দৃষ্টির_আলাপন #পর্বঃ১৬ #আদওয়া_ইবশার

0
456

#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ১৬
#আদওয়া_ইবশার

রক্তিমের এমন খামখেয়ালি কথায় মেজাজ উত্তপ্ত হয় আজীজ শিকদারের। দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে বলে,

“আমি এখনো বেঁচে আছি। সজ্ঞানে থাকতে কখনো আমার মেয়েকে আমি অপাত্রে দান করবনা।”

বাবার কথায় রক্তিম নিজেও এবার বিরক্ত। চোখে-মুখে বিরক্তির রেশ ফুটিয়ে বলে,

“মেহেদীকে আপনার অপাত্র মনে হচ্ছে কেন? দেখতে সুদর্শন, সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। দুই ভাই আর বাবা-মা নিয়ে মাত্র চারজন সদস্যদের ছোট্ট একটা পরিবার। এর থেকে ভালো পাত্র পাবেন কোথায় আপনি?”

“শুধু এগুলো দেখলেই হবে?এক টাকাও ইনকাম আছে তার?বিয়ের পর আমার মেয়েকে খাওয়াবে কি? ঐ ছেলের রূপ আর বংশ পরিচয়ে নিশ্চয়ই আমার মেয়ের পেট ভরবেনা।”

কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথেই কথাটা বলেন আজীজ শিকদার। উত্তরে রক্তিম জানায়,

” ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষকে কিভাবে রাখলে সুখে থাকবে সেটা আপনার-আমার থেকেও ভালো তারা বুঝবে।”

তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। এই কথাটাই যথেষ্ট ছিল আজীজ শিকদারকে চুপ করিয়ে দেওয়া। অবাক, বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে রক্তিমের মুখের দিকে।

“তুমি শিওর ইতি ঐ ছেলেকে ভালোবাসে?”

“গুন্ডা হতে পারি। তাই বলে বোন কি করছে, কার সাথে মিশছে এসব খোঁজ রাখবনা এতোটাও ছন্নছাড়া এখনো হয়নি। তার থেকেও বড় কথা আপনি খুব ভালো করেই জানেন, পুরো বিষয় না জেনে অযথা কোনো কিছু নিয়ে আমি মাথা ঘামাইনা। আর মেহেদী এখন কিছু করেনা তাই বলে ভবিষ্যতেও করবেনা এমন কোনো কথা নেই। দায়িত্ব ঘাড়ে আসলে নিজ তাগিদে ঠিকই রোজগারের পথ খোঁজে নিবে। শুধু শুধু ছেলে বেকার, গুন্ডামি করে এমন কিছু ফালতু ইস্যু দিয়ে দুটো ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করবেন না।”

মেয়ে যেখানে নিজে থেকেই জীবন সঙ্গী ঠিক করে রেখেছে সেখানে আজীজ শিকদার আর কিই বা করতে পারে! অন্য আট-দশটা বাবার মতো অবশ্যই মেয়ের ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেননা তিনি। আর মেহেদী ছেলেটাও একেবারে খারাপ এমনও না। যথেষ্ট শিক্ষিত। নিজের ছেলেটার সঙ্গ পেয়েই চাকরি-বাকরি ছেড়ে গুন্ডামি বেছে নিয়েছে। চাইলেই ছেলেটাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সঠিক পথে আনা যাবে। তাছাড়া এটাই সুযোগ। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে যেভাবেই হোক নিজের ছেলেটাকেও বাধ্য করতে হবে নতুন করে জীবনটা গড়ার।

“বন্ধু আর বোনের ভালোবাসার পূর্ণতা দেবার জন্য উঠেপরে লেগেছো। অন্যদিকে যে একটা মেয়ে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে বারবার তোমার কাছে অবহেলিত হচ্ছে তার জন্য কি একটুও মায়া হয়না? না কি সে তোমার আপন কেউ না দেখে তার ভালোবাসার মূল্য নেই তোমার কাছে?”

