#দ্বিতীয়_ফাগুন (২৮)
#সারপ্রাইজ_পর্ব _অথবা_২৮_পর্ব_অথবা_সেদিন_দুজনে_দুলেছিলো_বনে। (অন্তিম পর্বের পর থেকে)
#লেখিকা_Esrat_Ety
চাঁদের আলো জানালার গ্রিল ভেদ করে সরাসরি ঘরের ভেতর পরেছে। রোদেলা কিছুক্ষণ ঘরের লাইট গুলো অফ করে জোৎস্না স্নান করে নেয়। ফোনে একটা নজরুল সঙ্গীত ছেড়ে দিয়ে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিল সে। কারো পায়ের শব্দ পেয়ে গান বন্ধ করে লাইট জ্বেলে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। দরজা ঠেলে তাশরিফ ভেতরে ঢোকে। তার হাতে একটা দুধের গ্লাস আর একটা শপিং ব্যাগ। রোদেলা শাড়ির আঁচলের কোনা ধরে দাঁড়িয়ে আছে,তার দৃষ্টি তাশরিফের দিকে। তাশরিফ একটা সাদা রঙের সুতির পাঞ্জাবি পরে আছে,বুক আর পিঠের কাছটা ঘামে ভিজে গিয়েছে,তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে কোথাও থেকে ছুটতে ছুটতে এসেছে। শপিং ব্যাগটা বিছানার উপর রেখে দুধের গ্লাসটা বিছানার সাথে লাগোয়া টেবিলটায় রাখে। তারপর ঘুরে রোদেলার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,”সচারচর বাসরঘরে স্ত্রীরা দুধের গ্লাস নিয়ে ঢোকে,আর আমাদের বাসরে আমি নিয়ে আসলাম। সাদাফ ভাইয়া জোর করে দিয়ে দিলো।”
কথাটি বলেই তাশরিফ দরজার সিটকিনি টা লাগিয়ে দিতে যায়। রোদেলা মাথা ঘুরিয়ে তাশরিফের বইয়ের তাকের দিকে আঙুল তুলে বলে,”এগুলো সব আপনি পড়েন? এই এতো এতো বই?”
_পড়তাম। এখন আর এগুলো ধরা হয় না। গুছিয়ে রেখে দিয়েছি বৌ-বাচ্চার জন্য।
রোদেলা চুপচাপ বিছানার একপাশে গিয়ে বসে। বিছানার পুরো যায়গায় ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে রেখেছে ওরা,তিল পরিমাণ যায়গা ফাকা নেই। খুবই নিচু স্বরে সে তাশরিফকে জিগ্যেস করে,”সব মেহমান চলে গিয়েছে?”
_উহু,কেউ যায়নি। আপনার আর আমার শশুর বাড়ীর সবাই আছে, আমাদের কলিগরাও থেকে গিয়েছে।
_চারটা মাত্র শোবার ঘর। সবাই থাকবে কি করে রাতটা?
_অন্য তিনটে রুমের বিছানা মেঝে পুরো ব্লকড। একদলকে দেখলাম ড্রয়িং রুমের মেঝেতে বিছানা পেতেছে।
রোদেলা মুচকি হাসে। তাশরিফ বলতে থাকে,”পুরুষ আর মহিলারা সবাই আলাদা আলাদা শুয়েছে। আমরা ছাড়া এই বাড়িতে অন্য কোনো কাপল নেই আপাতত। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে রিফিউজি।
রোদেলা তাশরিফের দিকে তাকিয়ে বলে “টুপি পড়ছেন কেনো?”
তাশরিফ টুপিটা ঠিক করতে করতে বলে,”ওযু করে আসুন।”
_মা ওযু করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু কেনো?
_নামাজ পরবেন আমার সাথে।
নববিবাহিত দম্পতি নফল নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরে। দুজনই মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু চায়। কিন্তু কি চায় তা এই গল্পের পাঠকদের না শুনলেও চলবে। ওটা গোপনই থাক।
জায়নামাজ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাশরিফ জায়নামাজ ভাঁজ করতে থাকে। রোদেলা কয়েক পলক তাশরিফকে দেখে বলে,”টুপিতে আপনাকে সুন্দর লাগছে।”
_আপনাকেও ঘোমটায় সুন্দর লাগছে, চমৎকার লাগছে, স্নিগ্ধ লাগছে।
রোদেলা হেসে ফেলে,বলে,”আর কি কি লাগছে?”
_পবিত্র লাগছে।
তাশরিফ পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা ছোট্ট প্যাকেট বের করে সেটার ভেতর থেকে একটা মোটা দানার স্বর্ণের চেইন বের করে। তারপর রোদেলার হাত ধরে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে।
_এটা কি?
