হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৪২) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
876

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৪২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১০৩)
কুশলের পায়ের উপর তাহির লুটিয়ে পড়ে আছে। তাহিরের বুকের বাম পার্শের গু*লি লাগা স্থানটি থেকে অনরগল র*ক্ত পড়তে দেখে কুশলের চোখের সামনে সাদিককে ছু*রি বিদ্ধ হয়ে য*ন্ত্র*ণায় ছ*ট-ফ*ট করার মুহূর্তটি ভেসে উঠে। সাদিকও কুশলকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন ত্য*গ করেছে আর আজ তাহিরেরও যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কুশল নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। অজানা কারণে কুশলের দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কুশল একবার চোখ বন্ধ করে পরপরই চোখ মেলে তাকিয়ে একজন গার্ডকে উদ্দেশ্য করে চিল্লিয়ে বললো…..

—“দ্রুত গাড়ি বের করো।”

গার্ডটি কুশলের কথানুযায়ী গাড়ি বের করতে চলে যায়। হুমায়রা কাঁদতে কাঁদতে বললো…..

—“তোমার কিছু হবে না তাহির। তুমি শুধু সজ্ঞানে থাকার চেষ্টা করো, চোখ বন্ধ করো না। তাহির…আমার কথা শুনতে পারছো তুমি!”

এই বলে হুমায়রা তাহিরের গালে হালকা ভাবে চা*প*ড় দিতে শুরু করে। পরক্ষণেই গার্ডটি কুশলের কাছে এসে বললো….

—“স্যার পার্কিং সাইডে রাখা আপনাদের সব গাড়ির ২টা করে চাকা কে যেনো পাংচার করে দিয়েছে। আমি দুইজন গার্ডকে নতুন চাকা লাগানোর কাজে নিয়োজিত করে এসেছি। একটু সময় লাগবে কাজটি সম্পন্ন করতে।”

কুশল বুঝতে পারে এটা ওর শ*ত্রু*পক্ষের পূর্ব থেকেই সাজানো কূ*ট*নৈ*তি*ক পরিকল্পনার একেকটি ধাপ মাত্র। হুমায়রা বললো….

—“আপনাদের বাড়ির বাহিরে আমাদের গাড়ি রাখা আছে। আমাদের গাড়িতে করেই তাহিরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন প্লিজ৷”

হুমায়রার এহেনু কথা শুনে কুশল আর একমুহূর্তের জন্য দেড়ি না করে ২জন গার্ডের সহোযোগিতায় তাহিরকে নিয়ে চৌধুরী মেনশনের মূল গেইটের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। হুমায়রাও ওদের সাথে সাথে যায়। এতোসময় ধরে তরুনিমা স্ত*ব্ধ হয়ে একস্থানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। কি বলবে, কি করবে কিছুই যেনো সে বুঝে উঠতে পারছিলো না। তাহিরকে নিয়ে যেতে দেখে তরুনিমাও আর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সেও ওদের পিছন পিছন যেতে শুরু করে।

কামিনী নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে রিজভীকে ফিসফিসিয়ে বললো….

—“বাহিরের কোনো শ*ত্রু*র পক্ষে বাড়ির ভিতর ঢুকে কুশলকে পর পর ২ভাবে মা*রা*র চেষ্টা করা কি আদেও সম্ভব!”

রিজভী স্বাভাবিক মুখশ্রী নিয়েই বললো….
—“সম্ভব জন্যই তো আ*ক্র*ম*ণটি করতে পারলো।”

—“আমার তো মনে হচ্ছে ঘর শ*ত্রু*ই আজ বি*ভী*ষ*ণের রূপ ধারণ করেছে। আর কুশলের আসল শ*ত্রু তো ওর….!”

কামিনী পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই রিজভী কামিনীর দিকে চোখ পা*কি*য়ে তাকায়। যার ফলে কামিনী সেখানে থেমে যায়। পরক্ষণেই সাগরিকা চৌধুরী পরিবারের বাকি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বললো….

