#এই_সুন্দর_স্বর্ণালী_সন্ধ্যায়
#পর্বসংখ্যা_১৯
দৌড়ে এসে দু’ ভাই ঘরে ঢুকে পড়লো। দরজা আটকে, বিছানায় আসাম করে বসে টিংকু খামটা হাতে নিলো। আসবার সময় একটা ফল কাটা চাকু নিয়ে এসেছে ডাইন ইন থেকে। খামের আঠা খুলে লুকিয়ে-চুরিয়ে চিঠি বের করতে হবে না? নয় তো, বড়’পা টের পেয়ে যাবে তো!
অত্যন্ত সতর্কতার সহিত টিংকু খামের আঠা খুলছে। রিংকু মুখ লটকে চেয়ে আছে ওর দিকে। এ কাজটা এক্কেবারে ঠিক হচ্ছে না! বড়’পা বুঝতে পারলে রাগ করবে খুব। চিঠিটা সিরিয়াস কোনো ইস্যুতে লিখলে, মন খারাপ করাও স্বাভাবিক। বললো,
— “কাজটা কি ঠিক হচ্ছে, টিংকু? বড়’পা বুঝতে পারলে রাগ করবে—”
অর্ধেক আঠা খুলে এসেছে। খুব ধীরে ধীরে কাজটা করছে। এরমধ্যে সহোদরের জ্ঞানী জ্ঞানী কথা শুনে বিরক্ত হলো। ধমকে উঠলো,
— “চুপ থাক, তো! জ্ঞান দিস না!”
— “শোন। টিংকু—”
— “ছোট’পার চিঠি আমরা পড়ি নি? কতো ছেলেরা ওকে চিঠি দিয়েছে, আমরা সবই পড়েছি। ছোট’পা কোনদিন রাগ করেছে? ও তো নিজেই পড়তে দিতো—”
— “কিন্তু সেগুলো চিঠি ছোট’পা কখনো খুলেই দেখত না। আমাদের দিয়ে বলতো ফেলে দিতে। কারণ ওদের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না আপার। কিন্তু এটা নিখিল ভাইয়ের চিঠি। বড়’পাকে উনি পছন্দ করে—”
— “ওরাও তো আপাকে পছন্দ করত।”
যুক্তি দেখায় টিংকু। রিংকু বুঝানোর চেষ্টা করে,
— “নিখিল ভাইকে বড়’পাও পছন্দ করে, টিংকু। ওদের পার্সোনাল বলেও কিছু থাকতে পারে…”
টিংকু এবার বিরক্তির চরমে পৌঁছে গেল। রাম ধমক দিলো জমজকে,
— “চোপ! বেশ বকবক করিস!”
তারপর পরই খামের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করলো,
— “কি আঠা লাগাইছে রে, খুলেই না। পৃষ্ঠা ছিঁড়ে যাচ্ছে —”
রিংকু শেষবারের মতো অনুরোধ করে,
— “টিংকু প্লিজ! চিঠির ক্ষয়ক্ষতি হলে—”
কথা শেষ না করতেই একটা মেয়েলি স্বর ভেসে আসে কানে,
— “কী নিয়ে তোরা এতো বকবক করছিস, রিংকু – টিংকু? কীসের চিঠি?”
চমকে উঠতেই, হাত থেকে চাকুটা ছলকে পড়ে গেল বিছানায়। একটানে খামটা নিয়ে হাতটা পিছে লুকিয়ে ঘুরে তাকালো।
ওদের ঘরের লাগোয়া ওয়াশরুমের দরজায় দাড়িয়ে ঋতু। মাথায় টাওয়াল প্যাঁচানো আর হাতে একগাদা ভেজা কাপড় — দেখেই বুঝলো সে মাত্রই গোসল সেরে বেরিয়েছে। কিন্তু ও এখানে কেন? রিংকু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— “তুই এখানে কি করছিস, ছোট’পা?”
— “গোসল করছিলাম। আমাদের ওয়াশরুমে লাইনের সমস্যা। ট্যাপে পানি আসছে না। সে কথা ছাড়। তোরা কি করছিলি?”
