#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৪
“স্যার আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে? কেবলই কফির মগে চুমুক দিয়েছিলো জারিফ এমন সময় লিয়ার প্রশ্ন শুনে জারিফের বেষম লাগে।জারিফ খুশখুশ করে কাঁশতে থাকে।
জারিফের কাঁশি দেখে লিয়া একটু নড়েচড়ে বসে চিন্তিত হয়ে বলে,,”স্যার আপনি ঠিক আছেন?”
জারিফ নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,”আ’ম ফাইন।”
লিয়া এক হাত মুখের সাথে ধরে ঠোঁট কামড়ে মৃদু কন্ঠে বলতে থাকে,,”স্যার আপনার ঠিক কিরকম মেয়ে পছন্দ?”
জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,ভেবে দেখেনি।তারপর গমগমে স্বরে বলে,,” মিস লিয়া এটা কি ধরনের প্রশ্ন?আপনি ভুলে যাবেন না,আমি আপনার টিচার হই।”
লিয়া কফির মগে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,,”আরে স্যার আপনি এতো হাইপার হচ্ছেন কেনো?আর স্যার জানেন আমার এক বান্ধবী কিছুদিন আগে ওর প্রাইভেট টিউটরের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে।আর এখন তো একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে স্যার ছাত্রীর রিলেশন।”
লিয়ার কথা শুনে জারিফ চোখ মুখ শক্ত করে ধমক দিয়ে বলে,,”সাট আপ।আমি আপনাকে আগেও বলেছি ফারদার বলছি,পড়াশোনার টপিক ছাড়া আপনি অন্য কোনো টপিক নিয়ে আলোচনা করলে,আমার পক্ষে আপনাকে পড়ানো পসিবেল হবে না।”
জারিফের শেষের কথা শুনে লিয়ার মুখটা মলিন হয়ে যায়।লিয়ার মনের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা ছেয়ে যায়।যেকোনো সময় অঝর ধারায় বর্ষণ হতে পারে।
জারিফ লিয়ার ফেসের দিকে তাকিয়ে দেখে,, হাস্যোজ্জ্বল মুখটা মলিন হয়ে আছে।জারিফের নিজের কাছে গিল্টি ফিল হয়।এইভাবে এতবড় মেয়েটাকে ধমক দেওয়া তার কোনোমতেই উচিত হয়নি।পড়াতে গিয়ে জারিফ নিজেই বুঝতে পেরেছে মেয়েটা অনেক ব্রেনি আর যথেষ্ট পলাইট। শুধু মাঝে মাঝে একটু পা’গ’লামি করে বসে।যা কিনা মেয়েটা ইচ্ছাকৃতভাবেই করে কিনা জারিফ বুঝে উঠতে পারছে না।জারিফ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মৃদু আওয়াজে বলে,,
“আ’ম সরি যদি আমার কথায় আপনি হার্ট হয়ে থাকেন।আর একজন ওয়েল উইশার হিসেবে বলছি,, আপনার পালিয়ে যাওয়া বান্ধবীকে আইডল না করে পড়ালেখায় কন্সানট্রেট করুন।তাহলে জীবনে অনেক কিছু করতে পারবেন আর ছোট্ট জীবনটাকে সুন্দর করে উপভোগ করতে পারবেন।”
লিয়া মাথা তুলে জারিফের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,,”স্যার একটা কথা বলবো রাখবেন, প্লিজ।”
জারিফ দীর্ঘ শ্বাস টেনে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,” ওহ্ গড।এতক্ষন এই মেয়েকে কি বললাম।মনে হয় না ওর কানে ঢুকেছে কথা গুলো।এখন আবার কি আবদার করে বসে?”
