ফিরে_আসা২ ২৮ লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

0
451

#ফিরে_আসা২
২৮
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

অরার বয়স তখন চৌদ্দ কী পনেরো। তার অতটুকু শরীরের ওপরে সংসারের সকল কাজের বোঝা। কাকভোরে পুকুর ঘাটে এক গাদা কাপড়-চোপড় নিয়ে যেত কাঁচবে বলে। বাড়ি ফিরে বাসন ধুঁয়ে তরকারি কুটতে বসে যেত। তার নতুন মা আয়েশা বেগম তখন কেবল ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে এসে নানান অজুহাতে গালমন্দ করতেন তাকে। এ যেন রোজকার রুটিন। একটা সময়ে তার কটু কথাগুলো গায়ে মাখা ছেড়ে দেয় অরা।

তরকারি কুটে ঘর ঝাট দিয়ে মুছে অরা চলে যেত স্কুলে। তার স্কুলে যাওয়া নিয়েও আয়েশার আপত্তির শেষ ছিল না। অরা যেহেতু ঘরের সব কাজ করে রেখেই যেত, তাই বেশি কিছু বলতেও পারতেন না তিনি। পড়াশোনা, ঘরের কাজ, ছোট ছোট ভাইদের দেখাশোনা আর নতুন মায়ের অমানবিক অত্যাচার। একেকটা দিন যেন অরার কাছে একেক বছরের সমান ছিল। শুরু হলে শেষ হতেই চাইতো না দিনগুলো।

দিনভর খেটেখুটে সেদিন একটু বিশ্রাম নিতে এসেছে। চোখদুটো বন্ধ করতেই তার কানে আসে নতুন মায়ের চেঁচামেচি। আয়েশা কোনো না কোনো কারণে সারাদিনই চেঁচামেচি করতেন। বিষয়টাকে তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে আবারও চোখ বুজে ফেলে অরা।

তখনই তার ঘরে প্রবেশ ঘটে আয়েশার। তার পিছু নেন অরার বাবা হাফিজ মিয়া। কথা নেই বার্তা নেই আয়েশা প্রকান্ড এক বেত দিয়ে আঘাত করে অরার গায়ে। চমকে উঠে বসে অরা। হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার বাবা আর নতুন মায়ের দিকে। তাকে আঘাত করার জন্যে কখনোই কোনো কারণের প্রয়োজন ছিল না আয়েশার। তবে আজ মনে হলো যেন কোনো কারণ আছে।

আয়েশা অগ্নিকন্ঠে বলে উঠলো, “এই হারামজাদিই নিসে আমার চেন! ওরে বলেন চেনটা বাইর কইরা দিতে।”

হাফিজ মিয়া বিরক্ত গলায় বললেন, “ওয় নিতে যাইবো ক্যান?”

আয়েশা খেঁকিয়ে উঠে বলল, “ওয় না নিলে কেডা নিবো? এই বাড়িতে আর কেডা আছে কেন নেওনের?”

অরা অবাক ভঙ্গিতে শুনছে তাদের কথোপকথন। ছোটবেলা থেকেই মেয়েটা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তার বুঝতে বাকি রইল না আয়েশার সোনার চেইন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দামি গয়নাগাটি বলতে তার ওই একটা সোনার চেইন আর এক জোড়া সোনার কানের দুল ছিল। সেই চেইন হারিয়ে গেলে তা চুরির অপবাদ কেন অরার ঘাড়ে পড়বে? সে চেইন দিয়ে করবে কী?

