হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৫০) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
850

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৫০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

নিলাদ্রকে পরপর কয়েকবার নিজেদের দিকে একপলক দেখে দেখে হাতের বাম ও ডান পার্শের ফাকা স্থানে থু*তু ফেলতে দেখে ওদের ৪জনের রাগ কন্ট্রোলে রাখার সীমা যেনো ভে*ঙে যায়। রিজভী দ্রুত কদমে নিলাদ্রের কাছে এসে দাঁড়িয়ে স্বজোরে ওর গালে একটা থা * প্প * ড় দেয়। রিজভীর প্রয়োগকৃত এই থা * প্প * ড়ের প্রভাবে নিলাদ্রের ঠোঁটের ডান পার্শের কর্ণিশে হালকা কে * টে গিয়ে র * ক্ত বের হতে শুরু হয়। কিন্তু এই থা * প্প * ড় যে নিলাদ্রের উপর কোনো প্রভাবই ফেলতে পারে নি তা ওর ঠোঁটে লেগে থাকা বাঁ*কা হাসি দেখেই ওরা ৫ জন বুঝতে পেরেছে। রিজভী আবারও নিলাদ্রকে থা * প্প * ড় দিতে উদ্দ্যত হলে সাবরিনা চেয়ারে বসাবস্থায় থেকেই নিজের হাত উঠিয়ে ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন….

—“রিজভী…থামো! একে এভাবে মে*রে সময় ন*ষ্ট করে কোনো লাভ নেই। আমাদের এতোগুলো বছর ধরে সাজিয়ে আসা পরিকল্পনা ভে * স্তে দেওয়ার পথে অগ্রসর হয়ে এ যে কতো বড় ভু * ল করেছে তা ওকে হারে হারে টের পাইয়ে ছাড়বো।”

কামিনী নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললেন….

—“ভাবীইই…নিলাদ্রকে ওর ভু * লের জন্য শা * স্তি দেওয়ার আগে আমাদের এতো বছর ধরে সাজিয়ে আসা পরিকল্পনার কথাও ওকে জানিয়ে দাও। বেচারা সব সত্য জানার পর বাঁচার জন্য অবশ্যই ছ * ট-ফ * ট করবে। নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধু কুশল আর নিজের প্রেয়সী সন্ধ্যার শেষ পরিণতি যে ওর থেকেও ক * রু* ণ হবে এই বিষয়েও ওকে অবগত করো। সব সত্য জানার পরেও ওদের কাওকে আমাদের ষ * ড় * য * ন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না এমনটা ভেবেই ও কেমন ছ * ট-ফ * ট করে এই দৃশ্য দেখার কিন্তু মজাই অন্যরকম হবে।”

কামিনীর মুখে এরূপ কথা শুনে নিলাদ্র রাগ নিয়ে আবারও নিজেকে বাঁ*ধা*বস্থা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো…

—“খবরদার আমার ভাই সমতুল্য বন্ধু আর আমার প্রিয়তমার একচুল পরিমাণও ক্ষ * তি করার চেষ্টা করবে না তোমরা। তাহলে তোমাদের শেষ পরিণতি কিন্তু একদমই ভালো হবে না।”

সাবরিনা বললেন….
—“আমাদের শেষ পরিণতি আমরা নিজেরাই ঠিক করে রেখেছি আরো ২৮ বছর আগেই। নিজের বর্তমান অবস্থা এতো ক * রু * ণ হয়েছে দেখেও তোমার মুখের জো * ড় দেখছি এতোটুকুও কমে নি। কি ভেবেছো! আমাদের হাত থেকে জীবিত অবস্থায় বের হয়ে তুমি ওদের সবাইকে বাঁচিয়ে নিতে পারবে! তাহলে এই অ*সম্ভব চিন্তার কথা নিজের মাথা থেকে ঝে * ড়ে ফেলো। কারণ তোমার শেষ পরিণতি মৃ*ত্যু তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

নিলাদ্র তেজী কন্ঠে বললো….
—“কেমন বাবা-মা তোমরা নিজের সন্তানদের মে * রে ফেলার মতো পরিকল্পনা করছো!”

নিলাদ্রের মুখে এমন কথা শুনে ওরা ৪জন ই স্বশব্দে হেসে উঠে। নিলাদ্র এতে কিছুটা অবাক হয়। পরক্ষণেই ওরা হাসি থামাতেই সাবরিনা বললো….