স্যার আমি রিকুয়েস্ট করে বলছি,,”অন মাই রিকুয়েস্ট , প্লিজ আমাকে আপনি করে না বলে তুমি করে বলবেন।”
“ওকে।বলে জারিফ চলে যায়।”
লিয়া কে পড়িয়ে জারিফ সোজা গাঙ্গিনাপাড়ে যায় কিছু কেনার ছিলো সেইজন্য। হঠাৎ সেখানে রোহানের আবির্ভাব ঘটে।কিছুটা দূর থেকে এক হাত উঁচু করে রোহান ডাকতে থাকে,,
“জারিফ এই জারিফ”
“ভয়েজ কে ফলো করে জারিফ ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখতে পায় রোহান কে।
রোহান কাছে এসে বলে,,”এখন এখানে তুই?”
“আসলে একটু ফার্মেসির দোকানে যেতে হবে। আম্মুর জন্য ডায়াবেটিস এর ঔষধ টা নিতে হবে।এদিক দিয়েই বাসায় ফিরছিলাম তাই ভাবলাম এখনই ঔষধটা নিয়ে নেই।”
“যাক ভালই হয়েছে তোর সাথে দেখা হয়ে আমি আরো একা একা ঘুরছিলাম।চল ঐদিকটায় গিয়ে বসি।”
রাস্তার পাশের একটা টং দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একহাত জিন্স প্যান্টের পকেটে গুজে আরেক হাতে চায়ের কাপে মাঝে মাঝে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে জারিফ।রোহান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলতে থাকে,,
“তুই এখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে পড়িয়ে আসলি।কবে থেকে পড়াস?”
“জারিফ সবটা বলে।এক সপ্তাহ হতে চলছে লিয়াকে পড়াই।”
রোহান মুচকি হেসে বলে,,”সাবধানে থাকিস দোস্ত। ছাত্রী থেকে আবার পাত্রী বানিয়ে ফেলিস না।”
জারিফ গমগমে স্বরে বলে,,”এই আমাকে এতোদিন চিনেছিস।আমাকে দেখে তোর এরকম মনে হয়। ওসব কিছুতে আমার কোনো ইন্টারেস্টড নাই।আগে আমি নিজের পায়ে দাঁড়াবো দেন বিয়ে সাদি তার আগে কিছু নয়।”
“এখন কি তুই অন্যর কাছ থেকে পা ধার নিয়ে আছিস।যে বলছিস নিজের পায়ে দাঁড়াবি।”
“ফাজলামি বাদ দে।আমি কি বোঝাতে চাইছি তা তুই ভালো করেই বুঝতে পারছিস।ভালো জব করবো।আর আমার ছোটো বোন দুইটাকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেবো।তারপর নিজের জন্য স্পাউস খুজবো।এর আগে নয়।”
রোহান চঞ্চল কন্ঠে বলে,, আচ্ছা বুঝলাম সব।এবার বল ছাত্রী কিরকম?সহজেই সব কিছু বোঝে না,এক কথা পাঁচবার বলা লাগে।”
জারিফ ভ্রু কুঁচকে বলে,,”ক্যাডেটের স্টুডেন্ট নিঃসন্দেহে ব্রিলিয়ান্ট। ছাত্রী খুবই ভালো।মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু প্রশ্ন করে বসে এই একটা প্রবলেম।”
রোহান ভ্রু নাচিয়ে বলে,,”কি রকম?”
“আচ্ছা বাদ দে এসব।অন্য কোনোদিন বলবো।”
রোহান জোর করে বলে,,না তুই এখনই বল। আ’ম সো এক্সাইটেড টু হেয়ার।”
“তেমন কিছু না ইম-ম্যাচিউর কিছু কথা বলে এই আরকি।আর ছাত্রীর মা মানে আন্টি খুবই অমায়িক ব্যবহার করে। ভদ্রমহিলা খুবই মিশুক দেখে মনে হয়।তবে একটা জিনিস আমার নিজের কাছে একটু বিরক্ত লাগে।”
“রোহান ইশারায় বলে,, কি?”
