আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৩৯.

0
1008

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৩৯.
দিনটা তখন বৈশাখ মাসের পহেলা দিন।বেশ রমরমা পরিবেশে পরিপূর্ণ রমনার বটমূলসহ এর আশপাশ।সেখানকার কোথাও কোথাও বসেছে নিমকি-মুড়ালি,চিড়ামুড়ি,মোয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার।তো আবার বিভিন্ন দোকান নিয়ে বসেছে দোকানীরা।এই যেমন কেউ কেউ ছোট বাচ্চাদের খেলনা,কেউবা ফুচকা-চটপটি,ঝালমুড়ি ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার নিয়ে।আবার কেউবা পান্তা-ইলিশের আয়োজন করেছে বিপুলভাবে।অবশ্য করবে নাই বা কেনো?এই একটা জিনিসই তো পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান আয়োজন।মাছে-ভাতেই তো বাঙালি।আর ইলিশ মাছ যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ তা ছাড়া কি আর বাংলা মাস শুরু করা চলে?এছাড়াও পুরো মাঠজুড়ে বিচরণ করছে লাল-সাদা পোশাকে আবৃত কপোত-কপোতী অথবা পুরুষ-রমনী,সেইসাথে আছে ছোট ছোট বাচ্চারাও।কেউ কেউ বাবা,মায়ের হাত ধরে হাটছে কেউবা এসেছে ভাইবোনদের সাথে,আবার কাউকে দেখা যাচ্ছে বাবার কাধে চড়ে আসতে।কি অপরূপ!মনোমুগ্ধকর সেই দৃশ্য!পরাণ জুড়িয়ে যায় যেনো!বাবা-মা আর সন্তানের সম্পর্ক তো এমনই!দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।বাবার আঙুল ধরেইতো সন্তানের পথচলা।বাবাই তো শেখায় সঠিক পথে সঠিকভাবে চলা।সেই বাবাই আবার সন্তানের কষ্টে সন্তানকে স্বস্তি দেয়ার উদ্যোগে কাধে তুলে নেয় সকল সমস্যা থেকে তাকে দূরে রাখতে।তাই নয় কি?এরপর আশেপাশে দেখা দেখা যাচ্ছে নাগরদোলার সমাহার।প্রায় অনেকগুলোই নাগরদোলা দেখা যাচ্ছে সেথায়,সেইসাথে প্রচন্ড ভীড়ও।আছে দোলনা,নৌকা,পাল্লাসহ বাচ্চাদের আরও বিভিন্ন ধরণের উঠে-চড়ে খেলার মতো সরঞ্জামাদি।কেউ কেউ আবার বসেছে রঙ নিয়ে।সেই রঙ দিয়ে গালে আল্পনা করে দিচ্ছে বাচ্চা-বড়সহ সকলকেই।আবার কেউবা হাতে মেহেদীর মতো আল্পনা আঁকায় ব্যস্ত।কেউবা হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে।অনেকে বিভিন্ন ধরণের খাবার কিনছে,আড্ডা দিচ্ছে,খাচ্ছে।আবার কেউকেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত।সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে করতেই এসবকিছু ভিডিও কলে দেখাচ্ছিলো উশ্মিকে রায়হান।উশ্মির মাঝে নেই কোনো উৎফুল্লতার রেশ।রায়হানই আপনমনে এটা ওটা বলছে তাকে।যখন পাশে এসে রামিম দাড়ালো ঠিক তখনই বন্ধুর সাথে কোলাকুলি করে তাকে বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়ে উশ্মিকে বললো,

“তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রুবা,শিফা আর রিদিকেও রেডি করিয়ে দিস।তন্ময় আর উজানকে বলবি তোদের সবাইকে নিয়ে আমার কলেজে হাজির থাকতে।আর হ্যা তুই কিন্তু শাড়ি পরেই আসবি।আমি লাল-সাদা মিক্সড পাঞ্জাবি পরেছি দেখছিস?তুইও লাল আর সাদাই পরবি।একদম বউ বউ ভাব নিয়ে আসবি।রায়হানের বউ।বুঝেছিস?”

উশ্মি ওপাশ থেকে বলে,

“হ্যা আনবো।তোমার পাশে ওটা কে?”

