#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [১১]
লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন
সূর্যের আলো জানালার থাইয়ের একটু ফাঁকে ভেদ করে খানিক আলো এসে আমার মুখে পড়ছে। যা দেখে খানিক ভ্রু কুচকালাম। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম। উঠতে চাইলাম বিছানা থেকে কিন্তু আমি ব্যর্থ হলাম। আশপাশ লক্ষ্য করে দেখলাম আমি কারোর বাহুতে আবদ্ধ। বাহুর অধিকারী’র মুখে দেখে খানিক মুচকি হাসলাম।
আজকের সকাল টা অন্যান্য সকালের থেকে খানিকটা আলাদা। সেদিন-ও আলাদা ছিলো কিন্তু আজকের সকাল এক প্রশান্তির সকাল। ভালোবাসায় মোড়ানো এই সকাল। আজ যেনো নিজেকে পরিপূর্ণ লাগছে। রাতের কথা মনে পড়তেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কারন চোখ বন্ধ না করে প্রশান্তিময় কোনো কিছুর বর্ননা করা যায়না।
অতীত—-🍁
এক’পা দু’পা করে সামনে এগুচ্ছে ধূসর স্যার । ঘোর কাটিয়ে যে তিনি সামনে এসে আমাকে দেখে ক্ষেপলেন না এতেই আমি অবাক হলাম। তাকে দেখে বোঝা গেলো যে,তিনি এইসব আগে থেকেই জানতেন। আস্তে আস্তে আমার পেছনে এসে দাড়ালেন।
হাতে থাকা নীল আর সাদা কম্বিনেশনের অপরাজিতা ফুলটা ভালোভাবে লাগিয়ে আমার হাত ধরে ধীরে ধীরে আয়নায় নিয়ে গেলেন। লজ্জায় যেনো আমি খানিকটা নুয়ে গেলাম। শান্ত কন্ঠে আমাকে বললো-
— সিয়ু ! ”
—…! ”
— আয়নায় তাকাও । ”
তার কথায় খানিকটা বিব্রত হয়ে আয়নায় তাকালাম। লজ্জা আর বিব্রত যেনো আমাকে পুরো গ্রাস করে ফেলেছে। আটকে গেলাম ধূসর নামক আমার হালাল পুরুষের নিকট । আজ তাকে পুরো শুভ্রময় লাগছে। চুলগুলো সিল্কি হয়ে এলোমেলো হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ওনি শুধু পাঞ্জাবি টা পড়েই এখানে চলে এসেছেন।
আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন-
— আয়নায় কাকে দেখতে পাও সিয়ু ? ”
তার কথায় এতোটাই নেশাজড়ালো ছিলো আর আমিও ঘোরে থেকে বলে ফেললাম-
— আমার ধূসররঙা ভালোবাসা ! ”
— আমাকে জিজ্ঞাসা করবা না ?”
— উহু ! ”
— আমি আমার #মনোহারিণী কে দেখছি। ”
আর মুহুর্তের মধ্যেই পরিবেশ টা যেনো শীতল অনূভূত করলাম। আমি আমার নিজের কানকেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি আমার ভালোবাসার মানুষের #মনোহারিণী ? আর ওনি কার সাথে সেদিন কথা বললো? কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে অবশেষে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম-
— আমি আপনার মনোহারিণী হলে সেদিন যার সাথে কথা বললেন ওনি বা কে ? ”
— পৃথা তোমাকে এই বাড়ির রহস্য বলেছে আশা করি। ”
— সেইসাথে এটাও বলেছে যে আপনি আমার ফুফাতো ভাই !”
— বাহ ! সব জেনে গিয়েছো যে। ”
— হুম! ”
— হুম ! ”
— আপনি সব জানার পরেও আমাকে কিছু জাননানি কেনো? তাহলে তো দিনের পর দিন আর আমাকে কষ্টে থাকতে হতোনা। ”
— সরি মাই ডিয়ার। আমাদের বাড়ির প্রত্যেকের শরীরে ভয়েস কন্ট্রোলার সেট করা। ”
— কিইইই!”
— হ্যাঁ ! এমনকি সবার ফোন-ও। ”
— কি সব বলছেন ?”
— হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি। সেদিন সকালে শাড়ি ঠিক পড়েছিলে কিন্তু তোমার কোমড়ের অর্ধেকটা দেখা যাচ্ছিলো। তাই ইচ্ছে করেই পাশের রুমটায় নিয়ে গেয়েছিলাম। ”
— আপনি চাইলেই কিন্তু আমাদের রুমটায় আনতেন। আর আপনি খাতায় ওসব লিখেছিলেন কেনো ?”
— প্রথমত আমাদের রুমে তখন সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা ছিলো, দ্বিতীয়ত আমার শরীরে ভয়েস কন্ট্রোলার থাকার কারনে যা-ই বলতা সব শুনে নিতো। ”
— এক মিনিট। আপনি শিউর যে আমাদের রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা আছে ?”
— হ্যাঁ! এটা সেই ব্যক্তি নিজেই আমাদের কে এনশিউর করে দিয়েছেন। ”
— তাহলে কি আমাদের বিয়ের প্রথম রাতে,,,!”
— নাহ সেদিন আমি অনেক আকুতি মিনুতি করে সিসিটিভি ক্যামেরা অফ করিয়েছিলাম কিন্তু ভয়েস কন্ট্রোলার ঠিকই ছিলো। আর কি কি করছি সেসব না দেখলেও শুনতে পেতো। ”
— এইসব করে কী লাভ সেই ব্যক্তির? ”
— সেই ব্যক্তি কাকে বলছো? ওনি-ই তো তোমার বাবা !”
