#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
পঞ্চাশৎ পর্ব (৫০ পর্ব)
“আমি একজন প্র°স্টি°টিউট ছিলাম। আমি ছোট থাকতেই আমার বাবা মায়ের ডি°ভো°র্স হয়ে গিয়েছিল। আমাকে কেউ সাথে নেয়নি। কাকার বাসায় ছিলাম আমি, ভালোই ছিলাম।”
অপরূপা একটু বিরতি নিয়ে আবারো বলা শুরু করে,
“ক্লাস নাইনে যখন প্রথমবার নাসির আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় তখন আমি রাজি হয়ে যাই। তাকেও যে আমার খুব ভালো লাগতো। আমাদের পাশের বাসার ছেলে ছিল সে। একটু একটু করে আমরা কাছে আসতে থাকি, (একটু থেমে) শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে বহুবার। (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) ইন্টার পরীক্ষার পর বিয়ের কথা বলে আমাকে বাসা থেকে বের করে আনে আর আমি তার সাথে এসে আমার জীবনকে শেষ করে দিই।”
মৃত্তিকা মনোযোগ দিয়ে শুনছে অপরূপার জীবনের গল্প। প্রত্যেকের জীবনে নিজস্ব একটা গল্প থাকে। এই গল্পের গভীরতার পরিসর শুধুমাত্র ব্যক্তি নিজেই বলতে পারে।
অপরূপা বলছে,
“সামান্য কিছু টাকার জন্য সে আমাকে বিক্রি করে দেয়। আমি হয়ে যাই একজন স°স্তা…”
কথার মাঝে হুট করে থেমে যায়। অপরূপার গলা চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। কিন্তু তার মায়াবী চোখদুটো স্থির, তাতে কোনো ভাষা নেই, কোনো কান্না নেই, দুঃখ নেই।
“আমার জীবন এভাবেই চলছিলো। ১৮ বছর থেকে ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত ওই একটা বদ্ধ জায়গায় আমি কাটিয়েছি। কি বলো তোমরা তাকে? অন্ধ°কার°নগরী? অনেক মানুষ আমার কাছে এসেছে-গিয়েছে। একদিন তোমার মামা, শাফিন এসেছিল। তারপর থেকে সে ব্যতীত আর কেউ আমার কাছে আসেনি। পরিচয়ের কিছুদিন পরই সে আমাকে ওখান থেকে বের করে আনে এবং বিয়ে করে।”
অপরূপা থেমে যায়। মৃত্তিকার দিকে তাকায় সে। মৃত্তিকা এখনো বাকি কথা জানার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। অপরূপা মুচকি হেসে বলে,
“এবারে কি কিছু পানি দেওয়া যাবে?”
মৃত্তিকা ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। অপরূপার হাত বাধা, হাতের দিকে ইশারা করলে মৃত্তিকা ওর মুখের সামনে পানি গ্লাস ধরে। মুখে না বললেও কার্যকলাপে বুঝিয়ে দেয় সে এখনো অপরূপাকে বিশ্বাস করে না এবং করবেও না।
পানি পান শেষে অপরূপা আবারও বলতে শুরু করে,
“ভেবেছিলাম হয়তো বন্দি দশা থেকে মুক্তি পাবো, কিন্তু আমি মুক্তি পাইনি। খোলা হাওয়ায় থেকেও আমি বন্দি ছিলাম। ঠিক যেভাবে যেভাবে শাফিন আমাকে চলতে বলেছিল, সেভাবেই চলেছে। কেন জানো? কারণ শাফিনের যে অর্থগুলো, তার লোভে পড়েছিলাম আমি। (একটু থেমে) তবে শাফিন কিন্তু আমাকে কম কিছু দেয়নি, বিলাসী জীবন পেয়েছি। এমন মূল্যবান কিছু নেই, যা আমার জীবনে পাইনি। দেলোয়ারা বা সুরভি এসব পায়নি। এজন্য শাফিনের সব কথা শুনেছি, তার সব কাজে আমি বিশ্বস্ত সহকারি ছিলাম।”
একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বলে,
“বুঝে নিয়েছিলাম জীবনে ভালো থাকতে হলে শুধু টাকা লাগে, আর কিছু না।”
মৃত্তিকা বলে,
“একবারও মনে হয়নি ভুল করছো? জীবনে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো, এটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু তুমি যা করেছো, তা কি অ°ন্যায় ছিল না?”
