ওগো_মনোহারিণী ( #রোদ্র_মেঘের_আলাপন ) [১৩] লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন

0
647

#ওগো_মনোহারিণী ( #রোদ্র_মেঘের_আলাপন ) [১৩]
লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন

— চৌধুরী ভিলায় আগুন লেগেছে ! ঠিক বলেছো তো ? ”

— হ্যাঁ হ্যাঁ দিদিমণি আমি ঠিকই বলেছি। ”

— আচ্ছা তুমি ফায়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা করো আমি আসছি। ”

এই বলে রহস্যময় এক হাঁসি দিলো সিয়া। একটু আগে চৌধুরী ভিলা মানে তার শশুর বাড়ির দারোয়ান তাকে কল করে জানিয়েছে যে সেখানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটেছে।

দারোয়ানের কলে উদ্বিগ্ন থাকলেও এখন সে স্বাভাবিক। কারণ এটাই তো তার শত্রুকে ধরার প্রথম ধাপ। এত কিছু না ভেবে সে নিজের মোবাইল থেকে একটা নাম্বার ডায়াল করলো । মিনিটখানেক যেতেই সেই নাম্বারটি রিসিভ হলো। আর সে অপর পাশের কথা না শুনেই বলতে লাগলো,

— ওদের কোনো ক্ষতি হয়নি তো? ”

— না ম্যাডাম কোন ক্ষতি হয়নি আপনি যেভাবে বলেছেন আমরা সেই ভাবেই কাজ করেছি। ”

— ওদেরকে অজ্ঞান করানো হয়েছে তো? ”

— হ্যাঁ ম্যাম আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আমরা আপনার কথা মত কাজ করেছি। এখন শুধু আপনি আসলেই হয়। ”

— ওকে আমি আসছি! সব রেডি রাখো। ”

এই বলে সিয়া bmw গাড়ি উঠে চলে যায় , এখন শুধু তার নির্দিষ্ট একটি গন্তব্য তা হলো “AD” ম্যানশন ।

***

ঘন্টা তি’নেক জার্নি করে অবশেষে পৌঁছায় “AD” ম্যানশন । “AD” মেনশন যেমন তেমন কোনো বাড়ি নয়। আমেরিকান স্টাইলে তৈরি একটি বাড়ি। এই বাড়ির প্রবেশদ্বার যে কোন দিকে তা কেউ জানে না । যাদের এখানে আসা যাওয়া শুধু তারাই জানে।

সিয়া-ও দক্ষ হাতে দেয়ালে তার হাত স্থাপন করলো ওমনি তার দিকে একটি ফোকাস লাইট স্থাপন হলো যা দিয়ে তাকে স্কেন করছে। স্কেন শেষে তার সামনে একটি বক্স শেইপের কিছু আসে যাতে সে ঢুকে যায়।

অবশেষে তাকে আনা হয় একটি বিশাল বড় ফ্লোরে। সেখানে নিচে সিঁড়ি বেয়ে গিয়েছে। সেখানে সিয়া এক দুই করে সিড়িতে পা দিতেই চারদিকে বেজে উঠে-

❝ওয়েলকাম ! টু “AD” ম্যানশন এন্ড কাম টু দি “***” ওয়ার্ল্ড ! ❞

চারিদিকের সরঞ্জাম দেখে যে কেউ বুঝবে যে এটা একটা সাইন্স ল্যাব। সিয়া সেগুলো পরখ করে দেখে সামনে এগিয়ে যায়। ৩ টি কেবিনে শুইয়ে রাখা হয়েছে তিনজনকে। সিয়া সেগুলি তীক্ষ্ণ চোখে পড়খ করছিল। তখনি কেউ একজন এসে বলে উঠে-

— ম্যাম অপারেশন কি এখন-ই শুরু করে দিবেন ?”

— হ্যাঁ ! তবে ভাইয়া কোথায় ?”

— উনি আপনারই অপেক্ষা করছেন! আপনি ভেতরে আসুন প্লিজ। ”

— ঠিক আছে চলো। ”

এই বলে সিয়া ভেতরে ঢুকলো । ভেতরে ঢুকে দেখলো আরো তিনজন। ওদের ব্যাপার কি আর সেগুলো ব্যাপারে না সামনে থাকা ভাইকে জিজ্ঞাসা করলো-

— এরা কারা ভাইয়া ?”