“আমার জানের জিগার রামিম।আবার কে হবে আমার পাশে হা?ওকে ছাড়া আর কাউকে কখনো দেখেছিস নাকি?”

বলেই হাসতে হাসতে রামিমের দিকে ফোন ঘোরায় রায়হান।রামিমের দিকে ফোন ঘোরাতেই রামিম বিরক্তি নিয়ে বলে,

“এখানে এসেও তোর প্রেম করতে হবে?মানে সিরিয়াসলি রায়হান?তোর আর কোনো কাজ নেই নাকি?প্রণয়রা কোথায়?”

রামিমের কথা শুনে উশ্মি বলে,

“আমি রাখছি রায়হান”

উশ্মি কল কেটে দিতেই রায়হান রামিমকে বলে,

“মেয়েটাকে দেখতে পারিস না কেনো তুই?সবসময় এমন কটাক্ষ করিস কেনো?”

“বেশি ওকালতি করবি তো আমি এক্ষুনি চলে যাবো আর রিদি-শিফাকে নিয়েই ফিরে যাবো বলে রাখলাম”

“ঠিক আছে ঠিক আছে হু!মকি কেনো দিচ্ছিস?চল।প্রণয়রা আশেপাশেই কোথাও আছে কল দিচ্ছি ওদের”

অতঃপর দুই বন্ধু হাটতে হাটতে একটা গোলা আইসক্রিমের গাড়ির কাছে এসেই দেখতে পায় গোগ্রাসে সকলে মিলে গোলা খাচ্ছে।শুধুমাত্র প্রণয় একপাশে বসে বিরক্তিবোধ করে বলছে,

“তোদের নিশ্চিত মেয়ে হওয়া উচিত ছিলো।নামেমাত্র ছেলে তোরা”

মির বরফ চিবাতে চিবাতে বলে,

“ফাও কথা বলবিনা প্রণয়।মেয়ে আমাদের না লোকজন তোকে দেখলে বলবে।না জীবনে করেছিস একটা প্রেম না কাছে ঘেষতে দিস কোনো মেয়েকে।এমনকি নিজের বোনদের সাথেও কথা বলিসনা।লোকে তো তোকে ে*গ ভাবে ে*গ”

মেজাজ খারাপ করে প্রণয় মিরের সামনে এসে আকস্মিক গোলার কাপটা মিরের মুখের দিকে চেপে ধরতেই পুরো মুখে আইসক্রিমে মাখোমাখো হয়ে যায়।সেইসাথে সাদা পাঞ্জাবিটাও রঙে মেখে যায় মিরের।বেশ রাগ দেখিয়ে মির চোখ গরম করে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“শা!লা!”

তখনই রামিম সামনে এসে হাসতে হাসতে বলে,

“ওরতো কোনো বোন নেই শা!লা পেলে কোথায় মির?”

মির রামিমের পানে তাকিয়ে বলে,

“ওর নেই তো কী হয়েছে?তোমারতো আছে?তোমার বোনকে বিয়ে করে তোমাদের তিন ভাইকেই শা!লা বানিয়ে নিবো সমস্যা কোনো?”

রামিম হাসতে হাসতে বলে,

“একদমই না!কিন্তু আমার বোনতো মাত্র ফোরে পরে।দশ বছরের শিশু সে।আর তুমি বিশ বছরের দামড়া ছেলে!বুড়ো লোকের কাছে বোন বিয়ে দেবো নাকি?”

ভেংচি কেটে মিরা বলে,

“আমার ভাই মোটেও বুড়ো নয়।যথেষ্ট হ্যান্ডসাম সে।তোমার বোনই আমার ভাইয়ের পিছু ঘুরবে মিলিয়ে নিও”

রামিমের বদলে রায়হান জবাব দেয়,

“তাই নাকি?দশ বছরের বুড়োর কাছে আমাদের বোন ধরা দেবেনা তুমিও দেখে নিও”

বিরক্ত হয়ে পূর্ণতা বলে,

“কি মেয়েদের মতো তোমরা ছেলেরা ঝগড়া শুরু করে দিলে ইয়ার?”

তখনই শোনা যায় প্রণয়ের খোচাপূর্ণ বাক্য,

“দুইটা গিলে আত্তী পুরে নি?আরেকটা গোগ্রাসে গিলছিস?”