_এটা বাসর রাতের উপহার। স্ত্রীকে কিছু না কিছু দিতে হয় এই রাতে।
তারপর রোদেলার ঘোমটা সরিয়ে চেইনটা পরিয়ে দিতে দিতে তাশরিফ বলে,”ভীষণ সরু চেইনটা। আসলে স্বর্নের যা দাম বেড়ে গিয়েছে! আপনি আবার আমায় কিপ্টে ভাববেন না।”
রোদেলা উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। তারপর বলে,”বাসর রাতে স্ত্রীরা স্বামীকে কিছু দেয়? আমি তো জানতাম না। তাই আপনাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই।
তাশরিফ বলে,”অসুবিধা নেই। পাওনা থাকুক।”
রোদেলা মাথা নিচু করে রাখে। তাশরিফ বলে,”সেই তেজী,জেদী, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা মেয়েটাকে নমনীয় দেখতে একটুও ভালো লাগছে না আমার। আপনি আমায় একটা ধমক দিন তো।”
রোদেলা অবাক হয়ে বলে,”আপনাকে শুধু শুধু কেনো ধমক দেবো এখন?”
তাশরিফ দুষ্টুমির সুরে বলে,”ঠিকাছে ধমক দেওয়ার মতো একটা কাজ করি তবে।”
কথাটি বলেই রোদেলা কিছু বুঝে ওঠার আগে তাকে নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে তাশরিফ তার গালের সেই কালো তিলটায় গাঢ় চুম্বন এঁকে দেয় তাশরিফ। ঘটনার আকস্মিকতায় রোদেলা কিছুটা চমকে ওঠে। তাশরিফ তাকে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। রোদেলা তাশরিফকে ধমক দেয়না, উল্টো লজ্জার আতিশয্যে মাথা নিচু করে রাখে। তার সাতাশ বছরের জীবনে এরকম ছোঁয়া এই প্রথম পেয়েছে সে। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে।
কিছুক্ষণ পরে তাশরিফ বলে,”আমার টার্গেট ছিলো আমি প্রথম চুমোটা আপনার গালের ওই তিলেই দেবো। ওটা আমাকে বড্ড টানে।”
তারপর কিছুক্ষণ আবার তাদের মধ্যে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। তাশরিফ ঘাড় ঘুরিয়ে রোদেলার দিকে তাকিয়ে পাশ থেকে তার আনা শপিং ব্যাগটা রোদেলার হাতে দেয়।
“এটা পরে আসুন।”
_কি আছে এতে?
তাশরিফ বিছানায় উঠে আধশোয়া হয়ে হেলান দিয়ে বসে। তারপর বলে,”একটা সুতির শাড়ি, খুবই সফট। এখন যেটা পরে আছেন সেটা বড্ড খসখসে।”
_এটা আনতেই তখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন?
_হু, আচ্ছা এটাকে কি সাজ বলে? এভাবে সাজিয়ে দিয়েছে কে আপনাকে?
_বৃষ্টি আর আপু। কেনো ভালো হয়নি?
_না, আপনাকে খোঁপা করলে সুন্দর লাগে। এই হেয়ারস্টাইল চেইঞ্জ করে আসুন। শাড়িটা পাল্টে খোঁপা করবেন চুলে।
রোদেলা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,”এতো রাতে আমি এতো ঝামেলা করতে পারবো না। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। যে শাড়িটা পরে আছি সেটাই ঠিক আছে। আমার অসুবিধা হবে না।”
_আমার অসুবিধা হবে।
রোদেলা তাশরিফের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে,”আপনার কেনো অসুবিধা হবে?”
_আপনাকে জরিয়ে ধরতে অসুবিধা হবে।
রোদেলা আবারো ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়। তাশরিফ আমতা আমতা করে বলে,”আপনি দেখছি মিনিটে মিনিটে লজ্জা পাচ্ছেন। আপনাকে দেখে আমি নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ। যান শাড়িটা পাল্টে আসেন।”
রোদেলা মজা করে বলে,”পারবো না।”
_স্বামীর আদেশ।
_অধিকার খাটাতে শুরু করে দিয়েছেন?
_হু। স্বামী যা বলবে তাই শুনতে হবে আপনাকে।
_তা আর কি কি করতে হবে?