বাবার মুখে হটাৎ এমন কথায় চমকায় রক্তিম। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে। মুখে কিছুই বলেনা। আজীজ শিকদার তবুও বুঝে যায় ছেলে কি চাচ্ছে। ঠোঁট টেনে সামান্য হেসে বলেন,

“দৃষ্টি মেয়েটার কথা বলছি আমি। এখন আবার এটা জিজ্ঞেস করোনা ওর কথা আমি কিভাবে জানলাম। যেখানে বলতে গেলে পুরো এলাকার মানুষ জানে একটা মেয়ে রাস্তাঘাটে রক্তিম শিকদারের সামনে ভালোবাসার দাবী নিয়ে দাঁড়াচ্ছে। খবরটা সেখানে রক্তিম শিকদারের বাবা হয়ে আমি জানবনা?”

অত্যধিক বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ বর্গীয় উচ্চারণ করে রক্তিম। খিঁচে বলে,

“ঐসব ফালতু বিষয় এখানে টানছেন কেন?”

“দৃষ্টি মেয়েটার ভালোবাসা যদি তোমার কাছে ফালতু মনে হয় তবে তোমার বন্ধু আর বোনের ভালোবাসাও আমার কাছে ফালতু। ঐসব ফালতু টপিকে আর কিছু বলতে এসোনা আমার কাছে।”

কথাটা শুনে কপালদ্বয়ে দুটো ভাজ পরে রক্তিমের। শান্ত দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে জানতে চায়,

“কি চাচ্ছেন আপনি?”

সোজাসাপ্টা এমন প্রশ্নে মুখ ভরে হাসে আজীজ শিকদার। বলেন,

“তেমন কিছুই না।দৃষ্টি মেয়েটাও আমার মেয়ের বয়সী মিষ্টি একটা মেয়ে। দুজনই আবার দুটো ছেলেকে ভালোবাসে। তাই ভাবছিলাম আরকি যদি কারো ভালোবাসার পূর্ণতা দিতেই হয় তবে দুজনেরটাই দিব। একজন ভালোবাসা পেয়ে আজীবন সুখে কাটাবে। আর অপরজন ভালোবাসার বিরহে ছটফট করবে এমনটা তো আমি হতে দিতে পারিনা।”

এবার রক্তিম নিজেও একটু হাসে। তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,

“ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। বারবার না। ঐসব ছলনাময়ীর ছলনায় রক্তিম শিকদার টলবেনা আর।”

“সব মেয়ে এক না।”

“কে ভালো কে খারাপ সেটাও তো কারো কপালে সীল মেরে দেওয়া নেই। তো বুঝব কিভাবে?”

“মানুষ চেনার ক্ষেত্রে তুমি বোকা হলেও আমি না। ঐ মেয়েটার চোখে আমি তোমার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছি। আমার মতো পুড় খাওয়া ব্যক্তির চোখ ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ না।”

এতোক্ষনের শান্ত মেজাজটা এবার বাঁধনছাড়া হয় রক্তিমের। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এক প্রকার চেঁচিয়ে বলে,

“সমস্যা কি আপনার? আমাকে ভালো থাকতে দেখে কি আপনার ভালো লাগছেনা? আমি তো কাওকে বলিনি আমার ব্যাপারে এতো ভাবতে। তবে ভাবছেন কেন? ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন আমাকে আমার মতো?”

আজীজ শিকদার নিজেও এবার একটু চড়াও হয়। রাশভারী কন্ঠে বলেন,

“তুমি যেটাকে ভালো থাকা বলছো সেটা অন্য আট-দশটা স্বাভাবিক মানুষের কাছে অসুস্থ থাকা ছাড়া কিছুই না। একটা সুস্থ্য মানুষের জীবন কখনো এমন হতে পারেনা। আর কি সমস্যা জানতে চাচ্ছো না! সমস্যা আমার একটাই। সেটা হলো তোমার মতো ছেলের বাবা হওয়া। এখন না পারছি তোমাকে নিজের সন্তান বলে অস্বীকার করতে। আর না পারছি তোমার ছন্নছাড়া জীবন দেখেও চুপ থাকতে। অনেক করেছো। এবার অন্তত একটু দয়া করো আমার উপর! শান্তিতে বাঁচতে না দাও। অন্তত ম রা র সময় যাতে সন্তানদের সুখে দেখে শান্তিতে ম র তে পারি সেই সুযোগটা দাও। বাবা হয়ে তোমার কাছে আমার এটাই শেষ আবদার। দৃষ্টি মেয়েটাকে মেনে নাও। নতুন করে সংসার সাজাও।”

