নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_০৮

0
434

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_০৮

নাহিদ চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। উনার পরিকল্পনা এভাবে ভেস্তে যাবে উনি বুঝতে পারেন নি। সব কিছুই তো ঠিকঠাক ছিলো। তবে আরভী বেঁচে ফিরলো কিভাবে সেটাই উনি ভেবে পাচ্ছেন না। পরিকল্পনা অনুযায়ী আরভী গাড়িতে উঠার সাত মিনিটের মাথায় বিস্ফোরণ হওয়ার কথা ছিলো। তবে কি যাকে কাজটা করতে দিয়েছিলেন সে কাজটা ঠিকভাবে করতে পারে নি? উনি এটা জানার জন্য গলার স্বর উচু করে হিমেলকে ডাকলেন,”হিমেল!”

হিমেল নাহিদ চৌধুরীর ঘরের বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। কাজ ঠিকমতো না হওয়ায় উনি যে বেশ রেগে আছেন। ঠিকমতো সবকিছু না পেলে পুরো রাগ হিমেলের উপরেই ঝারা হবে। আর তা ভেবে হিমেল দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো যেনো ডাকার সাথে সাথে উনার সামনে হাজির হতে পারে। তাই এই মূহুর্তে নাহিদ চৌধুরী ডাকার সাথে সাথেই নাহিদ চৌধুরীর ঘরে প্রবেশ করে প্রতিত্তোর করলো,”জ্বি ভাই।”

“গাড়িতে বোম কে লাগিয়েছে?”

“ভাই শাওন।”

“ওকে ডেকে নিয়ে আয়।”

“জ্বি ভাই।” বলে দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো হিমেল।

মিনিট দশেক পর হিমেল শাওনকে নিয়ে নাহিদ চৌধুরীর ঘরে প্রবেশ করলো। তখন নাহিদ চৌধুরী ঘরের ভিতর পায়ে চারী করছিলেন। চিন্তায় উনার মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো উনি অসফল হলেন। তাও একটা মেয়ের থেকে। প্রথম বার নির্বাচনে হেরে আর এবার আক্রমণে অসফল হয়ে।

হিমেল ও শাওনকে দেখে নাহিদ চৌধুরী নিজের পা থামিয়ে দিলেন। শাওনের দিকে তাকিয়ে বললেন,”এই তুই ঠিক ঠিক মতো কাজটা করেছিলি?”

“একদম ঠিকভাবে করছিলাম স্যার।”

“তাহলে আরভী রায়হান বেঁচে আছে কিভাবে?” চিৎকার করে রাগ মিশ্রিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন নাহিদ চৌধুরী।

“সবই ঠিকঠাক ছিলো স্যার। আরভী ম্যামও ঠিক সময়েই গাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কোত্থেকে যেনো একটা ছেলে এসে সব গরমিল করে দিলো।”

“ছেলে?” ভাবুক স্বরে জিজ্ঞেস করলেন।

“হ্যাঁ স্যার, ছেলেটা গাড়ির টায়ার পাঞ্চার করে দিয়েছিলো দেখে আরভী ম্যাম আর গাড়িতে উঠেন নি। উনার নতুন এসিস্ট্যান্টকে নিয়ে রাস্তার দিকে চলে যান। নয়লে কাল উনার মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো।”

“একটা ছেলে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার করছিলো আর তোরা সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলি? থামাতে পারলি না ওকে?”

