আতুরঘরে মা*রা যাওয়ার পূর্বে বিশ্বাস বাড়ির বড় বউ সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া পুত্রকে চিরচেনা শ*ত্রু হিসেবে মেনে আসা ননদের হাতে তুলে দিয়ে বললেন,
> বুবু ওর বাপে হাজারখানিকটা বিয়ে করুক কিছু যায় আসে না। আজ থেকে এই ছেলে তোমার। আমাকে কথা দাও বুবু ওকে নিজের পুত্র স্নেহে বড় করবা। কখনও ওর বাপের ভরসাতে ছাড়বা না।
বড় বউয়ের কথায় হতভম্ভ হলো কমলিনি। সুস্থ অবস্থায় ননদকে সুরমা বেগম দুচোখে সহ্য করতে পারতেন না। স্বামী পরিত্যক্তা ননদকে সংসারের বোঝা মনে করতেন কিনা তাহলে হঠাৎ কি এমন ঘটলো যে মারা যাওয়ার পূর্বে নিজের প্রাণাধিক প্রিয় স্বামীকে বিশ্বাস না করে শ*ত্রু হিসেবে গণ্য করা সেই ননদকে বিশ্বাস করে নিজের পুত্রের দায়িত্ব তুলে দিলেন? বাড়িতে আরও মানুষ আছে। নিজের মা, বোন,শাশুড়ি এমনকি স্বামীর আগের স্ত্রী এবং তিন কন্যা সবাইকে রেখে কমলিনিকে পছন্দ করার মানে কেউ বুঝতে পারলোনা। অবশ্য কমলিনি নির্বাকভাবে ভাবির রেখে যাওয়া পুত্রকে সন্তান স্নেহে কোলে তুলে নিলেন। বিশ্বাস বাড়ির প্রথম পুত্র আদরের দুলাল হলেও তার ঠিকানা হলো চৌধুরী বাড়ির অট্টালিকাতে। কমোলিনির স্বামী নিখোঁজ হবার পরে শাশুড়ি ওদের দুজনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলেন। কমোলিনির গর্ভে তখন বেড়ে উঠছে চার মাসের বাচ্চা। চৌধুরীদের নাম প্রতিপত্তি মফস্বলের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।বাড়ির বউ বাচ্চা অন্য বাড়িতে থাকবে এটা দিলারা চৌধুরী মানতে পারলেন না। তবে চমকে যাওয়ার বিষয় হচ্ছে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া বাচ্চাকে কেউ সামান্যতম অবহেলাও করলো না। বরং চৌধুরীদের পদবি দিয়ে নাম রাখা হলো । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পরিবর্তন হলো। বাচ্চা ছেলেটা বড় হলো কিন্তু তার সঙ্গে বাড়লো কিছু তিক্ত অতীতের জঘন্য কিছু রহস্যমাখা কাহিনি। বিশ্বাস বাড়ির বাতাসে ছড়িয়ে গেলো সুরমা বেগমের জন্য ননদের বর আহিল চৌধুরী সংসার ধর্ম ত্যাগ করেছেন। বাচ্চা ছেলেটা দিনের পর দিন লজ্জা ঘৃণা বুকে নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেললো। মায়ের কৃতকর্মে কয়েকজন মানুষের কাছে অপরাধী হয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেলো। ক্রমান্বয়ে ফুপি মায়ের হাতের পুতুলে পরিণত হতে হলো। নিজের ভাগ্য নিয়ে যখন গভীর চিন্তাতে মগ্ন আরিয়ান ঠিক তখনই রিনরিনে সুরেলা কণ্ঠে বেজে উঠলো,
“আপনি কখনও নিজের ডিএনএ টেষ্ট করিয়েছেন?মানে আপনার মায়ের নামে যে কথাগুলো লোকেরা বলাবলি করে বিষয়টার সততা যাচাই করছেন কখনও? বিয়ে করছেন ভালো কথা কিন্তু আমার মনে হয় বিষয়টা নিয়ে আপনার একবার ভাবা উচিত। কি বলেন?”