বলেই দু’ ভাইয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ওরা কেমন অপ্রস্তুত হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো নিজেদের। টিংকু বললো,
–“কই! কিছু না তো। আমরা তো এমনই…”
ঋতু কয়েক পা এগিয়ে এলো। টিংকুর আচরণ অদ্ভুত। ডান হাতটা পেছনে। সেটা কেন?
সন্দিহান গলায় বললো,
— “তোর হাতে কি, টিংকু?”
— “কই কিছু না তো —”
চট করে হাতটা সামনে নিয়ে এলো। দেখালো বোনকে। ঋতুও কম কীসে? সে ত্বরিৎ পায়ে এগোলো ওর কাছে, বাড়িয়ে দেয়া হাত রেখে অন্যহাতের দিকে দৃষ্টি তাক,
— “ও হাতে দেখি? আন, এদিকে।”
ভারি বিপাকে পড়লো টিংকু। খামটা কোনোমতে পিছনে টি – শার্টের পেছনে লুকোনোর চেষ্টা করলো। কিন্তু রক্ষে হলো না। ঋতুর বাজের ন্যায় শাণিত নজর ফাঁকি দেয়া সহজ নয়। সে হুড়মুড় করে খামটা কেড়ে নিলো হাত থেকে। ধরা পড়ে গিয়ে টিংকুও ঝাঁপিয়ে পড়লো ছোট’পার দিকে,
— “ছোট’পা দাও! দাও ওটা!”
ঋতু দিলো না। খাম ধরা হাত উঁচু করে ধরলো। উচ্চতায় বোনের চেয়ে বেঁটে হওয়ায় টিংকু চেষ্টা করেও নাগাল পেল না। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করলেও, ঋতুর এক ধমকে চুপসে যেতে বাধ্য হলো,
— “সর, বেয়াদব! দেখতে দে আমাকে!”
ঋতু ভেবেছিল ওর দুই বিচ্ছু ভাই নিজেরা কাউকে চিঠি লিখেছে। নয় তো, ওদের কেউ দিয়েছে। তাই আগ্রহ দেখিয়ে ছিনিয়ে নিলো চিঠিটা। এই বয়সে পাকামো করে কাকে চিঠি দিচ্ছে বদমাশ দুটো, জানতে হবে না?
কিন্তু খাম হাতে নিয়েই চক্ষু ছানাবড়া হলো ওর। প্রাপকের জায়গায় বড়’পার নাম! প্রেরকের মাম দেখবার প্রয়োজন হল না। ও শুধু এটুকুই বুঝলো, বিচ্ছু দুটো মহা বেয়াদবি করতে যাচ্ছিল। তীব্র রাগে দু’ ভাইয়ের কান চেপে ধরলো সে। সাপের মতো হিসহিস করে বললো,
— “অসভ্য, বর্বর! আপার চিঠি তোদের কাছে কি করছে!”
রিংকু নিজেকে বাঁচাবার জন্যে সাফাই গাইবার চেষ্টা করলো,
— “আমি কিছু করি নি, আপা। সব দোষ, টিংকুর। ও-ওই এসব—”
— “সব দোষ এখন ওর, না? আমি জানি না বোধ হয়? দুজন যে দুজনকে ছাড়া কিচ্ছু করিস না? বেয়াদব, মিথ্যুক!”
আরও জোড়ে কান মুচড়ে দিলো। তারপর সেভাবেই দুটোকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করলো। টেনে নিয়ে যেতে লাগলো চারুর কাছে। পথে অপরাধী দু’ ভাই কাকুতি মিনতির পাহাড় জমাবার প্রয়াস করলেও পাত্তা দিলো না ঋতু। দোতলার সিঁড়ি ভেঙে হিড়হিড় করে টানতে টানতে চিৎকার করে ডাকলো চারুকে,
— “বড়’পা? ও বড়’পা? এসো তাড়াতাড়ি!”
