#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
সপ্তচত্বারিংশ পর্ব (৪৭ পর্ব)
বাসার কলিং বেল বাজলে মমতাজ বেগম দরজা খুলে দেন। সামিহা উনার দিকে এক বিশুদ্ধ হাসি ছুঁড়ে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন?”
মমতাজ বেগমও হেসে বলেন,
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো? (একটু থেমে) ভিতরে আসো।”
সামিহা ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলে,
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ভালো আছি।”
সামিহা আশেপাশে তাকায়, বুঝতে পারে লুৎফর রহমান বোধহয় বাসায় নেই। সামিহা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
“তানজিম বাসায় আছে?”
“হ্যাঁ, ও ওর রুমে আছে। তুমি যাও।”
হাত দিয়ে তানজিমের রুম দেখায় মমতাজ বেগম।
সামিহা আবারো হেসে তানজিমের রুমে গিয়ে নক করে।
“দরজা খোলা।”
তানজিমের কন্ঠ পেয়ে সামিহা দরজা ঠেলে ভিতরে যায়।
অপ্রস্তুত চোখে সামিহাকে দেখে ভয়ে চমকে ওঠে তানজিম। সামিহা দুহাত দুদিকে দিয়ে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল,
“সারপ্রাইজ।”
তানজিম খুশি হয় না বরং ওকে ধ°ম°ক দিয়ে বলে,
“তুই এখানে কি করছিস?”
সামিহা হাত নামিয়ে সোজা হয়ে বলে,
“কি করব? তোকে দেখতে এসেছি।”
সামিহার বিষয়টা একটু খারাপ লাগে। ও সেই মতিঝিল থেকে কাকরাইল এসেছে তানজিমের সাথে দেখা করতে, অথচ তানজিম ওকে দেখে একবার হাসলোও না।
সামিহা বিছানার এককোণায় বসে। তানজিম বই পড়ছিল, বইটা পাশে দেখে উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
সামিহা জিজ্ঞাসা করে,
“তোর শরীর কেমন আছে?”
“ভালো।”
ছোট করে খুব দ্রুত জবাব দেয় তানজিম।
সামিহা এবার একটু রাগ দেখিয়ে বলে,
“আমি আসলাম তোকে দেখতে, অথচ তুই আমাকে ন্যূনতম পাত্তা দিচ্ছিস না। কেন?”
তানজিমের কাছে কোনো উত্তর নেই। কিছুক্ষণ চঞ্চলভাবে নিজের চোখ এদিক-ওদিক নাই তারপর একটা মিথ্যা বলে বসে,
“আসলে আম্মু চায় না তুই আমার সাথে দেখা কর বা আমি তোর সাথে দেখা করি। তুই বুঝতে পারছিস?”
সামিহা অপলক তাকিয়ে রইলো। চোখে পানি ছলছল করছে, যেন এখনই কান্না করবে। তানজিম ওর অবস্থা দেখে। একটা কাশি দিয়ে একটু নিচুস্বরে বলে,
“কথাটা বুঝতে চেষ্টা কর। আম্মু আমাদের সম্পর্কটাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। আবার সরাসরি তোকে বলতেও পারছে না (একটু থেমে) কিন্তু আমাকে বলেছে। বুঝেছিস তুই?”
সামিহা আর কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তানজিম তাকিয়ে থাকে ওর চলে যায় পথের দিকে। তানজিম ওকে এভাবে কষ্ট দিতে চায়নি, তবে ওর ভালোর জন্যই দিতে হয়েছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বাধা না মানা সামিহার চোখের জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। কান্নার মূল কারণ সে সংজ্ঞায়িত করছে না বা করতে চাইছে না।
______________________________________
“তুমি এখানের এড্রেস কোথায় পেয়েছো?”
