#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_১২
#ইশরাত_জাহান
🦋
সবাইকে জামা কাপড় দিয়ে দ্বীপ ও নীরা ঘিরে চলে আসে।নীরা মাথার হিজাব খুলতে থাকে।দ্বীপ হাত ঘড়ি খুলে গলার টাই হালকা লুজ করতে করতে বলে,”আর ইউ জেলাস?”
হাত আটকে যায় নীরার।দ্বীপের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,”কেনো?জেলাস হবো কেনো?”
“পিংকি আমার আশেপাশে আসলেই তুমি যেভাবে প্রতিবাদ করো মনে তো তাই হচ্ছে।”
“আপনার বুঝি ভালো লাগে ওই পিংকি আপনার গায়ে গায়ে চললে?”
“কথা সেটা না,কথা হলো তুমি কেমন ফিল করো?”
“আমি আবার কেমন ফিল করবো!কোনো ফিলই করি না।”
বলেই হিজাব খুলে আলমারি থেকে বাসায় পরার জামা নিতে থাকে।দ্বীপ আবারও জিজ্ঞাসা করে,”তাহলে প্রতিবাদ করো কেনো?”
নীরা জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে যায়।ওয়াশরুমের দরজা দিতে যেয়েও দরজা হালকা ফাঁকা রেখে বলে,”আমার কোনো জিনিস যখন আমার হয়েই পার্মানেন্ট থাকে আমি তা অন্য কাউকে ভাগ করি না।আপনি এখন আমার হয়ে গেছেন ক্যাডার সাহেব।আপনার প্রতি অন্য কোনো নারী আসক্ত হলে তাকে তো একটু ভুক্তে হবে।”
বলেই দরজা লাগিয়ে দেয় নীরা।দ্বীপ স্মিত হাসে।বিড়বিড় করে বলে,”চন্দ্রপাখি তার ক্যাডার সাহেবের প্রতি আসক্ত হচ্ছে।এটা সে বলবে না কিন্তু অন্য নারীকেও আসক্ত হতে দিবে না।নারীপ্রেম বুঝি একেই বলে!”
আজ বিকালে নীরা দীপান্বিতা ও মিসেস সাবিনা মিলে নাস্তা তৈরি করতে থাকে।নীরাকে আজকে ছুটি দিয়েছে দ্বীপ।বিয়ের পরেরদিন থেকেই তো বই পড়া শুরু করেছে সে।আজকের দিন রেস্ট করার সুযোগ পেলো নীরা।সন্ধায় নাস্তা বানিয়ে সবাই মিলে খাবে।সবাই কাজ করছে আর নীরা উকি দিয়ে দিয়ে দেখছে।নীরা রান্না বান্না পারে না।তাই তাকে কেউ রান্না করতেও দিচ্ছে না।
পিংকি নীরার এই দুর্বলতার সুযোগটি নিয়ে নিলো।সাথে সাথে বলে,”বাড়ির বউ হয়ে কি না রান্না পারে না!কেমন মেয়ে বিয়ে দিয়ে এনেছো তোমরা?”
দীপান্বিতা বলে ওঠে,”আমাদের তো সমস্যা নেই।তোর এত কেনো সমস্যা?”
“আমার কোনো সমস্যা নেই।দেখি আমি একটু রান্না করি।দ্বীপ বেইবী তো পাস্তা খেতে খুব ভালোবাসে।আমি রান্না করবো ওর জন্য।বউ তো রান্না পারে না আমি নাহয় করে দেই রান্না।”
পিংকি দ্বীপকে সবসময় এই বেইবী বলে ডাকতো।এখনও তাই বলে।
রাগে দুঃখে অপমানে জেলাসিতে সবকিছুতেই ফেটে পরলো নীরা।সাথে সাথে বলে,”আজকের পাস্তা আমি রান্না করবো।”
পিংকি হো হো করে হেসে দিয়ে বলে,”যে মেয়ে মুখে লিপস্টিক মেকআপ দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ পারেনা সে মেয়ে আবার করবে রান্না।ওটা তোমার কাজ নয়।তুমি ঘর সংসার সামলাতে পারবে না।”
“আমি বলছি আমি রান্না করবো মানে করবো।এখন যদি আমাকে রান্না করতে না দেও তো..”
