তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ১ #নবনী_নীলা

0
805

ইয়াদ বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকায়, প্রতিদিনের মতন আজকেও তিনটা মেয়ে তার পিছু নিয়েছে। আগে টয়া একা তার পিছু নিতো কিন্তু দুদিন হলো আরো দুইটাকে সঙ্গে করে এনেছে। এই ব্যাপারটা ইয়াদের বরাবরই ভীষণ বিরক্তিকর লাগে। ভদ্রতার জন্যে সে কখনোই কিছু বলেনি তবে আজ কেনো জানি ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। ইয়াদ হাতের ইশারায় টয়াকে ডাকলো। ইয়াদকে দেখে টয়া ঘাবড়ে গিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। ইয়াদকে না দেখার ভান করে টয়া একটা দোকানের সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটায় ইয়াদের রাগ আরো বেড়ে গেলো, এই মেয়ে পিছে পিছে ঘুরবে আবার ডাকলে এমন ভাব করবে যেনো চিনেই না। ইয়াদ রাগ সামলে নিলো কারন ঠাণ্ডা মাথায় এদের হ্যান্ডেল করতে হবে নইলে শেষে দেখা যাবে তার কলেজে ঢুকে ক্লাসে পর্যন্ত উকি মারছে।

ইয়াদকে এদিকে এগিয়ে আসছে দেখে টয়ার পাশের দুই মেয়ে দৌড়ে একটা দোকানে ঢুকে পরে। টয়া অন্যদিকে তাকিয়ে সাইনবোর্ড দেখছিল তাই ইয়াদ যে এদিকে আসছে সেটা সে খেয়াল করেনি। হটাৎ পাশের দুইটাকে না দেখে টয়া চমকে উঠে। কি ব্যাপার ? গেলো কোথায় শয়তান গুলো, আয়হায়!

এইসব বলে পাশে তাকাতেই টয়ার টনক নড়ে উঠেলো।ইয়াদ ঠিক তার পিছনে দাড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে । টয়া এর আগেও ধরা খেয়েছে কিন্তু এভাবে হাতে নাতে ধরা কখনো খায়নি। ইয়াদ পিছনে তাকালেই দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেছে কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তার কপালে মহাকাশের সব গ্রহ নক্ষত্র এক সঙ্গে ঘুরছে।

ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল কারণ সে ভেবেছে মেয়েটা নিজে থেকে কিছু বলবে আর যাই হোক নিজের সাফাই গাইবে নয়তো কোনো বাহানা বানাবে। কিন্তু টয়া সেসব কিছুই করলো না। সে হাসি মুখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ এই মেয়েকে যত দেখছে ততো অবাক হচ্ছে।

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে দুই হাত বুকের কাছে ভাজ করে বললো,” কি ব্যাপার হাসছো কেনো? ”

টয়া প্রস্তুত হয়ে তাকালো। ইয়াদ একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,” এইদিকে কোথায় যাচ্ছো? তোমার স্কুল তো এইদিকে না।”

টয়া ইয়াদের প্রশ্ন শুনে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা না কারণ সত্যিটা বলা যাবে না। ইয়াদের পিছু পিছু এসেছে এটা বললেই মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে। টয়া কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে রাহি আর ছোঁয়া আশে পাশে আছে কিনা দেখছে।

এভাবে রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে কথা বলাটা আসে পাশের লোকজন ভালো ভাবে নিচ্ছে না সেটা বোঝাই যাচ্ছে। দোকানদার গুলো তাকিয়ে আছে কিন্তু তাই বলে ইয়াদ আজকে টয়াকে ছেড়ে দিবে না। টয়ার এদিকে হার্টের অবস্থা খারাপ নিজের ক্রাশ সামনে দাঁড়িয়ে আছে তাও আবার এতো সামনে। আবার তার সাথে নিজে থেকে কথাও বলছে।এইসব চিন্তা করেই টয়া দ্বিতীয় স্ট্যাচু অফ লিবার্টি হয়ে গেছে। ঘনো ঘনো হাত কচলাচ্ছে।

দোকানদার এবার আরো সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে। ইয়াদ কিছু না ভেবেই টয়ার হাত ধরে ওকে একটা দোকানের পিছনের ছোটো একটা জায়গায় নিয়ে এলো। রাস্তার সবার সামনে এইভাবে কথা বললে লোকজন ভুল ভাববে। টয়া অবাক হয়ে তাকালো। সে শুধু ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাতে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। যেখানে খুশি নিয়ে যাক তার কোনো আপত্তি নেই।
টয়া মুগ্ধ হয়ে নিজের আর ইয়াদের একসাথে হাত ধরে হাঁটা দেখছে। নিজের অজান্তেই টয়া মাথা নুইয়ে একটু হাসলো।

ব্যাপারটা ঠিক কি হলো ওরা দুজনেই বুঝলো না। ইয়াদ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে আনলো। দুইজনেই একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। টয়া নিজের হাত দুটো গুটিয়ে একসাথে ধরে মাথা নিচু করে দেওয়ালের সাথে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে সে কোনো এক ঘোরের মাঝে আছে।

ইয়াদ কঠিন হয়ে বললো,” এবার বলো কি সমস্যা প্রতিদিন আমার পিছু আসো কেনো?”

