#আনন্দ_অশ্রু
#পর্ব_১৫
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
রেহানের এমন সোজা সাপ্টা উত্তরে মায়ার প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে না। রেহানও উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। মায়া কিছুক্ষণ রেহানের দিকে তাকিয়ে থেকে সোজা চলে যায় রান্না ঘরে রান্না ঘর থেকে একটা ছুরি আর কাটা চামচ নিয়ে আবার নিজের ঘরে ফিরে আসে। রেহান মায়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো। মায়া ঘরে ঢুকেই বলে,
দেখেন তো চকিদার মশাই ছুরিতে ধার আছে কিনা আর এই কাটা চামচের কাটা গুলো সরু কিনা?
রেহান মায়ার কথায় মিটি মিটি হাসছে, মায়ার পরিকল্পনা কী সেটা রেহান খুব ভালোই বুঝতে পারছে। বুঝেও না বুঝার ভান করে মায়াকে বলে,
ছুরিতে মাশাআল্লাহ খুব ধার আছে আর কাটা গুলোও খুব সরু। কিন্তু এইগুলো দিয়ে কী করবে শুনি? কাউকে মাডার করার প্ল্যান করছো নাকি?
রেহানের কথা আর ওর চেহারার ভঙ্গি দেখে মায়া দাতে দাত চেপে বলে,
আজকে অনেক মশা মাছি প্রেসকন্ট্রোল করাতে হবে তাই একটু প্রস্তুতি নিচ্ছি। আজকের কার্যক্রম আপনাকে দিয়ে শুরু করবো ভাবছি। বউয়ের হাতে খুন হওয়ার আগে কোনো কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন একবার যদি আমি আমার কাজ শুরু করি পরে কিন্তু কোনো কিছুই আমি শুনবো না।
রেহান মায়ার রাগের অবস্থাটা বুঝতে পারছে মায়াকে আর একটু রাগানোর জন্য বলে,
আজকাল যে সত্যি কথার ভাত নেই এটা আজ প্রমাণিত। বউয়ের কাছে আদর নিতে এসে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছি এখন তার শাস্তি ভোগ করবো। আমার শেষ ইচ্ছা হচ্ছে হসপিটালের ওই সুন্দরীদের শেষ বারের মত একটু মন ভরে দেখতে চাই। প্লিজ বউ আমাকে ওই সুন্দরীদের কাছে যেতে দাও।
রেহানের কথায় এবার মায়ার রাগ আগ্নেয়গিরির রুপ ধারণ করেছে রেহানের দিকে কাটা চামচ উঠিয়ে বলে,
যাও ভেবেছিলাম ইচ্ছে পূরন করবো এখন ইচ্ছেটা শুনে ইচ্ছে পূরন করার ইচ্ছে মরে গেছে এখন আপনাকে খুন করার ইচ্ছে আমার মনে খুব তারা দিচ্ছে। এই কাটা চামচ দিয়ে প্রথমে আপনার ওই পথভ্রষ্ট চোঁখ দুটো উঠাবো তারপর ছুরি দিয়ে আপনার মিথ্যা বলা জবানটাকে কাটবো তারপর আপনি মরে গেলে আপনার বিশাল বড় ভয় ডরহীন কলিজাটা বের করবো তারপর এই ছুরি দিয়ে সুন্দর করে পিস পিস করে কাটবো আর ভালো করে লবণ মরিচ মিশিয়ে রোদে শুখাবো।
মায়ার রাগের অবস্থা খুব ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করছে দেখে রেহান মায়ার হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে মায়ার মাথাটা চেপে ধরে। মায়া হাত ছুরা ছুরি করছে রেহান মায়াকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,
আসু, একটু শান্ত হও আমি এমনি মজা করে কথা গুলো বলেছি আমি জানতাম না যে তুমি এতটা রেগে যাবে প্লিজ একটু শান্ত হও।
তোমাদের হসপিটালে যে নতুন ভবনটা তৈরি হচ্ছে সেটা নির্মাণের কন্ট্রাকটা আমি পেয়েছি। সেদিনও আমি ওখানে সাইড ভিজিট করতে গিয়েছিলাম বুঝতে পেরেছো। আমি কোনো মেয়ে দেখতে যায়নি, আমার এতো সুন্দর বউ থাকতে আমি কেনো অন্যের বউদের দিকে নজর দিবো বলো?