গায়ে হলুদ শেষ, বিয়ের কয়েক ঘন্টা বাকি সেই সময়ে হবু স্ত্রীর মুখে এহেন বাক্য শুনে চমকে গেলো আরিয়ান। মূহুর্ত্তের মধ্যে কপালের রগ ফুলে উঠলো। পৃথিবীর কোন সন্তান আছে যে মায়ের নামে বাজে ইঙ্গিত শুনে চুপচাপ থাকতে পারে? মা মানেই এক সমুদ্র ভালোবাসা। ইসলামের ভাষায় জান্নাত যার পায়ের নিচে। হাতের মুঠো শক্ত করে চোখ রাঙিয়ে চেয়ার ছাড়লো আরিয়ান। আবছা আঁধারে ঘোমটা টেনে বসে থাকা রমণীর দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> আল্লাহর কছম আমার মায়ের নামে আপনি যদি আর একটা বাজে শব্দ বা ইঙ্গিত করছেন আমি ভুলে যাবো আপনার সঙ্গে আমার বিয়ের কথাবার্তা বা সামাজিক নিয়মকানুন চলছে। গ*ণিকা পাড়াতে হাজারো গণিকা সন্তান বড় হচ্ছে। ওরা জানে ওদের মায়ের পেশা কি তবুও ভালোবাসে নিজের মাকে। সেখানে আমি জানিও না আমার মায়ের নামে যেগুলো লোকেরা বলে সেগুলো সত্যি কিনা। সে যেমনই হোক তবুও তিনি আমার মা। এই বিয়েটা হচ্ছে না ক্ষমা করবেন। আমার মায়ের প্রতি যার সম্মান নেই তাকে আমি জীবন সঙ্গী হিসেবে মানতে পারবো না।
আরিয়ান গ*র্জন করে কথা শেষ করে বেরিয়ে আসতে চাইলো। এতোটা নিচ মনের মেয়ের সঙ্গে সারাজীবন কিভাবে কাটাবে? প্রচণ্ড রা*গ হচ্ছে নিজের উপরে।আরিয়ান সামান্য এগিয়ে আসতেই আবারও উচ্চারিত হলো,
> থামুন এতোটা উত্তেজিত হবেন না। আমিতো জাস্ট কৌতূহলী হয়ে জানতে চেয়েছি তাতে রা*গের কিছু দেখিনা। আর বিয়েটা করতে কিন্তু আপনি বাধ্য। আপনার প্রাণাধিক প্রিয় ফুপিমা এই বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমার মনে হয় না আপনি উনার কথার খেলাপ করবেন। নয়তো ছোট থেকে জেনে আসছেন ফুপিমায়ের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। সেখানে হঠাৎ আপনার ফুপিমা কিভাবে অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে আপনাকে বিয়ে দিচ্ছেন? আপনার মনে কি সেই সুন্দরী রমণীর জন্য সামান্যতম জায়গাও তৈরী হয়নি?