কপাল কুচকে পূর্ণতা বলে,

“নিজে নিয়ে খেতে পারিস না?আমার দিকে নজর দিবিনা।যদি পেট ব্যাথা করেছে তো বুঝিস তুই”

পূর্ণতার কথা শুনে রিহা বললো,

“যে হারে ফুচকা-চটপটি ঠুসেছিস পেট ব্যাথা কেনো?তোরতো ডায়রিয়া ছুটবে খালা”

নাক-মুখ ফুলিয়ে পূর্ণতা বলে,

“যদি আমার কিছু হয়েছে না?তো তোদের দু’জনকে আ!স্ত রাখবোনা বলে দিলাম”

রবিন আইসক্রিম খেতে খেতে বলে,

“আর ওরা তোর ভয়ে জমে যাচ্ছে।দেখ দেখ পা থরথর করে কাপছে”

রবিনের কথা শুনে হেসে দেয় সকলেই।তবে হাসেনা প্রণয়।বিরক্তিবোধ করে সে বলে,

“অনেক্ক্ষণ ধরে এই গরমে তোদের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।এখন চল।আর দাড়াতে পারবোনা।আর তোরা?তোরাও কি মেয়ে হয়ে গেছিস?”

শেষের কথাটা রামিম আর রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে প্রণয়।তা শুনে রামিম অবাক হয়ে বললো,

“কী করেছি আমরা?”

“তোরা আরও আগে আসলে এই গরমে পু!ড়তে হতোনা অন্তত আমায়”

রায়হানের কিছু বলার পূর্বেই প্রণয় বলে,

“নো মোর ওয়ার্ডস।অরণ যা তিনটা রিক্সা নে আমি এদের নিয়ে আসছি”

মিরা জিজ্ঞেস করে,

“তিনটা কেনো?আমরাতো নয়জন”

“এজন্যই তিনটা।তিনজন তিনজন বসবো”

পূর্ণতা বিস্ময় নিয়ে বলে,

“এই গরমে?তাও আবার শাড়ি পরে সিরিয়াসলি?শাড়ি পরে উপরে বসবো কি করে আজব!”

প্রণয় গম্ভীর হয়ে বলে,

“সরি ওভাবে ভাবিনি”

মির ভেজা রুমাল দিয়ে মুখ আর পাঞ্জাবী মুছতে মুছতে পূর্ণতাকে বলে,

“আমি মিরাকে নিয়ে একটা দিয়ে আসছি।তুই আর রিহু একসাথে আয়”

এ কথা শুনে রবিন বলে,

“তুই মিরুর সাথে গেলে আমি কার সাথে যাবো?”

“কার সাথে যাবি মানে?প্রণয়তো বললোই তিনজন করে আসতে।হয় রায়হানদের সাথে আয় নয়তো অরণদের।আমরা আমরাইতো”

“তা ঠিক আছে।শা*লিগুলিকে কে যে বলেছিলো শাড়ি পরতে ঢং যত!”

প্রণয় রবিনকে বলে,

“মিরের সাথে যা।চারটা রিক্সা ঠিক করবি।একটায় তিনজন বাকিগুলোয় দু’জন করে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের মাঠপ্রাঙ্গনের এক পাশে প্রণয়রা সবাই চেয়ারে বসে আড্ডা দেওয়ায় ব্যস্ত।তখনই রামিমের ফোনে কল আসে উজানের।রামিম রিসিভ করতেই উজানের কন্ঠস্বর শুনতে পায় সে,

“হ্যালো রামিম ভাই আমরাতো এসেছি।আপু রায়হান ভাইকে কতগুলো কল দিলো সে তো ধরছেনা”

রামিম উজানকে বলে,

“তোরা গেটেই দাড়া আমি আসছি”

রামিমের কথা শুনে সকলেই তার পানে তাকায়।তাকাতেই রামিম বলে,

“ওরা এসে গেছে।উশ্মি নাকি তোকে অনেক গুলো কল দিয়েছে ধরছিস না”

উশ্মির কথা শুনেই ঝট করে মোবাইল পকেট থেকে বের করে রায়হান বলে,

“শিট!সাইলেন্ট ছিলো দেখিই নি।আচ্ছা তোরা বস আমি ওদের নিয়ে আসি”

রিহা মুখ ভেংচিয়ে বলে,

“লায়লা কা মাজনু”

রায়হান যেতে যেতে বলে,

“ইটস উশ্মি কা রায়হান।এই রামিম চল”

বিরক্ত হয়ে রামিম বলে,

“এখন আমারও যেতে হবে?”

