#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৭
২২.
রাজিয়া নেই সাতদিন পার হয়ে গেছে।পুতুল স্বাভাবিক হয়নি।সে বিছানায় জ্বরে পুড়ছে।রেণু ছোট ছোট দুই বাচ্চা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।তার ওপর পুতুলের জ্বরটা কোনোভাবেই কমছে না।ওষুধে কোনো কাজ করছে না।মেয়েটা জ্বরে ঘোরে মা’কে খুঁজে।মা ছাড়া তার দুনিয়ায় অন্ধকার।নরম তুলতুলে শরীরটা শুকিয়ে গেছে।চেহারা তার বিষাদের ছায়া।
-;মেয়েটি এভাবে থাকলে মরে যাবে।আপনি দেখেন কিছু করতে পারেন কি-না!স্বাধীন মাথা নাড়িয়ে ব’লে দেখছি।
স্বাধীন দুপুর বেলা ছোট ঘুমন্ত শিশুটিকে নিয়ে পুতুলের সামনে গেল।পুতুল বিছানায় চুপচাপ হয়ে পড়ে আছে।স্বাধীন খাটে একপাশে বসে ডাকল।
-;আম্মা…আম্মা।দেখো কারে নিয়ে আসছি তোমার কাছে।পুতুল আম্মা দেখ।
পুতুল চোখ মেলে একটু তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো।এর মানে সে তাকাবে না।তার ভালো লাগেনা।কিন্তু স্বাধীন চুপচাপ হয়ে থাকলো না।ছোট বাচ্চাটাকে পুতুলের পাশে নিয়ে সুয়ে দিয়ে বলল।
-;ভাইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আম্মা।তুমি ছাড়া ওর কে আছে বল?তুমি ওর বোন।তোমার কাছে মায়ের গন্ধ পায় ব’লে।রোজ রাতে তোমার বিছানায় তোমার পাশে রেখে যাই।কিন্তু তুমি জ্বরের ঘোরে বলতেই পারোনা।সে মায়ের মতো বড় বোনকে কাছে পেয়ে শান্তিপ্রিয় হয়ে গেছে।তোমাকে পেলে সে একদম নিরবতা পালন করে।এটাই তো বোনের প্রতি ঠান,মায়া,ভালোবাসা।তুমি মুখ ঘুরিয়ে নিলে ভাইটা যাবে কার কাছে?তুমি কি চাও?তোমার ভাইয়া তোমার মায়ের মতো দূরে চলে যাক।ভাইকে একটু আদর কর।
পুতুল উঠে বসতে চেষ্টা করে।কিন্তু শরীর দূর্বল দেখে বসতে পারেনা।আবার বিছানায় পড়ে যায়।স্বাধীন,পুতুলকে উঠিয়ে পেছনে একটা বালিশ দিয়ে খাটে বসালো।ছোট ছোট নরম হাত দুটি বাড়িয়ে দেয়।যার মানে সে ভাইকে কোলে নিবে।স্বাধীন কোলে তুলে দিতেই টুপ করে একফোঁটা পানি ভাইয়ের চোখে পাতায় পড়ে।আর অবুঝ শিশুটি বোনের কোলে এসে কি সুন্দর চোখ মেলে তাকিয়ে রয়।হাত,পা নড়াচড়া করছে।দেখে মনে হচ্ছে।সে সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে রয়েছে।এই সুন্দর মুহূর্তটা দেখে স্বাধীনের পুরনো কথা মনে পড়ে যায়।সে চোখের পানি লুকিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা করছে।এই তো সেই দিন।বাবা তাকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়িতে আসতেই শুনতে পায়।ছোট একটি শিশুর কান্না।যে চোখ বুঝে কান্না করে সারা বাড়ি মাথায় তুলতো।বাবা তার হাতে ছোট নরম তুলতুলে শরীরটা তুলে দিয়ে বলেছিল।
-;স্বাধীন।এটা তোমার বোন।তাকে মাথায় তুলে রাখবে।
হ্যা,স্বাধীন বোনকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে।মাথায় পর্যন্ত তুলে রেখেছে।মাটিতে বোনকে সহজে রাখেনি।মাটির পিপড়াই যদি তার বোনকে কামড়ে দেয়।আজ সেই বোনটা কোথায় সুয়ে আছে?সাড়ে দিন হাত মাটির ঘরে।
২৩.