মেয়েটার রিনরিনে কণ্ঠের তীক্ষ্ণ বাক্যে আরিয়ানের হৃদয় ভেঙে চুরমার হলো। সবটা কেমন এলোমেলো লাগছে। এ কি য*ন্ত্রণা? মেয়েটা যেনো ওকে পু*ড়িয়ে অঙ্গার করতে কোমর বেধেঁ নেমেছে। কথার খোচা সহ্য হচ্ছে না। বুকের ডান পাশে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে। বাইরে শোরগোল হচ্ছে আত্মীয় স্বজন এসেছে।যদিও বিয়েটা পরিবারের লোকজন নিয়ে হচ্ছে। আপাতত কাউকে বলা হচ্ছে না। ফুপির পছন্দে সবটা হচ্ছে বিধায় মেয়ে দেখা হয়নি। সব ঠিকঠাক ছিল আজ হঠাৎ ফুপিমার আদেশ মানতে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো সেখানেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি। মেয়েটা হয়তো ওর দুর্বলতা জানে তাই এমন সুযোগ নিচ্ছে। ফুপিমায়ের পছন্দ এমন জ*ঘন্য বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আরিয়ান বাক শূণ্য হয়ে গেলো। পা উঠছে না। তবুও কিছু বলা উচিৎ বিধায় চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
> আমাকে নিয়ে যখন এতোটা সমস্যা তবে বিয়ের জন্য রাজি কেন হয়েছেন? আপনাকে কি কেউ বাধ্য করেছে নাকি জোর জব*রদস্তি করেছে? আরিয়ান শাহারিয়ারের জীবনে কোনো নারীর পদচারনা এতোটাও গুরুত্বপূর্ণ না। নেহায়েত ফুপি মা বলেছেন। আপনার শিক্ষা আর মানুষিকার উপরে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এহেন নারীকে বিয়ে করে কতটা সুখে থাকবো আল্লাহ ভালো জানেন। আমাকে আর বিরক্ত করবেন না। বিয়ে ভাঙার হলে আপনার বাবাকে বলবেন। অহেতুক এসব ক*টুক্তি শুনতে আমি আগ্রহী না।
আরিয়ান কথাগুলো শেষ করে দ্রুতগতিতে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা ভেবে থমকে গেলো। পূণরায় পিছু ফিরে আশপাশটা দেখে নিলো। রুমের মধ্যে আবছা আলো বিরাজমান। দক্ষিণের জানালা খোলা থাকলেও পূর্বেরটা বন্ধ আছে। সেখানে লম্বা একটা পর্দা টাঙিয়ে রাখা। পর্দার নিচ থেকে ফর্সা দুখানা পা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আঁকাবাঁকা লতার ন্যায় নুপুরের নিচ অবধি হলুদে মাখামাখি। আরিয়ান থমকে গেলো। এটা এতোক্ষন নজরে আসেনি। যাওয়ার সময় হঠাৎ চোখে পড়লো। সেদিকে তাকাতেই পাশের ঘোমটা টানা মেয়েটা চনলচ হয়ে উঠলো,
> কি হলো ওদিকে কি দেখছেন?
আরিয়েন চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
>যাচ্ছি।
আরিয়ান সময় নষ্ট করলো না। টানপায়ে বেরিয়ে আসলো। নিজেকে এতোটা অসহায় হয়তো এর আগে মনে হয়নি। বাড়িতে আরোহী উল্টোপাল্টা কাজকর্ম করছে। প্রিয় মানুষটার বিয়ের খবর শুনে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দরজা বন্ধ করেছে। কমোলিনি নিজের সন্তানদেরকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন কিন্তু এই বিষয়ে নিরব আছেন। কি হচ্ছে কেন হচ্ছে কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই আরিয়ানের কাছে। ভেবেছিল একবার ফুপির সঙ্গে দেখা করবে।কিন্তু পরে আর বলা হলো না। যা হচ্ছে হতে দিতে বাধ্য। কারণ কিছু কথা ওর অজানা নেই। ফুপি মা কন্যার বাবার থেকে পঞ্চাশ বিঘা জমি লিখিয়ে নিয়েছে। মায়ের মতো ফুপির এমন রূপ ওকে আরও নীরব করে দিয়েছে। বরযাত্রী যাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে আরোহী চিৎকার চেচামেচি করতে করতে আরিয়ানের কক্ষে এসে হাজির হলো। দরজা বন্ধ করে প্রিয় মানুষটার দিকে তাকিয়ে অ*ন্তর জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হলো। নিজেকে ঠিক রাখতে পারলোনা। আরিয়ানের উপরে ঝাপিয়ে পড়ে বি*লাপ করে বলল,