—“বাবা-মা! কে কার বাবা-মা? কুশল আর সন্ধ্যা তো রায়হানুল চৌধুরীর ছেলে-মেয়ে আমরা তো শুধু আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ওদের সাথে এতোগুলো বছর ধরে বাবা-মা সেজে থাকার নাটক করেছি মাত্র। আমার আর সায়মনের একমাত্র ছেলে রওশান আজমাইন কনক। রিজভী আর কামিনীর একমাত্র ছেলে রাজবীর চৌধুরী। আমাদের কাছে এরা দু’জন ছাড়া চৌধুরী পরিবারের সাথে সম্পর্কিত আর কোনো সদস্যের জীবন নিয়ে কোনো পরোয়া নেই। আমাদের পরিকল্পনার পথে যারাই বাঁ*ধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে তাদের পরিণতিই মৃ*ত্যু হয়েছে। তার জল*জ্য*ন্ত উদাহরণ হলো রায়হানুল চৌধুরী আর তার স্ত্রী রুবিনা চৌধুরী। রায়হানুল চৌধুরীকে তো দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ একটা জীবন্ত লা*শ বানিয়ে রেখেছি। আর তার স্ত্রীকে দিয়েছিলাম ভিষণ য*ন্ত্র*ণা দায়ক মৃ*ত্যু। ২০ বছর আগের সেই দৃশ্যগুলো এখনও যখন চোখের সামনে ভেসে উঠে মনের ভিতরটা কেমন যেনো ফুরফুরে হয়ে উঠে।”

কামিনী বললো…..
—“ঠিক বলেছো ভাবী। নিজের শ*ত্রু*দের চোখের সামনে য*ন্ত্র*ণা*য় ছ*ট-ফ*ট করতে করতে মা*রা যেতে দেখার মতো এতো বেশি মজা হয়তো আর ২য় কিছুতে হয় না।”

রাগে, ক*ষ্টে, ঘৃ*ণা*য় নিলাদ্রের সর্বশরীর যেনো কাঁ*প*ছে। নিলাদ্র উচ্চস্বরে বললো…..

—“কি করেছিলি তোরা বড় মায়ের সাথে!”

কামিনী হাসি দিয়ে বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললো….
—“সব জানার জন্য কেমন ছটফট করছে দেখো তোমরা। আমার তো অনেক মজা লাগছে ওর এই অবস্থা দেখে।”

সায়মন বাঁ*কা হেসে বললো….
—“বেচারাকে এবার সবটা জানিয়ে দাও মাই সুপার ট্যলেন্টেড ওয়াইফ। তোমার তৈরিকৃত পরিকল্পনা অনুসরণ করেই তো আমরা এতোদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি। তাই মৃ*ত্যু*র আগে ওর শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করার দায়িত্ব তুমিই নাও।”

সায়মনের এরূপ কথা শুনে সাবরিনা বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে……