জিহান লালটা না কালাটা ধর।আজকেই এইটারে চিকেন ফ্রাই করুম।পার্টি হবে মামা।
লাল মুরগী ছেড়ে কালোটা ধরতে গেলে হাতের মধ্যে ঠুকরে কুক..কু..রুক্কু করে উঠে।বাড়ি ভিতর থেকে চোর চোর ব’লে রমেশ রায় দৌড়ে ছুটে আসে।কালোটা শব্দ করতেই অর্পণ,জিহান,রিহান তিনটা উঠে পরে দৌড়।
-;অর্পণ ভাই আজকে গেছি।মুরগী চুরি করতে গিয়া ধরা খাইলাম।আজকে শেষ।এতখনে রমেশ রায় মনে হয় বাড়িতে বিচার পাঠিয়ে দিয়েছে।
রমেশের বাচ্চাটা যদি আজকে বিচার দেয়।তাইলে ওর খবর আছে।
চেয়ারম্যান সাহেব,চেয়ারম্যান সাহেব বাড়িতে আছেন না-কি!রাতের বেলা চেয়ারম্যান বাড়ি দুয়ারে কয়েকজন লোক হাত,পা ভাঙ্গা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
-;আপনার পোলায় তার বাদর ভাইদের নিয়ে আমার পেয়ারা বাগানে গেছিল।আমার গাছের সকল পেয়ার চুরি করছে।আমি বাঁধা দেওয়া।আমার কপালে,মুখে পেয়ারা মারছে।দেখেন আমার অবস্থা।
-;আমার গাছের ডাব চুরি করছে।গাছে উঠে সকল ডাব পারছে।আমি বাধাঁ দেওয়া।আমার গাছের ডাব দিয়ে আমার হাত,পা ভাঙ্গছে।
-;আমার পুকুরের মাছ চুরি করছে
-;আমার মুরগী চুরি করতে গেছিলো।তারে স্ব চোখে দেখছি।সে আমারে দেইখা পালায়ছে।
চেয়ারম্যান সাহেব গম্ভীর স্বরে ব’লেন।আর কার কি ক্ষতি হয়েছে?
-;মসজিদের নামাজ পড়ে বের হতেই দেখি আমাদের সবার জুতা নেই।কে নিয়েছে জানি না?আমি মসজিদের ইমাম আজকে গঞ্জের বাজারে গেছিলাম।আর সেখানে আপনার অসভ্য ছেলে তার ভাইদের নিয়ে জুতা বগল থাবা করে বিক্রি করছে।এক জোড়া জুতা আশি টাকা।আমি আমার আগের জুতার মতো এক জোড়া জুতা কমে পেয়ে কিনে নিলাম।বাসায় এসে দেখি আমার জুতা আমার কাছেই আসছে।মাঝখানে আশি টাকা গেলো।আমি এর বিচার চাই।
সবার অভিযোগ শুনে রাগে কপাল চাপড়ান অসিম তালুকদার।আর ছেলেকে বকতে থাকেন।ছেলেটাকে নিয়ে সে কি করবে?এমন তেরামি সে যদি তার বাপের আমলে করতো।মেরে পিঠের ছাল তুলতো।আর এই তার গুণধর ছেলে বাপের নামডাক সব ডুবিয়ে ছাড়ছে।আজকে বাসায় আসুক ওর খবর আছে।
সবাইকে জরিমানা দিয়ে বাড়িতে ঢুকেই বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
-;হতচ্ছাড়া বাড়িতে পা রাখলেই আমাকে ডাক দিবে।ওহ কি পেয়েছে?প্রতিদিন এসব বদনাম করবে।আর আমি সব মেনে নিবো।
-;আহা আপনি রাগ করছেন কেন?ওহ বাচ্চা ছেলে।এই বয়সে দুষ্টুমি করবে না তো।তাহলে কবে করবে?আপনার মতো বুড়ো বয়সে।
-;রাবেয়া,আমার মাথা গরম করবে না।বেশি বাড় বেড়েছে তোমার ছেলে।তুমি ওকে আল্লাদ দিয়ে মাথা তুলেছো।তোমার জন্য ছেলের এই অত পতন।
-;আপনি,আপনি এত বড় কথাটা বলতে পারলেন।দশটা না পাচঁটা না।আমার একটা মাএ সন্তান।আমি একটু বেশি আদর করি।তাই ব’লে আমি ওকে আল্লাদ দিয়ে মাথায় তুলেছি।আমি কালই বাপের বাড়ি চলে যাব।থাকবো না এই সংসারে।এই সংসারের লোক আমার আর আমার ছেলের সুখই সয্যই করতে পারেনা।রাবেয়া স্বামীর ওপর অভিমান করে দরজা লাগিয়ে বসে কাঁদতে লাগলো।
-;ভাইজান,ভাবি রেগে গেল।
-;সাফিন,বাদ দেও তোমার ভাবীর কথা।সে এমনই,ছিদকাদূনী মহিলা একটা।
তিন বাঁদরকে ধরে নিয়ে আসো।এদের একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।
-;জি,ভাই।আমি খোঁজ নিচ্ছি।
দোস্ত তোরা পালা।সাফিন চাচা তোদের তিনটারে খুঁজতাছে।একবার হাতের কাছে পাইলে খবর আছে।চেয়ারম্যান সাহেব আজকে তার বাপজান অর্পণ এর ওপর বেশি খ্যাপা।
-;আমার নামে বিচারটা কে দিলো সেটা আগে বল?
