চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৬

0
689

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৬
১৮.
আলতাফ হোসেন এগিয়ে এসে স্বাধীন এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল।
-;তোমাকে কি ব’লে ধন্যবাদ দিবো?আমি সত্যি জানি না।আজ তুমি আসায় হয়তো আমি আমার মেয়েকে শয়তানটার হাত থেকে বাঁচাতে পারলাম।

-;আমি যখন জানতে পারলাম।আমার বোনের জামাই।বোনকে মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে নতুন করে আবার বিয়ে করছে।তখন রাগ হয়।আমার বোনের জীবন নষ্ট করে। আরেকটা মেয়ে’র জীবনে নরক আনতে চলেছে।তাই চুপচাপ বসে থাকতে পারিনি।গ্রামের লোকদের নিয়ে এসে বিয়েটা বন্ধ করা দরকার ছিল।নিজের বোনকে রক্ষা করতে না পারলেও আরেকটা মেয়ে কে রক্ষা করতে পেরেছি।আর এতেই আমার কিছুটা শান্তি লাগছে।এরমধ্যেই পুলিশের জিপ গাড়িটা হাজির হলো।আলতাফ হোসেন বাড়ির উঠোনে।মোস্তফা সরোয়ার এবং তার মা’কে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে।নারীর নির্যাতনে কেস করেছে স্বাধীন।আলতাফ হোসেন কনে পক্ষকে মিথ্যে ব’লে বিয়ে নামে ছলনা।আর যৌতুক জন্য মামলা দায়ের করেন।এখন মা, ছেলে জেলে পঁচে মরবে।

মা,ছেলের কাজ সমাপ্ত করে বাড়ির পথে রওনা হয়।বাড়িতে পা রাখতেই দেখতে পায়
রেনু অপেক্ষা করছে।

-;আপনি সারাদিন কোথায় ছিলেন?সকাল দশটায় বেড়িয়েছেন।বেলা গড়িয়ে রাত প্রায় শেষের দিকে।তবুও আপনার খবর নাই। আপনার জন্য চিন্তায় চিন্তায় আমার হাত,পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো।

-;শান্ত হও তুমি!আমি ঠিক আছি।একটা কাজ ছিল তাই বেড়িয়ে গেছিলাম।কাজটা শেষ করে আসতে এতটা দেড়ি হয়েছে।খাবার সাজাও।আমি কলপাড়ে হাত মুখ ধৌত করতে গেলাম।

রেনু খাবার সাজিয়ে দিতেই স্বাধীন বিসমিল্লাহ ব’লেই খাবারটা তৃপ্তির সাথে খেতে লাগলো।স্বামীর এত আনন্দের সাথে খাবার খাওয়া দেখে নিজেই অবাক হয়ে প্লেটে দিকে একবার তাকায়।আরেকবার স্বামীর দিকে তাকায়।প্লেটে সাদা ভাত,লাল শাক ভাজি,আর ছোট ছোট টেংরা মাছের ঝোল।এত স্বাদ করে কখনো খাবার খেতে দেখেনি।কিন্তু আজ কি হলো এমন?স্বাধীন খাবার শেষ করে বউ দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা মুচকি হাসি উপহার দিল।এর মানে খাবারটা দারুণ হয়েছে।স্বামীর তৃপ্তির খাওয়া দেখে রেনুর কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে যায়।

১৯.
রাজিয়া ঘুমিয়ে আছে।স্বাধীন বোনের কপালে চুমু একে দরজাটা লাগিয়ে চলে যেতেই রাজিয়া চোখ খুলে।

-;ভাই এতো রাতে আমার ঘরে কি মনে করে? কপালে হাত স্পর্শ করতেই মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার কথা।রাজিয়া ঘুমের মাঝে যখন থাকে।ভাই তখন প্রতিদিন সকালে কপালে চুমু একে বলতো।

যত বিপদে পড়োনা কেন?মনে রাখবে তোমাকে আগলে রাখতে,তোমার সব বিপদে ঠাল হয়ে থাকতে তোমার ভাই আছে।সে ছিল।আর ভবিষ্যতেও থাকবে।

তারমানে ভাইটার ধারালো লোহার মতো মনটা তার জন্য একটু একটু করে নরম হচ্ছে।আবার আগের পুরনো রুপে ফিরছে।রাজিয়া খুশিতে দুই চোখের পানি গাল বেয়ে ঝড়ে পড়ে।শত কষ্টের মাঝেও এটুকু সুখ ধরা দিলো।আজ নিশ্চিতে একটা শান্তির ঘুম দিবে।