> কেন এমন করছো আরিয়ান? চলো পালিয়ে যায়। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে আম্মা ঠিক মেনে নিবে। প্লিজ আমাকে এতোটা কষ্ট দিওনা। ছোট থেকে তোমাকে নিজের করে ভেবে এসেছি। এক বাড়িতে থেকে তোমার উপরে উন্য নারীর অধিকার আমি সহ্য করতে পারবো না। এর চেয়ে আমার মৃ*ত্যু ভালো। পারছি না নিজেকে ঠিক রাখতে। কিছুতো বলো।
আরিয়ান চোখ বন্ধ করে নিলো। মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে কিন্তু এছাড়া যে কোনো পথ খোলা নেই। শক্ত হাতে আরোহীর হাতটা নিজের থেকে ছাড়িয়ে দিয়ে উত্তর দিলো,
> নিজেকে সামলাতে হবে আরু। তুমিতো জানো ফুপিমা আমার জন্য কি? আমি পারবোনা উনার কথার খেলাপ করতে। তাছাড়া আমিতো কখনও তোমাকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখিনি। হৃদয় ঘটিত কোনো বিষয়ে আমি কি জড়িত বলো আমায়?শান্ত হয়ে শুনো, তোমার জীবনে আমার থেকেও ভালো কেউ আসবে। আল্লাহর উপরে ভরসা রাখো। তুমি হচ্ছো চৌধুরী বাড়ির রাজকন্যা আমি তোমার উপযুক্ত না।
আরিয়ান এলোমেলো কথা বলে ওকে বোঝাতে চাইছে কিন্তু মেয়েটা অবুঝের মতো ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
> এটা সবাই বলে। তুমি পা*ষান হৃদয়ের, তোমার মন বলতে কিছু নেই। আমারই ভুল একটা প্রাণহীন মানুষকে ভালোবেসেছি। কিছু করতে হবে না তোমাকে। যা করার আমিই করবো।
আরোহী দৌড়ে নিজের কক্ষের দিকে ছুটলো। আরিয়ান ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। মাথার টুপিটা ছুড়ে দিয়ে দুহাতের তালুতে মুখ ঢাকলো। যৌতুক নিয়ে বিয়ে করতে হচ্ছে বিষয়টা কতটা গোপন আছে জানা নেই তবে নিজের কাছে নিজে যে কি পরিমাণ ছোট হয়েছে সেটা শুধু আল্লাহ ভালো জানেন।
শত কষ্ট বুকে নিয়ে আরিয়ানকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হলো। আরোহীকে কক্ষে বন্ধ রাখা হয়েছে। এতোটা ঝামেলা বাড়িতে তবুও কমোলিনির মুখে হাসির কমতি নেই। নিজ দায়িত্বে বিয়েটা করিয়ে দিলেন। বাসা থেকে তেমন কেউ আসলো না। ভাইয়ের ছেলে অথচ ভাই সেখানে উপস্থিত নেই। প্রথম স্ত্রী আর ছেলেমেয়ে নিয়ে দিব্যি আছেন। আরিয়ান বুঝতেই পারেনা বাবা নামের লোকটা ওর মাকে কেন বিয়ে করেছিলো নাকি কোনো রহস্য আছে?যে স্ত্রীর মৃ*ত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসা ফিকে হয়ে গেলো। ঝড়ঝঞ্ঝা শেষে বিয়ের কাজকর্ম শেষ হলো কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ চৌধুরী বাড়ি থেকে ফোন আসলো আরোহী ঘুমের ওষু*ধ নিয়েছে। নতুন বউ ছেড়ে ছুটতে হলো বাড়ির দিকে।