-;মনে হয় রমেশ রায়।
-;রমেশের বাচ্চা তোর খবর আছে!
-;রমেশের খবর পরে কর!আগে পালা।বন্ধুু সাফাত থেকে খবর পেয়ে তিন ভাই নদীতে ঝাপ দিয়ে নদীর ওপারে রোহিতপুর গ্রামে দিকে সাঁতরে যেতে লাগল।নদীর পানি কমে যাওয়া অতটা গভীর নয়।নদীর মাঝেই একটু বেশি পানি।আর কিনারায় কোমড় সমান পানি।
২৪.
রাতের বেলা ভাইকে নিয়ে বসে আছে পুতুল।তার জ্বর কমতে শুরু করেছে।হারিকেন আলো প্রায় শেষের দিকে।চোখটা ঘুমের জন্য মেলে রাখায় দায়।রাতে মামী জোর করে দুই লোকমা ভাত তুলে খাইয়েছে।এরপর ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।এখন একটু ঘুমাতে পারলে বেশ শান্তি লাগবে।কিন্তু তার ঘুমটা গভীর হওয়ার আগেই ছাগলের ডাক কানে ভেসে আসে গোয়াল ঘর থেকে।এমন সময় ছাগলগুলো ডাকছে কেন?মামা বাসা নেই।মামী তার রুমে বাবুকে ঘুম পাড়াতে গেল।মনে হয় চোখ লেগে গেছে তাই কিছুই টের পায়নি।পুতুল ভাইয়ের ওপর একটা কাঁথা দিয়ে দিলো। দরজাটা খুলে মাথাটা একটু বের করে আবার ভিতরে ঢুকিয়ে নেয়।বাহিরে চাঁদের আলোয় কিছুটা পরিষ্কারের মধ্যে কেমন যেন অদ্ভুত দৃশ্যতে চোখ আটকে যায়।ছাগলের রশি ধরে টানছে দুই অদ্ভুত লোক।তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত গাছ লতাপাতা দিয়ে ঢাকা।এটা আবার কি জিনিস?পুতুল ভেবে পায়না।একজন তার আদরের রাণীকে কাঁধে নিয়ে হাটতে দেখে নিজের পায়ের জুতা খুলে রাগে ঝুড়ে মারে।মুখের ওপর ছোটো একটা জুতা দেখে উহু শব্দ করে উঠে অর্পণ।তার মুখের ওপর এমন লিলিপুট জুতাখানা কে মারলো?পুতুল ভয় না পেয়ে আদরের রাণীকে কোলে নিয়ে তার ঘরে ঢুকেই দরজাটা ঠাসস করে লাগিয়ে দেয়।দরজার শব্দে রেনু’র ঘুমটা ভেঙে যায়।ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।ততখনে তিন ভাই ছাগল রেখেই হাওয়া।
পুতুল রাণীকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।রাজিয়া সাথে এই বাড়িতে তার থাকার পঞ্চম দিনই রানীর জম্ম হয়।ছাগলের বাচ্চার নামটা তার মায়ের দেওয়া।রানী।তাই এটার প্রতি তার মনটা একটু বেশিই নরম।
অর্পণ ঠোঁট ধরে পুকুর পাড়ে বসে সমানে দুই বেনীওয়ালিকে বকে যাচ্ছে।
আজ পর্যন্ত কেউ তাকে একটা থাপ্পড় মারেনি।সেখানে কি-না এই লিলিপুট একখানা জুতা ছুড়ে মারে।তাও আবার কাকে?মিষ্টার অর্পণ তালুকদারকে।এই লিলিপুট জুতার মালিককে আমি দেখে নিবো।অসভ্য মেয়ে মানুষ।
চলবে….
নেট সমস্যার জন্য আমি সব জায়গায় গল্পটা পোস্ট করতে পারছি না। পোস্ট করতে গেলেই পুরোটা সাদা হয়ে যাচ্ছে।