হাফিজ মিয়া হাই তুলতে তুলতে বললেন, “যা ইচ্ছা করো! চিল্লাফাল্লা করবা না। রাত্তির হইছে। তোমার তো সারাদিন কোনো কাম কাইজ নাই, মাইনসের আছে। চিল্লাফাল্লা কইরা মাইনসের ঘুম হারাম করবা না।”

হাই তুলতে তুলতে মেয়েকে বিপদের মুখে রেখে চলে গেলেন হাফিজ মিয়া। শুরু হলো অরার ওপরে অমানবিক অত্যাচার। আয়েশা তার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে আসে বাড়ির উঠানে। সেখানে তাকে ছুঁড়ে ফেলে ফুটবলের মতো লাথি মারে। সঙ্গে বেতের আঘাত তো আছেই। অরা আর্তনাদ করে বহুবার বলেছে, “আমি চেইন নিই নাই!”
কোনোবারই সে কথা প্রবেশ করেনি আয়েশার কর্ণকুহরে। তার মনে বদ্ধ ধারণা, চেইন অরাই নিয়েছে।

আয়েশা তাকে অনবরত আঘাত করতে করতে বলল, “আমার চেন ফিরত দে আখি!”

এতটুকু জীবনে এতটা যন্ত্রণা সে কোনোদিন পায়নি। যে অন্যায় সে করেনি, তার শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছিল তাকে। তাও এতটা ভয়াবহ শাস্তি। নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না তার সামনে। ভাগ্য বারবার তার সঙ্গে অন্যায় করেছে। তার জীবনটাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। সেই ভাগ্য যখন তাকে দুদণ্ড বিশ্রাম নিতে দেখলো, কোনো কারণ ছাড়াই এই ভয়াবহ শাস্তি দিলো তাকে।

অরা যদি সত্যিই চেইনটা নিয়ে থাকতো, কিংবা জীবনে কোনোদিন সেই চেইনটা চুরি করার কথা মনেও আনতো – তাহলেও এই শাস্তি মাথা পেতে নিতো। কিন্তু না, সে তো স্বপ্নেও কোনোদিন এমনটা ভাবেনি। তবুও তাকে চোর ভাবা হলো। এর থেকে যন্ত্রণার আর কীই বা হতে পারে?

হায় রে আখি! জীবনে বিন্দুমাত্র আনন্দ পায়নি সে। আনন্দ যে কী জিনিস, তাই জানা ছিল না তার। নরকে বেড়ে ওঠা মেয়ে সে। অরা তো ভাবতো আখির জীবনের সঙ্গে তার জীবনের কোনো মিল নেই। আছে বটে। যে অপরাধ আখি করেনি, তা করার অপবাদে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। অরার ক্ষেত্রেও তাই। মিথ্যা অপবাদে শারীরিক অত্যাচার করা হয় আখিকে, আর অরাকে মানসিক।

দুপুরে আরশাদের সঙ্গে কথোপকথনের পর থেকে নিজেকে নিচতলার এই ঘরটাতে বন্দী করে রেখেছে অরা। এই ঘরটা বাড়ির গেস্টরুম। মূর্তির মতো শক্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে অরা। একফোঁটাও হেলদোল নেই তার মাঝে। বেলা গড়িয়ে রাত নেমে এসেছে, কতটা রাত হয়েছে তাও সে জানে না।

বড্ড অসহায় লাগছে আজ নিজেকে। বারবার মনে পড়ছে ওই দিনটার কথা। সেদিন নতুন মায়ের মার খেতে খেতে সে যেমন নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করছিল, আজও তাই করছে। তার আগেই বোঝা উচিত ছিল, এতটা সুখ তো তার ভাগ্য সহ্য করতে পারবে না। আবারও তাকে টেনে হিঁচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে নরকে। জীবনটা রূপকথার গল্পের মতো হয়ে গিয়েছিল। আজ, এক নিমিষেই, অরার চোখের সামনে তা এক ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো।

আরশাদ, যে মানুষটা তার জীবনকে যাদুর মতো বদলে দিয়েছিল সেই মানুষটা আজ আরেকদফা বদলে দিলো জীবনকে। তবে এবার দুঃস্বপ্নের মতো। যে আরশাদ অরার চোখে জল সহ্য করতে পারে না, অরা অসাবধানতাবশত আঘাত পেলে সহ্য করতে পারে না – সেই একই মানুষ আজ অরাকে আঘাত করলো। অরার ভেতরে সৃষ্টি করলো এক তীব্র রক্তক্ষরণের, অরার হৃদয়টাকে কয়েক কোটি টুকরোয় ভেঙে ফেলল, নির্দ্বিধায়।

“ওই রাতে তোমার ঘরে কারোর আসার প্ল্যান ছিল। আমার স্পাই ক্যামেরা খুঁজে পাওয়ায় তুমি সতর্ক হয়ে যাও আর তোমার প্ল্যানটাও ভেস্তে যায়। সেজন্যেই এত রিয়্যাক্ট করছো, তাই না?”