মায়া রেহানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে রেহানের দিকে তাকায়। রেহান মায়ার নাকের পানি চোঁখের পানি মুছে খাটের উপর বসিয়ে দেয় আর রেহান মায়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো মায়ার হাত ধরে বলে,
প্রায় সাড়ে ছয় বছর হলো এক ছোট্ট মেয়ের মায়ার জলে আটকা পড়েছি তার মায়ার জাল থেকে একবার বের হতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু বের হতে গিয়ে তার ভালবাসার চোরাবালিতে হারিয়ে গেছি। এখন মেয়েটাকে দেখলে চোরাবালি থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছে হয় না। তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি তোমাকে খুব করে চাই, তোমার থেকে দূরে থেকেও তুমি ছাড়া কিছু ভাবিনি আর এখন তোমাকে এতো কাছে পেয়ে কী করে অন্য কিছু ভাবি বলতো।
মায়া রেহানের কথা গুলো শুনে কান্না মিশ্রিত হাসি দেয়, রেহানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
আপনার পথ হারা দৃষ্টির গন্তব্য আমাতে এসে থামবে, আপনার অবাধ্য মনের একমাত্র বাধ্যকতা আমি। যদি আমাকে ভুলে যেতে চান তাহলে অনুরোধ করছি আমাকে মেরে ফেলুন কারণ আপনার সামনে থেকে আপনার অবহেলা আমি সইতে পারব না। আপনি আমার একমাত্র একান্ত ব্যাক্তিগত ভালোবাসার মানুষ। আপনাকে ছাড়া আমার প্রতিটা নিশ্বাস আমার ওপর হারাম হয়ে যায়।
রেহান মায়ার কপালে চুমু খেয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারবো না, ভুলে যাওয়ার কোনো রাস্তা এখনও তৈরি হয়নি আর মনে হয়না তৈরি হবে।
আমি ভুলতে দিলে তো ভুলবেন।
আগে যদি জানতাম একটু চুমু খেতে এসে এমন বিপদে পরে যাবো তাহলে ভুল করেও বউ নামক বিপদের সম্মুখীন হতাম না।
আপনার কপাল ভালো আজ আমার হাত থেকে বেঁচে গেছেন নয়তো বাসর সারার আগেই বিদায় পৃথিবী হয়ে যেতেন।
বউ দয়া করে এমন ভয়ঙ্কর হুমকি দিও না তোমার হুমকিতে আমার খুব ভয় হয়।
হয়েছে এখন আর এতো নাটক করতে হবে না চলেন এখন হসপিটালে যেতে হবে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
হসপিটালে যাওয়ার কথা শুনে রেহান উঠে দাঁড়ায় তারপর মায়াকে দার করায়, নিজের কথা মতো এক ডরজন চুমু দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আবার ছেড়ে দিয়ে মায়া নাফিসা তানজিল আর শাফায়াত কে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
___________________
হসপিটালের ক্যান্টিনে বসে আছে মায়া, নাফিসা আর শাফায়াত। কয়েকটা মেয়ে শাফায়াত কে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। নাফিসা আর মায়া মেয়ে গুলোর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাফায়াত মায়া আর নাফিসার চেহারার হাবভাব দেখে হাসছে।
এইযে মিসেস রেহান শিকদার আপনার পাশের জন কে একটু ঠাণ্ডা পানি খাওয়ান ওনার ভিতরে সব জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। আমার কাজ ছিলো মিস হুরায়রা নাফিসা শিকদারকে আমার ফ্যান ফলোয়ার দেখানোর আমি তা দেখিয়ে দিয়েছিএখন আমি উঠি ডক্টর তন্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি ওনার জ্বালাপোড়া কমান।
কথা গুলো বলেই চলে গেলো শাফায়াত। নাফিসা প্রায় কান্না করে দিলো বলে।
আরে দোস্ত তুই ভেঙ্গে পড়িস না। এই বাঙ্গালী মাছিদের যেই চেহারা তা দেখে মনে হয়না শাফায়াত এদের পছন্দ করবে।শাফায়াত যদি বুদ্ধিমান হয় তাহলে এই মাছিদের কবলে পরবে না।
আর যদি বুদ্ধিমান না হয় তাহলে আমার কী হবে দোস্ত? আমি তো বিরহের আগুনে ঝলসে যাবো।
অফও তুই একটু বেশি নেগেটিভ চিন্তা করছিস, এমন কিছুই হবে না।
তুই সত্যি বলছিস দোস্ত আমার বাংলিশ রসগোল্লা বাঙ্গালী মাছির কবলে পরবে না তো?