_আপাতত শাড়ি পাল্টে চুলে খোঁপা করে আসুন। বাকিটা পরে বলছি।
রোদেলা উঠে ওয়াশ রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে শাড়িটা পাল্টে এসে চুলে খোঁপা বেঁধে নেয় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। তাশরিফ অপলক দৃষ্টিতে রোদেলাকে দেখতে থাকে। রোদেলা খোঁপা বেঁধে এসে বিছানায় একপাশে বসে।
“এই নিন, এসেছি, এবার বলুন আর কি কি করতে হবে?”
_স্বামীর সেবা করতে হবে।
_তা কিভাবে?
_অনেক ভাবে। আপাতত পা দুটো টিপে দিন।
গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে কথাটি বলে তাশরিফ।
রোদেলা তাকিয়ে আছে। তাশরিফ বলে,”দেখছেন কি? কি বললাম শুনতে পাননি?”
রোদেলা আমতা আমতা করে বলে,”আপনি কি মজা করছেন নাকি সিরিয়াস?”
_মজা করবো কেনো? আপনি মুসলিম মেয়ে নন? ইসলামে কি বলা আছে জানেন না? সর্বদা স্বামীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। দিন পা টিপে দিন। পা দুটো ব্যথা করছে খুব।
রোদেলা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত দুটো বাড়িয়ে তাশরিফের পা ছুঁতে যাবে অমনি তাশরিফ লাফিয়ে উঠে রোদেলার হাত দুটো ধরে,টেনে রোদেলাকে নিজের বুকের উপর নিয়ে আসে।
রোদেলা হকচকিয়ে ওঠে। এ কেমন পাগলের পাল্লায় পরেছে সে। একে দেখলে মনে হয়না কিন্তু এই লোক তো ভয়ংকর ধরনের পাগল!
তাশরিফ রোদেলাকে বুকে নিয়ে গা দুলিয়ে উচ্চশব্দে হাসছে,নিজের বুকের সাথে রোদেলার মাথাটা চেপে ধরে রেখেছে,রোদেলাও দুলছে। রোদেলা অস্ফুট স্বরে বলে,”আপনি পাগল!”
তাশরিফ হাসি থামিয়ে বলে,”এ টু জেড”
তাশরিফের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রোদেলা উঠে বসে। তাশরিফও উঠে বসে। রোদেলার খোঁপা আলগা হয়ে গিয়েছে। তাশরিফ টেনে তা খুলে দেয়। লম্বা চুল গুলো পিঠে ছরিয়ে যায় রোদেলার। রোদেলা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,”খুলবেন যখন বাঁধতে বললেন কেনো?”
তাশরিফ মৃদু হেসে বলে,”খোলার জন্যই বাঁধতে বলা। প্রেমিকার চুলের খোঁপা নিজের হাতে আলগা করে দেওয়ার মধ্যে অদ্ভুত সুন্দর একটা প্রাপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন একজন প্রেমিকা ছিলো আমার,রোজ কলেজ শেষে সিঁড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে কথা বলতাম,তখন প্রতিদিন তার খোপা খুলে দিতাম। মেয়েদের চুলের খোঁপা খোলা, এটা একটা শিল্প , যেটা করতে পারলে শিল্পীর স্বর্গীয় সুখের অনুভুতি হয়। ”
এই পর্যন্ত বলে তাশরিফ থামে,তারপর অত্যন্ত নিচু স্বরে রোদেলার দিকে এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,”শাড়ীর কুচি খোলার মতো ।”
রোদেলা অবাক হয়ে বলে,”প্রেমিকার শাড়ির কুচি খোলাও হয়ে গিয়েছে নাকি?”
তাশরিফ মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়,”উহহ। আজকেই হাতে খড়ি হবে।”
রোদেলা কথাটা শুনেই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে,”প্লিজ আর কিছু বলবেন না। দোহাই লাগে।”
তাশরিফ রোদেলার হাত দুটো ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। জরানো গলায় বলে,”আমার পেঁচা মুখী!”
রোদেলা মাথা উঠিয়ে তাশরিফের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”নোট প্যাডে ওসব কি লিখে রেখেছেন। সমস্যা নাম্বার অমুক, সমস্যা নাম্বার তমুক। এগুলো কি?”
_এগুলো হচ্ছে তাশরিফের জীবনের কিছু সমস্যা যেগুলো রোদেলা আমিন কবুল বলে তাড়িয়ে দিয়েছে। ওগুলো আপনার দেখার দরকার নেই।
রোদেলা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”আপনি কি আমায় আপনি আপনি করেই ডাকবেন?”
_ইচ্ছে তো করছে সেটাই করতে কিন্তু কাল সকালেই মা শুনলে একটা লম্বা ধমক দিবে।
রোদেলা আমতা আমতা করে বলে,”আচ্ছা,এরপরে পরিকল্পনা কি?”
_আপনাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে যাবো।
রোদেলা শীতল চোখে তাশরিফের দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষনেই কপাল কুঁচকে ফেলে।
তাশরিফ বলে,”ওও আচ্ছা আচ্ছা,আপনি পরিবার পরিকল্পনার কথা বলছেন? সেটা তো আগে হানিমুন যাবো, তারপর ওখান থেকে ফিরে এসে ডাক্তারের সাথে কথা বলবো। ডাক্তার যদি বলে অল ইজ ওকে তাহলে বেশি দেরী না করে বাচ্চা নিয়ে নেবো। ছোটোভাই আর কদিন পরে বাবা ডাক শুনবে, লোকজন তখন আমায় অপদার্থ বলবে। আমার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। আমি তা হতে দেবো নাকি!
রোদেলা কটমট দৃষ্টি দিয়ে তাশরিফের দিকে তাকিয়ে আছে। তাশরিফ একটা ঢোক গিলে বলে,”আরে কি জালা! বলবেন তো কোন পরিকল্পনার কথা বলতে চেয়েছেন। অর্ধেক কথা বললে মানুষ তো ভুলটাই ভাববে।”
_আমি বলতে চেয়েছি, আমাদের জীবনের পরিকল্পনা। মানে ধরুন আমি চাকরি করবো কিনা এসব।
_চাকরি করবেন না কেনো? অবশ্যই করবেন। দুজনে মিলে একসাথে অফিস যাবো,অফিস থেকে একসাথে ফিরবো। বাসায় এসে একসাথে কাজ করবো। প্রমিজ, আমি অন্য স্বামীদের মতো বাড়িতে এসে খবরের চ্যানেল নিয়ে পরে থাকবো না। আপনার সাথে পেঁয়াজ কাটবো,আটা মাখিয়ে দেবো।
রোদেলা হেসে ফেলে। তাশরিফের কাছে সে হাসি বড় মধুর লাগে। জরানো কন্ঠে বলে ওঠে,”আজ একটু সাহস না দেখালে এই হাসি অন্য পুরুষ দেখতো দরজা বন্ধ করে।”
রোদেলা তাশরিফের চোখের দিকে তাকায়। তাশরিফ রোদেলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। রোদেলা বলে,”এখন মাথা টিপে দিতে বলবেন নাকি!”
_দিলে মন্দ হয়না। তবে শুধু মাথাটাই টিপে দিন,গলাটাকে আবার টিপে দিয়েন না। আপনার সাথে কমপক্ষে ৭০ বছর সংসার করার ইচ্ছা আছে।
_সত্তর বছরই কেনো? কম বেশি নয় কেনো?
_কারন জান্নাতে গেলে সত্তর জন হুর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরবো আমি। তখন আপনাকে সময় দিতে পারবো না। আপনি ঘ্যান ঘ্যান করবেন। তাই সত্তর জন হুরের পরিবর্তে সত্তর বছর আপনাকে দিতে চাই জীবনের। প্লিজ আপনি আমার ইহকালের সত্তর বছর নিয়ে নেন তবুও জান্নাতে গিয়ে সত্তর জন হুরকে নিয়ে আপত্তি তুলবেন না,কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যানানি-প্যান প্যানানি করবেন না।”
রোদেলা তাশরিফের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে অনেক কষ্টে তার হাসি চাপিয়ে রেখেছে।
তাশরিফ রোদেলার একটা হাত মুখের কাছে টেনে নিয়ে চুমু খায়। রোদেলা শিহরিত হয়ে ওঠে। রোদেলার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”কেনো এতো দেরী করলেন রোদেলা আমিন? কেনো?”
রোদেলা সে প্রশ্নের জবাব দেয়না কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠে,”আপনার নোটপ্যাডে আপনার প্রেমের কাহিনী পড়লাম। আচ্ছা আপনার প্রেমের কাহিনীতে কোনো ভিলেন নেই কেনো?”
_কারন ওটা আপনি নিজেই ছিলেন রোদেলা আমিন। ভিলেন রোদেলা আমিন,গুন্ডি রোদেলা আমিন।
রোদেলা মৃদু হাসে। তাশরিফ বলে,”সবকিছুর শোধ আমি তুলবো। আমাকে অনেক হেনস্থা করেছেন আপনি। বরিশাইলারা কখনো কাউকে ছাড় দেয় না রোদেলা আমিন, আমার ধৈর্যের শোধ আমি কড়ায় গন্ডায় উশুল করবো।”
_ওও বাবা! আপনার হুমকি শুনে আমি তো খুব ভয় পেয়ে গেলাম! ভয়ে আমার হাটু কাঁপছে দেখুন!