অপরূপা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বলে,
“আমার জীবনে কোনো ইমতিয়াজ আসেনি।”
মৃত্তিকার মুখটা একটু চুপসে যায়। হ্যাঁ, ইমতিয়াজ এসেছে ওর জীবনে। ওকে অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে সে। অগোছালো মৃত্তিকাকে গুছিয়েছে ইমতিয়াজ। অথচ আজ ইমতিয়াজকে লুকিয়েই এসব করছে সে। ভালোবাসার মানুষটার কোনো ক্ষতি যে সে চায় না।
এমন সময় অপরূপার ফোন বেজে উঠে। মৃত্তিকা ফোন হাতে নিয়ে দেখে শাফিনের নাম্বার। অপরূপাকে বলে,
“শাফিনকে বলবে তুমি মৃত্তিকার উপর নজর রাখছো।”
মৃত্তিকা কল রিসিভ করে, ফোনের স্পিকার অন করে দেয়। শাফিন বলে,
“জামিলকে মে°রে ফেলেছি। এখন তুমি কোথায় আছো?”
অপরূপা মৃত্তিকার দিকে তাকায়। মৃত্তিকা কথা বলতে ইশারা করলে, অপরূপা বলে,
“আমি সন্দেহজনক একজনের উপর নজর রাখছি।”
“কে?”
“ইমতিয়াজ।”
মৃত্তিকার হাসিটা বন্ধ হয়েছে। কল কে°টে ফোনটা ছুঁ°ড়ে ফেলে অপরূপার গলা চে°পে ধরে বলে,
“ইমতিয়াজের নাম কেন নিয়েছো?”
অপরূপা হো হো করে হেসে ওঠে বলে,
“এখন শাফিন তোমার ইমতিয়াজের পেছনে যাবে। তুমি ওখানে যাও, পারলে বাঁচাও তোমার ইমতিয়াজকে।”
অপরূপার নাকে মুখে এলোপা°থারি ঘু°ষি দিয়ে ওকে ফেলে দেয় মৃত্তিকা। উঠে দাঁড়িয়ে ফাহাদকে ডেকে বলে,
“আমি না বলা পর্যন্ত একে পানি পর্যন্ত দিবে না। বেশি বিরক্ত করলে গলায় আ°গুন ঢে°লে দিও।”
অপরূপার তাতে তেমন কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সে শান্তভাবে বলে,
“আমি জীবনে সুখ পাইনি, কাউকে সুখ পেতেও দিবো না।”
মৃত্তিকা আর কিছু না বলে বের হয়ে আসে। রাগে সমস্ত শরীর তার জ্ব°লে পু°ড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখনই অপরূপাকে শেষ করে দিতে। কিন্তু এডভোকেট বিথীর সমস্ত খবরাখবর না পেয়ে অপরূপাকে মেরে ফেলা বিশাল বড় বোকামি হবে, যা মৃত্তিকা চায় না।
নিজের ভিতরের হিং°সা থেকে অপরূপা শাফিনকে সাহায্য করেছে। এ তো এখন দিনের আলোর মতো সত্য। হিং°সা কতটা যে ভয়াবহ তা তো আর বলার দরকার নেই। ওর হিংসার আ°গুনে এ পর্যন্ত বহু মানুষ জ্ব°লেছে আর না জ্ব°লুক।
গাড়িতে বসে মৃত্তিকার মনে একটাই কোরআনের আয়াত ঘুরপাক খাচ্ছে- ‘আর (আমি আশ্রয় চাই) হিং°সু°কের অ°নিষ্ট থেকে, যখন সে হিং°সা করে।’ (সূরা ফালাক-৫)
______________________________________
“ঐশী, আমি রাতারাতই ফিরে আসবো। চিন্তা করো না তুমি।”
“চিন্তা কি আর করতে চাই? এতো তাড়াহুড়োর মধ্যে ঢাকা গেলেন, আবার কিছু বলেও তো গেলেন না। আমি..”