রবিন হাসতে হাসতে রামিমকে বলে,

“হ্যা যাও।রায়হান একা আনতে না পারলে ভাবিকে দু’জন কোলে করে নিয়ে আসবে”

রায়হান কিছু বলার আগেই শুনতে পায় প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“কথা বলার আগে দশবার ভেবে চিন্তে কথা বলবি রবিন।ভুলে যাবিনা উশ্মি আমার ছোটবোন মানে তোরও বোন”

“আমিতো মজা করে বললাম”

“মজা হোক আর যাই হোক এমন বি!শ্রী কথা যেনো আর না শুনি”

রবিন থমথমে ভাবে বলে,

“আমি বুঝতে পারিনি প্রণয়,সরি।সরি রায়হান,রামিম”

রায়হানও থমথমে ভাবে বলে,

“ইটস ওকে।চল রামিম”

তখনই শোনা যায় পূর্ণতার কন্ঠস্বর,

“তোকেতো কখনো বোনদের সাথে কথা বলতে দেখিনি।সবসময় দূরে দূরেই থেকেছিস”

রায়হান চলে যেতে গিয়েও পা জোড়া থামায়,প্রণয়ের উত্তর শোনার প্রত্যাশায়।এবং শুনতে পায়ও,

“কথা বলিনা বা দূরে থাকি মানে এই নয় যে ওরা আমার বোন নয় বা আমি ওদের ভাই নই অথবা ওদের প্রতি আমার কোনো দায়িত্ববোধ নেই,কেউ অসম্মান করলে আমার গায়ে লাগবেনা বা আমি প্রতিবাদ করবোনা”

রবিন অনুতপ্ত হয়ে আবারও বলে,

“দোস্ত আমি ইচ্ছা করে বা কোনো খারাপ মনোভাব নিয়ে কথাটা বলিনি”

প্রণয়ের শান্ত জবাব,

“আমি জানি রবিন।আমার বন্ধুদের সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত আমি।তোর এক্সপ্লেইনেশনের প্রয়োজন নেই”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কলেজ গেটের ভেতর দিয়ে চারপাশটা দেখতে দেখতে প্রবেশ করছে উশ্মি।দূর থেকে একজোড়া চোখ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকে দেখতে ব্যস্ত।উশ্মি ভেতরে ঢুকে একপাশে ভাইবোনদের দাড় করিয়ে উজানকে বলছে,

“শোন।ওদের সবার মধ্যে তুই ই বড়।ওদের খেয়াল রাখবি।ছাড়বিনা একা কোথাও।বিশেষ করে রিদুকে।রিদুকে তোর সাথেই রাখবি।ও সবার ছোট।আর শিফু,রুবা সোনা তোমরাও ভাইয়াদের রেখে কোথাও যাবেনা ঠিক আছে?আর আমার পুচকু রিদু সোনা তুমি শিফু আর রুবা আপুর সাথে থেকো ঠিক আছে?”

রিদি ছোট থেকেই চাপা স্বভাবের।তাই সে শুধু মুচকি হেসে বললো,

“থাকবো আপু।আর শিফু,রুবাকে আপু বলবেনা।এক বছরের বড়তে কিছু হয়না।ওরা আমার বেস্টিজ”

মুচকি হেসে রিদির গালে হাত বুলিয়ে উশ্মি বলে,

“ঠিক আছে সোনা।এখানেই থেকো কেমন?”

শিফা আমতা আমতা করে বলে,

“তু…তুমি কি রায়হান ভাইয়ের কাছে যাবে আপু?”

“হ্যা ঐখানটায় ই যাবো।তোরা থাক”

“আমিও তোমার সাথে যাই?”

“তুই যেয়ে কী করবি?আমি দেখা করেই আবার তোদের নিতে আসবো কেমন?আমরা রমনাও যাবো ঠিক আছে?”

শিফা মুখ গোমড়া করে বললো,

“হিম ঠিক আছে”

রায়হান এদিকটায় আসতে আসতেই বললো,

“কী ব্যাপার উশ্মি?তুই আমার বোনদের মন খারাপ করাচ্ছিস কেনো?সবাইকে নিয়েই ভেতরে আয়।প্রণয়রা ওখানেই বসেছে।সবাই একসাথে বসি”

“বাচ্চারা ওখানে যেয়ে কী করবে?”

উশ্মির কথা শুনে মেজাজ খারাপ করে রামিম বলে,

“যে দায়িত্ব নিতে পারেনা তার দায়িত্ব নেয়া উচিতও নয়।এই উজান ওদের নিয়ে ভেতরে আয়তো”

বলেই সকলকে নিয়ে ভেতরে চলে যায় রামিম।আর রায়হান উশ্মির বাহু চেপে বলে,

“তোকে বলেছিলাম না?লাল-সাদা পরবি?তবে পুরো বিধবা সেজে কেনো এসেছিস?আমি ম*রে গেছি?”

রায়হানের ঠোটে হাত রেখে উশ্মি বলে,

“ছি!এসব বলওনা”

“তবে পরেছিস কেনো?লাল ব্লাউজ কোথায় তোর?লালের ছিটে ফোটাও দেখছিনা।সবকিছু সাদা পরে এসেছিস কারণ কী?”

আমতাআমতা করে উশ্মি বলে,

“আ…আসলে ব্লাউজটা বগলের দিক দিয়ে ছিড়ে গেছে তাই”

“চুড়ি টুড়িও লাল পরতে পারিস নি?”

“এমন করছো কেনো?তাড়াহুড়োয় এসেছি খেয়াল নেই।চলোতো এখন”

বলেই রায়হানকে টেনে ভেতরে নিয়ে যায় উশ্মি।

প্রায় ঘন্টা দেড়েক পরের কথা,
অস্থির হয়ে উশ্মি সবার কাছে এসে বলে,

“শিফুকে কোথাও পাচ্ছিনা প্রণয় ভাইয়া”

এ কথা শুনে কপাল কুচকে আসে প্রণয়ের।চিন্তায় পড়ে যায় সেখানকার সকলেই।প্রণয় শান্তভাবে রায়হানকে বলে,

“দায়িত্ব যখন নিতে পারিস না দাওয়াত কেনো দিয়েছিস সকলকে?আর তুই?সেফলি রাখতেই যখন পারবিনা অতোদূর থেকে এনেছিসই কেনো মেয়েগুলোকে?”

শেষের বাক্যটা রামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে প্রণয়।মাথা নিচু হয়ে আসে দু’জনেরই।তা দেখে প্রণয় বলে,

“দশ মিনিটের মধ্যে শিফাকে আমি আমার সামনে দেখতে চাই রায়হান।আর রবিন যা রুবা,রিদি কে নিয়ে আয়।তন্ময়,উজানকে দিয়ে এক্ষুনি পাঠাবো সবাইকে”

প্রণয়ের কথা শুনে তখনই রবিন পা বাড়ায়।রায়হানও অস্থির হয়ে শিফাকে খুঁজতে শুরু করে,মিরও যায় তার সাথে।রামিমও এগোয়।রামিমের পিছু নেয় উশ্মিও।কিছুদূর গিয়ে রামিমের হাত টেনে একপাশে এনে উশ্মি বলে,

“কোনো কথা বলবেনা।তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে”

কপাল কুচকে রামিম বলে,

“তোমাকে একবার বলেছি না আমার থেকে দূরে থাকবে?”

“আমার কথাটা একবার শোনো প্লিজ”

“তাড়াতাড়ি বলবে।আর ডিসটেইন্স মেইনটেইন করো।এসব পছন্দ না আমার।বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড আছো সে অনুযায়ী ই থাকবে”

“আমি প্রণয় ভাইয়ের চাচাতো বোন।তুমিও তার মামাতো ভাই।সে হিসেবে আমরা…”

“না তুমি আমার কিছু লাগো আর না আমি তোমার কিছু লাগি।কথাটা মগজে ভালোভাবে ঢুকাও মেয়ে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরও ঘন্টা দেড়েক কলেজের আয়োজন উপভোগ করে সকলে আড্ডা দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে সেখান থেকে বিদায় নেয়।প্রণয়দের বিদায় দিয়েই গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রায়হান রামিমকে বলছে,

“দোস্ত ভাবছিলাম একটু উশ্মির সাথে বেরুতাম”

রামিম বলে,

“হ্যা অবশ্যই।আমি আসি তাহলে”

তখনই উশ্মি রামিমের কব্জি ধরে বলে,

“দাড়াও রামিম”

উশ্মির কান্ডে অবাক হয় রায়হান।অবাক হয়ে বলে,

“এসব কেমন ব্যবহার উশ্মি?”