“স্যার আমরা সমাবেশে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে নজর রাখছিলাম আরভী ম্যামের উপর। তারপর যখন গাড়ির দিকে নজর গেলো তখন দেখলাম ছেলেটা টায়ার পাঞ্চার করছে। আমাদের মাঝ থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে থামাতে যাচ্ছিলো সেসময় আরভী ম্যামও মঞ্চ থেকে নেমে গাড়ির দিকে যেতে থাকেন। তখন আমরা গাড়ির দিকে গেলো আমাদের চিনে ফেলতেন উনি। কারন নির্বাচনের সময় আমরা সবসময় আপনার সাথেই তো ছিলাম।”

“সব গুলো হয়েছে অকর্মা। গাড়ির আশেপাশে আগে থেকেই একজনকে রাখতে পারলি না? তাহলে তো আর এ ঝামেলা হতো না।”

“সরি স্যার। পরের বার আর হবে না।” ভীত স্বরে বললো শাওন।

শাওনের এ কথা শুনে নাহিদ চৌধুরী টেবিলের উপর থেকে রিভলবার হাতে নিয়ে সেটা দেখতে দেখতে বললেন,”তুই বেঁচে থাকলে তো ভুল করবি।”

নাহিদ চৌধুরীর কথায় শাওন ঘাবরে গেলো। হাটু গেড়ে বসে হাত জোর করে কান্নারত স্বরে বললো,”স্যার আমাকে মাফ করে দেন। আমাকে আরেকটা সুযোগ দেন। পরে যদি আর কোনো ভুল করি তাহলে তখন আপনি যা শাস্তি দিবেন আমি মাথা মেতে নিবো। কত বছর ধরে আপনার জন্য কাজ করি, ওই উছিলায় এবারের মতো মাফ কইরা দেন।”

“ছেলেটাকে দেখেছিস?” রিভলভার হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন নাহিদ চৌধুরী।

“চেহারা স্পষ্ট বুঝা যায় নি এতো দূর থেকে। তবে রাশেদ হয়তো ছেলেটাকে চিনে।”

“রাশেদ! নির্বাচনের সময় দলে নতুন যে ছেলেটা যুক্ত হয়েছে?”

“জ্বি স্যার।”

“ওরে আমার কাছে নিয়ে আয়।” কথাটি বলে চোখে ইশারা করে দুজনকে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে বললেন নাহিদ চৌধুরী। দুজনে বেড়িয়ে গেলে রকিং চেয়ার বসে ভাবতে লাগলেন পরে কি করবেন।

হঠাৎ মোবাইল ফোনের রিংটোনে উনার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো। এতে উনি বিরক্ত হলেন। বিরক্ত নিয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলেন ফোনের স্ক্রিনে “ভাগ্নে” নামটা জ্বলজ্বল করে ভাসছে। এবার উনার বিরক্ত কোথায় যেনো গায়েব হয়ে গেলো। কল রিসিভড করে প্রফুল্লচিত্তে বললো,”হ্যালো ভাগ্নে।”

“মামা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? কি করছো এসব? এখন সবার সন্দেহ তোমার উপর গিয়েছে। বুঝতে পারছো কিছু? এখন পর্যন্ত খবর দেখেছো?” ফোনের অপাশ থেকে চেচিয়ে বললো।

“দেখেছি ভাগ্নে। কিন্তু মেয়েটা এভাবে বেঁচে যাবে বুঝতে পারি নি। মরে গেলে সহজেই হ্যান্ডেল করে নিতে পারতাম।” নাহিদ চৌধুরী চিন্তিত স্বরে বললেন।

“তাই বলে পাবলিক প্লেসে এভাবে আক্রমণ করবে?”

“তবে রাস্তা থেকে কিভাবে সরাবো ভাগ্নে!”

“রাজনীতি তুমি কর, আমি না। তাই তুমিই ভাবো কিভাবে রাস্তা থেকে সরাবে। কিন্তু এমন কিছু কর যেনো সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে। আর হ্যাঁ, কিছু করার আগে আমাকে জানাবে। নয়লে কখন কি কাজ করে ফেসে যাও বলা যায় না। দিনে দিনে তোমার বুদ্ধিলোপ পাচ্ছে। কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারছো না তুমি।”

এরই মাঝে ইমতিয়াজ এলো। এসে ভীত স্বরে বললো,”স্যার, সাংবাদিকরা এসেছে। ওরা আপনাকে বের হতে বলছে নয়লে নাকি ওরা ভিতরে চলে আসবে।”

