মেঘের_শহর #পর্ব_১৬ Saji Afroz .

0
179

#মেঘের_শহর
#পর্ব_১৬
Saji Afroz
.
মা ছেলে দুজনের দু’হাত ভরেই হরেকরকম নাস্তা ও মিষ্টির প্যাকেট।
অন্তরা আহম্মেদ নিজের হাতে নাস্তা বানালেও মিষ্টি দোকান থেকেই কিনেছেন।
হুর ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। মেঘের মনের মাঝে একধরনের উত্তেজনা কাজ করছে।
হুরায়রা আজ নিশ্চয় তাকে দেখে চমকে উঠবে?
মায়ের ডাকে ঘোর কাটলো তার। অন্তরা আহম্মেদ ভেতরে প্রবেশের জন্য তাড়া দিলেন।
গেইটের দরজায় মেঘ কড়া নাড়তেই একজন বয়স্ক দারোয়ানের দেখা পেল। তিনি জানতে চাইলেন তারা কারা।
অন্তরা আহম্মেদ হাসিমুখে জানালেন, হুরায়রার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।
দারোয়ান তাদের কিছুসময় অপেক্ষা করতে বললেন।
বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে গেইট খুলে দিলেন তিনি।
বেশ বড়সড় একটা সাদা রঙের বাড়ি। বাড়িটির সামনে লাল গোলাপের বাগান। আর কোনো ফুল থাকলে হয়তো এত সুন্দর দেখাতো না।
মায়ের সাথে মেঘ ভেতরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। কি যে হবে আজ!
.
.
.
ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ছিল সাইয়ারা। মিন্নী কে দেখে থেমে গেল সে। একগাল হাসি নিয়ে বলল-
আরে তুমি!
-বাসায় কেউ নেই। ভাবলাম তোমার সাথে সময় কাটাই। আজ আমার ক্লাসও নেই কি না।
-বাসার সবাই কোথায়?
.
সত্যিটা বলতে গিয়েও থেমে গেল মিন্নী। অন্তরা আহম্মেদ এখন কাউকে এসব বলতে নিষেধ করেছেন। তাই সে বলল –
একটা দরকারে। তুমি কোথায় যাচ্ছ?
-ভার্সিটি তে।
-ওহ তাই! তবে আমি আসি এখন।
.
মিন্নী চলে যেতে চাইলে তার হাত ধরে ফেলল সাইয়ারা। তাকে যেতে নিষেধ করলো সে। মিন্নী তার ক্লাস বাদ পড়বে বলে থাকতে রাজি হচ্ছে না।
সাইয়ারা বলল-
তুমি কখনো আসো না এভাবে। আজ আসলে। তাছাড়া তোমার বাসায়ও কেউ নেই। এভাবে তোমাকে একা রেখে আমি যেতে পারি না। বাকি রইলো ক্লাসের কথা। তা আমি এমনিতেই না গিয়ে থাকি। সমস্যা নেই। বসো তো তুমি।
.
সাইয়ারার জোরাজোরি তে বসতে বাধ্য হলো মিন্নী। সাইয়ারা ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস বদলে আসলো। মাথায় খোপা করতে করতে বলল –
আমি তোমার জন্য পাস্তা করে আনছি।
-তুমি কষ্ট করো না আপু।
-কিসের কষ্ট? আমার ভালো লাগবে। খেয়েই দেখো আমার হাতের পাস্তা।
.
খোপা বাঁধা শেষ হলে রান্নাঘরে চলে গেল সাইয়ারা। তার পথের দিকে তাকিয়ে মিন্নী ভাবলো, এই মেয়েটি কে কেনো তার ভাই পছন্দ করলো না? অন্য কেউ কি তার মতো ভালো হবে?
.
.
.
ক্লাস শুরু করলেন মিরাজ আলী। তিনি বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদেরই প্রিয় শিক্ষক। কারণ অন্যসব শিক্ষকের মতো তিনি গম্ভীর না। তিনি যদি স্কুলের শিক্ষক হতো তবে প্রিয় শিক্ষক রচনায় হয়তো সকলে তার নামই লিখতেন।
মিরাজ আলী ক্লাসের এক পর্যায়ে খেয়াল করলেন, হুরায়রা অনুপস্থিত।
যা দেখে তিনি বেশ অবাক হলেন। কেননা হুরায়রা ক্লাসে আসেনি এমন টা আগে হয়নি।
মিরাজ আলী হুরায়রা কেনো আসেনি জানতে চাইলে কেউ জবাব দিতে পারলো না। অবশ্য দিতে না পারাটাই স্বাভাবিক। কারণ তার কোনো ঘনিষ্ট বন্ধু বা বান্ধবী নেই।
মিরাজ আলীর কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল। তিনি ভাবতে লাগলেন, মেয়েটির কোনো বিপদ হয় নি তো?