— এরা পৃথা’র বাবা মা । এনাদের শরীরে-ও নাকি কন্ট্রোলার সেটআপ করা আছে। ”

— ওহ !”

— তাহলে কার অপারেশন আগে করবে ভাবছো ? ”

— আনো দেখি ! অনেকদিন তো করাও হয়না ! ”

— পারবেন ম্যাডাম ?”

— এ.সি ‘র কাছে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়। ”

এই বলেই কক্ষে ঢুকে যায় সিয়া। খানিকক্ষণ পর একজনকে নিয়ে ভেতরে নেওয়া হলো । এইভাবে একে একে সবারই অপারেশন সাকসেসফুল করবে “AD” ।

***

— শীট ! কীভাবে কি হলো ? ”

— স্যার জানি না তো !”

— কেনো জানিস না , তোদের কে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেই কেনো ? সামান্য একটা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকবি এতেও সমস্যা তোদের ? তোদের কে পেলে আমি সবার গর্দান নেবো , বেকুবের দল ! ”

— স্যার আপনার জন্যই তো। ”

— আমার জন্য মানে ?”

— আপনি কল না করলে ক্যামেরা থেকে চোখ সরাতে হতোনা আমাকে। ”

— বাকিরা ছিলো কোথায় ? ”

— জানতাম না তবে সবারই ঘুম পাচ্ছিলো তাই আমাকে রেখে ঘুমাচ্ছিলো সকলেই।

— রাবিশ ! তোদের কারোরই চাকরি রাখবো না। বিদেয় হ! ”

— সরি স্যার ! এমনিতেও আমি রিজাইন করবো। আর এই মুহূর্তে-ই। জেনে বুঝে কারো ক্ষতি করার মানসিকতা আর নেই আমাদের। ”

— আমাদের মানে ? ”

— মানে এখানকার সকলেই চাকরি ছেড়ে দেবে । ”

— জানোয়ার ! ”

— হ্যাঁ এটা নিজেকে বলুন । ”

— ইকবাল তোর এতো সাহস কি করে হচ্ছে ? ”

— সাহসের আর দেখলেন কি ? এতোদিন চোখে চশমা পড়েছিলাম তবে এনার সব টাই খোলাসা। ”

— এতো দিনের কর্মচারী হয়ে এই বলছিস ? ”

— আগে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন “NS”। ”

অনাকাঙ্ক্ষিত একটি নাম শুনে ঘাবড়ে যায় অপরজন। আর বলে উঠে –

— মা,মানে ? ”

— আপনি যে কতোবড় ক্রিমিনাল সেটা সবাই জানে। আপাতত রাখি। নিজের সুরক্ষার জন্য কিছু করুন “NS “। সে এসে গিয়েছে। বিদায় । ”

***

— মা ! মা গো ? একি হয়ে গেলো ! ”

— শান্ত হো মা । ”

— কীভাবে শান্ত হই যেভাবে আমার চোখের সামনে আমার মেয়ে সহ শশুড়বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেলো। কার এতো ক্ষতি করেছিলো ওরা ? ”

— মা ওটা একটা এক্সিডেন্ট। ”

— না মা। ওই আরাভের কাজ। মেয়েটা সহ আমার বোনের মতো ছায়াকেও আমি হারালাম । অন্যায়ের সমাপ্তি আর হলো না মা। ”

কিছুতেই নিজের মেয়েকে শান্ত করতে পারছেন না আফিয়া বেগম। কতদিন পর নিজের মেয়ে ঘরবন্দী থেকে নিজেকে বের করলো , তাও আজকে আবার পূর্বের ন্যায় পাগলামো শুরু করে দিয়েছে। কীভাবে যে কি করবেন।

তখনি কেউ একজন কথা বলতে বলতে তাদের মা-মেয়ের রুমে প্রবেশ করলেন। তাদের কথোপকথন –

— অপারেশন সাকসেসফুল ? ”

— ****!”

— আলহামদুলিল্লাহ! ”

— ****।”

— এই না হলে মা কি বেটা !”