কথাগুলো ভাঙা টেপরেকর্ডারের মতো অনবরত বেজেই যাচ্ছে অরার মাথায়। দুহাত দিয়ে নিজের চুলগুলো খামচে ধরলো অরা। তবুও মস্তিষ্কে এই কথাগুলোর বিচরণ বন্ধ করতে পারলো না।

উঠে বসলো অরা। এখনো তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। অসহায়ের মতো আশেপাশে তাকালো অরা। এই ঘর, এই বাড়ি, আরশাদ – কোনোকিছুই কী তার হওয়ার কথা ছিল? না তো! তার বিয়েটা তো অঘটন ছাড়া আর কিছুই নয়। অঘটনেই অরাকে ভালোবাসতে শুরু করে আরশাদ। নিজের জীবনের সঙ্গে আজীবনের জন্যে জড়িয়ে ফেলে তাকে।

তবে কি সেই ভালোবাসা আজ ফুরিয়ে গেছে? আরশাদ কি এখন তবে ঘৃণা করে অরাকে? নির্ঘাত করে। মনে মনে তাকে নিয়ে ওরকম বাজে একটা চিন্তা পুষে রেখেছে যে। কিন্তু অরা তো কোনো দোষ করেনি। আরশাদ ছাড়া অন্য কারোর সঙ্গে…?

আর ভাবতে পারলো না অরা। দুহাতে মুখ লুকিয়ে অসহায়ের মতো কাঁদছে সে। কেন এলো আরশাদ তার জীবনে? কেন ভালোবাসতে গেল তাকে? সেই ভালোবাসার অবসান কেন এতটা তিক্ততার মধ্যে দিয়ে করলো সে? এতটা নিষ্ঠুর কী করে হতে পারলো আরশাদ?

এত বড় একটা অপবাদ দেওয়ার আগে একবারের জন্যে নিজেকে প্রশ্ন করলো না আরশাদ? সে তো অরাকে খুব ভালো করেই চেনে, তার তো ভাবার কথা নয় যে অরা এমন একটা কাজ করবে। কী করে এই পুরো ব্যাপারটা তার মাথায় এলো?

অরার ফোন বেজে উঠলো। এতসবের মাঝে ফোনটা আর হ্যান্ডব্যাগ থেকে বের করা হয়নি। শরীরে একবিন্দুও শক্তি পাচ্ছে না অরা। তবুও কোনমতে উঠে গিয়ে হ্যান্ডব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলো। স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে আশফিয়ার নাম। অরা সঙ্গে সঙ্গে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকা অশ্রুগুলো মুছে ফেলল।

ফোন রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে শোনা গেল আশফিয়ার চিরচেনা উৎফুল্ল কণ্ঠস্বর, “হ্যালো অরা? আমি কথাকে নিয়ে আসছি। বাসায় আছো তো?”

অরা প্রাণপণ গলায় স্বর স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল, “হ্যাঁ আপা, আসুন।”

স্বাভাবিকভাবে কথা বললেও অরা স্বাভাবিক নেই। নিঃশ্বাস নিতে এতটাই কষ্ট হচ্ছে, কেন মনে হচ্ছে কেউ তার গলা চেপে ধরে রেখেছে।

ফোন রেখে নিজেকে সামলাতে চলে গেল অরা। কেঁদেকেটে বিধ্বস্ত অবস্থা করেছে নিজের। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই চমকে উঠলো। তার অশ্রুর সঙ্গে কাজল মিশে গালের ওপর কালো দাগ বসে গেছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। নিজেকে ফের পরিপাটি করতে গোসল ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