অপরূপার কথায় মৃত্তিকা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“এতোকিছু বলার সময় আমার নেই।”
অপরূপা হয়তো কাউকে ডাকতে চেয়েছে, তবে ওর গলা দিয়ে শব্দ বের হওয়ার আগেই মৃত্তিকা ওর গালে এক চ°ড় বসায়৷ অপরূপা সোজা হওয়ার আগে মৃত্তিকা ওর ঘাড় চে°পে ধরে মাথা দেয়ালের সাথে বেশ জোরে জোরে কয়েকবার ঠু°কে দেয়। কপাল ফে°টে র°ক্ত পড়া শুরু করে অপরূপার। মৃত্তিকা থামে না, ওর অন্য গালে চ°ড় বসিয়ে গলা চে°পে ওকে দেয়ালের সঙ্গে আটকে রাখে।
অপরুপাও দুহাতে মৃত্তিকার গলা চে°পে ধরতে চায়। তবে মৃত্তিকা ওর দুপায়ের হাটুতে জোরে লা°থি দেওয়ায় নিচে বসে পড়ে। মৃত্তিকা ওর গলা ছেড়ে দেয়।
অপরূপার দুহাত পিছনে নিয়ে টে°নে ধরে বলে,
“শাফিন তোর কি হয়?”
অপরূপা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে বলে,
“হাসবেন্ড।”
“কি?”
অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে বেশ জোরে কথাটা বলে মৃত্তিকা।
অপরূপা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী।”
মৃত্তিকা উপরের ঠোঁট উঁচিয়ে বেশ ব্য°ঙ্গ করে বলে,
“এই আকাম কবে করছে আবার? (একটু থেমে) তবে ওর সব কুকর্ম সম্পর্কে তোর ধারণা আছে আশাকরি?”
অপরূপা জবাব দেয় না, মৃত্তিকাও জবাবের অপেক্ষা করে না।
মৃত্তিকা অপরূপার হাত বাধার জন্য আশেপাশে তেমন কিছু পায় না। তাই অপরূপা গায়ের ওড়না দিয়ে ওর হাত বেঁ°ধে দেয়। পা বাঁধার জন্য রুমের পর্দা কে°টে দুই টু°করো করে। শক্ত করে পা বেঁ°ধে বাইরে গিয়ে ফাহাদকে ডাকে।
ফাহাদকে ভিতরে এনে অপরূপার প্রতি ইশারা করে বলে,
“ওকে বাবার বাসা পর্যন্ত নিয়ে যাবে।”
ফাহাদ অবাক হয়। বাবা মেয়ে দুজনে কি মা°ফিয়া নাকি?- এমন একটা সন্দেহ তার জেগে ওঠে।
মৃত্তিকা নিজের হিজাব ঠিক করতে করতে বলে,
“কি বলেছি বুঝেছ?”
“জি।”
“গাড়ি আছে তোমার সাথে?”
“হ্যাঁ, আছে।”
মৃত্তিকা পর্দার বাকি অংশ দিয়ে অপরূপার মুখ শক্ত করে বেঁধে দেয়। ফাহাদকে বলে,
“ওকে গাড়িতে তোলো আমি আসছি।”
ফাহাদের শক্তপোক্ত শরীর। সে খুব সহজেই হ্যাংলা দেহের অপরূপাকে কোলে করে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যায়। মৃত্তিকা পিছুপিছু সেখানে যায়।
অপরূপাকে গাড়ির সিটে বসাতে নিলে মৃত্তিকা বলে,
“এই কি করো?”
ফাহাদ মৃত্তিকার দিকে তাকায়। মৃত্তিকা গাড়ির ডেকের দিকে আঙুল দিয়ে বলে,
“ওকে ওখানে ঢু°কাও। এটা আমার বসার জায়গা।”
কথা শেষ করে মৃত্তিকা গাড়িতে উঠে যায়।
ফাহাদ মৃত্তিকার কথা মত অপরূপাকে গাড়ির ডেকে ঢুকিয়ে আটকে দেয়। অপরূপার নিরীহ চাহনি এক মুহূর্তের জন্য অপরূপা চোখের দিকে তাকাতে বাধ্য করে ওকে।
“কি হলো? গাড়ি কে চালাবে?”