“প্রতিদিন যখন পড়া শেষে নাস্তা দেয়।তখন দুইজনের টা একসাথে দেয়।আমার সাথে লিয়ার টাও দেয়।ব্যাপার টা একটু অদ্ভুত না।”
রোহান দাঁত কেলিয়ে বলে,,”আরে মামা তুমি বুঝতে পারছো না।বিয়ের আগেই জামাই আদর পাচ্ছিস শা’লা। মেয়ের মা মনে হয় তোকে লাইক করে। আর মে বি জামাই বানানোর প্লানও করেছে।”
জারিফ হাতে থাকা ঘড়ির দিকে সময় দেখে বলে,,”তোর আজগুবি কথা রাখ।সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে।”
ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে বই সামনে ধরে জোরে জোরে শব্দ করে পড়ছিলো জারা।এমন সময় সেখানে উপস্থিত হয় জেরিন। কর্কশ গলায় জারা কে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,,
“এই জারা তুই আমার ক্যালকুলেটর নিয়েছিস কেনো হ্যা?আমি পড়তে বসে ক্যালকুলেটর খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছি।আর উনি আমার ক্যালকুলেটর নিয়ে বসে আছে।”
জারা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”ক্যালকুলেটর নিয়ে বসে আছি কোথায় দেখছিস না মাঝে মাঝে অংক করতে লাগছে।”
জেরিন ঝাঁঝালো গলায় বলে,,”এই তুই কমার্সের স্টুডেন্ট হয়ে সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর দিয়ে কি করছিস শুনি? আব্বুর রুম থেকে আব্বুর হিসেবের জন্য যে বড় বড় বাটনওয়ালা ক্যালকুলেটর আছে সেটা নিতে পারলি না।বড় বড় লেখা তোর চোখে ভালো পড়তো।”
জারিফ মাত্রই বাসায় ঢুকছে।এসে দাঁড়িয়ে
দুই বোনের ঝগড়া দেখছে।সেই সময় জারিফের মা জাহানারা বেগম এসে জেরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“ছোট বোন একটু নিয়েছে তাতে কি এমন হয়েছে?তোর যদি এখন দরকার হয় তাহলে জারা কে ভালো করে বললেই তো ক্যালকুলেটর দিয়ে দেয়। শুধু শুধু এতগুলো কথা বলার কি দরকার আমার মাথায় ধরছে না।”
জেরিন গম্ভীরভাবে বলে,, “আম্মু তোমার ছোট মেয়ের কোনো ভুল তো তোমাদের কারো চোখেই পড়ে না।সব সময় সব দোষ তো আমারই।”
জারা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ক্যালকুলেটর টা জেরিনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,”এই নে ধর তোর ক্যালকুলেটর।আর এখন চুপ কর।”
জারিফ গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,”হয়েছে তোদের ঝগড়া। সন্ধ্যা শুরু হলেই তো তোদের দুইজনের শুরু হয়ে যায় এই নিত্য দিনের রুটিন। ক্যালকুলেটর, স্কেল,পেন ইভেন কোন চেয়ারে পড়তে বসবি তা নিয়েও ছোটো খাটো একটা ওয়ার বাঁধিয়ে নিস দুজন।আর যখন পড়া নিয়ে কোনো টপিক ধরি তখন মুখে দুজনেরই কোনো কথা থাকে না।দুইজন কেই বলছি এই ঝগড়া ঝাটি বাদ দিয়ে মন দিয়ে পড়।আর কোনো কিছু না বুঝলেও তোরা আমার কাছে আসবি না বুঝতে।”
জারিফ ওর মায়ের হাতে ঔষধের প্যাকেট টা দিয়ে রুমে যেতে যেতে বলে,,”জারা আমার ক্যালকুলেটর টা নিয়ে যা।”
জেরিন ভেংচি কেটে রুমে চলে যায়।জারা বিড়বিড় করে বলে,,” শাকচুন্নী মনে হয় শুধু ওর নিজেরই সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর আছে।আর কমার্সের স্টুডেন্ট হয়ে সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ধরা মনে হয় মানা।সামনের মাসেই আব্বু কিংবা ভাইয়াকে বলে আমি নিজের জন্য একটা নিউ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর কিনে নিবো,হুহ।”
সুলতানা রাজিয়া হলের জানালার পাশ ঘেঁষে এক হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাসনিম।মাঝে মাঝেই আলতো করে কফির মগে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে আর দৃষ্টি দূর আকাশ পানে। তাসনিম এর মন মস্তিষ্কে শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রোজ এর কথা মতো কি নিজের উচিত তার মনের কথাটা প্রিয় মানুষ কে বলা।দেরি করে বলার জন্য যদি সত্যি সত্যি প্রিয় মানুষটা অন্যর হয়ে যায় তখন কিভাবে এটা মেনে নিবে??এই ভেবে তাসনিম ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে ভাবে,,জারিফ কে আমার ভালোলাগে বড্ড বেশিই ভালোলাগে আমার উচিত জারিফ কে নিজ থেকে বলা।আমি অনেকবার আমার দূর্বলতা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু প্রতিবারই ফেইলুর হয়েছে।আমি আমার ভালোবাসাটা জারিফ কে বোঝাতে ফেইলুর হয়েছে নাকি জারিফ আমার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে ফেইলুর হয়েছে??”