অরা গোসল করে বেরিয়ে আজ সারাদিন পর ঘরের বাইরে পা রাখলো। তার বুকটা কেমন ধুকপুক করছে। মনে হচ্ছে ঘরের বাইরে পা রাখলে আবারও তাকে মুখোমুখি হতে হবে আরশাদের। আবারও মানসিক আঘাতে বিধ্বস্ত হতে হবে। কী অদ্ভুত ব্যাপার! দিনশেষে যে আরশাদকে দেখার জন্যে তার মনটা ছটফট করে, আজ তারই সামনে পড়তে চাইছে না অরা। অসহনীয় হয়ে উঠেছে বাস্তবতা।

ডাইনিং হলের পৌঁছাতেই মারিয়াকে দেখতে পেলো অরা। মারিয়া এ বাড়ির সকল স্টাফদের প্রধান। আগে এই দায়িত্ব পালন করতো মতিউর। বয়স হয়ে গেছে বলে বছর খানেক হলো কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। মারিয়া তার জায়গাটা নিয়েছে, এবং ভালোভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

এ বাড়ির সকল স্টাফরা সন্ধ্যার পর পর চলে যায়। সন্ধ্যারও পরও তাই মারিয়াকে দেখে অবাক না হয়ে পারলো না অরা।

অরা ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল, “মারিয়া? তুমি বাড়ি যাওনি?”

মারিয়া মিষ্টি গলায় বলল, “স্যার তো দুপুরের পর পরই বেরিয়ে গেলেন। আপনিও হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আপনাকে একা রেখে যাবো? তাই ভাবলাম আপনি উঠলে তারপরই যাবো।”

আরশাদ বাড়িতে নেই তাহলে? হাফ ছেড়ে বাঁচলো অরা। এই মুহূর্তে আরশাদের মুখোমুখি হওয়ার মতো মানসিক জোর তার নেই।

অরা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল, “থ্যাংক ইউ মারিয়া। আমি এখন একাই থাকতে পারবো।”

মারিয়া চলে যাওয়ার পরপরই আশফিয়া এলো কথাকে নিয়ে। মাত্র দুদিন হয়েছে, তবুও কথার এমন একটা ভাব যেন অরাকে দেখে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। অরার গলা জড়িয়ে উৎফুল্ল ভঙ্গিতে গল্প জুড়ে দিলো তার সঙ্গে।

অরা প্রাণপণ চেষ্টা করছে স্বাভাবিক থাকতে। তার চিরচেনা ভঙ্গিতে আশফিয়া এবং কথার সামনে নিজেকে ধরা দিতে। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তার মস্তিষ্কে এখনো বেজে যাচ্ছে আরশাদের বলা ওই কথাগুলো। অচেনা এক ব্যাথায় জর্জরিত তার মন।

ব্যাপারটা বোধ হয় আশফিয়ার চোখে পড়লো। সে উদ্বিগ্ন গলায় বলল, “তুমি ঠিক আছো তো অরা?”

অরা কৃত্রিম হাসি হেসে জোর দিয়ে বলল, “হ্যাঁ আপা, আমি তো সবসময় ঠিকই থাকি।”

অরার হাসি আর দৃঢ়তা সন্দেহ দূর করলো না আশফিয়ার। সে ভ্রু কুঁচকে বলল, “তুমি সিওর?”

অরা আরও প্রশস্ত হাসি হেসে বলল, “হ্যাঁ আপা! অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছি তো, তাই একটু খারাপ লাগছে।”

আশফিয়া চিন্তিত গলায় বলল, “দেখেছো! আমার ভাইটা আগেই বলেছিল যেও না। ওর কথা না শুনলে তো এমনটাই হবে।”

অরা আবারও হাসার চেষ্টা করলো। ঠিকই তো! না গেলেই বোধ হয় ভালো হতো। স্পাই ক্যামেরা, সন্দেহ – কোনোকিছুই সৃষ্টি হতো না তাহলে।

কিছুটা সময় গল্পগুজব করে তিনজন ডিনার করতে বসলো। অরা অবাক হয়ে লক্ষ করলো, সকলের নাস্তার পর থেকে সে কিছুই খায়নি। সে কিছু খায়নি এটা মুখ্য নয়, মুখ্য হলো বাবুও কিছু খায়নি। আরশাদের বলা ওই তিক্ত কথাগুলো শোনার পর নিজের ওপর তো ঘৃণা ধরেই গিয়েছিল। সেই ঘৃণা এখন আরও তীব্রতর হলো।

