#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্ব_১২
#নবনী_নীলা
ইয়াদ হাসি থামিয়ে বললো,” যদি বলি তাকে তুমি চিনো?”
মিলি আক্তার হা করে ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” চিনি মানে? কোথায় সেই মেয়ে?”
ইয়াদ লক্ষ করলো তার মায়ের চেহারাটা কেমন হয়ে গেলো।,” কিন্তু কোনো লাভ হয়নি মা। মেয়েটা আমার উপর রেগে আছে নাকি বিরক্ত হয়ে আছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।”
মিলি আক্তার একটু চিন্তিত হয়ে বললেন,” কিছু করেছিস তুই? রাগ করে থাকবে কেনো?”
ইয়াদ নিচু স্বরে বললো,” তুমি তো জানো রাগ হলে আমি কি করি আমার ঠিক নেই, হয়তো তাই।”
” আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে বলতে ভালো না লাগলে। বলতে হবে না।কিন্তু তুই কি মেয়েটাকে সরি বলেছিস?” বলে ছেলের কাধে হাত রাখলেন।
ইয়াদ মনে মনে বললো,” সরি বলার সুযোগ দিয়েছে নাকি? দেখলেই পালাই পালাই করে।”
ইয়াদ না সূচক মাথা নাড়ালো। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,” মনে হয় মেয়েটা অভিমান করেছে। রাগ জিনিসটা অনেকদিন পুষে রাখা যায় না। শুধু অভিমান আর ঘৃনা জমে থাকে। তোকে ঘৃনা করলে তোকে কখনো সহ্য করতে পারতো না ঠিকই কিন্তু রাগ দেখাতো না। মেয়েটা অভিমান করেছে বুঝলি। বাপ আর ছেলে হয়েছে এক রকম কিচ্ছু বুঝে না।”
ইয়াদ নিজের মায়ের কথা ফেলতে পারছে না। হয়তো সত্যিই অভিমান করে বসে আছে টয়া।
ইয়াদ প্রসঙ্গ ঘুড়িয়ে বললো,” তোমার কি বাবার কথা খুব মনে পড়ছে ? কিছুক্ষণ পর পর বাবার কথা বলছো যে?”
” তোর বাবা! ওই লোক কি জানে কিভাবে বউয়ের খেয়াল রাখতে হয়। সে দিনে যতবার খাবার খায় নিয়ম করে ততবার ফোন করে। সকালে একবার, দুপুরে একবার, রাতে একবার। এর বাহিরে একবার ও ফোন করে খোঁজ নেয় নি।”বলতে বলতে মিলি আক্তার কিচেনে চলে গেলেন।
ইয়াদ পিছু পিছু গিয়ে বললো,” তুমি তো বলো আমি বাবার মতো তাহলে আমারও নিশ্চই বিয়ের পর বউয়ের মুখে এসব শুনতে হবে। থাক বাবা বিয়ে নামক ভেজালে আমি পড়ছি না।”মিলি আক্তার আর কিছু বললেন না।
_______________________
টয়া বের হয়েছিলো ছাদে হাঁটতে যাবে বলে এমন সময় ইয়াদ ও বের হয়। ইয়াদকে দেখে টয়া রুমের ভিতরে চলে যাবে এমন সময় ইয়াদ হাত ধরে ফেলে।
টয়া বিস্ময় নিয়ে ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর বললো,” আপনি আমার হাত ধরেছেন কেনো? ছাড়ুন । কেউ দেখলে কি ভাববে ছাড়ুন।” বলে হাত ছড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।
ইয়াদ হটাৎ হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,” ছাদে যাবো চলো।”
টয়া আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” ছাদে যাবো চলো মানে? আমি কেনো আপনার সাথে ছাদে যাবো? আপনার যেতে ইচ্ছে হলে আপনি যান।”
” ছাদে যেতে বলেছি, ছাদ থেকে লাফ দিতে বলিনি। ” বলেই একটা ভ্রু তুলে তাকালো ইয়াদ।
টয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে ছাদের দিকে হাঁটতে লাগলো, তার এমনিতেই খুব আকাশ দেখতে ইচ্ছে করছে। ইয়াদের জন্যে ইচ্ছে নষ্ট করার কোনো কারণ নেই।
ইয়াদ ভেবেই পায় না, এই মেয়েটার মাথায় যে কি চলে? একটু আগে কি বলল আর এখন কি করছে?
টয়া ছাদের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত আপন মনে হেটে চলে চলেছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ বসে থেকে টয়ার হাটাহাটি দেখলো। এই মেয়ে দেখি থামার নাম নিচ্ছে না। ইয়াদ উঠে দাড়িয়ে টয়ার হাত ধরে ওকে দাড় করালো। টয়া সেই আবার শুরু করেছে আপনি আমার হাত ধরলেন কেনো…?