রায়হানের পানে তাকিয়ে উশ্মি বলে,

“আমি তোমার সাথে কোথাও যাবোনা রায়হান”

“যাবিনা মানে?কেনো যাবিনা?”

লম্বা শ্বাস নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে উশ্মি বলে,

“যাবোনা মানে যাবোনা ব্যাস!”

চোয়াল শক্ত করে রায়হান বলে,

“কেনো যাবিনা?আর রামিমের হাত ছাড়”

এবার রায়হানের দিকে তাকিয়ে তার চোখে চোখ রেখে রামিমের হাত আরও শক্ত করে ধরে উশ্মি বলে,

“হাত ছাড়ার জন্য তো ধরিনি!”

এ কথা শুনে তৎক্ষনাৎ বুক ধরাক করে উঠে রায়হানের।সে খানিকটা ঘেমে যায়।এতক্ষণ গরম না লাগলেও এখন বেশ হাসফাস লাগছে তার।সে বুঝতে না পেরে বলে,

“মা…মানে?”

“মানে হলো আমি তোমার সাথে যাবোনা কোথাও”

“কেনো যাবিনা?”

দৃষ্টি নিচু করে উশ্মি বলে,

“কারণ…কারণ আমি তোমায় ভালোবাসি না”

এবার পুরোপুরি ঘেমে যায় রায়হান।সাদা পাঞ্জাবীটা বুকের দিক দিয়ে ভিজে গেছে।সে অবাক সুরে উশ্মির দু’বাহু চেপে বলে,

“তু…তুই এসব কী বলছিস উশ্মি?রা…রামিম দেখনা উশ্মি কিসব বলছে”

রামিম নিরুত্তর,নিশ্চুপ।তা দেখে রায়হান বলে,

“দোস্ত উশ্মিকে বল না মজা না করতে।অন্তত এসব নিয়ে।আমার মেজাজ একবার খারাপ হলে ওর জন্য ভালো হবেনা এটা বুঝা ওকে”

রামিমের বদলে উশ্মি জবাব দেয়,

“রামিম কী বোঝাবে রায়হান?কী বোঝাবে সে?আমি তোমায় ভালোবাসি না।তোমায় কেবল ভালো লাগতো আমার।রিলেশনে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে।ভুল করেছি আমি।তুমি একটা ট!ক্সিক পার্সন।তোমাকে ভালোবাসা যায়না রায়হান যায়না!”

দাতে দাত চেপে উশ্মির বাহু আরেকটু জোরে চে!পে ধরে রায়হান অ!গ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে উশ্মিকে বলে,

“আই সেইড রামিমের হাত ছাড় উশ্মি।এক্ষুনি ছাড়”

ব্যা!থায় কু*কিয়ে গিয়ে রায়হানের চোখে চোখ রেখে উশ্মি বলে,

“ছাড়বোনা।আর কখনোই ছাড়বোনা।তুমি জানতে চেয়েছিলে না?লাল-সাদা কেনো পরিনি?শোনো তাহলে।কারণ রামিম লাল পরেনি।পুরো সাদা পরে এসেছে।তাই আমিও সাদাই পরেছি।কারণ!আমি…আমি তাকে ভালোবাসি।অনেক আগে থেকেই।কিন্তু সে আমায় পছন্দ করতোনা।তোমার কারণে শুধুমাত্র তোমার কারণে।তুমি আমার জন্য পাগল তাই!তাই সে নিজের টা চিন্তা করেনি কখনো”

এ কথা শুনতেই হাত আলগা হয়ে আসে রায়হানের। ঠোটজোড়ায় কিঞ্চিৎ ফাঁকও দৃশ্যমান হয়।আস্তে আস্তে বন্ধুর পানে তাকায় রায়হান।রায়হানের সাথে দৃষ্টি মিলতেই রামিম তার দৃষ্টি নিচু করতে বাধ্য হয়।রামিমের এরূপ কান্ডে অচেনা ভয় বুকের ভেতর হানা দেয় রায়হানের।হৃদস্পন্দন তীব্র হয় তার।সে কাপা কাপা কন্ঠে বলে,

“আ..আমি এটা বিশ্বাস করিনা।রামিম এটা করতে পারেনা।আমার সাথেতো একদম ই না।ও,ও তোকে ভালোবাসেনা,বাসতে পারেনা উশ্মি।ও তো তোকে দেখতেই পারেনা।তু…তুই কিছু বলছিস না কেনো রামিম?”

