাসিমুখ করেই চৈত্র বলে,
“রূপন্তিকা?আমার রূপন্তিকা আসলো বলে?”
কথাটা বলেই সামনে দাঁড়ানো মেয়েটাকে দেখে মুখটা মলিন করে নিলো সে।অতঃপর লম্বা শ্বাস টেনে বললো,
“আজও শাড়ি পরোনি তুমি?”
মেয়েটা মাথা নিচু করে বলে,
“শাড়িতে আমায় ভালো লাগেনা চৈত্র।পরেছিলাম।ভালো লাগছিলোনা তাই খুলে ফেলেছি”
মেয়েটাকে নিজের কাছে টেনে চৈত্র বলে,
“এতো দূরে দূরে থাকার জন্যতো এতোদূর জার্নি করে আসিনি রূপন্তিকা”
“এভাবে ডেকোনা চৈত্র।আমার ভয় হয়।ভয় হয়,যদি তুমি হারিয়ে যাও?এতো ভালোবাসা আমায় সইবেতো চৈত্র?”
“আসো কোথাও বসি।তুমিতো সব প্রশ্নের উত্তরই জানো রূপ।তবুও আরও একবার নাহয় বললাম ই।আসো”
বলেই রূপার হাত ধরে সামনে এগোতে এগোতে চৈত্র বলে,
“তুমি আমার থাকো না থাকো,আমি আজন্ম তোমায় ভালোবাসবো রূপন্তিকা”
হাটা থামিয়ে চৈত্রের পানে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রূপা বলে,
“এভাবে বলওনা প্লিজ!আমি তোমারই থাকবো,তোমারই থাকবো।আমার জায়গা কেউ নিতে পারবেনা তো চৈত্র?”
রূপার দিকে খানিকটা ঝুকে তার ডান হাত নিজের বুকের বা পাশে রাখিয়ে চৈত্র বলে,
“কিছু অনুভব করতে পারছো?পারলে অবশ্যই বুঝেছো চৈত্রের হৃদস্পন্দনে রূপন্তিকার বসবাস।কেবলই চৈত্রের রূপের।এই হৃদয়ে অন্য কেউ বসবাস করতে পারবেনা,কখনোই না।তার আগেই চৈত্রের হৃদয় ঝ!লসে যাক,বিগলিত হয়ে যাক!”
এ কথা শুনতেই বুক থেকে হাত সরিয়ে পা উচু করে হাত দ্বারা চৈত্রের ঠোট চেপে ধরে রূপা বলে,
“যে হৃদয়ে এতো প্রেম সে হৃদয় আজন্ম প্রেমময়ী হয়ে থাকুক।প্রেমময়ী হৃদয়টা এই চৈত্র নামক পুরুষটাকে সর্বদা প্রেমিক পুরুষ বানিয়ে রাখুক!”
বলেই রাস্তার এক পাশে বসার জায়গা দেখে চৈত্রকে টেনে নিয়ে সেখানে বসিয়ে চৈত্রের বড় বড় চুলগুলো এক হাতে ধরে সরিয়ে অপর হাতে নিজ ওড়না দ্বারা চৈত্রের কপাল মুছে দিতে দিতে কপাল কুচকে রূপা বলে,
“কে বলে এতো কষ্ট করে এতোদূর আসতে?শুধু শুধু ঘেমে নেয়ে একাকার!”
চৈত্র অপলক রূপার পানে চেয়ে বলে,
“শুধু শুধু কোথায় রূপন্তিকা?এই যে রূপন্তিকার ভালোবাসার পরশ পেয়ে গেলাম।এইতো আমার কষ্ট সার্থক হলো বলে!”
চৈত্রের কথা শুনে চোখ গরম করে তার পানে তাকিয়ে বাহুতে কি!ল বসিয়ে রূপা বলে,
“সবসময় শুধু প্রেম আর প্রেম না?এতো প্রেম রাখো কোথায় তুমি?”
রূপার কথা শুনে রূপার হাত টেনে বুকের কাছে এনে চৈত্র বলে,
“এই যে এই বুকের ভেতরে যেই ছোট্ট হৃদয়টা আছেনা?সেইখানে রাখি রূপন্তিকা”
চৈত্রের বুক থেলে হাত সরিয়ে ব্যাগ থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানি বের করে চৈত্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে রূপা বলে,
“প্রেমালাপ শেষ?এবার নিন পানি খান।নিশ্চয়ই এতো প্রেমময়ী বাক্য বলে গলা শুকিয়ে গেছে?”
খানিকটা হেসে বোতল হাতে নিয়ে রূপার নাকের ডগায় তর্জনী ছুইয়ে চৈত্র বলে,
“ঠিক এজন্যই তোমায় আমি বউ বলি রূপ।আমার বউ।চৈত্রের একমাত্র বউ।রূপন্তিকা বউ”
To be continued….