#হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া
#পর্বঃ২৩
#আদওয়া_ইবশার
আদরের মেয়ের এমন পরিণতির কথা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি রওশন আরা। জ্ঞান হারিয়ে তৎক্ষণাৎ লুটিয়ে পরেন। সেন্টার টেবিলের কোণায় কপালের এক পাশ লেগে গলগল রক্তের ধারা বয়ে যায়। মুহূর্তের মাঝে এমন একটা ঘটনা চোখের সামনে ঘটে যাওয়ায় নাহিদ ভেবে পায়না কি করবে। মস্তিষ্ক একেবারেই ফাঁকা হয়ে যায়। পাপড়ি আর পালকের চিৎকারে হুশ আসে তার। ত্রস্ত ভঙ্গিতে ছুটে গিয়ে রওশন আরা’কে পাজো কোলে নিয়ে ছুটে হাসপাতালের দিকে। কপালের ক্ষতটা খুব বড় না হলেও একদম ছোটখাট’ও বলা যায়না। দুটো সেলাই লেগেছে। ডাক্তার জানিয়েছে প্রেশার একেবারে লো হয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। স্যালাইন চলছে বর্তমানে। এখনো জ্ঞান ফিরেনি।
একদিকে ভালোবাসার মানুষেটার জীবনের এতো বড় একটা তিক্ত সত্য। অন্যদিকে মা সমতুল্য মানুষটার মেয়ের শোকে মূর্ছা যাবার জোগান। সব মিলিয়ে নাহিদ নিস্তেজ হয়ে পরেছে। মন মস্তিষ্ক দুটোই জাগতিক সমস্ত কিছু ছেড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে গিয়ে একটু স্তস্থির নিঃশ্বাস নিতে চাইছে। অবচেতন মন বারবার বিধাতার কাছে আর্জি জানাচ্ছে, আজকের এই ঘটনাগুলো পুরোটাই মিথ্যে হোক। হোক ঘুমের ঘোরে দেখা কোনো এক দুঃস্বপ্ন। ভেঙে যাক ঘুমটা। মিথ্যে হয়ে যাক সর্বনাশা সত্য গুলো।জীবনটা রঙিন হয়ে উঠোক আবার সেই আগের রঙে। প্রিয়তমাকে সঙ্গে নিয়ে দেখা স্বপ্ন গুলো সত্যি হয়ে ধরা দিক মানসপটে। কিন্তু পূরণ হলনা তার অবচেতন মনের চাওয়াটুকু। কর্ণগোচর হয় রওশন আরা’র গগনবিদারী চিৎকার। সমস্ত চিন্তার জালগুলো ছুড়ে ফেলে ছুটে যায় কেবিনে। দেখতে পায় এক অসহায় মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তার ভঙ্গুর হৃদয়ের আহাজারি নির্মল বাতাসের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। বেদনায় ছেয়ে যাচ্ছে ফুরফুরে বাতাসটুকু সেই মায়ের আর্তনাদে। পাগলের মতোই মেয়ের মাথাটা বুকের সাথে মিশিয়ে বারবার একই কথা আওড়ে যাচ্ছে,
“আমার মা। তুই আমার সোনা মা। তোর কিচ্ছু হবেনা আম্মু। আমি তোর কিচ্ছু হতে দিবনা। আল্লাহর কাছে আমার নিজের জীবনের বিনিময়ে তোর জীবন ভিক্ষা চাইব। আমার বুকের ধনটার সুস্থ্য সুন্দর একটা জীবন চাইব। আল্লাহ আমার কথা শুনবে। আমি তো নিজের জানামতে কখনো কোনো পাপ করিনি। শুনবে, আমার কথা শুনবে আল্লাহ। আল্লাহ! আল্লাহ তুমি আমার এতো বড় সর্বনাশ করোনা। একটু দয়া করো আল্লাহ। একটু রহম করো। আমার বুকটা খালি করে দিওনা তুমি আল্লাহ।”
ফ্যালফ্যাল নয়নে দুই বোন শুধু মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখ দিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারেনা দুজনের একজনেও। মায়ের এমন করুণ আহাজারিতেই পাপড়ির যা বোঝার বুঝে গেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার সামনে নাহিদকে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বহু কষ্টে মায়ের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। শান্ত ভঙ্গিতে হেঁটে যায় নাহিদের কাছে। অত্যন্ত শীতল কন্ঠে জানতে চায়,
“কি হয়েছে আমার?”