নভেম্বর মাস চলছে।এই মাসেই একেবারে শেষের দিকে রাজিয়া ডেলিভারি পড়ছে।ডাক্তার কাছে নেওয়া কথা।সেসব সবটাই ঠিক করে রাখা হয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ করে রাজিয়া কলপাড়ে পা পিছলে পড়ে যায়।স্বাধীন ক্ষেতের কাজের জন্য বের হতে নিলেই কিছু পরে যাওয়ার শব্দ পেয়ে দৌড়ে আসে।চোখের সামনে বোনকে ব্যাথায় কাতরাতে দেখে কলিজা কেঁপে ওঠে।রক্তের স্রোতে ততক্ষণে মেখে যাচ্ছে কলপাড়।স্বাধীন মাথার গামছা খুলে বোনকে জড়িয়ে কোলে তুলে সদর হাসপাতালে দিকে দৌড়ে যাচ্ছে।

হাসপাতালে ব্যানগাড়িতে করে রাজিয়াকে আনার পথেই জ্ঞান হারিয়েছে।তার অবস্থা খুব খারাপ।যে ডাক্তার রাজিয়াকে এর আগে দেখছিল।তিনিই স্বাধীনকে বলল,

-;রোগীর অবস্থা খুব একটা ভালো না।আমাদের ইমারজেন্সীতে নিতে হবে।মা,এবং সন্তান দুইজন বিপদের মুখে।আল্লাহ ওপর ভরসা রাখুন।ডাক্তার কথা শুনে স্বাধীন ঢোক গিলে।কি বলছে ডাক্তার?তার বোন বাঁচবে তো!

২০.
এক সেকেন্ডের নাই ভরসা।
দুই দিনের দুনিয়ায় মানুষ করে
কতই না রং তামাশা।
চোঁখ বুঝিলে দুনিয়া আঁধার।
তবু ও মানুষ করে কতই না অহংকার।
সাদা কাঁপড় পঁড়ে একাকি থাকবে কবরে।
তবু ও মানুষের মন থাকে টাকার নেশায় পঁড়ে।

বড়ই পাতার গরম জলে গোসল করানো হচ্ছে।বাড়ি চারদিকে আগরবাতি,ধুপকাঠির সুগন্ধে ভরে গেছে।তেরপাল টানিয়ে মহিলারা রাজিয়ার শেষ গোসল করিয়ে দিচ্ছে।

মিস্টার স্বাধীন আপনার বোন একটি ছেলে সন্তান জম্ম দিয়েছে।

-;ডাক্তার আমার বোন কেমন আছে?

-;পা পিছলে পরার কারণে মারাত্মকভাবে আঘাত খেয়েছেন।যার জন্য তার শরীর থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।আমরা হাজার চেষ্টা করে ওহ তার রক্ত পড়া বন্ধ করতে পারিনি।উনি বাচ্চা জম্ম দিয়ে অপারেশন রুমে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।আই এম সরি মিস্টার স্বাধীন।সি ইজ ডেইড।

বোনের মৃত্যু খবর কানে আসতেই দৌড়ে ছুটে যায় অপারেশন রুমে।কি সুন্দর চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে,তার আদরের একমাত্র বোন।যে আর কোনোদিন ভাইয়া ব’লে ডাকবে না।বলবেনা,ভাইয়া আমাকে মাফ করে দেও।আমি ভুল করেছি।সে সাধের এই দুনিয়া ছেড়ে পরপারে পারি দিয়েছে।একটিবার ভাবলো না।তার আদরের সন্তানদের কি হবে?কতটা কষ্ট বুকের মধ্যে জমা রেখে দুনিয়ায় মায়া ত্যাগ করলো।আহা এমন মৃত্যু কেন দিলে খোদা?

সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রাজিয়াকে যখন খাটে শুয়ে রাখা হলো।ছোট পুতুল মায়ের মুখে হাত দিয়ে ডাকছে।তার চোখে কতটা আকুলতা।চোখ বেয়ে ঝড়ে পড়ছে পানি।একবার মামা দিকে ছুটে যাচ্ছে।আরেকবার মায়ের গায়ে সাদা কাপড়ের অংশ ধরে টানছে।তার মায়ের গায়ে এমন অদ্ভুত পোশাক কেন?এই কাপড়ে মা’কে কোনোদিন সে দেখে নিই।তার মা তার ডাকে কথা বলছে না কেনো?ভিতরের ঘর থেকে একটি শিশুর কান্না ভেসে আসছে।সে শিশু মায়ের ভালোবাসা পেলো না।তার চিতকার করে কান্নার শব্দ কাঁপিয়ে দিচ্ছে রাজিব হকের বাড়ির ভিটা।স্বাধীন কান্না করছে।তার মন কিছুতে মানছে না।এসব মিথ্যে হোক।তার বোনটা ফিরে আসুক।বোনের প্রতি আর রাগ করে থাকবেনা।কিন্তু না,সে ভাই কিংবা আদরের সন্তানের ডাক।কারো ডাকেই সে সাড়া দিচ্ছে না।

২১.
আপনি শান্ত হন।আপনি এভাবে কাঁদলে ওদের কে শান্ত করবে।আপনি ছাড়া ওদের এই দুনিয়ায় কেউ রইলো না।আপনি ওদের ওপর ভরসার হাত।রাজিয়া জানাজা পড়াতে হবে।এভাবে মাটির ওপর বেশিক্ষণ রাখা ঠিক নয়।তাকে যত তাড়াতাড়ি কবর দিবেন।তার আজাব তত কম হবে।আপনি নিজেকে একটু শক্ত করুন।স্বাধীন মাথা নাড়িয়ে চোখের পানি মুছে ঘরে দিকে ছুটে যায়।স্বামীর এমন চলে যাও তাকিয়ে দেখে রেণু।একটু পর স্বামীর কোলে রাজিয়া সন্তানকে দেখা যায়।সে উঠোনে রাজিয়া কোলের উপরে বাচ্চাটা রাখতেই কান্না একটু একটু করে কমে আসে।সে মায়ের বুকে চুপচাপ হয়ে গেলো।পুতুল একবার ছোট বাচ্চাটাকে দেখে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে পাশের মহিলা ছাড়ে না।তারা পুতুলকে ধরে রেখেছে।মায়ের জন্য মেয়েটা পাগলামি করছে।তাকে থামানো কষ্ট কর।

মায়ের পরশ পেয়ে দুধের শিশু ঘুমিয়ে গেছে।স্বাধীন বোনের কোল থেকে ভাইগ্নাকে নিয়ে রেনু’র আরেক হাতে সপে দিলো।দুই ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে রেণু।সে চোখের পানি লুকিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা করছে।

আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসূলুহু।কালিমা শাহাদাত পড়তে পড়তে স্বাধীন বোনের লাশ কাঁধে তুলে নিলো।তার সাথে আরো কিছু লোক একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।মা’কে কাঁধে নিয়ে চলে যেতে দেখে পুতুল পাগল হয়ে উঠেছে।মা’কে কিছুতেই যেতে দিবেনা।সে মা’কে চায়।তার মা’কে নিয়ে সবাই কোথায় যাচ্ছে?তার মায়ের সঙ্গে তাঁকে কেন নিলো না?তাঁকে কেন ফেলে গেল।পুতুল গলা ফাটিয়ে চিতকার করতে চায়।কিন্তু মুখ দিয়ে একটি শব্দ বের হয়না।তার দুই চক্ষে তৃষ্ণা।তার মা’কে না পাওয়ার কষ্টে মাটিতে কপাল দিয়ে একেপর এক আঘাত দিতে থাকে।পা দিয়ে মাটিতে কই মাছের মতো দাপাদাপি করে।কিন্তু তাঁকে একজন মহিলা সামলাতে পারছেনা।সে আরেক মহিলার সাহায্যে ছোট বোবা মেয়েটিকে ঘরে রেখে বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়।পুতুল দরজা ধাক্কা সে মা যাবে।কিন্তু কেউ তার ডাক শুনলো না।মা মা করতে করতে মাটিতেই বেহুশ হয়ে পড়ে রইলো।তার খবর কেউ নিলোনা।মা,বাবা ছাড়া পুতুল মেয়েটির জীবনটা কেমন হবে?

চলবে…..

কালকে ইচ্ছে করেই গল্প দেয়নি।লিখা হওয়া শর্তে ওহ চিন্তা ছিলাম।ভাবছিলাম পাঠক/পাঠিকার কেমন ভাবে নিবে?কিন্তু প্লট যেভাবে ভেবে রেখেছি।তেমনইভাবে আগামীতে লিখবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here