বলেই আশেপাশে তাকিয়ে করাই থেকে গরম খুন্তি হাতে নিয়ে বলে,”এই গরম খুন্তি দিয়ে তোমার মাথা ফাটাবো বলে দিলাম।ভালোয় ভালোয় বলছি আমার ক্যাডার সাহেবের জন্য রান্না করবি না তুই ডাইনি।ওনার জন্য এই নীরা আছে।”
কে আর কি বলবে!নীরার রণচন্ডি রূপ দেখে সবাই হা হয়ে আছে।দ্বীপ এখন একটু বাইরে গেছে।তাদের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট দেখতে। অভ্র হাত তালি দিয়ে বলে,”ঠিক হয়েছে,ঠিক হয়েছে।”
পিংকি ভয়তে দেয় দৌড়।এই মেয়ের পুরনো কিছু রেকর্ড আছে যা পিংকি খুব ভালো করেই জানে।শুধু শুধু বাঘিনীকে খেপিয়ে লাভ নেই।
পিংকি চলে যেতেই নীরা ইউটিউব দেখে পাস্তা রান্না শুরু করে। পাস্তা রান্না শেষে সবকিছু পরিষ্কার করে নিজের ঘরে যায়।দীপান্বিতা ও মিসেস সাবিনাও ঘরে যায় ফ্রেশ হবে বলে।এই সুযোগে পিংকি আসে রান্না ঘরে।এসেই পাস্তায় প্রচুর লবণ ও ঝাল মিশিয়ে দেয়।তারপর চলে যায় ঘরে।
নীরার ফোন ড্রয়িং রুমে ছিলো।অভ্র তখন ড্রয়িং রুমে আসে টিভি দেখবে তাই।ঠিক তখনই নীরার কল আসে।নীরব দেয় কল।অভ্র প্রথম কল আসাতে রিসিভ করে না।কিন্তু দুই তিনবার কল আসাতে রিসিভ করে বলে,”হেলো।”
নীরব বুঝতে পারে এটা অভ্র।পিচ্ছি কণ্ঠ আর এখন তো নীরা দ্বীপের বউ।দ্বীপের বাসায় অভ্র থাকবে এটা স্বাভাবিক।কিন্তু এতদিন কেনো আছে তাই বুঝতে পারছে না।দীপান্বিতা কি শশুর বাড়িতে যায় না?এটা এখন তাদের ব্যাপার।ভেবেই নীরব বলে,”আমি নীরব। নীরার ভাই হই।নীরাকে দেওয়া যাবে এখন?”
“মামী তো ঘরে গেছে ফ্রেশ হতে আর মামু একটু পরে আসবে।”
ঠিক সেই সময় দীপান্বিতা এসে বলে,”কার সাথে বলছো বাবাই?”
“মামীর ভাইয়া ফোন দিয়েছে আম্মু।এই নেও কথা বলো।বলেই ফোনটি দীপান্বিতার কানে দিলো অভ্র।”
আম্মু বলে সন্মোধন শুনে নীরবের মনের গহীনে কাপন ধরলো।খারাপ লাগছে তার।কিভাবে পারলো তার জন্য অপেক্ষা না করে এভাবে বিয়ে করে নিতে?দীপান্বিতা ফোন কানে নিয়ে নরম সুরে বলে,”হেলো।”
কি সুন্দর মধুর কণ্ঠ বাজতে থাকে নীরবের কানে।দীর্ঘ সময় পর আজ তারা একসাথে কথা বলতে পারছে।কিন্তু এখন তো আর আগের সম্পর্ক নেই।নীরব কাটকাট গলায় বলে ওঠে,”বোনকে বলবেন ফ্রী হলে যেনো কল দেয়।”
বলেই কল কেটে দিলো।এতগুলো বছর পর প্রিয় ব্যাক্তির কণ্ঠ শুনে শান্তি পেলেও কথার সুরে তিক্ততা অনুভব করলো দীপান্বিতা।পাল্টে গেছে তার খাদ্য বিশেষজ্ঞ পুরুষটি।নীরবের ছোট থেকে একজন নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট হওয়ার ইচ্ছা।তাই দীপান্বিতা নীরবকে খাদ্য বিশেষজ্ঞ সাহেব বলে ডাকতো।
দ্বীপ ও মিস্টার সমুদ্র একসাথে চলে এসেছেন।সবাই মিলে নাস্তা সাজাতে থাকে।নীরা বাটিতে বাটিতে সবার জন্য পাস্তা দেয়।পিংকি মনে মনে অনেক খুশি। দ্বীপ ঝাল সহ্য করতে পারে না।নীরার বানানো খাবার খেয়ে দ্বীপ শিওর নীরাকে বকাঝকা করবে।
সবাই একসাথে পাস্তার খেতে থাকে।প্রথম এক চামচ খেয়ে সবাই নীরার দিকে তাকায়।পিংকি খুব খুশি এবার বোম ব্লাস্ট হবে।পিংকির আসায় পানি ঢেলে অভ্র বলে,”মামী খুব মজা।”
মিসেস সাবিনা বলেন,”হ্যা সবকিছুই ঠিকঠাক আছে শুধু সস একটু কম দিলে হতো।তাও প্রথম রান্না হিসেবে তুমি অনেক ভালো করেছো।”
সবাই নীরার প্রশংসা করতে থাকে।পিংকি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এদের দিকে।নীরা পিংকির দিকে তাকিয়ে বলে,”কি হয়েছে!কিছু বুঝতে পারছো না তাইতো?”