“কারণ আমি যা বলেছি সেগুলো সত্যি এবং অক্ষরে অক্ষরে সত্যি তাই তার কাছে বলার মতো কিছুই নেই।তোমার জন্য ভালো হবে আমায় এবং রামিমকে তুমি নিজেদের মতো ছেড়ে দিলে।তোমার জ্বালায় অ!তি!ষ্ট হয়ে গেছি রায়হান!আমি বড়োই বিরক্ত তোমাতে!”

এ কথা শুনে ঝট করে তাকায় রায়হান উশ্মির পানে।প্রেয়সীর দৃষ্টি জোড়ায় আসলেই বিরক্তি দেখছে নিজের জন্য সে।কই এর আগেতো কখনো দেখেনি!হঠাৎ জীবনে ঝড় কেনো আসলো?কেনো লণ্ডভণ্ড করে দিতে চাচ্ছে সবকিছু?কী দোষ তার?কেনো প্রকৃতি এমন নির্ম!ম খেলা খেলতে চাচ্ছে তার সাথে?তবে কী প্রিয় দু’জন হারিয়ে যাবে জীবন থেকে?কেনো যাবে?দু’জনই থেকে যেতে পারেনা?জীবনটা অশান্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে কেনো?

রুবার স্পর্শে বাস্তবে ফেরে রায়হান।ভাইয়ের রুমে এসে ভাইকে ডাকছিলো সে।ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে ভাইয়ের কাছে এসে তার বাহু ঝাকায় সে।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে রায়হান বলে,

“হ্যা বল?”

“কী ভাবছিলে এতক্ষণ ধরে?”

“কিছুই না তুই বল কী হয়েছে?”

“ভাইয়া আমি এই ম্যাথ টা বুঝছিলাম না।কিভাবে করেছে?করিয়ে দাওনা।তুমিতো ম্যাথ নিয়ে পড়ছো”

“আচ্ছা আয় টেবিলে বস।বই খাতা নিয়ে আয়”

এ কথা শুনেই রুবা ছুট লাগায় নিজের রুমের দিকে।অতঃপর একহাতে খাতা আর কলম,অপরহাতে বই নিয়ে হাজির হয়।বোনকে ম্যাথ বুঝাতে বুঝাতে রায়হান কপাল কুচকে বলে,

“এইটে উঠে গেছিস,ক্যাপ্টেনও হয়েছিস এখনো নামতা পারিস না তুই?চৌদ্দ এর নামতা বল।এক্ষুনি বল”

বিরক্ত হয়ে রুবা বলে,

“এতো নামতা মুখস্ত করেছি নাকি?আর এগুলো কোনো কাজে আসে যে মুখস্ত করবো?চৌদ্দ এর নামতা পারিনা।তুমি জানোনা আমি হিউম্যানিটিজ নেবো?পুলিশ হবো আমি হ্যা?পুলিশি কাজে ম্যাথ দিয়ে কী হবে?”

To be continued….

[বিঃদ্রঃবিশাল বড় পর্ব দিয়েছি।আপনারাতো জানেন গল্প একদিন পর পর দেই।এতোদিন গল্প দিতে পারিনি বলে আজ এখন দিলাম এবং বেশ বড় করেই দিলাম।তবে প্রতিদিন চেয়ে আমাকে দয়া করে লজ্জা দেবেন না।ফোন ঠিক হয়েছে ঠিকই তবে স্পিকার নষ্ট হয়েছে আবার।ডিসপ্লেও কেমন যেনো হয়ে আসে।আশা করছি সমস্যাগুলো বুঝবেন।আমি চাইলেও রেগুলার দিতে পারছিনা ঠিক না হওয়া অব্দি।একদিন পর পর ই গল্প পাবেন।আর গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here