ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [১২] লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন

0
445

#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [১২]
লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন

— বড় বাবা একজন কে ইতোমধ্যে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে , একটু পর তিনি আসবেন তোদের ঘরে। বাকী ঘর গুলো তে ঠিক করা শেষ প্রায়। আর তোদের রুমের এই অবস্থায় যদি এসে দেখে তো কি হবে ভাবতে পারছিস !”

এই কথা শুনে আমার মাথায় পড়লো হাত তখনি ধূসর স্যার বলে উঠেন-

— মোটা অংকের টাকা দিলেই চুপ থাকবে। ”

ধূসর স্যারের আচমকা কথায় খানিক ভড়কে গেলাম দু’জনেই। তখনি পৃথা আপু বলেন-

— গুড আইডিয়া ব্রো। আচ্ছা আমি তাহলে যাই। তোমরা রিলাক্স এ থাকো। ”

আপু চলে গেলো নিজের মতো। আমি স্যারের কাছে গিয়ে বললাম –

— তা মশাই পৃথা আপুকে কি করে চিনেন ?”

— কি করে আবার ?”

— হুম সেটাই জানতে চাই ।”

— সিয়া !”

— কি সিয়া ?”

— ও আমার মামাতো বোন তো ওকে চিনবো না কোনো কথা হলো ? ”

— হ্যাঁ হলো-ই তো । আচ্ছা মা মানে ফুপু জানে চেনে ওকে ?”

— হ্যাঁ রে বাবা। নিজের ভাইয়ের মেয়েকে কে না চেনবে !? ”

— তাও ঠিক আচ্ছা থাকুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি ।”

এই বলে কাবার্ড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যাবো তখনি তিনি আমাকে বললেন-

— শোন ? ”

— হ্যাঁ বলুন ! ”

— শাড়ি পড়তে হবেনা আজকে। আর গোসল করে সোজা ছাঁদে যাবি। ”

— কেনো ?”

— আমি বলেছি তাই !”

— কারন দেখাও নাহলে যাচ্ছিনা । ”

— আপনি থেকে ডিরেক্ট তুমি ? ”

— ডাকলে তো নিজের জামাইকেই ডাকছি। তবে তোমার সমস্যা হলে আমি তোমাকে আপনি আর অন্য কাউকে গিয়ে তুমি তুমি করবো। এমন ভাবে ডাকবো যে মুখে ফেনা তুলে ফেলবো। ”

— হইয়েছে হয়েছে থামো। ”

— কারন টা তো বলো !”

— রুমে অপরিচিত লোক থাকবে। সে এসে তোমাকে ওই মোহনীয় রুপ আই মিন গোসলের পরের সৌন্দর্যতা কেউ দেখুক সেটা আমি চাইনা। তাই বললাম। আর হ্যাঁ ছাঁদে গেলে মাথায় কাপড় দিয়ে যাবে। ”

— আচ্ছা ঠিক আছে ! তবে আরেকটা কথা জানার ছিলো। ”

— আবার কি ? ”

— বিরক্ত হচ্ছো ? ”

— না ! ”

— তাহলে এইভাবে বলছো যে ? ”

— তো কীভাবে বলবো সিয়া ? একটু পর সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক হবে সেইসাথে আমার সাথে থাকা ভয়েস কন্ট্রোলার ও অন হবে তাড়াতাড়ি যা জানার বলে ফেলো ! ”

— মানে কাল যখন আপুকে এই বাড়িতে পাঠানো হলো তখন মা কিছু বলেননি কেনো ?”

