তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ১০ #নবনী_নীলা

0
210

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ১০
#নবনী_নীলা

টয়া এতো রাগী হলো কবে ইয়াদ সেটাই বুঝতে পারছে না। তখন থেকে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। এমন ভাব করছে যেনো চিরো শত্রুর পাশে বসে আছে। টয়া কানে হেডফোন লাগিয়ে বাসের সীটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। সামনের ছোটো চুল গুলো গালের দুপাশে এসে পড়েছে, কিছুক্ষণ পর পর চুলগুলো উড়ে টয়ার মুখে পড়ছে। ইয়াদ বিস্ময় নিয়ে টয়াকে দেখছে। হটাৎ করে এভাবে মেয়েটার সাথে তার দেখা হয়ে যাবে এটা সে ভাবেনি।

টয়া ঘুমে কাহিল সে অন্য পাশে মাথা রেখেছে। ইয়াদ ভেবেছিলো মাথাটা ঠিক করে দিবে, হাত বাড়ালো কিন্তু সে সেটা করলো না। উপকার করতে গিয়ে ঘুম ভেঙে ফেললে মহারানী আবার তেলে বেগুনে রেগে উঠবে। টয়া নিজে নিজে ঘাড় সোজা করেলো। তারপর চোখ খুলতেই দেখলো ইয়াদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া বিরক্তি চোখে তাকালো কিন্তু ইয়াদ চোখ সরালো না। আরো এমন ভাবে তাকিয়ে থাকলো যেনো টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার অধিকার আছে তার।
টয়া কিছু বলার আগেই বাস থামলো। সবাই বাস থেকে নামতে শুরু করেছে। টয়া আর ইয়াদ দুজনেই নেমে পড়লো।

ইয়াদ অবাক হয়ে শহরটা দেখছে। অনেক কিছু বদলেছে কিন্তু আকাশটা আজও সেদিনের মতন তারায় ভরা। ইয়াদ কিছুক্ষণ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে চারিপাশ দেখছিল এর মাঝে টয়া একটা রিক্সায় উঠে চলে গেলো। ইয়াদ পরে আর টয়াকে আশে পাশে দেখলো না। মেয়েটা হটাৎ করে আবার উধাও হয়ে গেছে। দুই জনে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হলো।

______________________________

টয়ার ভার্সিটির ফাইনাল বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি টয়া একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। একটা অফিসে পার্ট টাইম জব করছে। টয়ার পুরো ফ্ল্যাট এর সব ওয়ালম্যাট টয়ার নিজের ডিজাইন করা। নিজের রুমটা মনের মত করে সাজিয়েছে সে। টয়া আর ঋতু মিলে ফ্ল্যাটটায় থাকে। ঋতু টয়ার সাথেই পড়ে, তবে বেশির ভাগ সময় ঋতু ঘুড়ে বেড়িয়ে কাটায়। তাই পুরো ফ্ল্যাট এ তার একাই থাকতে হয়। বাবা মা গ্রামে চলে গেছে, তারা এখন সেখানেই নাকি থাকতে চায়। টয়ার পড়ুয়া ভাই বিয়ে করে বড়ো ভাইয়ার কাছে চলে গেছে।
টয়া একাই এই শহরে আছে দু বছর ধরে। এই ফ্ল্যাটটা তার বড়ো ভাইয়ের দেওয়া। টয়া চাইলে তাদের পাঁচতলা বাসাটায় থাকতে পারতো কিন্তু ওই বাসায় একা থাকতে তার ভালো লাগে না। বারো তলা বিল্ডিংটার এগারো তলায় থাকছে টয়া।

বাসাটা অনেক সুন্দর দুইটা রুম, ড্রয়িং, ডাইনিং, কিচেন আর সবচেয়ে ভালো লেগেছে করিডরটা। উপরে তাকালেই তারায় ভরা আকাশটা দেখা যায়। টয়ার আজ কিছু ডিজাইন জমা দিতে হবে।

এমনেই সে লেট করে ফেলেছে। তাই জলদি ডিজাইন গুলো নিয়ে সে লিফটে দাড়ালো। লিফটটা বন্ধ হয়ে আসতেই একজন হাত দেওয়ায় দরজাটা খুলে যায়। ফরমাল ড্রেসে একজন লিফটে উঠলো। কালো প্যান্ট , সাদা শার্ট , হাতে সিলভার কালারের ঘড়ি। টয়া নিজের ডিজাইন গুলো গুছিয়ে নিতে ব্যাস্ত তাই সে লোকটাকে খেয়াল করেনি।এতক্ষন ডিজাইনগুলো ধরে রাখতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে সবগুলো এলো মেলো লিফটে হয়ে পরে যায়।

টয়া বিরক্তি নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর মাথা তুলতেই বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো কারণ সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে। তারা দুজনেই বিস্ময় নিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।

ইয়াদ দুদিন ধরে যাকে খুজে বেড়াচ্ছে সে কিনা তার সাথে একই বিল্ডিং এ আছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ঘাড় কাত করে হেসে ফেললো। টয়া একটা ঢোক গিলে ডিজাইন গুলো তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। ইয়াদ কিছু ডিজাইন তুলে নিয়ে দেখতে লাগলো, ডিজাইন গুলো দেখে বুঝতে দেরী হলো না যে টয়া একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার।
ইয়াদ কিছুক্ষণ সেগুলো দেখে তারপর বললো,” বাহ্ , impressive!”