সবাই তাকায় নীরা ও পিংকির দিকে।পিংকি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।নীরা আবার বলে,”তুমি আমার ব্যাপারে শুধু মেকআপ করার অভিজ্ঞতা টাই জানলে!এটা জানলে না যে আমি সিনেমা প্রেমী।জীবনে কত নাটক সিনেমা দেখেছিলাম যেখানে এক ডাইনি এসে নায়িকার সমস্ত খাবার নষ্ট করে দেয়।তুমি হলে আমার জীবনের সেই ডাইনি।আমি কি আর জেনে শুনে বকা খাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারি?তাই আগেভাগে খাবার সরিয়ে রাখি। আর তোমার বাটিতে যেই পাস্তা ওটা তোমার হাতের ঝাল মশলা যুক্ত।অভ্র দেখে নিয়েছে তুমি কি কি করেছিলে।এবার ভদ্র মেয়ের মতো নিজের হাতের টেস্টি পাস্তা খেয়ে নেও।”
“আমি পাস্তা খাবো না।অন্য খাবার খাবো।তোমার মন চাইলে তুমি খাও।কি প্রমাণ আছে যে আমি এটাতে ঝাল লবণ দিয়েছি?”
“প্রমাণ অভ্র নিজে।ছোট বাচ্চা তো আর মিথ্যে বলবে না।খেয়ে নেও আমার ডাইনি ননদিনী।এটা এখন তোমাকেই খেতে হবে।”
বলেই নীরা পাস্তার বাটি নিয়ে পিংকির কাছে আসতে থাকে।পিংকি এবার চেয়ার থেকে উঠে দেয় ভো দৌড়।নীরা কি কম নাকি?সেও পিংকির পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,”একবার যখন আমার খাবার নষ্ট করতে চেয়েছিলি তার টেস্ট তো তোকে নিতেই হবে ডাইনি ননদিনী।পালাবে কোথায় আমি নীরা যখন একবার লেগেছি তোমার পিছনে তখন তোমার রেহাই নেই।আমার বরের সাথে সুপার গ্লুর মতো লেগে থাকা তাই না?এবার দেখ সুপার গ্লুর উপরে কি কি আছে।”
বলেই সারা রুম জুড়ে তারা করতে থাকে পিংকিকে।অবশেষে পিংকির দৌড়ানোর সাথে উড়ন্ত ওড়না ধরে ফেলে নীরা।তারপর সোফায় পিংকিকে শুইয়ে দিয়ে গাল টিপে হা করিয়ে পিংকির গালে ঢুকিয়ে দেয় পাস্তা।পিংকি বেচারি কষ্ট করে হলেও গিলতে থাকে।টেবিলে বসা দ্বীপ মাথায় হাত দিয়ে এদের কর্মকাণ্ড দেখে।
দীপান্বিতা দ্বীপকে আস্তে আস্তে বলে,”কে বলবে এই মেয়ে বিয়ের দিন পালিয়েছিলো?বিয়ে করবে না বলা মেয়েটি কি না এখন সেই স্বামীর ভক্ত।”
মনে মনে খুশি হয় দ্বীপ।নীরা একদম ঠিক কাজ করেছে।পিংকি যেমন তাদের সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে ঢুকে পড়ছে এতে ওর এই শাস্তির দরকার।দ্বীপ নিজেও সহ্য করতে পারে না পিংকিকে।খুব তাড়াতাড়ি পিংকির জন্য ছেলে দেখা শুরু করবে।
চলবে…?
গল্পটি পড়ে সবাই ইশরাত জাহান পেজটি ফলো দিয়ে সাপোর্ট করুন 🖤🦋