ইয়াদের কথায় টয়া ঘাবড়ে গেলো সে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো। কি বলবে এবার সে? চুপ করে থাকলে ধরা পড়ে যাবে তাই চোখ তুলে তাকিয়ে অনেক সাহস নিয়ে বললো,” আমি আপনার পিছু আসতে যাবো কেনো?আমি তো এমনেই আসি। আর এইদিকে আসা বারণ নাকি? এমনিতেও আজ আমি দরকারে এসেছি।

ইয়াদ একটা ভ্রু তুলে বললো,” কি দরকার?”

টয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এতো প্রশ্ন করে কেনো এই ছেলেটা! টয়া এদিকে ওদিক তাকিয়ে বললো,”আজকে আমি… .আমি…ক..ল..ম নিতে এদিকে এসেছি।”

ইয়াদ একটা ভ্রু তুলে বললো,” আচ্ছা তাই বুঝি? প্রতিদিন কলম কিনতে আসতে হয়? তোমার স্কুলের ঐদিকে কি কলমের সংকট দেখা দিয়েছে?”

টয়া একটা ঢোক গিললো কারণ সে ধরা পরে যাচ্ছে।ধুরো বেটা দেখছি বেশি চালাক। টয়া ভাব নিয়ে বললো,” এই দিকে একটা দোকানে অনেক ভালো কলম পাওয়া যায় তাই আমি এদিকে আসি। ঐ কলম ছাড়া আমি লিখতে পারি না।আর ..আর …আর …।” বলতে বলতে টয়া চুপ করে যায়। কারন এর পর কি বলবে সেটা সে জানে না।

ইয়াদ টয়াকে ব্যাঙ্গ করে বললো,” আর.. আর.. আর কি? বয়স কত তোমার? স্কুলে পড় মাত্র, এইসব ঘোরাঘুরি বন্ধ করে ভালো করে পড়ালেখাটা করো।”

টয়া মুখ কালো করে তাকালো। ইয়াদ সোজা হয়ে দাড়িয়ে দুই হাত বুকের কাছে ভাঁজ করে বললো,” কয়টায় ক্লাস তোমার?”

টয়া চোখ তুলে আটটা বলে চোখ নামিয়ে ফেললো। ইয়াদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” কয়টা বাজে ঘড়িতে জানো?”

টয়া মাথা নিচু রেখে না সূচক মাথা নাড়লো। ইয়াদ টয়ার হাতের দিকে তাকালো। আশ্চর্য!মেয়েটার হাতে ঘড়ি নেই। স্কুলে পড়ুয়া একটা মেয়ের হাতে ঘড়ি থাকবেনা এটা কেমন কথা?

ইয়াদ ভ্রু কুচকে নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো আটটা বাজতে দশ মিনিট বাকি। তোমার ইউনিফর্ম দেখে তো মনে হচ্ছে কাছেই স্কুল একটা দৌড় দিয়ে চলে যাও। আর হ্যাঁ, ঘড়ি পড়ার অভ্যাস করো এই বয়সে সময়ানুবর্তিতা হওয়া খুব জরুরী।” বলে ইয়াদ কাধের ব্যাগ ঠিক করে চলে গেলো, তাকে গিয়ে আবার বাস ধরতে হবে কলেজের। দেরী করলে আর বাস পাওয়া যাবে না।

ইয়াদ যে উপদেশ বাণী টয়াকে দিয়ে গেলো তার সবই যেনো উলো বনে মুক্ত ছিটানোর মতন। সেই সব উপদেশের ধারের কাছেও ঘেঁষবেনা টয়া।

ক্লাস নাইন এ পড়ুয়া আর্নিহা তাবাসসুম টয়া, স্কুলের শীর্ষ দুষ্ট বালিকা আবার সবার আদরেরও একটা মেয়ে। এই মেয়েকে স্কুলের প্রিন্সিপাল পর্যন্ত স্নেহ করে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে বড়ো দুই ভাই আছে। বড় ভাই আমেরিকায় থাকে আর মেজোটা ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ছে। একমাত্র মেয়ে বলে ছোটো বেলা থেকে আহ্লাদে বড়ো হয়েছে টয়া। আজ পর্যন্ত যা আবদার করেছে সবই পেয়েছে সে।