— মা-ও জানতো। মানে এই বাড়িতে যা হয় সব তোমার বাবার আদেশে। ”

— কিন্তু কেনো ? ”

— সেটা আমরা কেউই জানিনা। শুধু মা -বাবা বাদে। তাদেরকে চুপ রাখা হয়েছে। আর আমাকে বলা হয়েছে ভুল কিছু করলে নাকি আমি আমার বাবা-মা কে হারাবো। ”

কিছু বলতে যাবো তখনি কেউ একজন গলা খাঁকারি দিলো। আর কেউ নয় পৃথা আপু। তার গলা ঝাড়ায় আমরা দু’জনেই কথা থামালাম আর আমার হাতের কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।

-***-

স্যারের কথা অনুযায়ী ছাঁদে আসলাম। এসে দেখি পরিবেশ টা কেমন জানি গুমোট। পরিবেশ টা বেশ ঠান্ডা। হালকা বাতাস বইছে। স্যারের কথা মতোই মাথায় কাপড় দিয়ে এসেছি এখান টায় ! হঠাৎই পেছন থেকে কেউ ঢেকে উঠলো-

— সিয়া ? ”

কন্ঠস্বর আর কারোর নয় স্বয়ং পৃথা আপুর। আপুকে দেখতে পেয়ে আমার হাসি টা বেশ চওড়া হলো। যা-হোক সংগী হিসেবে তো কাউকে পেলাম এই মনোরম পরিবেশে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়েই আপুর কথার উত্তর দিলাম-

— হ্যাঁ আপু ? এদিকটায় আসো ! ”

— আসছি ! ”

এই বলে আপু এগিয়ে আসলো আমার দিকে। পড়নে তার লেডিস জিন্স, টপ্স আর গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে ওড়না। এদিকটায় এসে আপু বললো-

— কখন এসেছো ? ”

— তুমি আসার ১মিনিট আগেই । ”

— আমাকে দেখতে পাওনি ?”

— না আপু! ”

— ওহ !আমি এদিকটায় ছিলাম ! ”

— সরি গো দেখতে পাইনি । ”

— আচ্ছা কি করবে ভেবেছো ? ”

— মানে এই রহস্য উদঘাটন করবে বা কি ভাবে ? ”

— হুম ভেবেছি তো কিন্তু এখানে কি সিসিটিভি ক্যামেরা কিংবা ভয়েস কন্ট্রোলার নেই ? ”

— নাহ ছাঁদে নেই। ”

— তাহলে তো ধূসর স্যার আর বাকীদের এখানে এনেই কথা বলতে পারি তাইনা ? ”

এই বলে নিতে যেতে উদ্যত হলাম তখনি আপু বললো-

— আরে বোকা মেয়ে দাড়াও ! ”

— কেনো !”

— তুমি কি ভুলে গিয়েছো যে ভয়েস কন্ট্রোলার ওদের শরীরে সেট করা । ”

— কিইই ! কিন্তু শরীরে কীভাবে সেট করা যায় ! ”

— জানি নাহ । এইসব কিছুই তোমাকে বের করতে হবে। ”

— তা বেশ বুঝতেই পারছি। ”

— হুম এখন বলো কি করবো আমরা ! ”

— কি আর করবে ? আগে সবাইকে এই বাড়ির বাইরে আনতে হবে। ”

— কিন্তু কীভাবে ? ”

— আমার কাছে একটা প্লান আছে !”

— আচ্ছা বলো !”

— ************************) ”

— ইয়েস গ্রেট আইডিয়া সিয়া। ইউ আর জিনিয়াস ব্রো। ”

— এস. সি’র জন্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। ”

— মানে ?”

— মানে হচ্ছে আমার পরমপিতা আরাভ চৌধুরী ওপস ওরফে NS কখনো আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না ।”

— ওয়েট ওয়েট !”

— কি ?”

— তুমি এখানে NS কে কেনো টানছো ? ওকে ধরার জন্য আমার আরেকটা সিআইডি টিম হারিয়েছি। তবে এটার সাথে NS এর কি যোগসূত্র আছে ? ”

আমি একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বললাম-

— ধীরে ধীরে জানতে পারবে আপু । সবুর করো । তবে সর্বপ্রথম আমাদের প্রথম প্লান টা সাকসেসফুল করতে হবে। ”

— হুম ! ”

— এবার তাহলে যাওয়া যাক !”