এর মাঝে টয়ার ডিজাইন গুলো তোলা শেষ। সে উঠে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ইয়াদের হাত থেকে বাকিগুলো টান দিয়ে নিয়ে নেয়।
ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি সমস্যা তোমার? ”

টয়া বিরক্তি নিয়ে বললো,” বুঝলাম আপনি ডক্টর তার মানে এই না যে সবসময় জিজ্ঞেস করে বেড়াবেন কি সমস্যা। কি সমস্যা। আমার সমস্যা থাকলেও সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।”

টয়ার কথা শেষ হতেই লিফট নিচে নেমে দরজা খুলে দিলো। টয়া বেড়িয়ে যাচ্ছিলো ইয়াদ টয়ার হাত ধরে অন্য হাতে আবার লিফটের ১০ বাটনে প্রেস করলো। টয়ার চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো। ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে লিফটের দেওয়ালে সাথে দাড় করালো। টয়ার বিস্ময়ের সীমা রইল না। কি হয়েছে এই ছেলের? টয়া দাতে দাঁত চিপে বললো,” কি করলেন এটা আপনি? আবার কেনো উপরে যাচ্ছি আমরা?”

ইয়াদ টয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের পকেটে হাত ভরে বললো,” আমার ঘড়ি লাগবে তাই।” টয়া ভালোভাবেই দেখতে পারছে ইয়াদের হাতে ঘড়ি আছে তাহলে. আবার ঘড়ি লাগবে কেনো..?

টয়া কটাক্ষ করে বললো,” আপনার কি চোখে সমস্যা? নাকি দুই হাতে দুটো ঘড়ি পড়বেন?”
ইয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,” কালারটা ভালো লাগছে না। তাই চেঞ্জ করবো।”

এই কথা শুনে যেনো টয়ার মাথা আরো গরম হয়ে গেল। সামান্য একটা ঘড়ি বদলাতে উপরে উঠছেন তিনি। ভেবেই রাগে গা জ্বলছে। টয়া রাগ চেপে বললো,” দেখুন আপনার কাছে অফুরন্ত সময় থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে নেই। আমার এগুলো অফিসে জমা দিয়ে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।”

ইয়াদ লিফটের দেওয়ালে হেলান দিয়ে প্রশ্ন করলো,” সমস্যাটা তাহলে কার?”

টয়া রেগে গিয়ে বলল,” অবশ্যই আমার সমস্যা।”
ইয়াদ বললো,” তোমার সমস্যা নিয়ে আমি কেনো ভাববো? একটু আগেই তো বললে তোমার সমস্যা নিয়ে আমার ভাবনার দরকার নেই।”

রাগে টয়ার গা জ্বলে যাচ্ছে। টয়া ওই কথা বলেছে বলে এভাবে বদলা নিচ্ছে তো, ঠিক আছে। সুযোগ পেলে টয়াও ছেড়ে কথা বলবে না। টয়া অপেক্ষা করে আছে কখন ইয়াদ লিফট থেকে বের হবে ঘড়ির জন্য। একবার বের হলেই টয়া বাঁচে। লিফট এসে ফ্লোরে থামলো কিন্তু ইয়াদ বের হচ্ছে না, এটা দেখে টয়ার আরো রাগ হচ্ছে। ” কি ব্যাপার? যাচ্ছেন না কেনো আপনি?”

টয়ার প্রশ্নে ইয়াদ বললো,” না ঘড়িটা ভালোই লাগছে এখন। বদলানোর প্রয়োজন নেই, চলো নিচেই যাওয়া যাক।” বলে আড় চোখে টয়ার দিকে তাকিয়ে বাটন প্রেস করলো।

টয়ার রাগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। মনে হচ্ছে সে রোলার কোস্টারে উঠেছে, একবার উপরে আবার নিচে অসহ্য লাগছে। এই ছেলেটা আর কোনো বাসা পেলো না? ঢাকা শহরে কি বাড়ির অভাব পড়েছে? যত দূরে দূরে সরে থাকতে চাইছে টয়া ততবার কাছে চলে আসছে ইয়াদ।
লিফটটা নীচে এসে থামতেই টয়া দৌড়ে বেড়িয়ে এলো। মনে হচ্ছে যেনো পিছনে ডাকাতরা ধাওয়া করেছে। ইয়াদ একটু হেসে লিফট থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর ইয়াদ নিজের গাড়িতে উঠে বসলো।
_____________________

টয়া আজ এমনিতেই দেরী করে ফেলেছে। ভার্সিটিতে আবার শয়তান নিরবটা আবার এসে হাজির। এই ছেলেটা কি চাইছে টয়া বুঝতে পারছে না। টয়া এড়িয়ে যেতে চাইলো নিরব এসে হাত ধরে ফেললো।