সারাহ্-র কথার মাঝে আহনাফ হেসে উঠে বলে,
“জামিলের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”
“কি বলেছে?”
সারাহ্-র কন্ঠ কেঁপে ওঠে।
আহনাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“দেখা পাইনি, সে পালিয়েছে।”
“পালিয়েছে? কিভাবে পালাতে পারে?”
“দেখো ঐশী, কারণ এখানে অনেক লম্বা। ফোনে বলা যাবে না, আমি বাসায় এসে জানাবো।”
সারাহ্ ঢোক গিলে বলল,
“আচ্ছা, সাবধানে থাকবেন। জামিলের কথা শুনে আমার আরো বেশি চিন্তা হচ্ছে।”
“কিছু না এসব। আমাদের সাদাব-সাইদার কথা ভাবো।”
সারাহ্-র কন্ঠ আরো ক্ষী°ণ হয়,
“প্লিজ, তাড়াতাড়ি আসবেন।”
“আচ্ছা, এখন রাখছি।”
ফোন রেখে আহনাফ ঘড়িতে দেখে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে। ইমতিয়াজের সাথে কথা বলতে বলতে সময় কে°টেছে। ওর সমস্ত ঘটনাই বিস্তারিতভাবে ইমতিয়াজকে জানানো হয়েছে। তবে ইমতিয়াজ নিজের সন্দেহ বা মৃত্তিকার অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কে কিছুই জানায়নি।
“আমার বাসা খুব কাছেই, বাসায় আসো।”
ইমতিয়াজের কথায় আহনাফ মৃদু হেসে বলে,
“না, এখন বাসায় গেলে দেরি হবে। এমনিতেও ঐশী চিন্তা করছে।”
ইমতিয়াজও হেসে বলে,
“আচ্ছা, ঠিক আছে। সময় করে একদিন বাসায় এসো।”
“ইনশাল্লাহ।”
দুজনের বিদায় পর্ব শেষে চলে আসতে নিলে ইমতিয়াজের পেছন থেকে মৃত্তিকার কন্ঠ পাওয়া যায়,
“ইমতিয়াজ দাঁড়ান।”
চমকে উঠে ফিরে দাঁড়ায় ইমতিয়াজ। মৃত্তিকা দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ এমন ঘটনায় ইমতিয়াজ একটু বি°ব্রত হয়। আহনাফ কারো ডাক শুনে ফিরে দাঁড়ায়। মৃত্তিকাকে দেখে মুচকি হেসে সে আবারো নিজের রাস্তায় রওনা দেয়।
একহাতে মৃত্তিকা কে আগলে নিয়ে ইমতিয়াজ বলল,
“এখানে কি করছো?”
মৃত্তিকা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। অপরূপার ওই কথাগুলো এখনো তার কানে বাজছে। শাফিন যে ইমতিয়াজের পিছু নেবে।
“মৃত্তিকা, এটা রাস্তা। ছাড়ো, মানুষ আমাদের দেখছে।”
মৃত্তিকা তবুও শোনে না, বরং দুহাতের বাঁধন আরো শক্ত করে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইমতিয়াজ ওকে জোর করেই দূরে সরায়।
রিকশা করে দুজনে বাসায় আসে। বাসায় এনেই মৃত্তিকাকে এক ধ°মক দেয় ইমতিয়াজ,
“বাইরে কি করছিলে তুমি? তুমি কি করো, কোথায় যাও, কিছু তো আমাকে জানাও না, জানানোর প্রয়োজনও মনে করো না।”
মৃত্তিকা মাথায় নিচু করে আড়চোখে ইমতিয়াজের দিকে তাকায়।
“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই তো। (একটু থেমে) তুমি সি°গা°রেট খাও?”