হুমম সত্যি বলছি।
_______________
রেহান তানজিলের চেম্বারের বসে বসে তানজিলের সাথে কথা বলছিলো তখন দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি চায় ডক্টর তন্ময়। তানজিল হাসি মুখে তাকে ভিতরে আসতে বলে এবং বসতে বলে।
তন্ময় তুমি আমার চেম্বারের কোনো দরকার ছিল ?
তানজিল ম্যাম আপনার সাথে একটু কথা ছিল।
হ্যাঁ বলো, কোনো সমস্যা নেই। ওর সামনেই বলতে পারো ও হচ্ছে আমার ছোটো ভাই রেহান আর রেহান হচ্ছে ডক্টর তন্ময়।
রেহান আর তন্ময় কুশল বিনিময় করলো। তারপর তন্ময় তার কথা বলতে শুরু করলো,
আসলে,ম্যাম কথাটা হচ্ছে আমি আমার বাবা মাকে নিয়ে আপনাদের বাড়ি কিছু কথা বলতে যেতে চাই।
অবশ্যই তুমি তোমার বাবা মাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসতে পরো কিন্তু কী বিষয়ে কথা বলতে আসবে সেটা তো বললে না
তানজিলের প্রশ্নে তন্ময় একটু ভীতু কন্ঠে উত্তর দেয়,
আসলে কথাটা নাফিসাকে নিয়ে। আমি নাফিসাকে বিয়ে করতে চাই তাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাবা মাকে আপনাদের বাড়ি পাঠাতে চাই।
তন্ময়ের এমন প্রস্তাব শুনে রেহান আর তানজিল দুজনেই চুপ করে আছে। এখন যদি এখানে রেহান কিছু না বলে তাহলে শাফায়াত আর নাফিসার বিষয়টা একটু জটিল হয়ে যাবে তাই রেহান আর চুপ করে না থেকে বলে,
তন্ময় আপনি হয়তো একটু দেরি করে ফেলেছেন গতকালই নাফিসার বাগদান হয়ে গেছে।আমাদের পারবারিক বন্ধুর পরিবারের সাথেই বিয়েটা ঠিক হয়েছে। আশা করছি আপনি বিষয়টা বুঝতে পারছেন।
রেহানের এমন কথায় তানজিল যেনো আকাশ থেকে পরলো গতকাল বাড়িতে ঘটলো কী আর রেহান এখানে বলছে কি। তানজিলের সাথে সাথে তন্ময়ও একটা ধাক্কা খেল। রেহানের কথায় তন্ময় একটু হেসে বলে,
আমি জানতাম না যে নাফিসার বাগদান হয়ে গেছে জানলে এমন প্রস্তাব নিয়ে আসতাম না।
সত্যি আমিও তোমার মত এক্ষনি জানলাম (তানজিল)
তানজিলের এমন কথায় তন্ময় বিস্ফোরিত চোখে তাকায় রেহানের দিকে তন্ময়ের চাহুনি আর তানজিলের কথায় রেহান অপ্রস্তুত হয়ে পরে। তানজিল ব্যাপার টা সামলানোর জন্য বলে,
আমিও যে কী বলতে গিয়ে কী বলে ফেলি, বলছিলাম নাফিসার বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে নাফিসার বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামী মাসেই বিয়ে। আমি বুঝতে পারছি তন্ময় তুমি মন খারাপ করছো। দেখো মন খারাপ করো না বিষয়টা খুব বেশি দূর গড়ায়নি তাই এটাকে এখানে এই চেম্বারের শেষ করে দেই আর আগের মত হয়ে যাই।
তানজিলের কথায় মলিন হাসলো তন্ময়। তারপর পুরনো সব কথা বাদ দিয়ে কিছুক্ষন রেহান আর তানজিলের সাথে কথা বলে চলে যায়। তন্ময় যেতেই তানজিল রেহানের কাছে জানতে চায় কেনো সে এমন কথা বললো? রেহান তানজিলকে বলে আগামী দুই দিনের মধ্যেই সব কিছু জানতে পারবে তাই একটু ধর্য্য ধরতে বললো। তানজিলও জানে রেহান শুধু শুধু কোনো কথা বলে না তাই রেহানের কথায় সায় দিল।
_________________
নিজের ঘরে বসে আছে শাফায়াত রেহান দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি চায়,শাফায়াত ভিতরে আসতে বলে,
ছোটো শ্বশুর আপনাকে না কত বার বলছি আমার ঘরে আসলে আপনার অনুমতি নেওয়া লাগবে না তাও কেনো এমন করেন?