ইমতিয়াজের কথা শুনে ছেলেটি ফোনের অপাশ থেকে রেগে বললো,”এবার সাংবাদিকদের সামলাও। আর খবরদার উল্টাপাল্টা কোনো কথা বলবে না।”

——-

আজ আরভী নগর ভবনে যাবে না ভেবে নিলো। বাড়িতেই নিজেকে কিছুটা সময় দিবে। আরিফা আফরোজের সাথে সময় কাটাবে। অনেকদিন হলো আফিফা আফরোজকে তেমন একটা সময় দেওয়া হয় না। তবে বিকেলের দিকে একবার হসপিটালে গিয়ে আহত ব্যাক্তি দুজনকে দেখে আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে নিচে নামছিলো আরভী। এখনো ব্রেকফাস্ট করা হয় নি। সবসময় তো আরো আগেই আফিফা আফরোজ ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাকেন। তবে আজ কেন ডাকছেন না!

আরভী নিচে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে তাজ্জব বনে দাঁড়িয়ে রইলো। আরভী বুঝতে পারছে না এই উন্মাদ ছেলেটা এখানে কেন এসেছে। আর আফিফা আফরোজও কি যত্ন সহকারে খাওয়াচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছে উনারই ছেলে। এদিকে যে এতো বেলা হয়ে গেলো অথচ আরভী না খেয়ে সেদিকে উনার কোনো খেয়ালই নেই। উনি ব্যাস্ত অন্যের ছেলেকে যত্ন করে খাওয়াতে। আরভীর বড্ড হিংসে হলো এটা দেখে। কই আগে কখনো আফীফা আফরোজ আরভীকে তো এভাবে আদর-যত্ন করে খাওয়ায় নি! আরভী আর দেখতে পারছে না এসব। তাই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রোষ পূর্ন স্বরে বললো,”আপনি? আপনি এখানে কি করছেন?”

আরভীর প্রশ্নে সমুদ্র ও আফিফা আফরোজ আরভীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তবে সমুদ্র সাথে সাথে দৃষ্টি ঘুরিয়ে আফিফা আফরোজের দিকে তাকিয়ে অভিযোগ করে বললো,”দেখেছেন আন্টি? আমি কাল উনার জীবন বাঁচালাম আর উনি আমার সাথে কিভাবে কথা বলছেন। উপরন্তু আমাকে এখনো ধন্যবাদও জানায় নি।”

আফিফা আফরোজ সমুদ্রের অভিযোগ শুনে সমুদ্রের পক্ষ নিয়ে বললেন,”আরভী! ছেলেটার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন? তোর তো উচিত ছিলো ছেলেটাকে বাসায় আসতে বলার জন্য। ও না থাকলে কাল তোর কি হতো ভেবেছিস একবারও?”

“মা তুমি সব কথা জানো না, গাড়ি বিস্ফোরণ হবে জানলে উনি কখনোই…”

সমুদ্র আরভীকে পুরো কথা সম্পূর্ণ করতে দিলো না। আরভীকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে বললো,”দেখেছেন আন্টি, আপনার মেয়ে তো মানতেই চাইছে না। এইজন্যই কারো ভালো করতে নেই।”

“আপনি!”

এবারো আরভী নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না। তার আগেই আফিফা আফরোজ বললেন,”আরভী! রাজনীতি করতে গিয়ে কি আদব-কায়দা ভুলে গেছিস? বাড়ির গেস্টের সাথে কেউ এরকম আচরণ করে?”

প্রতিত্তোরে আরভী কিছু বললো না। চুপ করে রোষ পূর্ণ দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরভীকে এভাবে তাকাতে দেখে সমুদ্র আফিফা আফরোজের অগোচরে আরভীকে চোখ মেরে দিলো। আর তা দেখে আরভীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। টেবিল থেকে কাটা চামচ হাতে নিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে দিলো এটা দিয়ে চোখ তুলে ফেলবো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here