কথাগুলো শেষ করে একটু দম নেয় আজীজ শিকদার। পরক্ষনে আবারও চোয়াল শক্ত করে বলেন,

“শিকদার মঞ্জিলে যদি আবারও বিয়ের সানাই বাজে তবে আজীজ শিকদারের ছেলে-মেয়ে দুজনের বিয়ের সানাই একসাথে। বাজবে অন্যথায় না। অনেক দেখেছো তোমার দাপট আর হুঙ্কার। অনেক শুনেছি তোমার কথা। জন্ম তুমি আমাকে দাওনি। আমি দিয়েছি তোমাকে জন্ম। এবার থেকে যা বলার আমি বলব। আর যা শোনার সব তোমাকে শুনতে হবে।”

নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় রক্তিম। বড়বড় দম নিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফের গম্ভীর কন্ঠে জানতে চায়,

“শুনলাম আপনার কথা। রাজি হলাম বিয়ে করতে। কিন্তু ঐ মেয়ের পরিবার!আপনি নিজেই যেখানে মেহেদীর সাথে ইতুর বিয়ে দিতে চাচ্ছেন না। কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন মেহেদী বেকার, গুন্ডা। সে যদি হয় ছা-পোষা গুন্ডা তবে আমি তার ওস্তাদ। সেই আমার সাথে কিভাবে ঐ মেয়ের পরিবার বিয়ে দিতে রাজি হবে? এই কথা গুলো কি ভেবে চিন্তে আমাকে বরশির কলে বাজাতে এসেছেন! না কি আবেগে গা ভাসিয়ে ভেবেছেন পুটি মাছের বরশি দিয়ে বোয়াল ধরে ফেলবেন!”

কথাগুলো যৌক্তিক। আসলেই আজীজ শিকদারের মাথায় দৃষ্টির পরিবারের চিন্তা আসেনি। ওনি শুধু মেয়েটার কথায় তার ছেলের প্রতি ভালোবাসার প্রগাঢ়তা দেখে ছেলেটার সুন্দর একটা জীবন দেখার লোভে অন্ধ হয়ে গেছেন। এই কথাটা একবারো মাথায় আনেনি যে মেয়েটার অভিভাবক আছে। কোন দুঃখে তারা রক্তিমের মতো এমন একটা ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে? যে ছেলে কি না পূর্বে বিয়ে করেছিল। বর্তমানে রাস্তা-ঘাটে গুন্ডামি করে বেড়ায়। পুরো সাভারবাসী যাকে এক নামে গুন্ডা-মাস্তান হিসেবে জানে সেই ছেলের সাথে কোনো ভালো পরিবারের মা-বাবা নিশ্চয়ই চাইবেনা তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে। যৌক্তিক চিন্তাধারা গুলো নিজের মাঝেই চেপে রাখেন আজীজ শিকদার। রক্তিমকে সেসব বুঝতে না দিয়ে বলেন,

“ঐসব দেখার বিষয় আমার। তুমি শুধু বলো আমার কথায় রাজি আছো কি না!”