— হুম ! আর এখন গিয়ে সতীনের এক্টিং করিস বইন প্লিজ ।”

পৃথা আপুর কাদোকাদো মুখ আর বলার ধরন দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়্লাম। তারপর নিজেকে সামলিয়ে আপুকে বললাম-

— চলো !”

***

এদিকে কিচ্ছুক্ষন আগেই নিজের চোখের সামনে নিজের মেয়েকে হাঁসতে দেখলো এক আগুন্তুক। তার মনে এক রহস্যময়ী হাঁসি। তবে সেটা কষ্টের নয় মহা আনন্দের। এবার তাহলে সকল পাপের বিনাশ হবে। যাক আল্লাহ তাহলে বাঁচিয়েছেন আমাকে।

এসব ভাবতেই পেছন থেকে একজন সার্ভেন্ট বলে উঠলেন-

— ম্যাডাম ! আপনার খাবারের সময় এখন নিচে চলুন ? নাকি আজ-ও খাবেন না ? ”

— উহুঃ নো মোর ওয়ার্ডস । আজকে আমি পেট ভড়ে খাবো। মহাভোজের আয়োজন করো। যাও। ”

— জি,জি ম্যাম !”

— গো ফাস্ট । ”

— ইয়েস ম্যাম ।”

এই বলেই চলে গেলো মেয়ে সার্ভেন্ট টি। নিচে গিয়ে সবাইকে এই খুশির খবর দিলো সে। সকলেই বেশ খুশি। টেবিল সাজিয়ে রাখার পর আগুন্তুককে খবর দিলে সে ধীর পায়ে নিচে নেমে আসে।

টেবিলে উপস্থিত সকলেই যেনো অবাক। তার যেনো না চাইতেই এক অলৌকিক কিছু পেয়েছে। তাই তারা সেটা মন ভড়ে দেখতে লাগলো।

তখনি আগুন্তুক টি বলে উঠে-

— মাম্মা বাপি ! গুড মর্নিং। ”

আজমল সাহেবের চোখ থেকে কয়েকফোটা অশ্রু পড়তে নিতেই আগুন্তুকটি বলে উঠে-

— বাপি এখন আমাদের আনন্দের সময়। এখন কাদঁলে যে চলবে না। সে এসে গিয়েছে। এবার সকল পাবের সাজা পাবে সে। অপেক্ষা শুধু সময়ের। ”

— কি বলছিস মা ?”

— ঠিকি বলেছি। তোমরা শুধু অপেক্ষা করো আর দেখতে থাকো। একদিন দেখবে ওই জানোয়ারটা আমার পায়ে এসে ক্ষমা চাচ্ছে। মিলিয়ে নিও। ”

মেয়ের এমন কথা শুনে আজমল সাহেব এগিয়ে এসে মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-

— পাগলী মেয়ে ! আমার মেয়ে আজ আগের মতো করে আমার সাথে বসবে, খাবে, আর পড়েছে লাল পাড়ের শাড়ি। পুরো যেনো নিরুপমা। ”

” নিরুপমা ” নামটি শুনেই ক্ষেপে উঠলেন একজন। তিনি এমন এক কথা বলে উঠলেন তাতে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো পুরো পরিবার। এতোদিনে জেনো প্রান ফিরে পেলো ❝ কুটুম্বা ভিলা ❞ টি।

এখানে হেসে ফেলার ও এক দারুন ইতিহাস আছে। সেসব বললে এখন খাবার হয়ে যাবে ঠান্ডা তাই কেউ আর হাসঁলো না।

তাদেরই মাঝে খেতে খেতে মেয়েটি বললো-

— আমি ভাবিয়া ভাবিয়া-ও তাকে পাইনি,
এহেন সৌভাগ্য যে আমার হয়নি ! ”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here