হাসতে হাসতে বলে রোদেলা।
তাশরিফ উঠে বসে রোদেলাকে কয়েক পলক দেখে, তারপর রোদেলাকে টেনে বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শোয়। রোদেলাকে এক হাত দিয়ে এমন ভাবে জরিয়ে রেখেছে রোদেলার পক্ষে এই বাঁধন খুলে বের হওয়া অসম্ভব। তাশরিফ রোদেলার কপালের দিকে তাকিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,”এখন সত্যি সত্যি ভয় লাগছে তাইনা? কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে দেখছি!”
রোদেলা কিছু একটা বলতে যাবে তখন তাশরিফ তার মুখ চেপে ধরে বলে,”খুব সাফার করিয়েছেন আমায় পেঁচা মুখী,খুব।”
রোদেলা তাশরিফের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তাশরিফ কিছুক্ষণ পরে হাত সরিয়ে নেয় রোদেলার মুখের উপর থেকে। রোদেলার দিকে ফিরে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,”একটা গান শোনান না!”
_আমি তো গান জানি না।
_তাহলে কবিতা?
_তাও জানি না। ছড়া জানি,বলবো?
_কোনটা?
_অনেক গুলো জানি,যেমন ধরুন “ঝক ঝকা ঝক ট্রেন চলেছে রাত দুপুরে ওই,ট্রেন চলেছে,ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই?”
তাশরিফ হা হয়ে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদেলা ছড়া বলা থামিয়ে বলে,”পছন্দ হচ্ছে না? দাঁড়ান আরেকটা বলছি,”মনারে মনা, কোথায় যাস?
বিলের ধারে কাটবো ঘাস !”
_ব্যস ,ব্যস, ব্যস! আর বলতে হবে না। অনেক বলেছেন। থ্যাংক ইউ, ধন্যবাদ, শুকরিয়া!
রোদেলা তাশরিফের কথায় হাসছে। তাশরিফ বলে,”কি নিরামিষ একটা বৌ আমার! কি দুর্ভাগ্য! আচ্ছা সমস্যা নেই, ট্রেনিং দিয়ে এক্সট্রিম লেভেলের রোমান্টিক বানিয়ে ফেলবো আমি। আজ রাত টা বাদ, আগামীকাল রাত থেকে প্রতি রাতে একটা করে উপন্যাস ও একটা করে প্রেমের কবিতা পড়ে শোনাবেন আমায়। দেখি, কাজ না হয়ে কই যায়!”
রোদেলা চুপ করে শোনে তাশরিফের কথা। তাশরিফ রোদেলার একটা হাত টেনে নিজের বুকের কাছে নিয়ে বলে,”আমি একটা কবিতা শোনাই?”
_শোনান।
তাশরিফ গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করে,
“পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক,
আমরা তখন প্রেমে পড়বো!
মনে থাকবে?”
রোদেলা তাকিয়ে আছে। তাশরিফ চুপ হয়ে যায়। রোদেলা বলে,”শেষ? দুই লাইনের কবিতা এটা?”
_না, আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
_কোন প্রশ্নের?
_পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক,আমরা তখন প্রেমে পরবো। মনে থাকবে?
রোদেলা অস্ফুট স্বরে জবাব দেয়….মনে থাকবে!
তাশরিফ বলতে থাকে,
“বুকের মধ্যে মস্ত বড় ছাদ থাকবে,
শীতল পাটি বিছিয়ে দেবো,
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল গড়াবে
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি করে দু’চোখ ভরে থাকবো চেয়ে
মনে থাকবে?
রোদেলা মাথা নাড়িয়ে বলে,”মনে থাকবে!”
_আমি হবো উড়নচন্ডী, এবং খানিক উস্কোখুস্কো,
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেবো।
তুমি কাঁদলে, গভীর সুখে,এক নিমিষে সব টুকু জল শুষে নেবো,
মনে থাকবে….?
রোদেলা বলে,”মনে থাকবে!”
তাশরিফ বলে যায়,”পরের জন্মে তিতাস হবো,
দোল মঞ্চের আবীর হবো,
শিউলি তলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার
অনন্তনীল সকাল হবো ।
এসব কিছু হই বা না হই,
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?
রোদেলা আচমকা নিজের মুখটা তার স্বামী তাশরিফ হাসানের বুকে লুকিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ওঠে,
“মনে থাকবে,মনে থাকবে,মনে থাকবে!”
“পরিসমাপ্তি”🖤
Khub sundor