টয়া হাত ছাড়িয়ে বললো,” দেখ আমার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। একদম জ্বালাবি না এখন।”

নিরব টয়ার দিকে রেগে বললো,”তোকে কতবার ফোন করেছি কোনো খেয়াল আছে?এনজিও থেকে ফিরে এসে দেখাও তো করলি না।”

টয়া রেগে বলল,” দেখ, নিরব আমি এখন ক্লাস এ যাবো।”

নিরব কপাল কুচকে বললো,” আচ্ছা বাবা যা। আমি বাহিরে ওয়াইট করছি ।”

টয়া হাতের ইশারায় নিরবকে থাকতে বলে ক্লাসের দিকে গেলো। টয়ার ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরব বসে রইলো ক্যান্টিনে। টয়ার ক্লাস শেষে টয়া এসে নিরবকে হাত ধরে টেনে দাড় করালো। নিরব দাড়াতে দাড়াতে বললো,” আবার কি হলো? শেষ তোর ক্লাস?”

টয়া তাড়া দিয়ে বললো,” হুম, চল এবার আমায় বাসায় দিয়ে আসবি।”

নিরব না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” এতো তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে কেনো? আমার তোর সাথে কথা আছে। আর এমনিতেই তোর বাসায় যাওয়া আমার জন্য নিষেধ করেছিস। তুই কুমারী মেয়ে , ফুলের মত পবিত্র ব্লা ব্লা……. । তুই তো বাহির থেকেই তাড়িয়ে দিস। তাই তুই আমার সাথে থাকবি কিছুক্ষণ।” বলেই নিরব আবার বসে পড়ল।

টয়া নিরবের শার্ট টেনে বললো,” উঠ এখান থেকে। গাড়ীতে যেতে যেতে কথা বলবো।চল।”

নিরব উঠে দাড়ালো এই মেয়ে নাছোড় বান্দা। নিরব একটা ট্যাক্সি ডাকলো।ট্যাক্সি ফ্ল্যাটের সামনে এসে থামতেই টয়া আর নিরব নেমে যায়। নিরব বিরক্তি নিয়ে বলে,” যা বাসায় যা।”

টয়া সেদিকেই যাচ্ছিলো হটাৎ মনে হলো এবারও যদি লিফটে ইয়াদ থাকে। ভেবেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। টয়া তাই নিরবের কাছে এলো।

নিরব ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমাকে তোর ফ্ল্যাটে যেতে তো বলবি না তাহলে আবার ফিরে এলি যে।”

টয়া আমতা আমতা করে বলল,” আমাকে একটু লিফট করে বাসার দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিবি।”

নিরব কথাটা শুনে হাসি থামাতে পারলো না। টয়া মুখ কালো করে তাকিয়ে আছে। নিরব হাসি থামিয়ে বললো,” লিফটে ভুত দেখেছিস নাকি আবার?”

নিরবের কথায় টয়া বির বির করে বললো,” ভুত না রাক্ষস।” তারপর নিরবকে টেনে নিয়ে গেলো নিজের সাথে।

লিফটে ইয়াদ ছিলো না। টয়া শান্তির নিশ্বাস ফেললো। তারপর লিফট থেকে বেরিয়ে যেই নিজের ফ্ল্যাটের সামনে যাবে তখনই দেখলো ইয়াদ ঠিক তার অপজিট ফ্ল্যাটের সামনে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে আর দরজা খুলছে। এটাই হবার বাকি ছিলো। টয়া নিরবকে যেতে বলেই পা বড় বড় পা ফেলে নিজের ফ্ল্যাটের সামনে গেলো। ইয়াদ খেয়াল না করলেই সে বাঁচে। ইয়াদ ফোনে ব্যাস্ত, টয়া এর ফাঁকে দরজা খুলে ফেললো। তারপর দরজা আটকে ফেললার আগে আবার নিরবকে যেতে বললো।

নিরব বলে উঠলো,” তুই ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ কর তারপর যাবো।”

নিরব ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরবের কথায় ইয়াদ পিছে ফিরতেই টয়াকে দেখলো। টয়া সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দিল। ইয়াদের চোখ গেলো এবার নিরবের দিকে, টয়া কার সাথে এতক্ষন ছিলো। ইয়াদ কান থেকে ফোন নামিয়ে কলটা কেটে ফোনটা পকেটে রেখে দিল। তারপর তীক্ষ্ণ চোখে নিরবের দিকে তাকিয়ে রইলো।

নিরব কি ভেবে ইয়াদের দিকে এগিয়ে বললো,” এই ফ্ল্যাটটায় আপনি থাকেন?”
ইয়াদের এমনেই মেজাজ খারাপ নিরবকে দেখে তাই সে কিছু বলল না। ইয়াদকে চুপ থাকতে দেখে নিরব খুশি হয়। সে ধরেই নেয় এই ছেলেটা বোকা রকমের হয়তো। তাই নিরব নিজে থেকেই একটু হুমকির মতো দিয়ে বললো,” এই ফ্ল্যাটে আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে, বুঝলেন?”

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here