—“চৌধুরী বংশের অঢেল সম্পত্তি ভাগ-বা*টো*য়ারা করার একটা নিয়ম আছে যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এই নিয়মটা মানতেও সবাই বাধ্য ছিলো। আর কেও যদি এই নিয়ম ভ*ঙ্গ করার চেষ্টা করতো কখনও তাহলে তাকে চৌধুরী পরিবারের সব সম্পত্তি থেকে বহিষ্কার করা হতোই পাশাপাশি তার সাথে সব সম্পর্কও শেষ করা হতো। নিয়মটা হলো এমন যে, পরিবারের ছেলের সংখ্যা যদি হয় ৩জন তাহলে সেই ৩জনের মাঝে সবথেকে বড় যে হবে সে পাবে চৌধুরী পরিবারের সিংহ ভাগ সম্পত্তির মালিকানা এরপর সম্পত্তির বাকি যে অংশটুকু থাকবে তা আরো ৩ভাগ করা হবে। ২ভাগ পাবে মেজো ছেলে আর শেষ ভাগ পাবে ছোট ছেলে। আমার শ্রদ্ধেয় শ্বাশুড়ি মায়ের ও তিন ছেলে ছিলেন। তাই নিয়ম অনুযায়ী রায়হানুল চৌধুরী বড় ছেলে হওয়ায় পরিবারের সিংহ ভাগ সম্পত্তির মালিকানা তিনি পান। বাকি সম্পত্তির ২ভাগ পান আমার স্বামী সায়মন চৌধুরী আর শেষ ভাগ পান রিজভী। বিয়ের পর আমি যখন চৌধুরী পরিবারে আসি তখন এমন নিয়ম দেখার পর আমি একদমই সন্তুষ্ট ছিলাম না। তবুও এই নিয়ম মেনে নেওয়ার নাটক করতাম। এরপর যখন চৌধুরী পরিবারের ভবিষ্যত বংশধরদের মাঝে সম্পত্তির ভাগ-বাঁ*টো*য়ারা করার সময় আসলো তখন জানতে পারলাম বিয়ের ৪বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনও রায়হানুল চৌধুরী আর রুবিনা চৌধুরীর কোনো সন্তান হয় নি। এই নিয়ে তারা দু’জনেই অনেক বড় বড় চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন কিন্তু কোনো লাভ হয় নি। তাই তারা সন্তান হওয়া নিয়ে আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন প্রায়। এভাবেই পেরিয়ে যায় কয়েকমাস, আমার গর্ভে তখন কনক আসে। একদিকে গর্ভে কনকের অস্তিত্ত্বের জন্য খুশি অন্যদিকে সে পাবে সম্পত্তির সিংহভাগ অংশের মালিকানা। সবমিলিয়ে আমার আর সায়মনের আনন্দ রাখার যেনো জায়গা হচ্ছিলো না। বড় ভাবীর সাথে আমার শুরু থেকে বনতো না। তিনি ছিলেন ভিষন সাদামাটা, সরল-সহজ চিন্তা ভাবনার মানুষ। তাই তার সাথে আমি শুধু মুখে মুখেই মিল রেখে চলতাম। কনকের জন্মের পর পরই রিজভী কামিনীকে বিয়ে করে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসে। কামিনীর মেন্টালিটির সাথে শুরু থেকেই আমার মেন্টালিটি মিলে যেতো। তাই কামিনীর সাথেই আমার সর্বক্ষণ উঠাবসা হতো। যেহেতু বড় ভাইয়ের কোনো সন্তান হচ্ছিলো না তাই সম্পত্তির সিংহ ভাগ আমার ছেলের পাওয়ার কথা ছিলো তাই সম্পত্তির পরবর্তী ২ভাগ কামিনীর ছেলে হলে সে পাবে এমন আশাবাদীই ছিলো সে। কিন্তু আমাদের আশায় বারা ভাতের উপর যে এভাবে ছাই পড়বে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি নি। কনকের বয়স যখন ১বছরে পড়লো তখন বড় ভাবী এতোগুলো বছর পর গর্ভবতী হলেন। বড় ভাবীর শারীরিক অবস্থা দেখে আমার শ্বাশুড়ি মা আশা রেখেছিলেন বড় ভাবীর কোল আলো করে ছেলে সন্তানই আসবে। আর এমন হলে যে রায়হানুল ভাই বড় ছেলে হওয়ার সুবাদে তার ছেলে আমার ছেলের থেকে বয়সে ছোট হলেও সেই সম্পত্তির সিংহভাগ অংশের মালিকানা পাবে এতো বড় অবিচার আমি, সায়মন, কামিনী, রিজভী কেউই মেনে নিতে পারি নি। ১০মাস পর ঠিকই বড় ভাবীর ছেলে কুশলের জন্ম হয়। কুশলের জন্মের পর পরই ওর নামে সম্পত্তির দলিল তৈরি করেন স্বয়ং আমার শ্বাশুড়ি মা। কুশলের বয়স যখন ৩০ বছরে পড়বে তখন সে সম্পত্তির সিংহভাগ অংশের মালিকানা পাবে। কুশলের নামে সম্পত্তির দলিল তৈরি হয়েছে শুনে রাগে-ক্ষো*ভে আমাদের মাথা যেনো ফেঁ*টে যাচ্ছিলো। আর তখন থেকেই আমরা এই পরিকল্পনার বীজ বুনতে শুরু করি। এর মাঝেই রিজভী আর কামিনীর ছেলে রাজবীর এই দুনিয়ায় ভূমিষ্ঠ হয়। যার ফলে আমাদের দল আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠে। কুশলের বয়স যখন ৫বছর তখন সকলের চোখকে ফাঁ*কি দিয়ে ওকে ধা*ক্কা দিয়ে সিঁড়ি থেকে নিচে ফেলে দেই স্বয়ং আমি। পরিকল্পনা ছিলো এতো উঁচু কুশলকে ফে*লে দিলে সে মাথায় গু*রু*তর ভাবে আ*ঘা*ত পেয়ে মা*রা যাবে। আর তখন ওর নামে সম্পত্তির দলিল করা থাকলেও ৩০ বছর পর আমার ছেলে আর কামিনীর ছেলের মাঝে তা সমান ভাবে ভাগ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের এই পরিকল্পনাও ভে*স্তে যায়। কৈ মাছের প্রাণ হওয়ায় কুশল এতো উঁচু থেকে পরে গিয়েও বেঁচে যায়। কিন্তু মাথায় গুরু*ত*র ভাবে আ*ঘা*ত পাওয়ায় কুশল কো*মা*য় চলে যায়। কুশলের চিকিৎসায় নিয়েজিত ডাক্তার জানান যেদিন কুশলের সেন্স ফিরবে সেদিন সে ওর সুস্থথাকাকালীন সময়ের সকল স্মৃতি পুরোপুরি ভাবে ভু*লে যাবে। কাওকে সে চিনতে পারবে না। সেন্স ফিরলে পরে ওকে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর মতো করে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। ডাক্তারের মুখে এরূপ কথা শুনে আমি আবারও নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করি। দেখতে দেখতে কুশলের কো*মা*য় থাকার সময় ২ বছর পেরিয়ে যায়। বড়ভাবী পুনরায় গর্ভবতী হন। আমাদের সময় আমাদের পরিবারের কোনো গর্ভবতী মহিলারা আল্ট্রাস্নোগ্রাফি করে নিজের কি সন্তান হবে তা জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতেন না। সন্তান জন্ম হওয়ার পরই জানতে পারতেন তার ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে। বড় ভাবী আবারও গর্ভবতী হয়েছে জানার পর আমরা এক ভ*য়া*নক পরিকল্পনা করি। এবারের পরিকল্পনা যেনো কোনো ভাবেই ব্য*র্থ না হয় সেদিকেও পুরোপুরি ভাবে খেয়াল রাখার ব্যবস্থা করবো বলেই আমরা ৪জন মনঃস্থির করি। নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সামনে যদি কোনো গাছ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তবে সেই গাছের ডাল-পালা ছে*টে কোনো লাভ হবে না। একেবারেই গাছটিকে গো*ড়া থেকে উপরে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের এবারের পরিকল্পনা ছিলো ঠিক এমনই। বড় ভাবীর গর্ভধারণের সময় যখন ৯মাস পেরোয় তখন………..