এমন সময় রোজ এসে তাসনিমের কাঁধে একটা হাত রেখে মৃদু আওয়াজে বলে,,”কি এতো ভাবছিস বলতো?”
তাসনিম খোলা আকাশের দিকে তাকিয়েই ঠোঁট আওড়িয়ে বলে,,”যে তোমায় বুঝতে চায় না!তার কাছে বারবার নিজেকে প্রকাশ করতে যেওনা!কারন, সে তোমাকে কখনো বুঝতে পারবে না।বিনিময়ে তুমি শুধু কষ্ট পাবে!এই কথাটা কতটুকু সত্য বলে তুই মনে করিস রোজ?আমাকে বলতো?”
রোজ কপাল কুঁচকে বলে,, “হঠাৎ করে কবি হয়ে গেলি যে দেখছি।বাই দ্যা ওয়ে প্রেমে টেমে পড়েছিস নাকি?”
“কোনো কবি টবি নয় এমনি মন মস্তিষ্ক এই কথাগুলো আপনা আপনি বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।”
রোজ ঠোঁট কামড়ে ধরে ভেবে বলে,,” কথা গুলো যুক্তিযত নো ডাউট।তবে সব সময় যে এটাই হবে এমনটা তো নাও হতে পারে।আর দোস্ত একটা প্রবাদ আছে না,ফেইলুর ইস দ্যা পিলার অফ সাকসেস।তুই নিজের মুখে জারিফকে ভালোবাসিস কথাটা আজ বলতে পারছিস না তবে একটু সময় নে ঠিকই বলতে পারবি।”
তাসনিম ঘাড় ঘুরিয়ে কপাল কুঁচকে রোজের দিকে তাকিয়ে বোঝাতে চায় তুই কিভাবে জানলি আমি জারিফ কে ভালোবাসি।আমি তো এই কথাটা কখনো কাউকেই বলিনি?