আমি কি তোর মতো মেনারলেস? ফালতু কথা বাদ দিয়ে এখন আমার কথা শোন তোকে বলেছিলাম শ্বশুর বানানোর গতি কমাতে তোকে তো প্রোপোজ করার গতি কমাতে বলি নাই।
ধুর ছোট শ্বশুর কী বলেন আমার বুঝি লজ্জা লাগে না?
ওহহ আল্লাহ্ মেহেরবান তোর লজ্জা আছে এটা শুনে আমার লজ্জা করছে। এরো শাফায়াত তুই এই লজ্জা নিয়ে পরে থাক আর ওদিকে ডক্টর তন্ময় আগামী পরশু নাফিসার জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসছে আমার মনে হয় মিয়া ভাই এই প্রস্তাবে রাজি হবে তুই বিয়ের দাওয়াত খেয়ে ইউএসএ রওনা দে বুঝলি।
রেহানের কথা শুনে শাফায়াত বিদ্যুৎ বিহীন খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছে।শাফায়াতের অবস্থা বুঝে রেহান আবারও বলে,
শোন এমন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে হাতে যেই সময় টুকু আছে সেটা কাজে লাগা বুঝলি। আমার যতটুকু সাহায্য করার আমি করেছি এর পর তোর কাজ। চাই ছিলাম বাংলা ছবির ভিলেন শ্বশুর হতে কিন্তু হয়ে গেলাম নায়কের বন্ধু। সবই ভাগ্য, ভাগ্য যে কাকে কখন কোথায় নিয়ে যাবে সেটা বলা বরই মুশকিল।
কথা গুলো বলে সোজা ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় রেহান আর শাফায়াত খাড়া থেকে ধুম করে মেঝেতে বসে পরে। কী করবে কী না করবে ভেবে পায়না সে। তার কানে একটা কথা বারবার বারি খাচ্ছে, নাফিসার বিয়ে নাফিসার বিয়ে।
আজ পুরো শিকদার বাড়ি নতুন করে সেজে উঠেছে। আজ রেহান আর মায়ার বিহাহ বার্ষিকী। রেহান আজ আবার মায়াকে বিয়ে করবে। খুব বড় কোনো আয়োজন না শুধু বাড়ি মানুষ গুলো।সকাল থেকে নাফিসা মায়াকে তৈরি করছে এখন প্রায় দুপুর হয়ে গেছে।শাফায়াত অস্থির মনে নাফিসার জন্য অপেক্ষা করছে কখন নাফিসা নিজের ঘর থেকে বের হবে আর কখন সে তার মনের কথা গুলো নাফিসাকে জানাবে।
ঘড়ির কাঁটা বেলা দুইটা ছুঁই ছুঁই নাফিসা মায়াকে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো, বধূ বেশে মায়াকে রেহান আগেও একবার দেখেছে আজ আবার দেখছে মায়াকে দেখতে খুবি সুন্দর লাগছে বিয়ের সাজে যেনো মায়াকে আরো বেশি আকর্ষিত লাগছে। রেহান মায়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
অবশেষে তোমাকে পাওয়া আমার বউ………………
#চলবে………………
গল্পটি সম্পর্কে (রিভিউ) আলোচনা সমালোচনা করুন এই গ্রুপে।(যেকোনো গল্প খুজতে আমাদের গ্রুপটি ব্যবহার করতে পারেন)
গ্রুপ লিঙ্ক👇
https://www.facebook.com/groups/273212672043679/?ref=share_group_link