………..২০ বছর আগে সেই দূর্বি*ষহ দিনের ঘটনা…….

সাবরিনা আর কামিনী সিঁড়ির উপর অনেক তেল ফেলতে শুরু করে। তেল ফেলার কাজ শেষ হতেই সাবরিনা ওর কমোরের গোঁ*জ থেকে একটা সাদা কাগজে মুড়ানো কিছু বের করে কামিনীর সামনে ধরে বললেন….

—“এই কাগজে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ রাখা আছে। শ্বাশুড়ি মায়ের দুপুরের ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে একগ্লাস পানির ভিতর এই ঔষধগুলো সব মিশিয়ে নিয়ে তুই এক্ষুণি শ্বাশুড়ি মায়ের রুমে যা। ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত ঐ পানিই যেনো এখন শ্বাশুড়ির মা খান এটা শিওর হয়ে আসবি।”

কামিনী বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললেন…
—“ঠিক আছে ভাবী।”

এই বলে কামিনী দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ডায়নিং রুমে গিয়ে একটা গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে সাবরিনার দেওয়া ঘুমের ঔষধগুলো সব ভালো ভাবে মিশিয়ে সাগরিকা চৌধুরীর রুমে যায়। অতঃপর সাগরিকা চৌধুরীকে সেই ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত পানি দিয়েই তার দুপুরের ঔষধ খাইয়ে দেন। কিছুসময়ের মধ্যেই সাগরিকা চৌধুরী গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে যান। পরক্ষণেই কামিনী সাগরিকা চৌধুরীর রুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে সাবরিনা ড্রয়িং রুমে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন। কামিনী সাবরিনার পাশে বসে হাসি দিয়ে বললেন….

—“ভাবী…শ্বাশুড়ি মা সেই ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত পানি পান করে এখন গভীর ঘুমে ডুবে গিয়েছেন।”

সেইসময় চৌধুরী মেনশনের মূল দরজা দিয়ে সায়মন আর রিজভী বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। সায়মন আর রিজভী সোফায় এসে বসে। সায়মন বাঁ*কা হাসি দিয়ে বললেন….

—“ডার্লিং..তোমার কথানুযায়ী বড় ভাইকে অফিসের অনেকগুলো কাজের দায়িত্ব দিয়ে এসেছি। সন্ধ্যার আগে সেইসব কাজ শেষ করে তার পক্ষে বাসায় ফেরা সম্ভব না। তাই এই সময়ের ভেতরেই তোমাদের যা করার করে ফেলো।”

সাবরিনা বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন…

—“এবার তাহলে আসল মজা উপভোগ করার জন্য তোমরা তৈরি হও!”