মৃত্তিকা বুঝতে পারে সি°গা°রেট কেনার বিষয়টা ইমতিয়াজ দেখেছে, আর সে কারণে ওকে সন্দেহ করছে। মৃত্তিকা হার মানার পাত্রী না। সে একটা নিরীহ চেহারা করে ইমতিয়াজের দিকে এগিয়ে যায়।
ইমতিয়াজের দুগালে হাত দিয়ে নিজের ওষ্ঠজোড়া ইমতিয়াজের ওষ্ঠে স্পর্শ করিয়ে বলে,
“কোনো গন্ধ আসছে? আসছে না, তবে কেন সি°গা°রেট খাওয়ার কথা বলেছেন? অন্যকারণেও কিনতে পারি।”
ইমতিয়াজ ওকে কোলে তুলে বলল,
“কি এমন কারণ যে সি°গা°রেট কিনতে হবে।”
মৃত্তিকা ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
“যে জিনিস মামকে পু°ড়িয়েছে তা আমি মনের খুশিতে ক্রয় করিনি।”
ইমতিয়াজ ওকে আর তেমন কোনো প্রশ্ন করে না। মৃত্তিকা দুহাতে শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরে৷ মৃত্তিকা যে কিছু লুকাচ্ছে তা স্পষ্ট। এভাবে প্রশ্ন করে বা ধ°মক দিয়ে ওর থেকে কথা বের করা যাবে না।
______________________________________
সাতদিন পর জামিলের ম°র°দেহ উদ্ধার করে গালিব ও তার টিম। আহনাফের ছোট ফুপ্পি আম্বিয়া আর তার ফুপাতো ভাই দেহ গ্রহণ করেছে।
খুব নি°ষ্ঠু°রভাবে খু°ন করা হয়েছে তাকে। দেহেও তাই প°চন ধরে গেছে, দেহের অনেক অংশ খুইয়ে খুইয়ে পড়ছে। মাংসগুলো কালো হয়ে তী°ব্র গ°ন্ধ বের হচ্ছে। বেঁচে থাকতে যে কু°কর্ম সে করেছে, তার প্রত্যেকটা হিসাব কেয়া°মতে হবে। কিন্তু কিছু শা°স্তি মৃ°ত্যুর সময় সে পেয়ে গেছে।
আহনাফ ঢাকায় আসেনি, তবে খবর সে পেয়েছে। ইমতিয়াজ খবর পেয়ে লা°শ দেখতে গিয়েছিল, তবে ভ°য়া°বহতা বেশি থাকায় সবাইকে দেহের কাছে আসতে দিচ্ছে না।
গালিবকে জবাব দিতে হবে, জবাবদিহিতা না দেওয়া পর্যন্ত ডিপার্টমেন্ট থেকে আর কোন কেস তাকে দেয়া হবে না।
ক্লাস শেষ করে সারাহ্ টিচার্স রুমে চলে এসেছে। সপ্তাহে এখন ওর একটা বা দুইটা ক্লাস থাকে। বেশিরভাগ দিন কলেজে না আসলেও তার চলে, আর আসলেও বসে বসে দিন যায়। এই কাজ আহনাফের, সরকারিভাবে এত তাড়াতাড়ি ছুটি পাবে না বলে প্রিন্সিপালকে অনুরোধ করে ক্লাস রুটিন বদলে দিয়েছে।
আব্বাস সাহেব ওকে কল করে। সারাহ্ রিসিভ করে,
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, তুমি কি কোন খবর পেয়েছো?”
সারাহ্ কপাল কুঁচকে বলে,
“কি খবর বাবা?”
“জামিল মা°রা গেছে।”
সারাহ্ ভ°য় পেয়ে আশেপাশে তাকায়। নিচুসুরে বলে,
“কিভাবে?”
“কেউ মে°রে ফেলেছে। ভ°য়ং°কর খু°ন, আর বুঝতেই তো পারছ এ কাজ শাফিনের।”
“কথায় বলে না, যার জন্য চু°রি করি সেই বলে চো°র। উনার অবস্থা তাই হয়েছে।”
আব্বাসের মাথা নেড়ে বলল,
“তুমি কি এখন বাসায় আসবে না আহনাফের সাথে একবারে আসবে?”