.
.
.
জাফর শেখের সামনে বসে মেঘ ও অন্তরা আহম্মেদ।
বেশ লম্বাচওড়া একজন ব্যক্তি জাফর শেখ। দেখে মনে হচ্ছে গম্ভীর প্রকৃতির তিনি। কিন্তু মেঘের সম্পর্কে জানার পর তার গম্ভীরমুখে হাসি ফুটে উঠলো। চেঁচিয়ে তিনি তার স্ত্রী বেলী শেখ কেও ডাকলেন।
বেলী শেখ এলে তাকে বললেন তিনি-
হুরায়রার জন্য প্রস্তাব এসেছে। ছেলে মাত্র পড়াশোনা শেষ করেছে। খুব তাড়াতাড়ি চাকরি জোগাড় করবে।
.
বেলী শেখ মেঘের দিকে তাকালেন। অন্তরা আহম্মেদ তাকে সালাম জানিয়ে বললেন-
আমাদের বিয়ের জন্য কোনো তাড়া নেই। আসলে আমার ছেলে আপনাদের মেয়ে কে ভার্সিটি তে দেখেই পছন্দ করেছিল। সে শুনেছে হুরায়রার বিয়ে হয়ে যাবে। তাই আর কি এখুনি প্রস্তাব নিয়ে চলে এসেছি। জাফর ভাই এর কাছে জানলাম, হুরায়রার বিয়ে ঠিক হয়নি এখনো। পাত্র দেখা হচ্ছে। আমার ছেলে ওকে ভীষণ পছন্দ করে। আপনারা চাইলে চাকরি পাওয়ার পরেই বিয়েটা হবে।
.
বেলী শেখ সালামের জবাব দিয়ে মুচকি হাসলেন শুধু।
মনে হচ্ছে হাসিটা অনেক কষ্ট করেই মুখে এনেছেন তিনি।
জাফর সাহেব তাদের জন্য মিষ্টি আনতে বললে তিনি ভেতরে চলে গেলেন।
মেঘের সম্পর্কে আরো কিছু জেনে নিয়ে তিনিও রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
বেলী শেখের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন-
ছেলেটা কে আমার বেশ ভালো লেগেছে।
.
চুলোয় চায়ের পানি গরম করতে বসিয়ে বেলী শেখ বললেন-
পছন্দ করার মতোই একটা ছেলে। তবে কোনো চাকরিবাকরি নেই।
-সে হয়ে যাবে। যা শুনলাম ফ্যামিলি ভালো। আরেকটু খবর নিতে হবে।
-হু।
-তোমার মেয়ে তো তার মজনুর জন্য পাগল। কত পাত্র কে ভাগিয়েছে। এখন একটা মুখ্যম সুযোগ এসেছে ও কে একটা ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দেয়ার।
-তোমার কি মনেহয়? সে এখন রাজি হবে?
-হবে। কারণ টা নিশ্চয় তোমার অজানা নয়।
-তুমি যা ভালো বুঝো করো।
.
জাফর সাহেব ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে আসলেন। তার পিছুপিছু আসলেন বেলী শেখ। ছোট টেবিলটার উপরে ট্রে রেখে বললেন-
নাস্তা নিন আপনারা।
.
জাফর সাহেব স্ত্রীকে ইশারায় তাদের হাতে নাস্তা তুলে দিতে বললেন। তিনি তাই করলেন। এরপর জাফর সাহেব বললেন-
আমার তো মেঘ কে বেশ ভালো লেগেছে। এখন হুরায়রার মতামত প্রয়োজন।
.
অন্তরা আহম্মেদ বেশ খুশি হলেন কথাটি শুনে। তিনি হুরায়রা কে ডাকতে বললেন।
যা শুনে বেলী শেখের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। যেন অন্যায় কিছু চেয়ে বসেছেন তিনি!