মৃত্তিকার কথায় ফাহাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আমিই চালাবো।”
“ওকে চালাও।”
ফাহাদ গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। উদ্দেশ্য ধানমন্ডিতে শরীফের বাসা।
______________________________________
সৌহার্দ্যের অনেক অনুরোধেও আহনাফ জামিলকে ভর্তি করায়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষেই বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছে। পিঠে ওয়াশ করে ওষুধ লাগানো হয়েছে৷ কোন কোন ওষুধ লাগিয়েছে তাও আহনাফ লিখে এনেছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চোখ পরিষ্কার করিয়ে এনেছে। ডানচোখে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। আবার দুইটা ড্রপ দিয়ে দিয়েছে৷
বাড়িতে আনার পর সারাহ্ জামিলের অবস্থা দেখে আ°ৎ°কে উঠে। আহনাফ যত দ্রুত সম্ভব জামিলকে রুমে বন্ধ করে দেয়।
সারাহ্ বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানে চলে আসে। তার প্রচন্ড বমি পাচ্ছে, আহনাফ যে এতটা হিং°স্র হতে পারে তা ওর কল্পনার বাইরে ছিল।
আহনাফ ওকে খুঁজতে খুঁজতে বাগানে চলে আসে। ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“কি হলো তুমি ওরকম করে দৌড়ে বেরিয়ে আসলে কেন?”
সারাহ্ একটু সরে যায়। আহনাফের দিকে না তাকিয়ে বলল,
“আপনি মার°তে পারতেন, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু এভাবে অ°ত্যা°চার করার মানে কি?”
আহনাফ ভ্রু উঁচিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“মারবো তো বলিনি ট°র্চা°র করব বলেছি। তুমি জানো না কত বড় অ°ন্যায় ওরা করেছে।”
সারাহ্ মাথা ঝাঁ°কিয়ে বলে,
“আমি শুনেছি। দরজার এপাশ থেকে ওপাশের সব কথাই শোনা যায়।”
আহনাফ ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“তবে তো হলোই, বুঝতে পেরেছ কেন করেছি।”
সারাহ্ ওর হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে,
“সকল মানুষ হেদায়েত পাবে না, এটাতো চির সত্য। এই পৃথিবীটা একটা পরীক্ষাক্ষেত্রে। এখানে কেউ হান্ড্রেট মার্কস পাবে, আবার কেউ নব্বই, কেউ বা তেত্রিশ পেয়ে কোনোরকম পাস করবে আর কেউ ফেল। কেউ কেউ শূন্য পাবে, কোনো নাম্বারই তুলতে পারবে না এরা। আপনি কাউকে হেদায়েত দিতে পারবেন না।”
আহনাফ কিছুক্ষণ গাছপালার দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে,
“আমি কাউকে হেদায়েত দিতে পারবো না, আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ হেদায়েত দিতেও পারবে না। তবে যে অন্যায় ওরা করেছে তার জন্য এসব কিছুই না।”
সারাহ্ তাকিয়ে থাকে আহনাফের চোখের দিকে। আহনাফ বলে,
“শাফিন ছাড়া পেয়ে গেছে। ফাঁ°সির পরও, কবর দেয়ার পরও বেঁচে গেছে। বুঝতে পারছো কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ওরা।”
সারাহ্ চোখ বড় করে তাকায়, একটা ঢোক গিলে। আহনাফ নিষ্প্রাণ চোখে তাকিয়ে থাকে।
সারাহ্ আহনাফকে জড়িয়ে ধরে, আহনাফও তাকে আগলে নিলো। আহনাফের বুকে মাথা রেখে সারাহ্ বলল,
“মায়ের সাথে কি শ°ত্রুতা ওদের?”