রোজ মিটমট করে হেসে বলে,, “আমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের মন বুঝবো না।আর আজ চার বছর থেকে দুজনে একসাথে আছি তোকে চিনতে আমার এতটুকু বাকি নেই।তুই যে মুগ্ধ নয়নে জারিফের দিকে তাকিয়ে থাকিস এটা আমার দৃষ্টিতে অনেক আগেই ধরা পড়েছে।আর শোন তুই যদি জারিফ কে বলতে না পারিস। আমাকে বল আমিই তোর হয়ে জারিফ কে বলে দেব।আর ঐ ব্যাটা আহাম্মক জারিফ আমার তো ওকে অনুভূতি শুন্য মনে হয়।একটা মেয়ে যে কিনা ওর উপর অলওয়েজ দূর্বলতা প্রকাশ করে অথচ সে কিনা কিছুই বুঝতে পারে না।”
তাসনিম ভরাট গলায় বলে,,”না রোজ তুই জারিফ কে এখনই এসব কিছু বলিস না।আর আমার পরিবার থেকেও বাঁধা আছে একটা।মন চাইলেই যে সব সময় সেটাই করতে হবে এমন নয়।চলতে ফিরতে একজন কে ভালো লাগতেই পারে।তারজন্য যে সব কিছু কে উপেক্ষা করে তাকে পেতেই হবে এমন নয়।”
রোজ গমগমে কন্ঠে বলে,,”তুই যা ভালো বুঝিস তাই কর।আমি নেই এসবের মধ্যে।তবে একটা কথা বলে রাখছি শোন,,পরে কিন্তু আফসোস করতে পারবি না নিজের দোষেই নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে।”
আজকে শুক্রবার। শুক্রবারের দিনজুড়ে কেমন একটা পবিত্র পবিত্র ভাব বিরাজ করে সব কিছুতেই। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তিন কিশোরী।আকাশ পরিষ্কার।নীল আকাশ জুড়ে শুভ্র রঙের মেঘেরা ভেসে বেড়াচ্ছে।ঘড়ির কাঁটা বিকেল পাঁচটার ঘর ছুঁই ছুঁই।মিনিট পাঁচেক আগেই ফিহা আর অরিন এসেছে লিয়াদের বাসায়।
বেলকনির রেলিং এ একহাত রেখে ফিহা বলে,,”এই চল আমরা লুডু খেলি।”
অরিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”এই চশমিশ এর মাথা থেকে এই বুদ্ধি ছাড়া কোনো ভালো কিছু বের হবে না ইহজিন্দেগিতে।”
ফিহা বিরক্ত হয়ে দৃষ্টি সরু করে বলে,, “খা’রাপ কি বললাম শুনি।এখন ফ্রি আছি তাই ভাবলাম তিনজনে মিলে খেলি।”
“ঐ তোর লুডু খেলার জন্য এখন এখানে ডেকে এনেছি বুঝি।লুডু খেলার হলে তো আমরা যে যার বাসায় বসেই অনলাইনে খেলতে পারতাম।যে টাকা দিয়ে রিকশা ভাড়া দিয়ে আসছি সেই টাকা দিয়ে এমবি কিনে নিয়ে লুডু খেলে দেন আরো রিলস দেখতে পারতাম।”
চশমার ভিতর দিয়ে ফিহার চোখ দেখে বোঝা যায় অরিনের কথা শুনে ফিহা চরম বি’রক্ত।সেই সময় গলা ঝেড়ে লিয়া বলতে থাকে,,”এই তোরা থামবি।”
অরিন চঞ্চল কন্ঠে বলে,,”এই লিয়া তোর মাস্টার মশাইয়ের খবর কি?কতোদূর এগিয়েছিস?”
লিয়া ফুস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,”আর মাস্টার মশাই!বেটা পুরাই নিরামিষ প্লাস অনুভূতি শুন্য একটা এলিয়েন।”
ফিহা অরিন দুজনেই উৎসুক ভাবে বলে,, “কেনো? বান্ধবী কি হয়েছে?”
লিয়া দীর্ঘ শ্বাস টেনে বলে,,”এই কয়দিনে আকার ইঙ্গিতে কতবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি।আপনার এই অধম ছাত্রী আপনার উপর ক্রাশড শুধু ক্রাশড বললে ভুল হবে মারাত্মক লেভেলের ক্রাশড।এই কিশোরীর চোখের ঘুম হারাম করেছেন আপনি। এই কিশোরী চোখের পলকে পলকে আপনার উপস্থিতি অনুভব করে।আপনি কি কিছুই বোঝেন না স্যার?এই কিশোরীর চোখের ভাষা কবে বুঝবেন আদৌ কি বুঝবেন?”
“রাখ তোর এই ইমোশনাল কথা।বুঝতে পারছি মাস্টার মশাইকে অন্যভাবে পথে আনতে হবে।সোজা পথে কাজ হবে না।”
অরিনের কথা শুনে লিয়া নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে ড্যাবড্যাব করে অরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,,”কি করতে চাইছিস তুই?”