রক্তিম নিশ্চিত ঐ মেয়ের বাবা-মা রক্তিমের আসল পরিচয় জানলে কোনোদিন মেয়ে বিয়ে দেবার কথা মুখেও আনবেনা। সেখানে রক্তিম রাজি হলেই কি আর না হলেই বা কি! তবে রাজি হলে লাভ একটা অবশ্য আছে। সেটা হলো ছেলে কথা রাখেনা এই নিয়ে বাবার মনে যে কষ্ট সেটা একটু হলেও ঘুচবে। আর দ্বিতীয়ত মেহেদীর সাথে ইতির বিয়েটা দিতে বেগ পেতে হবেনা। কথা গুলো ভেবে রক্তিম ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বলে,

“ঠিক আছে। আপনি যদি সবটা ম্যানেজ করতে পারেন তবে আমিও পারব দ্বিতীয়বার বিয়ের পিড়িতে বসতে।”

কথাগুলো বলে আর একটুও দাঁড়ায়না রক্তিম। ছাঁদ থেকে নেমে সোজা বাইক ছুটিয়ে চলে যায় নিজের ছোট্ট কুঠিরে। আজীজ শিকদার চিন্তিত হয়ে ছাঁদেই দাঁড়িয়ে থাকে। মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে প্রয়াস চালায় সমস্যার সমাধান খোঁজে বের করার। কিন্তু কোনো বুদ্ধি খোঁজে পায়না। ভাবতে গেলেই মনে হচ্ছে সব ঝট পাকিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেই নিরবতার জাল ছিঁড়ে আজীজ শিকদারের পাঞ্জাবীর পকেটে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে। পিনপতন নিরবতার মাঝে হঠাৎ তাড়স্বরে ফোন বেজে ওঠায় ভাবনাচ্যুৎ হয় আজীজ শিকদার। পকেট হাতরে ফোন বের করে নাম্বারটা দেখেই কুঁচকে থাকা কপালদ্বয় স্বাভাবিক হয়। ফোনটা রিসিভ করে কানে ঠেকিয়ে গম্ভীর মুখটা হাস্যজ্জল করে বলে,

“কেমন আছো মা?”

জবাবে ফোনের অপরপাশ থেকে মিষ্টি এক কন্ঠে প্রথমে সালাম ভেসে আসে,

“আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন স্যার?”

“আমি ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?”

” আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। তবে আমি একটা বিষয় নিয়ে অত্যন্ত দুঃখিত স্যার। আপনি যাকে আমার সাথে দেখা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন ওনার সাথে আমার দেখা হবার পরও ঠিকঠাক কথা বলতে পারিনি। কারণ তখনই তখনই সেখানে আব্বু চলে আসে। ঠিক কিজন্য ওনাকে পাঠিয়েছিলেন সে বিষয়ে কি আমরা এখন ফোনে কথা বলতে পারি?”

দৃষ্টির কথায় হতবম্ভ আজীজ। ওনি আবার কখন কাকে দৃষ্টির সাথে দেখা করতে পাঠালো?

“আমি তো কাওকে তোমার সাথে দেখা করার জন্য পাঠাইনি। কার কথা বলছো তুমি মা? কে গিয়েছিল দেখা করতে?”

আজীজ শিকদারের কথায় এবার দৃষ্টির কপালেও চিন্তার ছাপ। ভাবুক হয়ে বলে,

“আপনি পাঠাননি? তবে লোকটা যে আপনার পরিচয় দিল! বলল আপনিই না কি কি দরকারে পাঠিয়েছিলেন!”

গভীর ভাবনায় পরে যায় আজীজ শিকদার। ওনার আর বুঝতে দেরী হয়না ঐ মুহূর্তে মেয়েটার বাবা উপস্থিত না হলে বড় ধরনের কোনো বিপদ হয়ে যেতে পারত। মেয়েটা তাদের জীবনের সাথে জুড়ে যাবার আগেই তাদের শত্রু নিষ্পাপ মেয়েটারও শত্রু হয়ে গেল! ঐ লোকটার যদি খারাপ কোনো উদ্দেশ্য থাকে তবে তো আজ সফল না হতে পেরে আবারও পিছু নিবে। শুধু শুধু তাদের বাপ-ছেলের শত্রুতার জন্য একটা অবুঝ মেয়ে বিপদের সম্মুখিন হবে! নাহ, কিছুতেই এটা হতে দেওয়া যাবেনা। যত দ্রুত সম্ভব তাদের কিছু একটা করতে হবে।