এবার ইয়াদের প্রসঙ্গে আশা যাক।

ইয়াদ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। খুবই শান্ত ভদ্র ছেলে। বন্ধু মহলে তার বেশ সুনাম রয়েছে। তার সব স্কুল কলেজের টিচাররা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ছাত্র হিসাবেও সে প্রচুর মেধাবী। তার বাবা একজন আর্মি অফিসার। ছোট বেলা থেকে বাবার ট্রান্সফারের কারণে তার ছোটবেলা ছিলো প্রচুর ডিস্টার্ব । তার বাবার ট্রান্সফারের কারণেই এবার সিলেট থেকে এসে ধানমন্ডিতে বাসা নেওয়া। বাসা নিয়েই সে পরেছে এক দুষ্টু পরীর পাল্লায়। দুষ্টু পরী টয়ার বারান্দা আর পড়ুয়া ছেলে ইয়াদের বারান্দা সামনা সামনি। এতেই হয়েছে বিপদ। টয়া জানালা দিয়ে তো তাকে জ্বালায় এমনকি সে রাস্তায় বের হলেও পিছু নেয়। ইয়াদ এই নিয়ে মহা বিপদে আছে। এমন অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি সে আগে হয়নি।
_____________________________

টয়া বাসায় এসেই ব্যাগ টেবিলে ছুড়ে দিয়ে বাবা বাবা ডাকতে শুরু করেছে। ফরিদুর রহমান আজ ফ্যাক্টরিতে যাবেন না, তিনি ইজি চেয়ারে বসে আরাম করে পুরনো গান গুলো শুনছিলেন। এর মাঝেই মেয়ের আওয়াজ পেলেন কানে। কানে আওয়াজ আসতে না আসতেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে টয়া এসে হাজির। মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে ড্রেস না বদলেই, না খেয়ে ফরিদুর রহমানের রুমে এসেছে দেখে তিনি কিছুটা চিন্তিত হলেন।

তিনি রেডিও টা বন্ধ করে বললেন,” কিরে কি হয়েছে? খাসনি এখনো?”

টয়া বাবার কাছে গিয়ে না সূচক মাথা নাড়ল। ফরিদুর রহমান মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,” কি হয়েছে? আবার বকা খেয়েছিস নাকি?”

” না, বাবা শোনো না! আমি না ঘড়ি কিনবো। আমার ঘড়িগুলো পাচ্ছি না। নতুন ঘড়ি লাগবে।”, মুখ শুকনো করে বললো টয়া।

ফরিদুর রহমান মেয়ের কথায় হাসলেন,” আচ্ছা ঠিক আছে আমি কালকে তোর জন্য ঘড়ি কিনে আনবো। তা হটাৎ ঘড়ি পড়তে ইচ্ছে হলো যে?”

” এমনেই, বাবা চলো আজ যাই আমার আজকেই ঘড়ি লাগবে। বাবা প্লীজ বাবা।”, মেয়ের কথা ফরিদুর সাহেব ফেলতে পারেন না তাই তিনি বললেন,” আচ্ছা যাবো বিকালে তোকে নিয়ে, এবার গিয়ে খেয়ে নে।”

টয়া লাভ ইউ বাবা বলে নাচতে নাচতে নিজের রুমে গিয়ে ধপাস করে বিছায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো নিজের টেডিটা জড়িয়ে ধরে। টয়া বারান্দার পাশের জানালা দিয়ে ইয়াদের রুমের দিকে কাত হয়ে শুয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

ইয়াদকে টয়ার ভীষণ ভাল্লাগে একবার বৃষ্টির দিনে ইয়াদ বারান্দায় এসে গান গেয়েছিলো। এতো সুন্দর চেহারা, লম্বা একটা ছেলে বৃষ্টিতে গান গাইছে দেখতে যে কত সুন্দর লাগছিল। সেই গান শুনেই টয়া এক ঘোরের মাঝে চলে গেছে। টয়ার খুব ইচ্ছা একদিন ইয়াদ মুগ্ধ হয়ে টয়ার দিকে তাকাবে, যদিও এখন সে বিরক্তি নিয়ে তাকায়।

ছেলেটার একটাই সমস্যা ছেলেটা বেশি পড়ালেখা পড়ালেখা করে। আজ প্রথম কথা বললো তাও দেখো কত জ্ঞান দিয়ে গেলো। সময়ানুবর্তি হও, পড়ালেখা করো, ঘোরাঘুরি করো না। কত কি বাপরে!
ইয়াদ এখন বাসায় নেই তবে কলেজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে পড়তে বসলে আর উঠার নাম নেই। ইয়াদ কে উকি মেরে দেখার জন্য টয়ার ও প্রতিদিন টেবিলে বসে থাকতে হয়। টয়ার ধারণা এভাবে আর কিছু বছর বসলেই টয়া একদিন কুঁজো বুড়ি হয়ে যাবে। সে কুঁজো হয়ে গেলে ইয়াদেরই কষ্ট হবে ওকে কাধে করে তাকেই ঘুরতে হবে।

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ১
#নবনী_নীলা

অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য, আর পেজে লাইক ফলো দিয়ে কমেন্ট করে রাখেন বাকি পর্ব পোস্ট করেই কমেন্ট বক্সে দিয়ে দেবো লিংক।

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here