এই বলে সাবরিনা সিঁড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে রুবিনা চৌধুরীকে ডাকতে শুরু করেন…

—“বড় ভাবী…ও বড় ভাবী…একটু নিচে আসবেন! খুব দরকার ছিলো। বড় ভাবী…!”

সাবরিনার ডাক শুনতে পেয়ে রুবিনা নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে এসে সিঁড়ির উপর পা রাখতেই পা পিছলে সিঁড়ি থেকে গড়তে গড়তে নিচে একেবারে সাবরিনার পায়ের কাছে এসে মুখ থু*ব*ড়ে পড়ে যান। সাবরিনা কয়েক কদম পিছনের দিকে পিছিয়ে যায়। রুবিনা নিচে পড়া মাত্র তার পানি ভে*ঙে যায়, প্রসবের রাস্তা দিয়েও প্রচুর র*ক্ত*পাত হতে শুরু করে, ওতো উচু থেকে নিচে মুখ থু*ব*ড়ে পড়ে যাওয়ায় নাক-মুখ দিয়েও র*ক্ত বের হতে থাকে। রুবিনা ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণায় আ*র্ত*না*দ করতে থাকেন। তার আর্তনাদ যেনো বাহিরের কারোর কানে না পরে তাই কামিনী টি-টেবিলের উপর থেকে সাউন্ড বক্সের রিমোটটা হাতে নিয়ে উচ্চস্বরে গান ছেড়ে দেয়। রুবিনা অ*সহ্য*কর য*ন্ত্র*ণা নিয়ে সাবরিনার দিকে সাহায্যের জন্য নিজের র*ক্ত মাখা হাতটি বা*ড়ি*য়ে দেয় কিন্তু সাবরিনা তা গ্রা*হ্য না করে সোফায় গিয়ে বসে।

রুবিনা নিজের সন্তানকে নিয়ে জীবন ও মৃ*ত্যু*র সাথক ল*ড়া*ই করছে আর ওরা ৪জন তখন ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে সেই ক*রু*ণ দৃশ্যটা উপভোগ করছে। মানুষ কতোটা নি*কৃ*ষ্ট হলে এমন পরিস্থিতিতেও হাসতে পারে তা ওদের না দেখলে বোঝা যেতো না। অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বড় ভাবী সন্তান ভূমিষ্ঠ করতে সক্ষম হন। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে কামিনী মুখে হাত দিয়ে বললো….

—“এতো উপর থেকে পরে গিয়ে এতো সময় ধরে য*ন্ত্র*ণায় ছ*ট-ফ*ট করেও জীবিত সন্তানের জন্ম দিলো কি করে এই মহিলা! আজ একে আর এর সন্তানকেও আমি নিজ হাতে গলা টি*পে মে*রে ফে*ল*বো।”

এই বলে কামিনী বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……

(নোট বার্তাঃ গল্পটাতে একটা বড় ভু*ল করে ফেলেছি তা সংশোধন করা অতিব জরুরী🤦‍♀️🥹। যারা আমার এই গল্পের পাঠক-পাঠিকা আছেন তারা সবাই এই অংশটুকু পড়বেন।

আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন কুশল আর সন্ধ্যার বাবা রায়হানুল চৌধুরী। যিনি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে কোমায় আছেন এমনটাই লিখেছি আমি আর এটাই আমার ভু*ল🤦‍♀️। কুশলের বয়স ২৮ বছর আর সন্ধ্যার বয়স ২০ বছর। তাই রায়হানুল চৌধুরীর কোমায় যাওয়ার সময় ২৮ বছর থেকে পরিবর্তন করে ২০ বছর করা হলো 🥹। আপনারা আমার ভু*ল টা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই ভুলের জন্য ভবিষ্যতে কখনও সমালোচনার শিকার আমি হতে চাই না। আমি আমার পেইজ থেকে যেই যেই পর্বে রায়হানুল চৌধুরীর কোমায় যাওয়ার সময় ২৮ বছর লিখেছিলাম ইডিট করে ২০ বছর লিখে দিবো ধীরে ধীরে। কিন্তু বাড়তি যেসব গ্রুপ বা পেইজে আমার গল্প গিয়েছে সেখান থেকে ঠিক করা সম্ভব না আমার পক্ষে🥲। আমি অনেক বেশিই দুঃখিত আমার ভুলের জন্য।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here