“শুনো মা। তুমি তো অনেক বুঝদার একজন মেয়ে তাইনা! কিন্তু তোমার ঐভাবে রাস্তা-ঘাটে আমার ছেলের পিছনে ঘোরাফেরা উচিৎ হয়নি। রক্তিমের শত্রুর অভাব নেই। এমনকি আমারও রাজধানীর সুবাদে যথেষ্ট শত্রু আছে। ওরা যদি এখন তোমাকে রক্তিমের কাছের কেউ ভেবে কোনো ক্ষতি করে ফেলে! ঐ লোকটাকে আমি পাঠাইনি। আমার যদি কোনো প্রয়োজন পরতোই তবে সরাসরি ফোনেই তোমার সাথে যোগাযোগ করতাম। এভাবে রাস্তায় যদি আর কখনো অপরিচিত কেউ আমার বা রক্তিমের পরিচয় দিয়ে তোমাকে কোথাও যেতে বলে একদম যাবেনা। বুঝতে পেরেছো আমার কথা?”

আজীজ শিকদারের কথায় দৃষ্টির মাঝে ভীতি সঞ্চার হয়। অজানা এক আতঙ্কে কেঁপে ওঠে। ভাবে সত্যিই আজকে বাবা না থাকলে বড়সড় কোনো বিপদ হতে পারত। আল্লাহ সহায় ছিল বলেই হয়তো সুস্থ্যভাবে বেঁচে ফিরেছে। কথাটা ভেবে তৎক্ষণাৎ মনে মনে শুকরিয়া জানায় সৃষ্টিকর্তার নিকট। পরক্ষনে আজীজ শিকদারের কথায় সাই জানিয়ে বলে,

“আসলে আমি বুঝতে পারিনি। আর কখনো এমন কোনো বোকামি করবনা স্যার।”

দৃষ্টির মনের ভয় টের পায় আজীজ শিকদার। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,

“আচ্ছা মা! আমি ভেবেছিলাম তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব। কিন্তু এখন তো চিন্তা হচ্ছে তোমার বাবা-মা কি রক্তিমকে মেনে নিবে?”

এবার যেন এক চিন্তার সুতো কেটে আরেক চিন্তায় এসে পরল দৃষ্টি। ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই জিজ্ঞেস করে,

“আপনার ছেলের সাথে কথা বলেছেন? ওনি কি রাজি হয়েছে?”

ভরসা দেবার মতো করে আজীজ শিকদার অল্প হেসে বলেন,

“ও নিয়ে তুমি এতো ভেবোনা। তোমার ঐদিকটা আগে বলো কিভাবে কি করব। আমার ছেলেকে কিভাবে রাজি করাতে হবে সেটা আমার চিন্তা। ওকে রাজি করিয়ে সঙ্গে নিয়ে তবেই যাব আমি তোমাদের বাড়ি।”

আজীজ শিকদারের কথা শেষ হতেই প্রচণ্ড উৎসাহের সাথে কিছুটা চেঁচিয়ে বলে দৃষ্টি,

“আইডিয়া পেয়েছি একটা।”

হঠাৎ এমন অভিব্যক্তিতে কিছুটা হতচকায় আজীজ শিকদার। পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে জানতে চায়,

“কি আইডিয়া?”

দীর্ঘ দশ মিনিট সময় ব্যয় করে বুঝিয়ে দৃষ্টির মাথায় চলা পুরো বিষয়টা সম্পর্কে আজীজ শিকদারকে অবগত করতে সক্ষম হয় দৃষ্টি। আজীজ শিকদার সবটা শোনার পর রসাত্বক হেসে বলে,

“আরে বাহ্! তোমার মাথায় তো দেখছি দারুন বুদ্ধি। মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে আমার বদলে তোমাকেই এমপি পদে দাঁড় করাতে হবে।”

কথাটা শুনে একটু শব্দ করেই হেসে ফেলে। পরক্ষনেই ধাতস্থ হয়ে সামলে নেয় নিজেকে। দরজার ফাঁক গলিয়ে সতর্ক দৃষ্টি পরোখ করে নেয় কেউ আবার তার কথা বা হাসি শুনে ফেলল কি না।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here