“কিছুক্ষণ পরে চলে আসবো।”
“একা বের হয়ো না, আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবো।”
সারাহ্ জানে এখানে রাজি না হয়ে আর কোন উপায় নেই। তাই সে রাজি হয়ে যায়।
আব্বাস সাহেব আসলে সারাহ্ কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় রাস্তার অপরপাশে ডাক্তার আরিফাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। এই ডাক্তার আরিফার উপর তার প্রচুর সন্দেহ। সেদিন উনি বলেছিলো তোমার মা কেমন আছে, সেদিন থেকেই সন্দেহ। এখন আবারও উনি এখানে দাঁড়িয়ে আছে, তারমানে ওর উপর নজর রাখতে এসেছে।
সারাহ্ দ্রুত অটোতে উঠে পড়ে। অটো চলতে শুরু করলে, আবারো মাথায় হেলিয়ে দেখে ডাক্তার আরিফা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। একটু ঘাবড়ে গিয়ে ঢোক গিলে। তবে যেকোনো কিছুর জন্য সে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছে। যেহেতু জামিলকে মা°রতে পেরেছে, সুতরাং ওদেরকে মা°রা শাফিনের পক্ষে কোনো ব্যাপারে না।
______________________________________
দুপুরের পর আবারো ধানমন্ডিতে আসে মৃত্তিকা। অফিসের জরুরী মিটিং-এ ইমতিয়াজ ব্যস্ত আছে।
গত কয়েকদিন ধরে অপরূপার কাছ থেকে মা°দ°ক এক প্রকার দূরে রেখেছো মৃত্তিকা। ওকে খেতে দিচ্ছে না, কিন্তু ওর সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে। মানসিক অত্যাচার যাকে বলে, তাই করছে সে।
কারণ একটাই এডভোকেট বিথীর ঠিকানা জানতে চায়, আবার সাথে ডাক্তার আরিফার সম্পর্কেও জানতে চাচ্ছে।
অপরূপা ক্রমাগত ছটফট করলেও, সে মুখ খুলছে না। অপরূপা পণ করেছে সে মৃত্তিকাকে আর কিছুই বলবে না। মৃত্তিকার একই অ°ত্যা°চার সে সয়ে গেছে।
মৃত্তিকা এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“আর কত সহ্য করবে এবার তো বলো।”
অপরূপা মাথা নাড়ে আর ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে বলে,
“আমি কিছুই বলবো না। আমাকে মে°রে ফেললেও না।”
“মে°রে ফেললে কিভাবে বলবে?”
হাঁটুতে হাত দিয়ে নিচু হয়ে ওর দিকে ঝুঁ°কে কথাটা বলে মৃত্তিকা।
“আমি ভয় পাই না তোমাকে। আমি কিছুই বলবো না। তোমার যা করার তুমি করে নিতে পারো।”
চেঁ°চিয়ে চেঁ°চিয়ে কথাগুলো বলে অপরূপা।
“ফাইন।”
ভ্রূ উঁচিয়ে সোজা হয়ে এইটুকু বলে মৃত্তিকা ভিতরে রুমে চলে যায়। অপরূপাকে ভিন্ন কোনো শাস্তি দিতে হবে।
শাফিনের শোবার রুমে থাকা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে বড় সুই ও মোটাসুতা নিয়ে বাইরে আসে। মৃত্তিকা অপরূপার সামনে বসে সুতা খুলে সুইয়ের মধ্যে গাঁথতে থাকে।
অপরূপা এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মৃত্তিকা ঠিক কি করতে চাইছে তা ও বুঝে উঠছে না।
মৃত্তিকা দাঁত দিয়ে সুতা ছিঁ°ড়ে সুতার রিলটা নিচে ফেলে বলে,
“তুমি যেহেতু কিছু বলবেই না, তবে তোমার মুখটা খোলা রেখে কি লাভ? সেলাই করে দেই। খুব সুন্দর একটা উপায়, তাই না?”
কথাটা বলেই একটা সুন্দর হাসি দেয় মৃত্তিকা। ওর চেহারায় একটা হিং°স্র রূপ চলে এসেছে।
মৃত্তিকা বলে,
“সবাই আমার শান্তর রূপটা দেখেছে, ইনোসেন্ট চেহারাটা দেখেছে। কিন্তু আমার দ্বিতীয় যে রূপটা আছে সেটা হাতেগোনা কয়েকজন দেখেছে, তুমি খুব লাকি।”
চলবে….