— হাহ!বাবা ! হাসালেন। কেমন বাবা সে যে কিনা নিজের মেয়েকে মারতে চায় ?”
— সেটার রহস্য তো একমাত্র তোমার মা-ই বের করতে পারবে। ”
—কোথায় আমার মা ? ”
— জানিনা তবে এইটুকু জানি যে তিনি তোমার বাবার আয়ত্তে। মানে তোমার বাবা তাকে বন্দি করে রেখেছে। ”
— সবই বুঝলাম কিনতি তাড়াহুড়ো করে আমাকে বিয়ে করার কারন কি ?”
— তোমার নিরাপত্তা ! ”
— মানে ? ”
— আমার কাছে তুমি থাকলে তোমার বাবার লোকদের দিয়ে কিছুটা জানতে পারবো আর তোমার বিপদ হলে বাঁচাতে পারবো। ”
— ভালোবাসেন আমায় ?”
— হ্যাঁ খুব ! ”
— তাহলে ভার্সিটি তে আমাকে অপমান কেনো করেছিলেন ? ”
— তোমার বাবার কথায় !”
— মানে ?”
— মানে হলো তোমার বাবা আমাকে বলেছিলো যাতে তোমাকে অপমান করি। ”
— সেটা কি করে সম্ভব? ”
— আচ্ছা এটা বলো, বাহিরে গেলে আমার কানে একটা ব্লুটুথ দেখতে পেতে কি ?”
— হ্যাঁ ! ক্লাসে থাকাকালীন পেতাম না কিন্তু আমার সাথে কথা বলার সময়-ই সেটা দেখতে পেতাম। ”
— একজ্যাক্টলি সেটাই। তুমি কিছু বললে তোমার বাবা আমাকে বলতো আর আমি তোমাকে সেইটাই বলতাম। ”
— ওনি সত্যিই আমার বাবা তো ?”
— জানি না ! সেটার রহস্য তোমাকেই বের করতে হবে । ”
— কেনো কেনো আমি কেনো ?”
— তোমার কাছে উইলের পাওয়ার আছে তাই তুমি যা ইচ্ছে করতে পারবে। আর আমিও চাই আমার শাশুড়ী তাড়াতাড়ি মুক্ত পাক। সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকি। ”
— আচ্ছা আমাকে কীভাবে পেলেন ?”
— আজ এই রোমান্টিক পরিবেশে কি তুমি গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছো ? ”
— আরে বাবা বলো না !”
— একদিনে সব শুনলে তো হচ্ছে না পাখি। অন্যদিনের জন্য তোলা রইলো। আর আজকে আমার কাজ টা আমাকে করতে দাও। ”
তার কথা শুনে ভ্রু উঠিয়ে বললাম-
— তোমার আবার কি কাজ গো ?”
— আমি আপনার সম্মতি চাই #মনোহারিণী। ”
তার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম। যে ছেলে কিনা আমাকে বিয়ের প্রথম রাতে নির্মমভাবে নিজের চাহিদা পূরণ করলো সে কি না আজ আমার কাছে অনুমতি চাইছে? আমাকে ভাবতে দেখে তিনি বললেন-
— সেদিন ওমন করার কারন তো জানালাম। তাহলে ? আচ্ছা থাক ঘুমিয়ে পড়ো। ”
এই বলে আমার কোমড় ছেড়ে যেতে উঠলেন তখনি আমি পেছন থেকে ওনার হাত ধরলাম। ওনি একপলক আমার হাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু ফেস করলেন, আর আমি তা দেখে বললাম-
— আজকে কি আমার বাবা মানে এনিমি আমাদের কোনো কথোপকথন শুনেনি? কিংবা কিছু দেখবে না ?”
ওনি আমার কাছে এসে বললেন –
— না !”
আমি আবারো বলে উঠলাম-
— আমাকে বাঁচাতে বইয়ে করেছেন নাকি আমাকে ভালোবাসেন ? ”
— এটারও রহস্য আছে। জেনে নিও তুমি। কিংবা যেদিন বড় মামি কে সবার সামনে আসবে সেদিন আমি নিজেই তোমাকে বলবো। মাথায় এতো চাপ নিও না। ”
— এতো রহস্যের মাঝে আমি না আবার হারিয়ে যাই ! ”
— না হারিয়ে যাওয়ার জন্যই তো আগে আগেই নিজের করে নিলাম। ”
আমি তার উত্তর শুনে মুচকি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। তিনি আমার সম্মতি পেয়ে ভালোবাসলেন নিজের মতো করে।
বর্তমান—–🍁
দরজায় কারো কড়া নাড়ার শব্দে চোখ খুললাম। ঘড়িতে বাজে ৬ টা বেজে ১৩। উঠতে ইচ্ছে হলো না এই ভালোবাসার স্পর্শ থেকে। তাই শুয়ে থেকেই বললাম-
— কে ? ”
— সিয়ু আমি পৃথা। উঠো তাড়াতাড়ি, কথা আছে। ”
পৃথা আপুর কথা শুনে প্রিয় মানুষ টা কে সযত্নে সরিয়ে তার গায়ে কম্বল দিয়ে শাড়ি ঠিক করে উঠে দরজা খুললাম। পৃথা আপু হুড়মুড়িয়ে দরজা খুলে যা বললো তাতে বুকটা ধক করে উঠলো।
(চলবে)