—“যা হওয়ার ছিলো তা তো হলোই, আল্লাহ তায়লা আমার কুশল দাদুভাইকে সবসময় সবরকম বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করুক। যার জন্য আজ আমার দাদুভাইয়ের প্রাণ রক্ষা পেলো আল্লাহ তায়ালা তাকেও পুরোপুরি ভাবে সুস্থ করে তুলুক এই কামনাই করছি। এখন তোমরা সবাই সবার নিজ নিজ কক্ষে গিয়ে বিশ্রাম করো।”

সাগরিকা চৌধুরীর কথানুযায়ী সকলেই ধীরে ধীরে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে চলে যায়।

(১০৪)
অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে পায়চারী করছে কুশল। অ.টি এর দরজার সামনে রাখা চেয়ার গুলোতে বসে নিরব ভাবে দু’চোখ দিয়ে অশ্রুপাত করছে হুমায়রা। ওদের থেকে কিছুটা দূরে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে মেঝের উপর দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে তরুনিমা। সেইসময় তরুনিমার মা তমালিকা সিকদার ও তরুনিমার বাবা তারেক সিকদার সেখানে এসে উপস্থিত হন। তারেক সিকদার কুশলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো….

—“তাহিরের এখন কি অবস্থা বাবা!”

—“এখনও কিছু জানতে পারি নি। বেশ কিছু সময় হলো ওকে নিয়ে অ.টিতে প্রবেশ করেছেন ডাক্তাররা।”

—“অফিস থেকে আসার পর পরই শরীর কিছুটা খারাপ লাগায় তোমাদের বাসার অনুষ্ঠান পর্ব আজ যেতে পারি নি। তরুর মায়ের থেকে তাহিরের বলা সব কথা জানতে পারার পরপরই বড়মা ফোন করে এই দূ*র্ঘ*ট*নার কথা জানালেন আমায়। অজানা কারণে বাসায় আর স্থির হয়ে থাকতে পারছিলাম না জন্যই এখানে চলে আসলাম আমরা।”

কুশল শান্ত স্বরে বললো….
—“আমি জানি না ৫বছর আগে তাহিরের সাথে আপনাদের কি সম্পর্ক ছিলো। আর সেই সম্পর্কের গভীরতাই বা কতোটুকু ছিলো। কিন্তু অরুনিমার মৃ*ত্যু*র পিছনে আদোতেও তাহিরের কোনো হাত ছিলো কিনা এই বিষয় নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ আমি মনে করি ‘অন্যের জীবন বাঁচানোর জন্য যে নিজের জীবনের পরোয়া করে না সে কখনও কাওকে খু*ন করতে পারে না’।”

এই বলে কুশল স্থান ত্যগ করে। তারেক সিকদার শান্ত দৃষ্টি নিয়ে কুশলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়।

তরুনিমা ওভাবেই এক ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে তমালিকাকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“মা..আমি আজ সকলের সামনে তাহিরকে অনেক ছোট-বড় কথা শুনিয়ে অ*প*মা*নিত করেছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়ে কুশলকে বাঁচাতে গিয়ে উনি নিজের জীবনের কোনো পরোয়া করলেন এতোটাও নিখুঁত ভাবে কি কেও নাটক করতে পারে! আমরা কি ওনাকে কোনোভাবে ভু*ল বুঝছি মা! আমার মাঝে এতোটা দোটানা কাজ করছে কেনো বলতে পারো!”

