#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৪৮
,না কিছু না। মনে মনে, আমার উপর এটাক করা তাই না। তোদের এক এক জনের কি হাল করি শুধু দেখ।যে এই কাজ করেছে তাকে আমি ছাড়বো না।আমায় মারা তাই না।জাস্ট একটা কাজ বাকী তারপর শুরু হবে আসল খেলা। সবাই কে শান্তি পেতে হবে। একদিন সব শেষ করে দিব বলেই একে একে সবাই কে জরো করা। এখন শুধু আদির মা বাকি তারপর সব ফিনিশ করে দিব।বাকা হাসি দিয়ে।
আদি,এত কি ভাবছো তুমি।
, একটা মুচকি হাসি দিয়ে। কিছু না।
বলেই হাতে থাকা ক্যানোলা খুলে ফেলে।সেলাইন। সকল যন্ত্র পাতি খুলে। বিছানা থেকে উঠে পড়ে।ক্যালোনার জায়গা থেকে একটু একটু রক্ত ঝরছে।
আদি প্রেমা কে আটকে রাখতে পারল না হাজার বাধা দিয়ে।সে জোর করে উঠে গেল।
, আমি বাড়ি যাব আমার কাজ আছে।
, প্রেমা তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে ডাক্তার এখনো তোমাকে ডিস্চার্জ করে নি।
বলেই হন হন করে চলে গেল। পার্কিং গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
আদি সমানে ডেকে চলেছে। এই মেয়ে কে নিয়ে আর পারলো না।এত জেদি। কিভাবে সামলে রাখবে। সেই তখন থেকে পিছু নিয়ে ছে ধরতেই পারছে না।
প্রেমার মাথায় খুন চেপেছে।যে ওকে মারার চেষ্টা করেছে তাকে এত সহজে ছেড়ে দেবে কখনোই না। গাড়ি চলতে চলতে জ্যামে আটকা পড়ে গেছে। অপেক্ষা করছে কখন জ্যাম ছাড়বে। চারিদিকে তাকাচ্ছিল । তখন চোখ পড়ে ফুটপাতের কোনো এক পাগল মহিলা দিকে। মহিলা কে দেখে এক পলকে চিনে ফেলে। অট্ট হাঁসিতে মেতে ওঠে।
এবার খুব তাড়াতাড়ি প্রেমার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে।
পিছন থেকে সমানে আদি ডেকে চলেছে।প্রেমাকে। কেন এমন করছে।
প্রেমা জরাজীর্ণ অবস্থায় বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর আদি এসে হাজির হলো। ফারহান সেখানে ছিলো।প্রেমার এমন অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে পড়ে।প্রেমা এই বার পেয়েছে ওকে পিছু ছাড়ানোর।
ফারহান,প্রেমা তোমার কি হয়েছে অস্থির হয়ে।
,প্রেমা, আমার কিছু হয়নি। তুমি আমাকে মারার চেষ্টা কেন করেছিলে। বলেই কয়েকটি ঘুষি দিল।
, আমি কেন তোমাকে মারবো আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার হবু স্ত্রী।
, কোন সাহসে তুই আমাকে বলিস আমি তোর হবু স্ত্রী।হ্যা। বলেই মারতে শুরু করলো।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে।আদি ওকে ছাড়াবার চেষ্টা করেছে।সাথে তন্ময় ও চেষ্টা করেছে।প্রেমা প্রতিবার ওদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।
প্রেমা একাধারে ফারহান কে মারতে লাগলো।কলাট ধরে ওর বাবার সামনে নিয়ে এসে বললো।,বাবা তুমি এই ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিলে না।ও আমার কে মারার চেষ্টা করেছিল।কলার টান দিয়ে ফেলে দিল।
, আসরাফ চৌধুরী মেয়ের কান্ডে অবাক হয়ে গেলেন। তার সামনে বসেই তার বন্ধুর ছেলে কে মারছে।
আসরাফ চৌধুরী,থাম প্রেমা কি করছিস তুই।ওর সাথে তোর বিয়ে ঠিক করা।
,বার বার শুধু বলেই যাচ্ছ ওর সাথে বিয়ে ঠিক করা।ও আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।যাতে ওর রাস্তা ফাঁকা হয়।কি আমি ঠিক বলছি ত ফারহান।
ফারহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সে আদিকে মারতে চেয়েছিল কিন্তু প্রেমা কিভাবে হতে পারে।তার মানেই কি প্রেমা ওই গাড়িতে ছিল। ফারহান কথা ঘুরিয়ে নিল।
ফারহান, তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে প্রেমা আমি কেন করব। আমার মনে হয় আংকেল ওর কোনো শত্রু এমন করেছে।
আসরাফ চৌধুরী,হ্যা ফারহান কিছু করেনি। তুই শুধু শুধু ওকে ভুল বুঝছিস। আমি ফাহাদের সাথে কথা বলছি এই সপ্তাহে তোদের এংগেজমেন্ট হবে।
প্রেমা, আমি থাকতে তা হবে। এংগেজমেন্ট তাই না। কচু হবে বলে ভেটকি মেরে চলে গেল নিজের রুমে। রুমে এসে অন্য একটি নিজের ফোন থেকে রাজুকে ফোন করে বলল। একটা ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি।ওই মহিলা কে তারাতাড়ি নিয়ে। পাগল আছে।আজ জ্যামে পরেছিলাম তখন দেখেছি।ইমিডিয়েটলি কাজ টা কর।
ফোন ফেলে দিল। রেগে আছে। বিয়ে ঠিক করা তাই না।এই সব শেষ করে দিব। প্রিয় আর আমার মাঝে যে আসবে তাকে আমি হা হা হা হা মেরে ফেলবো।
সবাই খুব চিন্তায় । ফারহান আদির কাছে এসে বলল, তুই বেচে গেলি কিভাবে।আর প্রেমার এই অবস্থার জন্য তুই দায়ী। তুই থাকলে প্রেমার এমন হতো না।
,আদি,এই জন্য ই বলে অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকে পড়তে হয়। আমার কে বাচিয়ে ছে জানো । আমার ভালোবাসা।
,প্রেমা এখান স্ত্রী নয় তা আমি জানি। তোদের বিয়ের চুক্তি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাড়ির কেউ জানে না।আর জানলেও তেমন কোন লাভ হবে না তোর।ওর সাথে আমার বিয়ে হবে। সামনের সপ্তাহে এংগেজমেন্ট অগ্রিম দাওয়াত দিয়ে দিলাম শালাবাবু। কাঁধে হাত বুলিয়ে। দুলাভাই এর আবদার টুকু রাখতে পারবে। মুচকি হাসি দিয়ে।
, এই বিয়ে হবে না। আমার ভালোবাসা ই প্রেমাকে আমার কাছে এনে দিবে।
,সেগুরে বালি। বলেই চলে গেল।
সবাই একটু হলেও চিন্তা মুক্ত।প্রেমা খাওয়ার টেবিলে বসে ডিনার করছে।
রিনা চৌধুরী, তুই কবে এই পাগলামো ছারবি বলতো।
, আমি কোনো পাগলামো করছি না।মা।সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে শুধু একটা জিনিস দাও তাহলেই।
, কি লাগবে তোর ফারহানের মতো ছেলে হয় না ও তোকে সুখী রাখবে।ও তোকে অনেক ভালোবাসে। কেন করছিস ছেলেটার ও তোর জন্য কত অপেক্ষা করে আছে।আর কষ্ট দিস না ওকে।
, খুব দরদ তাই না। ফারহানের প্রতি। খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।আর বললো, আমার জীবন থেকে যাকে কেরে নিয়েছ তাতে আমার কষ্ট হয়নি। আমার জীবন থেকে ওকে কেরে নেওয়ার পিছনে তোমাদের সবার হাত আছে আমি খুব ভালো করেই জানি। কষ্ট টা ওর টাই চোখে পড়ে আমার টা কিছুই না তাই না। খাবারের প্লেটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে রুমে চলে গেল। দরজা আটকিয়ে।
আদি খাওয়া ছেড়ে পিছু পিছু আসলো। দরজা ধাক্কা দিয়ে বললো,প্রেমা প্লিজ খাবার টা খেয়ে নাও।ডাক্তার তোমাকে এত স্ট্রজ নিতে বারন করেছে।প্রেমা প্লিজ দরজা খোলো।
ওপার থেকে বলতে লাগলো, আমি খাবো না। আমার খিদে মরে গেছে।
,এত রাগ করে কেউ। আমি খাবার নিয়ে এসেছি তুমি রুমে বসে ই খেয়ে নাও আর ওখানে যেতে হবে না।প্লিজ। নিজের শরীরের খেয়াল রাখতে হবে ত সব কাজ করার জন্য।
প্রেমা ভাবলো,তাই এখন যদি খাবার না খাই ওষুধ খাব কিভাবে।কাল বিজনেস ট্রিপ আছে। সেখানে যেতে হবে।
দরজা খুলে দিল।
আদি খাবার খায়িয়ে দিল।আর বললো,
মহাবিশ্বের সবচাইতে ভয়ানক লক্ষবস্তু কি জানো নারীর চোখ।যে কোনো পুরুষের ত্রিশ বছর আটেক থাকে।
অভিমান টা তাদের চুলের খোঁপায় গেথে থাকে । খোঁপা খুলে গেলে যেমন চুল এলোমেলো হয়ে যায়। তেমনি মেয়েরা অভিমান করলে তারাও এলোমেলো হয়ে যায়।
এখন থেকে একটু কম অভিমান করবে কেমন। এখন থেকে একটু কাজ কম করবে।এত স্ট্রেজ ভালো না।
, হয়েছে আর জ্ঞান দিতে হবে না।কাল একটু কাজ আছে ঘুমাবো।এ যা। গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
,যথা আজ্ঞা ম্যাডাম। কিন্তু আমি সব সময় তোমার সাথে থাকবো দেখবো তুমি কত কাজ করো।
বলেই চলে।
সকালে দুজনে গাড়িতে করে যাচ্ছে। আদি প্রেমাকে ছাড়লো না।সব সময় খেয়াল রাখে।ট্রেন স্টেশনে আসলো। ওদের সেখানে ট্রেনে করেই যেতে হবে।
প্রেমা হাটছে আর ভাবছে,স্ট্রেশন এমন একটা জায়গা যেখানে মানুষ আবেগ অনুভূতি উপর দিয়ে হেঁটে গন্তব্যে চলে যায়
কেন থাকা যায়না চিরকাল একসাথে ?
কেন মানুষ মায়া রেখে চলে যায় ? 💔এক পলক আকাশের দিকে তাকিয়ে।ট্রেনে উঠে গেল।
দুজনে মিলে হাটছে কেবিনের সিট খোজার জন্য। অবশেষে পেয়ে গেল। আদি নিয়ে আসছে পিছনে সামনে প্রেমা আগে কেবিনে দরজা খুলে অন্য মনস্ক হয়ে ঢুকলো
যেই সামনে তাকালো স্তব্ধ হয়ে গেল।
সামনে একটি লোক বই পড়ছে নিচে তাকিয়ে।একটু বেশি শ্যামবর্নের।পড়নে কোট। অনেক গুলো বছরের ব্যাবধানে অন্য রকম লাগছে।
আস্তে গিয়ে সামনে ফাঁকা সিটে বসলো। সামনের লোক টিকে আজ দু চোখ ভরে দেখে যাচ্ছে।কত গুলো বছরের না দেখার তৃষ্ণা।আজ দশ দশ টি বছর কেটে গেল। তবুও না পাওয়াটা না পাওয়াই রয়েগেল।
হঠাৎ সেই লোক টির ও চোখ পড়ে প্রেমার চোখে।আজ দু জনে হাজার কোটি বছর পর একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।যেন পুরো পৃথিবীটা থমকে গেছে। বলে বোঝানো যাবে না।
চলবে,