ডিনারের পরপরই বেরিয়ে গেল আশফিয়া। অরা কয়েকবার তাকে জোরাজুরি করলো থেকে যাওয়ার জন্যে। কিন্তু আশফিয়া থাকলো না। তার ডিজাইনার হাউজে কাল সকালেই না-কি জরুরি একটা মিটিং আছে।

আশফিয়া চলে গেলে অরা কথাকে ঘুমের জন্যে প্রস্তুত করে দিলো। তার দাঁত ব্রাশ করে দিলো, চুল বেঁধে দিলো। কথা তো অনবরত গল্প করেই যাচ্ছে। অরা বারবার চেষ্টা করছে কথার গল্প মন দিতে, কিন্তু তার মন পড়ে আছে অন্য কোথাও।

রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। অথচ আরশাদের ফেরার নামগন্ধ নেই। শুটিং না থাকলে তো এত রাত অব্দি বাইরে থাকে না সে। অন্য সময় হলে উদ্বিগ্ন অরা ফোন করতো আরশাদকে। তবে আজ যেন, আরশাদকে ফোন করার অধিকারটুকু তার নেই।

কথার ঘরেই অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলো অরা। হঠাৎ শুনতে পেলো পাশের ঘরের দরজাটা ধাম করে লাগিয়ে দেওয়ার শব্দ। আরশাদ ফিরে এসেছে তার মানে? আবারও নিঃশ্বাস আটকে গেল অরার।

অরা এখন কী করবে? আরশাদের সঙ্গে ঘুমানো যায় না। আরশাদ হয়তো আর কখনোই তার সঙ্গে ঘুমাতে চাইবে না। একা একা গেস্ট রুমে ঘুমাবে? আজ মনের যে অবস্থা, তার ওপরে দুঃস্বপ্ন দেখার বাতিক। সাহস করে উঠতে পারলো না অরা।

কথার হাতদুটো ধরে তাকে কোমল গলায় বলল, “কথা?”

কথা তার ঘরের দেয়ালে ঝুলন্ত টিভির দিকে চোখদুটো আটকে রেখে বলল, “হুঁ?”

অরা কম্পিত স্বরে বলল, “আমি আজ তোর সাথে ঘুমাই?”

সঙ্গে সঙ্গে চওড়া এক হাসি ফুটে উঠলো কথার ঠোঁটে।

উৎফুল্ল ভঙ্গিতে বলল, “সত্যি? অরা তুমি সত্যিই আমার সাথে ঘুমাবে?”

উচ্ছ্বাসে মিনিট দশেকের মধ্যেই অরার গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো কথা। জেগে রইলো অরা, মধ্যরাত অব্দি। আচ্ছা, সে এই পৃথিবীতে না এলে কি খুব বড় ক্ষতি হয়ে যেত? যন্ত্রণা বাদে আর তো কিছু পায়নি সে এই পৃথিবী থেকে।

কথাকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো অরা। শব্দ করে কাঁদলে তো মেয়েটার ঘুম ভেঙে যাবে। তার কান্নার সাক্ষী কেবল এই অন্ধকার ঘর। এই পৃথিবীর সবথেকে অসহায় মানুষটা বুঝি আজ অরাই।

(চলবে)

[সকলকে নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আশা করি আপনাদের ২০২৪ যেন ফেলে আশা অন্যান্য সকল বছরের থেকে অনেক বেশি ভালো কাটে। গত বছর ঠিক এই সময়টাতে অপেক্ষারা লিখছিলাম। সেই তখন থেকে একই ভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন আপনারা আমাকে। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ২০২৩ সালটা আমার অনেক ভালো কেটেছে। কারণ এ বছর আমি নতুন করে আবারও লিখতে পেরেছি, আপনাদেরকে পেয়েছি। আশা করি সামনের দিনগুলোতেও এভাবেই পাশে পাবো সকলকে। 💗]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here