তরুনিমার মুখে এরূপ কথা শুনে তমালিকা শান্ত স্বরে বললেন….
—“তুই যেই দোটানার মাঝে আটকে আছিস আমিও সেই দোটানার মাঝেই আটকে আছি রে তরু। আজ বিকেলবেলা তাহির যখন আমাদের বাড়িতে এসে দাঁড়িয়েছিলো! ওকে দেখামাত্রই রাগে-ঘৃ*ণা*য় আমার সর্বশরীর রি রি করছিলো। কিন্তু পরমুহূর্তেই ওর বলা কথাগুলো শুনে আমার মন ও মস্তিষ্ক আমাকে ৫ বছর আগের সেই দূ*র্বি*ষ*হ রাতের সময়টিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলো।”

—“কি বলেছিলো তাহির তোমায়!”

অতঃপর তমালিকা সব কথা খুলে বলে তরুনিমাকে।

(১০৫)
কুশলের গোপন আস্তানার একটি বিশালাকার রুমের ভিতর চেয়ারের সাথে হাত-পা-মুখ বাঁ*ধা অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে তাহিরকে গু*লি বি*দ্ধ করা সেই ওয়েটারটিকে। বেশ লম্বা সময় ধরে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য শরীরের সর্বশক্তি প্রয়োগ করায় এখন ক্লান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়েছে সে। রুমটির চারপাশে ব*ন্দু*ক হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে বেশ কয়েকজন কালো পোশাকধারী গার্ডসরা। এছাড়াও আস্তানাটির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আরো অনেক গার্ডসরা। সেইসময় কুশল ওর আস্তানায় এসে সেই বিশালাকার রুমটির মূল দরজা ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করে লোকটির সামনে এসে দাঁড়াতেই একজন গার্ড একটি চেয়ার এনে দেয়। কুশল চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলে। লোকটি ভীত দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। আরেকজন গার্ড লোকটির কাছে এসে ওর মুখের বাঁ*ধ*ন খুলে দেয়। কুশল ওর কপালের ডানপার্শে শাহাদত আঙুল দিয়ে ঘষা দিতে দিতে প্রশ্ন করলো……

—“আমাকে মা*রা*র জন্য কে পাঠিয়েছিলো তোকে?”

লোকটি নিজের ভ*য়*কে নিজের মাঝেই দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে উচ্চস্বরে বললো…..

—“আপনার জায়গায় যাকে গু*লি বি*দ্ধ করেছি সেই মোটা টাকা দিয়ে ঠিক করেছিলো আমায়। আপনাকে বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্যকেই সে মে*রে ফেলতো না। আপনাদের উপর অ্যা*টা*ক হবে আর আপনাদের কোনোরূপ ক্ষ*য়-ক্ষ*তি হওয়ার পূর্বেই তিনি আপনাদের চোখে নিজেকে নিষ্পাপ ও ভালো মানুষ প্রমাণ করতে নিজের প্রাণের ঝুঁ*কি নিয়ে আপনাদের যে কাওকে বাঁচিয়ে নিবে এটাই ছিলো তার আসল উদ্দেশ্য। আপনার জায়গায় নিজে গু*লি বি*দ্ধ হয়ে ওনার উদ্দেশ্যে সফল ও হলেন। মাঝখান থেকে আমি ধরা পড়লাম। আমি অনেক গরীব খুব সাধারণ একজন মানুষ। দিন আনি দিন খাই৷ তাই এতোগুলো টাকা একসাথে পাওয়ার লো*ভ আমাকে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছিলো। যার দরুণ আমি এই কাজটি করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমাকে আপনি ছেড়ে দিন। আমি আর কখনও এমন খারাপ কাজে জড়ানোর কথা চিন্তাও করবো না।”

কুশল বাঁকা হেসে একজন গার্ডকে ইশারা করলো। গার্ডটি কুশলের ইশারা বুঝতে পেরে আরো ২জন গার্ডস এর সহযোগিতায় চেয়ারের হাতল থেকে লোকটির হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে ওর হাতজোড়া কমোরের পিছনে নিয়ে আবারও বেঁধে দেয়। লোকটি নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করতে নিলে লোকটির মুখের উপর ক্লোরোফম ছিটিয়ে দিয়ে তাকে অ*জ্ঞান করে দেয়।