ইয়াদ রেগে বলল,” চুপ, আমি হাত ধরলে কি তোমার হাত খসে পড়বে?”
টয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,” সে তো পড়বেই, শুনুন আমার হাত ধরার অধিকার আপনার নেই বুঝলেন?”
ইয়াদ রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো। টয়া সেটা তোয়াক্কা না করে বললো,” রাগ দেখাচ্ছেন আমাকে? শুনুন আপনার রাগকে না আমি ভয় পাই না। রাগ দেখাচ্ছে কেনো আমাকে?”
ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া সন্দেহের চোখে বললো,” আপনি এগিয়ে আসছেন কেনো? ”
কথায় কোনো কাজ হলো না। ইয়াদ এগিয়ে আসছে দেখে টয়া পিছিয়ে যেতে লাগলো। বেশি কথা বলা ঠিক হয় নি এবার রাগের মাথায় কিছু করে বসলে।
পিছাতে পিছাতে টয়া ছাদের রেলিং আর সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ এগিয়ে এসে টয়ার দুপাশের রেলিং এ দুই হাত রাখলো।
টয়া এক ঢোক গিলে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। ইয়াদের স্থির দৃষ্টি যে টয়ার দিকে, টয়া সেটা বুঝতে পারছে। টয়া ঘামতে লাগলো, এর মাঝে ইয়াদ বলে উঠলো ” এখন ঘামছো কেনো? ”
টয়া একবার ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,” আপনি সরুন।”
ইয়াদ একটু কাছে এসে বললো,” আচ্ছা আমি কাছে আছি বলে নার্ভাস লাগছে তাই কি ঘামছো।”
ইয়াদের এই কথাগুলো শুনে টয়ার হার্টবিট বেড়ে গেছে।
টয়া কিছু বলতেও পারছে না।
ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” একটা কথা বলার ছিলো শুনবে?”
টয়া ইয়াদের চোখের দিকে তাকালো, তাকানোর সাথে সাথে আবার চোখ নামিয়ে ফেললো। ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। ইয়াদের নিরবতায় টয়ার ভয় লাগছে। কি বলবে এবার সে? ভয় গলা শুকিয়ে এসেছে টয়ার। টয়া যেনো ইয়াদের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
ইয়াদ নিরবতা ভেঙ্গে বললো,” সেদিনের জন্য কি আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?” কথাটা শুনার সাথে সাথে বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। কোনদিনের কথা বলছে ইয়াদ? টয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,” কোন দিন?” নিজের বলা কথায় ইয়াদ নিজেও লজ্জিত।
ইয়াদ একটু চুপ থেকে বললো,” আমি তোমাকে যেই কথাগুলো বলেছিলাম…. আসলে আমি নিজেও বুঝিনি কথাগুলো কতটা ভুল। সেদিনের ভুলের জন্য….” ইয়াদ বলে শেষ করার আগেই টয়া চোখ ছল ছল করে এলো টয়া নিজেকে সামলে বললো,” থাক, আমি সেসব কথা শুনতে চাই না। আর ক্ষমা চাওয়ার কি আছে আপনার যা মনে হয়েছে, আপনি যা বিশ্বাস করেছেন সেটাই বলেছেন। আর আপনি ঠিকই বলেছিলেন…. কারণ আপনি না বললে আমি বুঝতেই পারতাম না আমি যে কতটা খারাপ।”
ইয়াদ কিছু বলতে নিলো টয়া থামিয়ে বললো,” দেখুন যা হবার সেটা হয়েগেছে। আমি ভুল করেছি তার শাস্তিও পেয়েছি। এখন আর আমি কিছু মনে রাখি নি তাই আপনিও ভুলে যান।”
টয়ার কথাগুলো যেনো ইয়াদের বুকে গিয়ে বিধলো। তারপরও সে বললো,” তুমি কি এইসব রাগ করে বলছো?”
টয়া একটু হেসে বললো,” রাগ কেনো করবো বলুনতো? রাগ করিনি। বললাম তো আপনিও ভুলে যান। যদি কখনো মনে পড়ে ভাববেন সবটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো।”
ইয়াদ আর কথা বলার ভাষা খুঁজে পেলো না , ইয়াদ রেলিং থেকে হাত সরিয়ে নিলো। টয়ার গাল বেয়ে পানি পড়তেই টয়া সেটা মুছে নিয়ে ছাদ থেকে বেড়িয়ে যাবে এমন সময়ে টয়া থমকে গেলো। টয়ার পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেছে। সামনে ইয়াদের মা দাড়িয়ে, তাহলে তিনি কি এতক্ষন সবটা দেখেছেন?
[ চলবে ]
#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc