#স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর
#লেখা_চাঁদনী_ইসলাম
#পর্ব_০৯
রাত দশটা বেজে পঁচিশ মিনিট, ড্রয়িংরুমে বসে সবাই খোস গল্প করছে।আজিজুল হক কিছুক্ষণ আগেই বাসায় এসেছে।নিরুর মাথা ব্যাথা করছে বলে দরজা লক করে শুয়ে পরেছে।আসাদ নিজের রুমে পড়ছে।আসাদ পড়তে পড়তেও ড্রয়িংরুমে নজর রেখেছে। নিরুকে দেখলে সেও ড্রয়িংরুমে গিয়ে কিছুক্ষণ বসবে।নিরুর চোখে জল দেখার পর থেকে আসাদ স্বস্তি পাচ্ছে না।’নিরু একা একা রুমে কি করছে?’
আসাদের পুরো ধারণা নিরু কাঁন্না করছে।ওর চোখে জল আসতে দুই সেকেন্ড ও লাগে না।সব সময় চোখ দু’টো টলমল করতেই থাকে।ঝরে পড়ার অপেক্ষায় সব সময় প্রস্তুত। আসাদ আর বসে থাকতে পারলো না, রুম থেকে ড্রয়িংরুমে এলো।
_ আম্মু রাতের খাবার খাবে কখন?
_ এইতো এখনই টেবিলে খাবার দেবো বসো।
_ আমি খাবো না আম্মু,ওই মামাদের বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।না খাইয়ে ছাড়লো না।
_ ভালো করেছো।নিরু ও বলল খেয়েছে, খিদে নেই।
_ কোথায় সে?
_ মাথা ব্যাথা করছে বলে ঘুমিয়েছে।
_ অনিমা তো বিকেলে খেয়েছে।অনিমাকে ডাকো ও খাবে।খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবে।
মাঝখানে মনিকা বলে উঠলেন।
_ ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।মাথা ব্যাথা করলে ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। বিকেলে তো খেয়েছেই।এখন একটু ঘুমাক।ভালো লাগবে।
_ আমি নিরুর ঘরে খাবার রেখে আসবো।ঘুম ভাঙলে খেয়ে নিবে না হয়।এখন আর ডাকছি না।
আসাদ জানে অনিমা ঘুমাচ্ছে না।ও কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে।না হয় আসাদ বেশি ভিজলো।হাঁচি ও হলো আসাদের,আর মাঝখান থেকে মাথা ব্যাথা শুরু হলো অনিমার।অনিমার বৃষ্টিতে ভিজে নয়, কেঁদে মাথা ব্যাথা করবে। কারণ কারো জোরে কথা বলাটাও সহ্য করতে পারে না।
আসাদ নিজের রুমে চলে গেল।অনিমার সাথে কথা বলা দরকার।আসাদ জানে আসাদ একটু ওর সাথে কথা বললেই ওর মন খারাপ চলে যাবে।আসাদ যেভাবে খুঁচিয়ে কথা বলে,মন খারাপ নিমিষেই দূর হয়ে রাগ হতে থাকবে।আসাদ অনিমার রাগ সহ্য করতে পারে। কিন্তু মন খারাপ নয়।
কখন সবাই ড্রয়িংরুম থেকে যাবে সেই আশায় আসাদ বসে আছে।গল্পই যেন শেষ হয় না। বারোটার কাছাকাছি সবার গল্প শেষ হলো।তারপর নিজেদের রুমে গেল। তার মধ্যে আবার মাহিয়া রুমে হাজির হলো।
_ তুমি এডমিশন কোচিং করতে যাবা না?
_ হুম সামনের সপ্তাহে।
_ পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
_ আলহামদুলিল্লাহ ভালো!
_ তুমি কতদিন আমাদের বাসায় যাওনি,মনে আছে?
_ ঠিক মনে নেই।
_ আড়াই বছর হতে চলল।
_ পড়াশোনার চাপে কোথাও যাওয়া হয় না।
_ ঘোরাঘুরি তো ভালোই করো।
_ ওইটাই আমার ভালো লাগে।
_ আর কিছু ভালো লাগে না?
_ হুম লাগে তো,
_ কী?
মাহিয়ার উৎসুক চাহনি,চোখে মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি।
_ আমার প্রেমিকাকে।
_ কে সে জানতে পারি?
_ তাকেই আজও জানাতে পারিনি।যেদিন জানাতে পারবো।সেদিন জানতে পারবা।
_জানিয়ে দিচ্ছো না কেন?
_ বড় হোক।
_ তোমার কী মনে হয় সে এখনো বড় হয়নি ?
_ কি জানি।দেখা যাক।তো তোমার পড়াশোনার কি অবস্থা?
_ হুম ভালো।
_ আচ্ছা অনেক রাত হলো ঘুমাতে যাও।
_ তুমি কখন ঘুমাও ?
_ দুইটা বাজবে।
নিরু ডাইনিংয়ে পানি নিতে এসে দেখে আসাদ আর মাহিয়া গল্প করছে।পানি নিয়ে নিরু নিজের রুমে চলে গেল। কেন জানেনা নিরুর প্রচন্ড অভিমান হলো।নিরুর অভিমানটা কি আসাদের উপর হলো?
মাহিয়া টেবিলের সামনে দরজা সোজাসুজি দাঁড়ানোর জন্য আসাদ নিরুকে দেখতে পেল না। মাহিয়া আবার জিজ্ঞেস করল।
_ এতো রাত পর্যন্ত কি করো?
আসাদ টেবিলে রাখা বইয়ের দিকে ইশারা করে বলল।
_ দর্শন করি। যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
মাহিয়া ঘুমাতে চলে গেল। আসাদ পনেরো মিনিট পর রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।নিরুর রুমে কয়েকবার নক করল,অনিমা বলে ডাকলোও কিন্তু নিরু কোন সাড়া দিলো না।নিরু ঘুমাচ্ছে ভেবে আসাদ নিজের রুমে চলে এলো।
নিরু নিজের মায়ের ছবিটা বুকে জড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে রইল।
আসাদ সারারাত রুমের দরজা খুলে রাখলো।নিরুর রুমের সাথে সংযুক্ত বাথরুম নেই।নিরু ঘুমানোর আগে হাত মুখ ধুতে বের হবে। নিরু ঘুমানোর আগে হাত মুখ না ধুয়ে ঘুমায় না।সেইটা যতরাত-ই হোক না কেন।তাছাড়া নিরুর ঘুম হবে না। নিরুকে আমিনার সাথে গল্প করতে শুনেছে।
‘ঘুমানোর আগে হাত মুখ ধুলে শান্তি লাগে।সুন্দর একটা ঘুম হয়।হাত মুখ না ধুয়ে ঘুমাতেই পারবো না।’ আসাদের এইটা ভালোই মনে আছে। তাই ওইভাবেই বই নিয়ে বসে রইল।রাত তিনটার পর টেবিলেই চোখ দু’টো লেগে এসেছিলো।
ভোর পাঁচটায় দরজা খোলার শব্দে আসাদের ঘুম ভেঙে যায়। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নিরু বাইরে যাচ্ছে।আসাদ কোন রকম চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে,চুল ঠিক করতে করতে বাইরে এলো।নিচে এসে পুরো বাগান খুঁজে দেখল নিরু নেই।দারোয়ান মামাকে জিজ্ঞেস করল।দারোয়ান ও বলল বাইরে যায়নি।আসাদ দ্রুত হেঁটে ছাদে যায়।নিরু ছাদের রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আসাদ নিরুর পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।
_ সারা রাত ঘুমাসনি তাই না?
নিরু আসাদের কণ্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকায়।আসাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে, মুখ ঘুরিয়ে আবার সামনে তাকায়।
_ তুই লোকের কথা কেন এতো কানে নিস?
_ আপনি এতো ভোরে ছাদে কেন ?
_ আমার কথার উত্তর দে।
_ লোক কারা আসাদ ভাই? খালামণি আমাকে কতটুকু চেনে তাই ওইভাবে বলল।
_ তোকে চেনে না বলেই তো বলেছে।যারা তোকে চেনে না।তারা আমাদের কেউ না।তারা আমার কাছে লোক-ই।
_ আপনি এখন ছাদে কেন?
_ তুই রাতে খেলি না কেন?
_ খিদে ছিলো না।
_ রাতে হাত মুখ ধুঁতে উঠিসনি কেন?
_ আপনার সব দিকে নজর থাকে?
_ সব দিকে থাকে না। কিন্তু তোর দিকে থাকে।
_ আমার দিকে নজর থেকে আপনার কাজ নেই।আপনি তো সারাজীবন আমাকে পাহারা দেওয়ার জন্য থাকছেন না।আমাকে তো একাই থাকতে হবে। আর সবার কথাও শুনতে হবে।
_ এই কথায় আর কতদিন খোচাবি।
_ মাত্র দুইদিন হয়েছে।
_ তুই আর কখনো কারো কথায় মন খারাপ করতে পারবি না।মাথা ব্যাথার দোহাই দিয়ে নিজের রুমে আত্নগোপন করে থাকতে পারবি না।মাথা ব্যথা হলেও আমার সামনে সামনে থাকতে হবে। না হয়
_ না হয় কী?
_ তোর ঘরের দরজা খুলে রেখে দেবো।যেন দরজা লক করতে না পারিস।
_ এতকিছু কেন করবেন?
আজ নিরু আসাদের প্রত্যেকটা কথার পিঠে কথা বলছে।আসাদের মনে হচ্ছে অনিমা কি বড় হয়ে গেছে। আসাদের অনুভূতি কি বুঝতে পারছে।আসাদ অনিমার কথার পিঠে নিজের কথা গুলো হারিয়ে ফেলল।কেমন যেন থতমত খেয়ে গেল।
_ কি হলো বলুন?
_ এতো জেরা করছিস কেন?
_ জেরা করার মতো আপনি যদি কেউ হতেন,তাহলে আপনার শার্টের কলার ধরে বলতাম ওতো রাতে আপনার ঘরে মেয়ে মানুষ কি করছিলো?যেখানে আমি আপনার ঘরে যাওয়ার সাহস করিনা।সেখানে অন্যকেউ তাও আবার ওতো রাতে।
নিরু কথাটা বলে এক মুহূর্ত আর দাঁড়ায়নি সোজা নিচে চলে গেছে। আসাদ নিরুর বলা কথা গুলোই আওড়াতে থাকল। ‘নিরুর এতো অভিমান কিসে হলো?’
চলবে….