চারু রান্নাঘরে মা – চাচিদের সঙ্গে ছিল। একটু আগেই চাচারা সব খেয়ে-দেয়ে দোকান মুখে ছুটলেন। তাই খাবারগুলো গোছাচ্ছিল সবাই মিলে। এরমধ্যেই ঋতুর ডাক কানে আসতেই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলো চারু। সিঁড়ির মাঝে দাড়িয়ে ঋতু, দু’ হাতে কান মুচড়ে দাড়িয়ে আছে দুই জমজ দ্বয়ের। বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
— “কি হয়েছে, ঋতু? ডাকলি কেন? আর ওদের কান—”
পেছন পেছন মেজো চাচীও এসেছে। ঋতু তাই দেখে কিছুটা ধাতস্থ করলো নিজেকে। শান্ত হয়ে বড় বোনকে ডাকলো,
— “তুমি একটু উপরে আসো, আপা। হাতের কাজ রাখো।”
পেছনে থাকা মেজো চাচীর দিকে একবার তাকালো চারু। তার প্রশ্নাত্মক চোখের দিকে চেয়ে, ইশারায় কিছু বলে ঋতুর দিকে এগোলো। ও তখন দুই অপরাধীকে ধরে উপরে যেতে ব্যস্ত।
— “কি হলো ঋতু?”
ঋতু কান ছেড়ে দিলো ওদের। হাতের খামটা বড় আপার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— “তোমার চিঠি।”
— “আমার? কে পাঠিয়েছে—”
বলতে বলতেই প্রেরকের নাম চোখে পড়তেই থেমে গেল চারু। কি আশ্চর্য! নিখিলের চিঠি? এতদিন পর? উচ্ছ্বসিত হয়ে মনটা নেচে উঠতে চাইলেও, পরক্ষণেই সামলালো নিজেকে। ছোট বোনের দিকে তাকাতেই দেখলো, ঋতু চোখ পাকিয়ে চেয়ে আছে স্বীয় জমজ সহোদর দ্বয়ের দিকে। চোখ দিয়ে অগ্নি বর্ষণ করতে করতে বললো,
— “এই বেয়াদব দুটো তোমার চিঠি নিয়েছিল। ঘরে গিয়ে সেই চিঠি পড়বার জন্য খাম ছিঁড়ছিল! কি পরিমাণ অভদ্র এরা, ভাবতে পারছ? অ-স-ভ্য, ব-র্ব-র!”
বলেই চাটা মারলো দুজনের মাথায়। রিংকু ব্যথাসূচক ‘আহ্’ করে বললো,
— “আমি ওকে নিষেধ করছি—”
— “চুপপ!”
ধমকে উঠলো ঋতু। টিংকু এতক্ষণে মুখ খুললো। মাথা নিচু করে অপরাধী স্বরে বললো,
— “স্যরি, বড়’পা। রিয়েলী স্যরি!”
চারু কিছুই বললো না ওদের। নির্বাক শ্রোতা হয়ে সব শুনলো। একসময় চোখের কার্নিশ উপচে পড়া টলটলে জল নিয়ে প্রস্থান করলো। ওর যাওয়া দেখে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে রইলো দু ভাই। এতক্ষণে তাদের মনে হচ্ছে, কাজটা ঠিক হয় নি! আপা রাগ করে নি, কষ্ট পেয়েছে!
লজ্জিত হয়ে মাথা নোয়ালো দুজন।
কাঙ্খিত কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে ঋতুও আর কিছু না বলে স্থান ত্যাগ করলো!
ঘরে এসে দরজা আটকে, খাম নিয়ে বসলো চারু। তার মনের অবস্থা অবর্ণনীয়। একদিকে সে প্রচন্ড খুশি, অন্যদিকে তার মন বিমর্ষ। অদ্ভুৎ দ্বৈত অনুভূতিতে ছেয়ে যাওয়া মন নিয়ে সে বিছানায় বসলো। খামের মুখ ছিঁড়ে বের করলো, আকাশি নীল রঙের ভাঁজ করা কাগজ। যার ভেতরে চমৎকার টানা টানা অক্ষরের লেখা একটি বার্তা,
“প্রিয় চারুলতা,
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা বিখ্যাত উপন্যাসের উক্তি আছে,
‘তোমাকে যখন দেখি, তারচেয়ে বেশি দেখি; যখন দেখি না।’ — পড়েছেন?