“পুরোনো খু°নের রেশ থেকে শ°ত্রুতা এটা সবাই মানলেও আমি মানতে পারছি না। এখানে আরো অনেক কিছু আছে।”
সারাহ্ একটু চুপ করে থেকে বলে,
“মা কি আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছে?”
“অবশ্যই লুকাচ্ছে।”
______________________________________
রাতে বাসায় ফিরে ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে সরাসরি প্রশ্ন করে,
“আজ অফিস থেকে কোথায় গিয়েছিলে?”
মৃত্তিকা পড়ার টেবিল গোছাতে গোছাতে মাথা নেড়ে না বুঝিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে বলে,
“কোথাও না, বাসায় এসেছিলাম।”
ইমতিয়াজের সন্দেহ শেষ হয় না। তবে ফাহাদের কাছ থেকে কোনো যুতসই উত্তর না পেয়ে সে মৃত্তিকাকে আর তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারে না।
মৃত্তিকা একটা বই এনে ইমতিয়াজের সামনে ধরে বলল,
“এ বইটা আপনি পড়েছেন?”
“হ্যাঁ।”
“কেমন লেগেছে?”
“ভালো।”
“আমিও পড়বো।”
“তোমার ইচ্ছা।”
মৃত্তিকা বইটা টেবিলে রেখে বলল,
“কাল সুরভি আপুকে দেখতে যাবো, অনেকদিন হলো রাঈদকে দেখি না।”
ইমতিয়াজ শার্ট খুলতে খুলতে বলল,
“যেও, কিন্তু আমি যেতে পারবো না।”
মৃত্তিকা জেদ করে বলল,
“না, যেতে হবে।”
“জেদ করে না, মৃত্তিকা।”
ইমতিয়াজ একটু থেমে থেকে আন্দাজে একটা ঢিল ছুড়ে বলল,
“কাল যাত্রাবাড়ী গিয়েছিলে কেন?”
মৃত্তিকা চমকে উঠে, ওর চোখমুখ দেখে ইমতিয়াজ কথার সত্যতা নিশ্চিত করে। আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায় সে। মৃত্তিকা কিছুক্ষণ ভেবে বুঝতে পারে এটা নিশ্চয়ই ওই ফাহাদের কাজ।
______________________________________
ইমতিয়াজ অফিসে গেলে মৃত্তিকা বেরিয়ে যায় ধানমন্ডির উদ্দেশ্যে। বাসায় অপরূপাকে পাহারা দেওয়ার জন্য ফাহাদকে রেখে এসেছিল গতকাল।
আজ বাসায় এসেই মৃত্তিকা বুঝলো ফাহাদকে শরীফ কেন এত বিশ্বাস করে। সে ঠিকই সারারাত ধরে অপরূপার উপর নজর রাখছে। দরজা বাইরে থেকে তালা দেয়া ছিল। ফাহাদ ভিতরে এমনভাবে ছিল যে, ভিতরে কোনো মানুষ আছে কি নেই তা বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল।
মৃত্তিকা সোফায় বসে সামনে ফ্লোরে বসা অপরূপার দিকে তাকিয়ে ফাহাদকে বলে,
“বাসায় কোনো স্টোভ আছে?”
ফাহাদ রান্নাঘরের দিকে ইশারা করে বলল,
“রান্নাঘরে একটা আছে। (একটু থেমে) মানে দুই চুলা।”
মৃত্তিকা মাথায় হেলিয়ে বলে,
“সিলিন্ডারসহ নিয়ে এসো।”
ফাহাদ ওর কথা মতো কাজ করে। মৃত্তিকা মৃদু হেসে বলল,
“এখন তুমি ঘুমাতে যাও। সারারাত জেগে ছিলে।”
“জি।”
বাধ্য শি°ষ্যের মতো ফাহাদ মাথা দুলিয়ে চলে গেল।
মৃত্তিকা চুলা চালিয়ে অপরূপাকে বলে,
“কেমন আছো?”