“আরে কুল ডাউন ইয়ার তেমন কিছুই না। আমাদের পাড়ার মোড়ে এক বখাটে মস্তান আছে।কি যেনো নাম,ও মনে পড়েছে রনি।রনি কে দিয়ে সোজা তুলে এনে কাজি অফিসে নিয়ে যাবো।তারপর মাথায় পি”স্তল ঠেকিয়ে বলবো ,কবুল বলবি না গুলি খাবি।তারপর মাস্টার মশাই ভয়ে সুড়সুড় করে সুন্দর করে কবুল বলে দিবে।লে কেস সলভ।শেষের কথাটা বলে অরিন বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসতে থাকে।
ফিহা নখ কামড়ে অরিনের কথা শুনছিলো।লিয়া মৃদু শ্বাস টেনে নিয়ে বলে,, “আ’জা’ইরা কথা বাদ দিয়ে ভালো কিছু বলার হলে বল।”
“এর থেকে ভালো কোনো আইডিয়া আমার মাথায় আসছে না। এভরিথিং ইজ ফেয়ার লাভ এন্ড ওয়ার।তাই সমস্যা নাই মাস্টার মশাই কে তুলে আনলে দোষের কিছু হবে না।”
লিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”গুন্ডাগিরি বুদ্ধি বাদ দে।”
“আচ্ছা এই আইডিয়া বাদ দিলাম।তুই যে সপ্তাহে পাঁচদিন এক ঘন্টা করে সময় পাস। সেই সময় গুলো এমনি এমনি ন”ষ্ট করে দিস।বইয়ের ভাঁজে, খাতার ভাঁজে চিরকুট রেখে দিবি। মাস্টার মশাই যখন বই খুলবে তখন টপ করে চিরকুট টা চোখে পড়বে। চিরকুট এ বড় বড় করে ভালোবাসার কথাটা লিখে রাখবি।আর এক কাজও তো করতে পারিস।মাঝে মাঝে আ’খ মা”রতে পারিস।”
অরিনের শেষের কথা শুনে লিয়া বড়বড় চোখ করে তাকায় অরিনের দিকে।”আ’খ মা’রা আমার পক্ষে পসিবেল নয়।আর মিস্টার জারিফ তো আমার দিকে ঠিকমতো তাকায়ই না।সব সময় দৃষ্টি নিচু করে থাকে।বই খাতার বাইরে তার দৃষ্টি যায় না।”
অরিন গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,, “বাদ দে তোর ভিন গ্রহের প্রাণী মাস্টার মশাইয়ের কথা।এবার একটু মিস্টার খরগোশ এর কথা বল।শেষের কথাটা লাজুক হেসে বলে।”
“মিস্টার খরগোশ!হু ইস হি?”
“আরে তোর ডক্টর নাকি ফক্টর কাজিন। খরগোশের মতো গাঁয়ের রঙ।”
“ওহ্!তুই আলিফ ভাইয়ার কথা বলছিস আমি কি করে ওনার খবর জানবো।ওনার সাথে কি আমি কথা বলি নাকি?”
অরিন ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”জানি তো তোকে দিয়ে কোনো কাজই হবে না।নিজের প্রেমিক পুরুষ কে এতো কাছে পেয়েও যে ভালোবাসার কথা বলতে পারছে না।সে কি করে আমাকে মিস্টার খরগোশের আই মিন মিস্টার আলিফের সাথে সেটিং করিয়ে দিবে।আমি যাই তোর দাদির সাথে একটু ভাব জমিয়ে আসি।”
জান্নাত বেগম বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন।সেই সময় অরিন গিয়ে বলে,, “আসসালামুয়ালাইকুম দাদি মা কেমন আছেন?”
জান্নাত বেগম সালামের উত্তর দিয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ভাবে,,”আজ হঠাৎ দাদি থেকে সোজা দাদিমা ব্যাপার টা সুবিধার ঠেকছে না।”
অরিন বিছানার এক পাশে বসে পানের ডিব্বার দিকে তাকিয়ে মৃদু আওয়াজে বলে,,”দাদিমা আপনার জন্য পান বানিয়ে দেবো?”
ফিহা আর লিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অরিনের হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছে…
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]