এই বলে হাঁসতে লাগলেন আফিয়া বেগমের স্বামী। মেয়ের এহেন অবস্থায় তিনি প্রায় পাগল্প্রায় আর এদিকে স্বামী হাসঁছে। আর তা দেখে আফিয়া বেগম বিরক্তিতে “চ” সূচক শব্দ বের করলেন নিজের মুখ থেকে।

অবশেষে কথা ফুরোলো আফিয়া বেগমের স্বামীর। স্বামীর নাম খান হলেও মায়ের দেয়া বেগম টা নিজের নাম থেকে মুছতে পারেননি। তিনি উঠে এসে স্বামীর বরাবর দাড়িয়ে বললেন,

— বলি নিজের মেয়ের অবস্থা দেখেছো ? বুড়ো বয়সে একমাত্র মেয়ের এই হাল দেখবো ? ”

— কি হয়েছে ওর ? ( খানিকটা ভ্রু কুচকিয়ে )

— জানো না চৌধুরী ভিলায় আগুন ধরেছে। আর তা শুনে তোমার মেয়ে নিজের মেয়ে হারানোর শোক পালন করছে। আমার কোনো কথা শুনছেই না। ”

আমজাদ খান এগিয়ে গেলেন মেয়ের দিকে। তার মেয়ে আনমনে বিলাপ করছে। যেমন টা আগে করতো। তিনি মেয়ের সামনে বসে বললেন-

— মা কি হয়েছে ? ”

— ***!”

— কিছু না বললে বুঝবো কিভাবে মা ? আমাদেরও তো বয়স হয়েছে। তুমি কি এখন আমাদের হারাতে চাও ? ”

— না না ! ”

— তাহলে বলো হয়েছে টা কি ? ”

— বাবা ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। ”

— তুমি কিভাবে জানো যে চৌধুরী বাড়িতে তোমার মেয়ে আছে ? ”

স্বামীর যুক্তিতে তিনিও বেশ অবাক হলেন আসলেই তো। তাই তিনিও শুনতে এগিয়ে গেলেন আর বললেন,

— মা বল না সবটা। আগের রহস্য না বল কিন্তু কিভাবে কি করে জেনেছিস সেটা বল ? তুই এমন করবি তাই তোকে জানাইনি। কিন্তু সে-ই তুই ই আগে জেনেছিস ! ”

— মা আমি যেদিন আরাভের থেকে পালিয়েছিলাম সেদিন আসাদ ভাই মানে আমার এসিস্ট্যান্ট কে বলেছিলাম চৌধুরী ভিলায় ছাঁদের দিকে একটা হিডেন ক্যামেরা লাগাতে। চৌধুরী ভিলার গোপন দরজা আমি জানতাম আর সেভাবেই ওকে দিয়ে সেখানেই ক্যামেরা লাগিয়েছি। তোমরা না থাকলে আমি মাঝে মাঝে দেখতাম কিন্তু কাউকে পেতাম না। হঠাৎ যেদিন আমি শাড়ি পড়ে নিচে গেলাম, স্বাভাবিক হতে শুরু করলাম সবটাই ছিলো ক্যামেরার অবদান। কারন সেদিন একটা মেয়েকে দেখতে পাই পৃথা’র সাথে। মেয়েটাকে কেমন যেনো লাগলো। পৃথার সাথে যোগাযোগ করলে সবটা-ই জেনে নিতো আরাভ। কারন ও নাকি ওই মেয়েটার মধ্যেও হিডেন ক্যামেরা দিয়েছে শুধু ভয়েস কন্ট্রোলার লাগায় নি। আর ওর ফোনটাও তখন হ্যাক করে নিয়েছিলো। আর তারপর আচমকা বাতাসে ওর ওড়না সরে যায় ফলে ওর জন্মদাগ দেখতে পাই। আর সেদিনই শিউর ছিলাম ওটাই আমার মেয়ে সিয়া। আর আজকেও ওই বাড়িতে নিজের চোখে আগুন লাগতে দেখেছি। এতো দূরে থাকায় কাউকে বাঁচাতে পারিনি আমি। ”

বলেই অঝোরে কাদতে লাগলো অয়না চৌধূরী। এনিই সিয়ার আসল মা। তখন-ই আয়নার বাবা বলে উঠেন-

— যদি বলি তোর মেয়ে বেঁচে আছে । ”

— কি,বলছো বাবা! ”

অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় নিজের বাবার দিকে তাকায় অয়না। আর তখনই দরজায় কেউ বলে উঠে-

— বেঁচে গিয়েছে তো কি হয়েছে। কাল-ই তোমাদের সামনে মারবো ওকে। যেমন করে আরাভ কে মেরেছিলাম আমি ! ”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here