বেশ কিছুসময় পর অতিরিক্ত গরম বোধ করে লোকটি চোখ মেলে তাকাতেই দেখে সে উল্টো অবস্থায় ঝু*লে আছে। আর ওর মাথার ২হাত নিচে একটা বিশালাকার কড়াইয়ে ফুটন্ত তেল রাখা আছে। নিজেকে এমন ক*রু*ণ অবস্থায় ফেঁ*সে থাকতে দেখে লোকটি বুঝতে পারে কুশল ওর বলা মি*থ্যে কথাগুলো বিশ্বাস করে নি। লোকটি এবার আর নিজের ভ*য়*কে নিজের মাঝে দমিয়ে রাখতে পারে না। অনুনয়ের স্বরে কুশলকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

—“স্যার……স্যার…..দয়াকরে আমায় আমার প্রাণ ভি*ক্ষা দিন। আমি আপনাকে সব সত্যকথা বলছি। তবুও আমাকে আপনি মা*রি*য়েন না। আমার বাড়িতে আমার স্ত্রী ও ছোট ছোট ২টা দুধের শিশু বাচ্চা আছে। ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে আমার বাড়িতে ফিরতে হবে স্যার।”

কুশল লোকটির দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো…..
—“মি*থ্যে জিনিসটা আমার বরাবরই ভিষণ অপছন্দ। তাই এবার সত্য ব্যতিত মুখ থেকে একটাও মি*থ্যে শব্দ বের করিস না। নয়তো এই গরম ফুটন্ত তেলের ভিতর তোকে খুব ভালো ভাবে ভাজার পর জজ্ঞলের শে*য়া*ল-কু*কু*রের খাবার হিসেবে ছেড়ে আসা হবে।”

লোকটি নিজের প্রাণ রক্ষার খাতিরে ভী*ত স্বরে বললো….

—“স্যার…আমি ওনার নাম জানি না আর না আমি ওনাকে দেখেছি। আমি এবং আমার একজন সঙ্গী শুধু ওনার ছায়াটাই দেখতে পেয়েছিলাম আর ওনার কন্ঠস্বর শুনতে পেরেছিলাম। আজ সন্ধ্যার সময় তিনি আমাদের মোটা টাকা দেওয়ার লো*ভ দেখিয়ে আপনাকে মে*রে ফেলতে বলেছিলেন। আর এটাও বলেছিলেন যদি আমরা ধ*রা পরে যাই তাহলে নিজের মতো করে একটা মি*থ্যে কাহিনী যেনো বানিয়ে বলে দেই কিন্তু ওনার কথা যেনো কোনো ভাবেই আপনাকে না বলি। উনি একজন পুরুষ ব্যক্তি ছিলেন। কন্ঠ শুনে আর ছায়া দেখে যতোটুকু বুঝতে পেরেছিলাম তাতে মনে হয়েছে উনার বয়স ৫০ এর উর্ধেই হবে। এর বেশি আমি কিছু জানি না স্যার। আমি আমার বউ আর বাচ্চাদের কসম কেটে বলছি আমি সম্পূর্ণ সত্য কথাই বলেছি আপনাকে।”

সেইসময় কুশলের ফোন বেজে উঠে। কুশল ফোনস্ক্রিণের দিকে তাকাতেই দেখলো ডাক্তার আকরাম সাহেব কল করেছেন। কুশল কলটি রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে আকরাম সাহেবের কথাগুলো শোনামাত্র কুশলের চেহারায় স্বস্তির ছাপ ফুটে উঠে। পরমুহূর্তে কুশল কল কেটে দিয়ে বসাবস্থা থেকে উঠে বললো….

—“ওকে ওখান থেকে নামিয়ে আগের ন্যয় বেঁ*ধে রাখো।”

এই বলে কুশল ওর আস্তানা থেকে বেড়িয়ে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…..

(১৩৭৫ শব্দ আছে এখানে 👀)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here