কিছু বলার সাহস পায়না নাহিদ। মাথা নিচু করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। দাড়ানোর শক্তিটুকুও শরীর থেকে আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। পুরো পৃথিবীটা মনে হচ্ছে ঘুরছে। মনে মনে শুধু আওড়াচ্ছে, “শেষ। সব শেষ। আল্লাহ ! আপনি আমাকে শক্তি দিন। ধৈর্য্য দান করুন।” নাহিদকে এমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অধৈর্য কন্ঠে পূণরায় প্রশ্ন করে পাপড়ি,
-“কি হলো বলুন! ডাক্তার কি বলেছে? মা’কে কি বলেছেন আপনি যেটা সহ্য করতে না পেরে মা জ্ঞান হারালো? কি হয়েছে আমার বলুন আমাকে।”
বারকয়েক ছোট ছোট ঢোক গিলে শুকনো গলাটা ভিজিয়ে নেয় নাহিদ। বুক চিরে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসের সাথে নিজের ভিতরে চলা প্রলয় তান্ডব টুকু শান্ত করার ব্যর্থ প্রয়াস চালায়। রওশন আরা এখনো এক সুরে চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে। এক নজর সেদিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। ঠোঁটের কোণে বহু কষ্টে শুকনো হাসির রেখা টানে। ঠেলেঠুলে কোনোমতে বলে,
“কি হবে তোমার? কিছুই হয়নি। সামান্য জ্বর। ডাক্তার বলেছে ঠিকমতো মেডিসিন নিলে ভালো হয়ে যাবে।”
“আমি বাচ্চা নয় নাহিদ। এসব মামা বাড়ির গল্প শুনিয়ে কোনো লাভ নেই আমাকে। সত্যিটা বলুন দয়া করে। হোক যতই নির্মম সত্য। আমার জানার অধিকার আছে। এভাবে আমার থেকে সবকিছু লুকিয়ে রাখার কোনো অধিকার নেই আপনার। প্লিজ বলুন।”
দিশেহারা নাহিদের পাপড়ির একের পর এক প্রশ্নের তোপে পরে পাগলপ্রায় দশা। দুহাতে মাথার চুল খামচে ধরে ঘনঘন নিশ্বাস নেয়। দিকবিদিক হারিয়ে ছুটে পালায় পাপড়ির দৃষ্টির আড়ালে। নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে নাহিদের যাবার পানে তাকিয়ে থাকে পাপড়ি। নিরব কান্নার সমাপ্তি ঘটে একসময় শোনা যায় ফূপানোর শব্দ। আস্তে আস্তে কান্নার বেগ বাড়ে। সেই সাথে বাড়ে কান্নার আওয়াজ। ছোট পালক ভেবে পায়না কার পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। একদিকে মায়ের কান্না অন্যদিকে বোনের কান্না। কাকে রেখে কাকে সামলাবে দুটানাই ভোগে একসময় নিজেও কেঁদে ওঠে ফুপিয়ে।
***
স্যালাইন শেষ হতেই রওশন আরা’কে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে সকলেই। তিনজন মানুষের একাধারে চিৎকার করে কান্নায় অসুবিধা হচ্ছিল অন্যান্য রোগীদের। একসময় ডাক্তার, নার্স বিরক্ত হয়ে জানিয়ে দেয় রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বিদায় হতে। একজন রোগীর জন্য হাজারটা রোগীর অসুবিধা হোক তারা চায়না। মা-বোনের কান্নার কোনো হেতু খোঁজে না পেয়ে দিশেহারা পালক ফোন করে মামার বাড়ি। ছোট পালকের মুখে ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা শুনে ঘন্টা পেরোনোর আগেই ছুটে আসে রওশন আরার দুই ভাই। কান্নারত বোনের মুখে আদরের ভাগ্নির মরনব্যধির কথা শুনে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় তারাও। বোকা নাহিদ হাজার ছলছাতুড়ি করার পরও পাপড়ি ঠিকই মায়ের বর্ণনায় জেনে যায় তার ক্যান্সারের কথা। একজনের থেকে অন্যজনের কাছে কথাটা যেতে যেতে একসময় পাপড়ির পুরো আত্মীয়স্বজনের কাছেই পৌঁছে তার করুণ পরিণতির খবর। রাতের অন্ধকার ছাপিয়েই গুটিকয়েক আত্মীয় অদৃশ্য এক মায়ার টানে ছুটে আসে রওশন আরার ছোট্ট বাড়িটাতে। যে বাড়িটা প্রতিদিন এই সময় থাকতো একদম নিশ্চুপ সেই বাড়িটাই আজ লোকাসমাগমে ভরপুর। কিন্তু কোথাও একটু সুখের দেখা নেই। চারিদিকে শুধুই বিষাদের বেড়াজালে আবদ্ধ । মানুষ ছাপিয়ে যেন ঘরের প্রতিটা দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পরেছে শোকের মাতম।