অপরূপা আড়চোখে মৃত্তিকার দিকে তাকায়।
মৃত্তিকা হেসে উঠে দাঁড়ায়। একটা লোহার শি°ক ব্যাগ থেকে বের করে চুলায় সেটা গরম করতে করতে অপরূপাকে জিজ্ঞাসা করে,
“আর কে কে আছে এসবের মধ্যে?”
অপরূপা উত্তর দেয় না। মৃত্তিকা মনোযোগ দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শি°কটা গরম করছে। লোহা আ°গু°নে পু°ড়ছে, একটু একটু করে লাল হয়ে উঠছে। আশপাশটাও লোহার গরমের সাথে সাথে বেশ গরম হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। অপরূপা একটু ঢোক গিলে শান্ত থাকে।
মৃত্তিকা হাসি হাসি মুখ করে বলে,
“বড়মনি মানে মমতাজ, ওই জেলার, তুমি, দুলাল, আহনাফের ছোট ফুপা আর কে কে আছে?”
অপরূপার উত্তর না পেয়ে মৃত্তিকা রেগে যায়। ধ°ম°ক দিয়ে বলে,
“আর কে আছে নাম বল।”
এবারেও অপরূপা চুপ। মৃত্তিকা শি°কটা এনে অপরূপার গলার কাছে ধরে বলে,
“কথা কি কানে যাচ্ছে না?”
“কানে গেলেও বলব মনে হয়?”
একটা গরম লোহার শি°ক গলার কাছে, অথচ মেয়েটা বিন্দুমাত্র ভয় পাচ্ছে না। কতটা অদ্ভুত একটা বিষয়? ওর ডান বাহুতে ছ্যাঁ°কা লাগিয়ে দেয় মৃত্তিকা, অপরুপা চেঁ°চিয়ে উঠে।
মৃত্তিকা কিড়মিড় করে বলে,
“সত্য বলো আর কে ছিল।”
অপরূপা ডানে বামে মাথা নাড়ায়, যার অর্থ সে বলবে না। শি°কটা আরেকটু জোরে চেপে ধরে মৃত্তিকা। ব্য°থায় চেঁচিয়ে উঠলো মুখ খুলে না অপরূপা।
______________________________________
“পরশুদিন কলেজের ছুটি শেষ। কি করবেন?”
সারাহ্-র কথায় স্বাভাবিক সুরে আহনাফ বলল,
“কি করবো? ক্লাস করাবো, ফিজিক্স পড়াবো।”
একটু থেমে আহনাফ দুষ্টুমি করে বলল,
“তুমি না হয় বড় বড় বিক্রিয়া আর জ°টিল জ°টিল পরীক্ষা করিয়ো।”
সারাহ্ ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি সেটা বলছি না। এই লোকগুলোর কি হবে?”
আহনাফ মাথা নাড়ে। বলে,
“হবে কিছু একটা যখন হবে তখন দেখে নিও।”
সারাহ্ ওর হাত ধরে বলল,
“ওদের বাসায় রাখছেন, তার উপর এমন অ°ত্যা°চার চালাচ্ছেন। যদি কিছু একটা হয়ে যায়, তখন? (একটু থেমে) আমি ওদের চিন্তা করছি না, আমি আপনার চিন্তা করছি। ওদের একজনের কিছু একটা হলে তার পুরো দায়ভার কিন্তু আপনার উপর আসবে।”
আহনাফ শার্টের হাতা গু°টাতে গু°টাতে বলল,
“আমি যা করছি জেনে-বুঝে, স°জ্ঞানে করছি। আমাকে বোকা ভেবো না।”
“আমি তা ভাবছি না। আমি জানি আপনি বুদ্ধিমান। যা করছেন ভেবে করছেন, তবে আমার চিন্তা হচ্ছে।”
আহনাফ ওর দুগালে হাত দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, তোমার এত যখন চিন্তা হচ্ছে, তবে ওদেরকে বাসার বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। এবারে খুশি তো?”
সারাহ্ ওর হাতের উপর হাত রেখে বলল,
“খুশি।”
চলবে…..