*******
সারারাত হাসপাতালে পার করে আরিয়ান ক্লান্ত হয়ে গেলো। মধ্য রাতে কমোলিনি আরিয়ানকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। বউ তুলে আনা হয়নি। ইব্রাহিম খানের একটাই মেয়ে। তাই যতদিন না উপযুক্ত হচ্ছে মেয়ে নিজের কাছে রাখবেন। আরিয়ান এই বিষয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি বরং খুশি হয়েছে। ভেঙে যাওয়া হৃদয় নিয়ে নতুন জীবন শুরু করা বেশ কঠিন। ভেবেছিল শশুর বাড়িতে পা রাখবে না তবুও যেতে হলো। ইব্রাহিম খান ফোন দিয়েছিলেন উনি অপেক্ষা করছেন। জরুরি কিছু দরকার আছে জামাইয়ের সঙ্গে। আরিয়ান মাঝরাতে উপস্থিত হলো শশুর বাড়িতে। সকলে তখন গভীর ঘুমে অচেতন। শশুরের সঙ্গে আলাপালোচনা শেষ হলে ওকে কক্ষে পাঠিয়ে দিলেন। আরিয়ান চুপচাপ কক্ষে প্রবেশ করলো। সাজানো গোছানো কক্ষের মাঝামাঝিতে একটা পালঙ্ক রাখা। পাশেই বড় একটা ড্রেসিং টেবিল। কক্ষে আহামরি তেমন আসবাবপত্র নেই তবে চমৎকার ভাবে সাজানো। কক্ষের মালিক বেশ সৌখিন বোঝা যাচ্ছে। আরিয়ান সেসব পাত্তা দিলোনা। সদ্য বিয়ে করা বউয়ের মুখ এখনো অবধি দেখা হয়নি। দেখার আগ্রহ সেই তীক্ষ্ণ কথার খোচা শুনেই হারিয়ে গেছে। কক্ষে নজর ঘুরিয়ে মেয়েটা কোথায় আছে জানতে ও বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো। কক্ষে আলো থাকলেও বেলকিনতে আবছা অন্ধকার বিরাজ করছে। দরজার সামনে পা ফেলতে গিয়েই ও থমকে গেলো। বাগানের দিকে চেয়ে এক রমণী দাঁড়িয়ে আছে। কোমর অবধি খোলা চুল বাতাসে এলোমেলো হয়ে মুখের উপরে উড়ছে। অদম্য আগ্রহ নিয়ে মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে ও চমকে উঠলো। আনমনে উচ্চারণ করলো,
> উম্মে দিলরুবা মেহেরুন চৌধুরী!
মেয়েটা এবার পুরোপুরি ওর দিকে চেয়ে প্রতিবাদ করলো,
> না, উম্মে দিলরুবা জাহান খান। জাহান অর্থ পৃথিবী আর দিলরুবা অর্থ প্রিয়তমা। আপনি যেকোন একটা ডাকতে পারেন। অথবা অন্যদের ন্যায় জান বলতে পারেন। আমি কিছু মনে করবো না।
মেয়েটা নিজের মতো বকবক করে চলেছে। আরিয়ানের দৃষ্টি মেয়েটা মুখের দিকে। এই মুখ এই চোখ সবটা ওর চেনা। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? যার মুখের আদলে এই মুখটা গড়া সেতো কবেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে। তবে কে এই রমনী? উম্মে দিলরুবা মেহেরুন চৌধুরী যার মৃ*ত্যু ওর চোখের সামনে হয়েছিল। যখন ওর বয়স ছিল পাঁচ বছর। সবটা মনে না থাকলেও অসংখ্য ছবি ভিডিও চৌধুরী বাড়ির প্রতিটা ফোনে রাখা আছে। এমনকি ড্রয়িং রুমের সদর দরজা বরাবর বড় ফ্রেমে একটা ছবি আটকানো আছে। হুবহু কিভাবে সেই মেয়েটা সঙ্গে এই মেয়ের মিল হতে পারে? আরিয়ান হজম করতে পারলোনা। পিছিয়ে আসলো। একপা দুপা করে কক্ষের বাইরে পা ফেললো। ততক্ষণে ফজরের আযানের শব্দে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। সবটা চোখের ভুল নাকি সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না। ফুপির কাছে জিঞ্জাসা করতে হবে ভেবেই বাড়ির দিকে ছুটলো। এটা গভীর ষড়*যন্ত্র নাকি রহস্য? ফুপি মা জেনে বুঝে কিছুতেই মেহেরুনের মতো দেখতে মেয়েকে ওকে সঙ্গে জুড়ে দিবেন না। তাছাড়া বিবাহের সময় মেয়ের মুখ না দেখলেও নাম শুনেছিলো উম্মে আহিয়া খান আদর অথচ বাসরে আসলো অন্যকেও। এটা কেমন কথা? এক এক সময় এক এক মেয়েকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিসের এই লুকোচুরি?
চলবে
#চন্দ্রকিরণ
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
সূচনা পর্ব
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।