জাফর সাহেব হালকা কেশে জানালেন, হুরায়রা এখন বাসায় নেই। মেঘের একটা ছবি আপাতত দিয়ে যেতে। তা পাঠিয়েই নাহয় হুরায়রার মত জানা যাবে।
তিনি রাজি হলেন। জাফর সাহেব তাকে হুরায়রার ছবি দেখাতে চাইলে তিনি বললেন-
দেখার কিছু নেই। আমার ছেলে যাকে পছন্দ করেছে তাকে আমারো পছন্দ হবে। আমি শুধু ওর মত জানতেই ডাকতে বলেছিলাম। পরে নাহয় সরাসরিই দেখব।
.
জাফর সাহেব অন্তরা আহম্মেদের কথা শুনে মুগ্ধ হলেন। তিনি বুঝতে পারছেন তাদের বাড়িতে তার মেয়েটা বেশ সুখে থাকবে। আর মেঘ কে দেখলে নিশ্চয় রাজি না হয়ে থাকবে না সে। এতদিন পর যেন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তিনি।
তিনি মেঘ কে নিজের কাছে ডেকে তার সাথে সেলফি তুলে নিলেন। এই ছবিটায় হুরায়রা কে পাঠাবেন ঠিক করলেন জাফর শেখ।।
.
.
.
সাইয়ারার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে বাসায় ফিরে এল মিন্নী। প্রায় সাথে সাথেই মেঘ ও অন্তরা আহম্মেদও ফিরে এলেন। তাদের কাছে সবটা শুনে মিন্নী বলল-
হুরায়রা আপু ফিরলেই আমি তাকে দেখতে যাব। যদি সে সাইয়ারা আপুর মতো হয় তবে আমার কোনো সমস্যা নেই।
.
মেঘ বলল-
সাইয়ারার চেয়ে ভালো। ওর মতো তোকে জ্বালাতন করবে না। শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে হুরায়রা।
-আপু মোটেও আমাকে জ্বালাই না।
-ও তোকে কি করেছে বল তো? এত সাইয়ারা সাইয়ারা করিস কেনো?
-কিছু করেনি। কিন্তু আমার আরেকটা ভাই থাকলে ওকে আমি ঠিকই ভাবি বানিয়ে আনতাম।
.
মিন্নী কথাটি বলে ভেতরে চলে গেলে অবাক চোখে মেঘ মায়ের দিকে তাকালো।
তিনি বললেন-
খারাপ বলেনি মিন্নী।
-মা তুমিও?
.
অন্তরা আহম্মেদ হেসে তাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললেন।
মেঘ ভেবে পাচ্ছে না এই সাইয়ারা কিভাবে তা মা ও বোনের মাথাটা খেয়েছে।
.
.
.
গল্পের বই পড়তে পড়তে কখন যে চোখ দুটো লেগে এসেছিল বুঝতে পারেনি সাইয়ারা। বান্ধবীর ফোনে তার ঘুমটা ভাঙলো। ঘুমঘুম চোখে সে ফোন রিসিভ করে বলল-
কে?
.
ওপাশ থেকে জবাব এল-
আরে আমি মিহি।
-হ্যাঁ বল।
-জানিস আজ কি হয়েছে?
-কি হয়েছে?
-প্রথমবারের মতো ক্লাসে হুরায়রা আসেনি।
.
কথাটি শুনে যেন সাইয়ারার চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেল। অবাক হয়ে বলল সে –
তাই?
-হ্যাঁ। মিরাজ স্যার সহ সব স্যার, ম্যাডাম রাই ওর কথা জানতে চেয়েছে।
-স্বাভাবিক। ও যে ক্লাস মিস করবে এটা স্বপ্নে ভাবা যায়।
-হ্যাঁ সেটাই।
.
বান্ধবীর সাথে কথা শেষ করে ফোন রাখলো সাইয়ারা। হুরায়রা ক্লাসে আসেনি কেনো?
ভাবতে গিয়েও থেমে গেল সে।
সে ক্লাসে কেনো আসেনি এই ভাবনা তার না করলেও চলবে। এখন আপাতত শোয়া থেকে উঠে ছাদে যাওয়া যাক। যদি মেঘের দেখা পেয়ে যায় তাহলে তো ভালোই। আজ সকাল থেকে একবারো দেখা পায়নি সে মেঘের। মেঘ টা আজকাল কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here