আমার বোধ হয় তেমন অবস্থাই হয়েছে। আমি ‘চারুলতা জাফরিন’ নামক মিষ্টি কন্যাকে দেখে প্রেমে পড়েছি। তাকে বাস্তবে ঠিক কতটুকু সময় ধরে দেখেছি জানি না, কিন্তু তারচেয়ে বেশি দেখছি, তার অনুপস্থিতিতে। যখন সে আমার চেয়ে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে! এতবেশি দেখছি, যে আমার দুনিয়া চারুময় সৌন্দর্যে পূর্ণ। অবশ্য চারু
কথাগুলো কি কাব্যিক শুনাচ্ছে? আপনি নির্ঘাৎ আমায় পাগল সাব্যস্ত করে প্রাণখোলা হাসছেন? হাসুন, আমি দূর থেকে অনুভব করবো সেই আনন্দ। সেই মুক্তোঝরা হাসি কল্পনা করে আরও পাগলামি করবো। কারণ প্রেমিক হয়ে একটু-আধটু পাগলামি না করলে প্রেম শুদ্ধ হয় না। আমি শুদ্ধ প্রেমিক হতে চাই, আমার শুদ্ধ প্রেমের ছোঁয়ায় আপনার জীবনের কলুষ মেশানো অতীত ভুলিয়ে আপনাকে রাঙিয়ে দিতে চাই! ভালোবাসি, চারুলতা!
পুনশ্চ: বকবক করতে করতে আসল কথাই বলতে ভুলে গেছি, আপনার মুঠোফোন নম্বরটা আমার হারিয়ে গেছে। তাই খোঁজ নিতে পারি নি। চিঠির পেছনে আমার নম্বরটা দিচ্ছি। মন চাইলে ছোট্ট একটা মিসডকল দেবেন, আমি সর্বদা আপনার অপেক্ষাতেই—
ইতি
নিখিল নওশাদ”
কাগজটা পুনরায় ভাঁজ করে বুকের কাছে ঠেকালো চারু। ওর চোখে নোনা জল। টপটপ করে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে কপোল বেয়ে। তবে এই জল দুঃখের নয়। প্রচন্ড খুশিতে লোকে যেমন কাঁদে; এই জলও ঠিক তেমনই। চারুর ইচ্ছে করলো চিৎকার করে কাঁদতে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলতে,
‘সে ভোলে নি, ভোলে নি আমায়!’
___
অফিসে নতুন কয়েকজন নতুন স্টাফ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন সিনিয়র এমপ্লোয়ীর আন্ডারে কাজ শিখতে বলা হয়েছে। এরকমই একজনের দায়িত্ত্ব পেয়েছে সৌভিক। স্টাফটি মেয়ে, নাম নওরোজ আনিকা।
প্রথম দর্শনে মেয়েটিকে দেখে সৌভিকের পছন্দ হলো না। সুন্দরমতো চেহারা বটে, কিন্তু কেমন যেন বোকা-বোকা চাহনি। হাবভাব অদ্ভুৎ।সৌভিক পরিচয় হবার জন্য নাম – ধাম বললো, মেয়েটা মাথা নাড়ানো ছাড়া কিছু করলো না। ভদ্রতা সূচক হাসি, কিংবা পরিবর্তে নিজের নাম বলার সৌজন্যও বোধ হয় জানে না। অথবা নার্ভাসনেসে ভুলে খেয়েছে। ভাবলো সৌভিক।
মেয়েটাকে ওর পাশের কেবিনে ডেস্ক দেয়া হয়েছে। ওর ডেস্ক দেখিয়ে, মেয়েটাকে নিয়ে সৌভিক বেরোলো অফিস দেখাতে। কোথায় কি আছে না আছে, সব বুঝানোর জন্য। সৌভিক এটা-ওটা দেখাচ্ছে আর মেয়েটা সব হা করে গিলে যাচ্ছে। এমন ভাব করছে, যেন সে ফর্মাল কর্পোরেট অফিসে নয়, ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রথমবারের মতো এসেছে বেড়াতে! আশেপাশে চেয়ে দেখতে দেখতে রাস্তা দেখে হাঁটতেও ভুলে গেল সে।সৌভিক ত্যক্ত হয়ে আড়চোখে ওকে দেখছে আর মনে মনে কপাল চাপড়াচ্ছে,
‘কার পাল্লায় পরলাম, মাবুদ! এই মেয়ে কিভাবে চলে! এখনই না কারো ঘাড়ে উল্টে পড়ে!’
বলতে বলতেই মেয়েটা একটা ডাস্টবিনের সঙ্গে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে উদ্যত হলো। মুখ থুবড়েই পড়তো সৌভিক হাত ধরে টেনে আনায় রক্ষে!
অতঃপর মেয়েটা একটু লজ্জিত হাসলো,
— “স্যরি!”
ভ্রু কুঁচকে ফেললো সৌভিক। কিছু বললো না। এগিয়ে চললো তার কাজে। তার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। রাগ বাড়ছে চড়চড় করে!
প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে নির্দেশনা দেবার পর সে থামলো। লক্ষ্য করলো, মেয়েটা এখনো অমনোযোগী। আশেপাশে দেখে বেড়াচ্ছে। এবার রাগ হলো বেশ। একটু ধমকের সুরেই বললো,
— “মিস. আনিকা!”
চমকে ফিরে তাকালো ওর দিকে। ডাগর চোখ দু’টোতে এতক্ষণ যে বিস্ময় খেলা করছিল, নিমিষেই তার স্থানে চলে এলো ভয়। মেয়েটা শঙ্কিত চোখে বললো,
— “জ্ব-জ্বি—”
— “আপনি কি আমার কথা শুনছেন?”
— “জ্বি।”
ঘাড় নাড়িয়ে জবাব দিলো মেয়েটা। সৌভিক আশ্বস্ত হলো না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে শুধালো,
— “ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্যারের কেবিন কোথায়? বলুন তো।”
‘আনিকা’ নামের মেয়েটা শুকনো ঢোক গিললো। আমতা আমতা করে বলবার চেষ্টা করলো,
— “সেকেন্ড ফ্লোরে…”
ক্রুর হাসি দেখা গেল সৌভিকের মনে। তার আন্দাজই সঠিক। মেয়েটা মোটেও সিরিয়াস নয়। সিরিয়াস হলে মাত্র দেখিয়ে আনা বসের কেবিন সে ঠিকমত চিনে নিতে পারতো।
শান্ত কিন্তু দৃঢ় গলায় বললো,
— “শুনুন, আনিকা। আপনাকে কয়েকটা রুঢ় বলি। শুনতে খারাপ লাগলেও, কথাগুলো আপনার জানা উচিৎ। কর্পোরেট অফিসে পারফরম্যান্সের উপর চাকরির স্থায়ীত্ব, পদোন্নতি নির্ভর করে। এটা সরকারি চাকরি নয় যে যেমন-তেমন করে কাজ করে যাবেন, মাস শেষে বেতন উঠাবেন। এখানে সব রূলস-রেগুলেশন স্ট্রিক্টলি মেইনটেইন করা হয়। কাজেই অ্যাটেন্টিভ থাকবেন, বসের মন যুগিয়ে চলবেন। আমাদের এই ব্রাঞ্চটা হেড অফিস। চাপ বেশি। সবকিছু খেয়াল রেখে না চললে টিকতে পারবেন না!
বলেই ওকে ফেলে গটগট করে এগিয়ে গেল। ক’দিন ধরে মেজাজটা তার এমনিই খিঁচড়ে আছে। অসম্ভব রাগ-বিরক্তির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। মানসিকতা ভালো না। তার উপর এই হাবা মেয়ে পড়েছে কপালে, সামনে না জানি কি হয়!
চলবে___
#মৌরিন_আহমেদ
(অন্যান্য গল্প আমি তাড়াহুড়ো করে শেষ করি, এক্ষেত্রে সেটা করবো না। ধীরে ধীরে লিখবো, সব চরিত্রের পরিণতি দিয়ে মনমতো শেষ করবো— ইনশাল্লাহ্। আশা করি পাঠকরা ধৈর্য হারাবেন না।)