অধিক শোকে পাথরের মতো স্থির হয়ে আছে পাপড়ি। দুপাশ থেকে মা-বোন জাপ্টে ধরে করুণ সুরে কেঁদে যাচ্ছে। পাশেই সোফায় বসা দুই মামা মাথা নত কত লুকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। দাদির বাড়ির যে মানুষ গুলোকে আজীবন পাষাণ জেনে এসেছে আজকে সেই মানুষ গুলোর চোখ’ও নোনাপানিতে পরিপূর্ণ। কোনো কিছুই যেন একটুও ছুতে পারছেনা তাকে। শান্ত দিঘির মতো চোখ দুটো ঘুরিয়ে সবার থেকে দূরে একা দাঁড়িয়ে থাকা নাহিদের দিকে তাকায় পাপড়ি। পূণরায় মা-বোনের দিকে তাকিয়ে বহুক্ষণ পর মুখ খুলে। নিস্তেজ কন্ঠে বলে,
“কি আজব! এমন পাগলের মতো কাঁদছো কেন? আমি তো এখনো দিব্যি শ্বাস নিচ্ছি। সৃষ্টিকর্তা যতদিন আয়ুষ্কাল রেখেছেন ততদিন এভাবেই নিশ্বাস নিব। এভাবে কাঁদলে তোমার সাথে সাথে পালক’ও অসুস্থ হয়ে পরবে। এক মেয়ের শোক পালন করতে গিয়ে আরেক মেয়ের ক্ষতি করোনা। কান্না থামাও। আল্লাহ চাইলে আমার কিছুই হবেনা।”
কথাটা শেষ করে দুজনের মাঝ খান থেকে ওঠে যায়। ধীর পদক্ষেপে নাহিদের সামনে গিয়ে থামে। ক্লান্ত স্বরে বলে,
“আমাকে একটু বাইরে নিয়ে যাবেন? দম বন্ধ হয়ে আসছে এখানে। নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
আক্ষিকুঠোরে জমে থাকা অশ্রু গুলো বেরিয়ে আসতে না পেরে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে নাহিদের দুচোখ।রক্তিম চোখ দুটোতে অসহাত্ব নিয়ে তাকায় পাপড়ির দিকে। জ্বিভ দিয়ে শুকনো খড়খড়ে ঠোঁট দুটো বিজিয়ে জানতে চায়,
“বলো কথায় যাবে!”
“বেশিদূরে না। ঐ একটু রাস্তার পাশ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসলেই হবে। আমার মা-বোন তো কাঁদতে কাঁদতে ঘরের ভিতরের অক্সিজেন টুকু বিষাক্ত করে ফেলেছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বুক ভরে একটু শ্বাস নিতে চায়।
ঠোঁট কামড়ে মাথা ঝাকিয়ে কয়েকপল এদিক ওদিক তাকায় নাহিদ। উপস্থিত সকলেই শোক ভুলে তাদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এতো গুলো মানুষের দৃষ্টির তোপে পরে একটুও ঘাবড়ালোনা নাহিদ। সম্পূর্ণ এড়িয়ে পাপড়ির একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে বলে,
“চলো।” নাহিদের পিছু পিছু ধীর পদক্ষেপে সকলের সামনে অবলীলায় পাপড়ি বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। উপস্থিত মানুষ গুলোর দৃষ্টিতে এখনো বিষ্ময়। পাপড়ির বড় চাচা নুরুল ইসলাম রওশন আরার দিকে তাকিয়ে জানতে চায়,
“ঐ ছেলেটা কে? আগে তো কখনো দেখিনি। তোমার বাপের বাড়ির দিকের আত্মীয় হলে একবার হলেও নিশ্চয়ই দেখতাম। আর আমাদের কারো আত্মীয় হলেও তো চিনতাম। সম্পূর্ণ অচেনা একটা ছেলের সাথে পাপড়ি কিভাবে হাত ধরে চলে গেল? হোক সে যতই অসুস্থ। তাই বলে কি জ্ঞান, বুদ্ধি লোপ পেয়েছে?”
এমন একটা প্রশ্নে একটু রাগ হলো পালকের। যে মানুষ গুলো বছরে একবারও তাদের খোঁজ নিয়ে দেখেনা বেঁচে আছে না কি মরে গেছে। সেই সব মানুষের মুখে এসব কথা মানায় না কি? রওশন আরা কিছু বলার আগেই কাটকাট স্বরে চাচার প্রশ্নের জবাব দেয় পালক,
“ওনি নাহিদ ভাইয়া। ভাইয়া আপুকে ভালোবাসে। আর আপু’ও ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে। আমরা অনেক আগে থেকেই ভাইয়াকে চিনি। ওনি অপরিচিত কেউ নয় চাচা।”
পালকের কথা গুলো ছোটখাট একটা বোম ফাঁটানোর মতোই কাজে দিল। সকলের বিষ্ময় বেড়ে গিয়ে মাত্রা পেরোলো। রওশন আরা’ও কান্না ভুলে বিষ্মিত বদনে তাকিয়ে আছে ছোট মেয়ের দিকে। যে এই মুহুর্তে সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে দেবার মতো এতো বড় একটা কথা বলে দিল সেই পালক একদম নির্বিকার। বিষ্মিত ভাব কাটিয়ে নুরুল ইসলাম দারাজ গলায় একপ্রকার হুঙ্কার ছুড়েন।,
“কত বড় সর্বনাশা কথা! বেয়াদব হবারও একটা সীমা থাকে? রওশন! তোমার মেয়েরা না কি আমাদের বাড়িতে থেকে উশৃঙ্খল হয়ে যাবে তাই সবার সাথে যুদ্ধ করে আলাদা বাড়ি করে চলে এসেছো মেয়েদের সভ্য, ভদ্র বানাবে বলে। এই তার নমুনা? কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে সাহস পাবে এভাবে প্রেমিকের হাত ধরে গুরুজনদের সামনে থেকে হেঁটে যেতে? এমন দুঃচরিত্র মেয়ে তো আমাদের বংশে আর একটাও নেই।”
“আমার মেয়ে প্রেম করছে। সেটাও আমার অত্যন্ত পছন্দের ছেলের সাথে। কারো সাথে পালিয়ে যায়নি বা কোনো অবৈধ সম্পর্ক’ও স্থাপন করেনি ভাইজান যার কারণে আপনি আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে পারেন।আমার মেয়ে কি করল না করল, কার সাথে প্রেম করল বা কার সাথে বিয়ে হলো এসব দেখার দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দিন। দয়া করে আমার সংসারে আপনারা নাক গলাতে আসবেন না।”
চোখ-মুখ শক্ত করে কঠোর প্রতিবাদ জানায় রওশন আরা। যা পাপড়ির দাদার বাড়ির কারো পছন্দ হয়নি। স্বামীর মুখের এমনভাবে অপমানজনক কথা বলায় নুরুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়া মেজাজ খিঁচিয়ে বলে ওঠেন,
“একেই বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। যেমন কর্ম তেমন ফল। নইলে আল্লাহ আমাদের আর কারো এমন রোগ দিলনা কেন? আমরা যে ন’ষ্টা’মি করে বেড়াইনি তাই আমাদের এমন কঠিন রোগ-বালাই ও হয়নি কখনো। ন’ষ্টা’মির বিচার আল্লাহ দুনিয়ায়তেই করে দিচ্ছে। অন্যায় করবে আবার প্রতিবাদ করতে গেলে গায়ে ফোঁসকাও পরবে।”
এমন বি’ষবাক্যে বুকের ভিতরটা ঝাঝড়া হয়ে যায় রওশন আরা’র। প্রতিবাদ করে ওঠে পাপড়ির দুই মামা। এক কথা দুই কথা হতে হতে একসময় ছোটখাট একটা ঝগড়ায় রূপ নেয় বিষয়টা।সহ্য করতে না পেরে দুহাতে কান চেপে চিৎকার করে ওঠে রওশন আরা,
“চুপ করুন আপনারা! দয়া করে চুপ করুন। আমার নিষ্পপ মেয়েকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবেন না। বিয়ের পর থেকে আপনাদের বিষবাণ অনেক সহ্য করেছি আমি। তখন কোনো প্রতিবাদ করিনি বলে ভাববেন না আমার মেয়ের দিকে আঙ্গুল তুললেও আমি চুপ করে থাকব। সম্মানের সাথে বলছি বেরিয়ে যান আমার বাসা থেকে। আমার বা আমার মেয়ের পাশে আপনাদের কারো থাকার প্রয়োজন নেই। আমি একাই আগলে রাখব আমার মেয়েকে।”
অপমান হজম করতে না পেরে রোষপূর্ণ দৃষ্টিতে রওশন আরার দিকে তাকিয়ে একে একে সকলেই বেরিয়ে যায় পাপড়ির দাদার বাড়ির লোকজন। সেদিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসে রওশন আরা। দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে শ্লেষাত্বক স্বরে বলে,
“দেখেছো তোমরা কেমন ভদ্র পরিবারে বিয়ে দিয়েছিলে আমাকে! এরা না কি এসেছে আমার মেয়ের দুর্দিনে পাশে থাকার জন্য! আমার মেয়েটার এমন পরিস্থিতিতেও এতো বড় একটা অপবাদ দিয়ে গেল অমানুষ গুলো। মেয়েটা তো আমার ওদের রক্তের। তবুও একবার বুক কাঁপলনা এমন একটা কান্ড ঘটাতে? এখন যদি মেয়েটা এখানে থাকত এসব কথা শুনে মরার আগেই তো জীবন্ত লাশ হয়ে যেতো। আল্লাহ এই কোন পরীক্ষায় ফেলল ! কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছে আমার নিষ্পাপ মেয়েটাকে?”
চলবে…….
(সকলের ঘটনমূলক মন্তব্য আশা করছি।)