ইয়াসমিন_রিমা #অসম_প্রেম #পর্ব_২৩

0
561

#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_২৩

আসরাফ চৌধুরী এসে ভাতিজা কে বুকে আলিজ্ঞন করে নিলেন।তার বাড়ির বংশধর। রিনা চৌধুরী আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

,রিনা চৌধুরী,একি বাবা একি হাল করেছিস।গালে হাত বুলিয়ে।আলিশা মা একি হয়েছে ওর।

, আলিশা, আসলে বড় মা কি হয়েছে জানো।ও বিয়ে করেছিল । কিন্তু সে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে।

, আসরাফ চৌধুরী,কি বলছিস হ্যা।যে চলে গেছে সেত আর ফিরে আসেনি। এখন আদির নতুন জীবন শুরু করতে হবে। আমরা আছি না। দেখ বাবা যা হবার তা হয়ে গেছে। ভুলে যা তুই ওকে।যে থাকার সে এমনিতেই থাকত।

,আদি ,বড় কাকাই। জানি সব ঠিক হয়ে যাবে।

, রিনা চৌধুরী, তুই ওকে নিয়ে কে পড়ে আছিস।আমরা কি কম ভালোবাসি বল।কত দূর থেকে শুধু তোদের জন্য চলে আসলাম।

, আলিশা,হ্যা বড় মা। তুমি তো আমাদের বললে না আমাদের খোঁজ কিভাবে পেলে।

সবাই সোফায় বসে টান টান উত্তেজনা নিয়ে শুনছে। পুরো ব্যাপারটা।
, আসরাফ চৌধুরী, লোক পাঠানো হয়েছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তার পর পাওয়া গেল।
, আলিশা, ওহ্। তোমাদের ফ্যামিলির কথা বলো।

, রিনা চৌধুরী, হুম বলছি।তোর বাবা কাকারা চার ভাই।আর একজন বোন আছে।চার ভায়ের মধ্যে বড় আসরাফ চৌধুরী।মেজ অজয় চৌধুরী।সেজ শাহজাহান চৌধুরী।তার বউ অনিন্দিতা চৌধুরী। তার দুই ছেলে। তন্ময় আর আকাশ। ছোট রহমান চৌধুরী। তার বউ আয়না চৌধুরী। তার দুই ছেলে মেয়ে। আরুতা আর দীপ্ত। আর তোর ফুফু রুমানা বেগম চার টা মেয়ে সব গুলো বিয়ের হয়ে গেছে তারা কেউ নাতি নাতনি মুখও দেখে ফেলেছে আর একটা ছেলে জয়। ওদের বাবা মারা গেছে। তোদের দাদা প্রতাপ চৌধুরী। উনি প্রতাপ ঘরের একজন ডাকসাই পন্চায়েত প্রধান ছিলেন। উনি আর তোর ফুফু রা গ্রামে থাকে। তোদের দাদি ছিতারা বেগম। অনেক বয়স হয়েছে। বুড়ো মানুষ।

, আসরাফ চৌধুরী, জানিস তোরা আমাদের বাড়িতে একটা ছোট্ট নতুন সদস্য এসেছে ‌।তোর ছোট কাকার ছেলে হয়েছে।

সবাই খুব খুশি। নতুন সদস্য কে দেখতে যাবে কোলে নিবে। অনেক মজা করবে।

, অর্নব,কি বলছ আন্টি এত জন। জয়েন্ট ফ্যামিলি।

সবাই অবাক শুনছে।এত দিন আদিত্য আর আলিশা ভেবে ওদের আপন তেমন কেউ নেই।আজ জানলো এত বড় একটা পরিবার। সবাই খুব খুশি। তবু ও তার মাঝে আদি বিষন্ন। কেমন লাগে এমন একটা সারপ্রাইজ পেলে।

,,

তন্ময় সবে পড়াশোনা শেষ করে পারিবারিক ব্যবসা সামলাচ্ছে। আকাশ ভেটেরিনারি ডাক্তারি করে।আরুতা সবে কলেজে পড়ে। দীপ্ত সিক্স এ পড়ে। পরিবারের সব ছেলে মেয়েরাই একজনের খুব আদরের।ভাই বোনদের জায়গাটা ভিন্ন।বড় আদরের। তাদের প্রতি স্নেহ্ ভালোবাসার কোনো শেষ নেই। তেমনি শাসনের ও শেষ নেই।তন্ময় আরুতাকে খুব পছন্দ করে। সেই কথা বড় বোনের কাছে বলতে সাহস পায় না। তাদের আপু এক কথার মানুষ। খুব ড্যান্জাস।বললে কাঁচা চিবিয়ে খেতে ফেলবে।সে রাজি না থাকলে এই বাড়ির কেউ সিদ্ধান্ত নেবে না। তাদের ফুফাতো ভাই জয় এক কথায় আপুর ভক্ত।

,,

, মামী, আপনারা আমাদের এত কাছের ভাবতেই পারছিনা।
, রিনা চৌধুরী,হ্যা।

সবাই আবেগ আপ্লুত হয়ে গেল। আলিশার চোখ ছলছল করে ওঠে।এত দিন অনাথের মত ছিল। ওদের বাবা মা নেই।নানা বাড়ি থেকে ত মানুষ হয়েছে।

, আসরাফ চৌধুরী, ওহ্ ভুলেই গিয়েছিলাম। তোমাদের বাবা মা কোথায়।
আদিত্য ওর বাবা নাম শুনতে পারে না।ওর বাবা ওর মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।

,আদি, নেই তারা মারা গেছে। আমরা অনাথ।বড় কাকাই।

আসরাফ চৌধুরী ভাবতেই পারেনি এমন একটি কথা শুনবে। তার ভাইদের খুব ভালোবাসে।ভাই এর মৃত্যুর কথা বলছে। ভাইয়ের সাথে একটু রাগারাগী হয়েছিল তাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।আজ তাকে শুনতে হল সেই ভাই নেই।কবে ভাইয়ের মুখ দেখেছিল। একটু আশা ছিল দেখবে কিন্তু। খুব কষ্ট পেলেন।

, রিনা চৌধুরী,কি বলছিস তুই।

, মামী,হ্যা তারা নেই। আমি আর ওর মামাই এই ছেলে মেয়ে দুটিকে মানুষ করেছি। কেঁদে কেঁদে।ওরা আমাদের ই ছেলে মেয়ে।

,আদি, আমি যাই রুমে। বলে চলে যাচ্ছিল।

, আসরাফ চৌধুরী,আজ থেকে আমরাই তোদের বাবা মা। নিজেদের কখনো অনাথ বলবি না।
রিনা চৌধুরী আলিশা কে জরিয়ে ধরলেন।

, রিনা চৌধুরী,দেখ আমরা আজ উঠি অনেক রাত হয়ে গেছে।
এরি মধ্যে মামা আসরাফুল শেহ্জাহান, চলে আসলেন হাসপাতাল থেকে ‌।

, আপনারা কোথাও যাবেন না।আজ এখানেই থাকতে হবে।

, আসরাফ চৌধুরী,আরে না ভাই অন্য একদিন এসে থাকব।

, রিনা চৌধুরী, আমার ভাইয়ের ছেলের বিয়ের তোরজোর চলছে।তাই ওখানে থাকতে হবে। বাড়ির ছেলে মেয়ে রা কেউ কেউ বিদেশে আছে ওরা ও কিছু দিনের মধ্যেই চলে আসবে। তখন সময় পাবনা তাই এখন আসলাম।পরে আবার আসবো।

, আসরাফ চৌধুরী, একদল বদমাইশ আছে দেখবি ওরা এক সঙ্গে থাকলে বাড়ি মাতিয়ে রাখবে। ওরাই আদিত্যর মন ভালো করে দেবে। আসছি।
আদিত্যর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল।

উনারা চলে গেলেন। আদিত্য রুমে চলে গেল। সবার মাঝে ও ওর ফাকা লাগে। কেমন জানি একরোখা লাগে। রুমে ঢুকে।প্রেমার ছবি বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।চোখ থেকে টপ টপ পানি ঝরছে।শক্ত পাথরের মানুষটাও আজ ভেঙ্গে গেছে। আদি বলতে লাগলো।

,প্রেমা আমি তোমায় খুব ভালোবাসি । খুব ভালোবাসি। কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তুমি ছাড়া আমার বাঁচতে ইচ্ছে করে না। কেঁদে কেঁদে।আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ। প্লিজ।

আদিত্য চাইছে নিজেকে শেষ করে দিতে কিন্তু পারছে না।চোখ খুলে তাকালো। টেবিলের উপর কিছু ফল আর একটা ছুরি দেখতে পেল। আদিত্য নজর শুধু ওই ছুরির দিকে।আর মাথায় প্রেমাকে হাড়ানোর যন্ত্রনা ঘুড়ছে।আজ যা হোক একটা কিছু করেই ছাড়বে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here