_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব > ০৬

0
340

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব > ০৬

– স্যার এসেই বললো , পত্রিকা গুলো এমন খারাপ হয়ে গেছে কেন ? একটা খবর পেলেই ভুল ত্রুটির বিচার না করে পেপারে ছাপা করে দেয় । সজীব এখন তো তোমার অনেক বড় সমস্যা হয়ে গেল , সারা বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে ।

– বললাম , আমি সেটা গতকাল রাতে আন্দাজ করেছি স্যার । তাই সারারাত না ঘুমিয়ে নিজের সুন্দর জীবনটার বিনাশ কল্পনা করেছি । আসলে স্যার কল্পনা করতে খুব ভালো লাগে আমার , আমি অনেক কল্পনা করি । মাঝে মাঝে সাহিত্যিকের মতো কল্পনা করে মাথার ভিতর গল্পের কাহিনী চলে আসে আমার ।

– স্যার বললো , প্রতিদিন সকালে আমি যখন চা খেতে বসি তখন বৃষ্টি আমাকে পত্রিকার হেডলাইন গুলো পড়ে শোনায় । আজকে চা খেতে গিয়ে বৃষ্টি প্রথম নিউজ টা পড়ে , তারপর আমাকে বলে “বাবা তোমার ছাত্র ধর্ষন করে হাজতে গেছে । ” আমি তো বৃষ্টির হাত থেকে পত্রিকাটা নিয়ে নিজের চোখে দেখে অবাক হলাম ।

– বৃষ্টি কিছু বলেনি স্যার ?

– নাহহহ ওর চেহারার মধ্যে কোন চিন্তার ছাপ আমি দেখতে পাইনি । বুঝতে পারছি না যে এমন একটা খবরে বৃষ্টি স্বাভাবিক ভাবে কথা বললো ?

– বললাম , যার কাছে আমার কোনো মূল্য নেই সে আমার বিপদ শুনে স্বাভাবিক থাকবে এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই । পরশু রাতে আমি আসার সময় বৃষ্টি আমাকে বলেছিল , আমি যেন আর কখনো তার সাথে দেখা না করি । আপনার বাসা থেকে বেরিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেছিলো অনেক কিন্তু ভোর রাতে যখন আমি এরেস্ট হয়ে হাজতে আসলাম তখন মনে হলো এ ভালোই হলো ।

– শফিক বললো , স্যার আরেকটা বিপদের আশঙ্কা করা যাচ্ছে ।

– স্যার বললো , কি বিপদ ?

– গলির মোড়ে পান্নু চাচার দোকানে বসে কিছু আলোচনা শুনে বুঝতে পারছি যে , এই ধর্ষনের মধ্যে যদি উপরের কোন বড়লোক ছেলের হাত থাকে তাহলে তুলি কে হাসপাতালে মেরে ফেলতে পারে ।

– স্যার বললো , ঠিক বলছো তুমি । এটা অবশ্যই হতে পারে কিন্তু হাসপাতালে সিকিউরিটি শক্ত করতে বলতে হবে ।

– আমি বললাম , স্যার একটা অনুরোধ ছিল ?

– কি অনুরোধ ?

– মন খারাপ করবেন না আর বেয়াদবি মাফ করে দিবেন স্যার , ” আপনি আজকের পর থেকে আর আমার সাথে দেখা করতে আসবে না । আপনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি তাই আপনি দিনের মধ্যে এত আসা যাও করলে মানুষ খারাপ কথা বলবে আপনাকে । আমি চাইনা কেউ আপনার সম্মানে আঘাত দিয়ে কথা বলুক ।

– এটা কেমন কথা ? কে কি বলবে ? আর তাছাড়া তুমি মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গেছো তোমাকে সাহায্য করতে হবে ।

– আমাকে আমার ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেন , আর কিছু বলার নেই আমার ।

– তোমার কথা শুনে খুবই কষ্ট পেলাম , আমি এমন কিছু আশা করিনি ।

– প্লিজ স্যার ভুল বুঝবেন না আমাকে , আপনি কথা গুলো ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন ।

– বুঝতে পারছি সজীব , আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থেকো সবসময় ।

– চেষ্টা করবো স্যার , দোয়া করবেন ।

★★

স্যার পিছনে ফিরে হাঁটা শুরু করে একটু পরে চোখের আড়াল হয়ে গেল । আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে দেয়ালের দিকে বড় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছি । পত্রিকায় যখন ছাপা হয়েছে তখন আমার গ্রামের বাড়িতে খবর চলে যাবে আমি জানি । এরপর বাবা জানতে পারবে , এলাকার মানুষ বাবাকে নানা ধরণের কথা বলবে । বাবা তখন লজ্জিত নতমস্তকে কি করবে সেটাই তো চিন্তার বিষয় ।

– শফিক বললো , আমরা এখন যাইরে পরে আবার আসবো । আল্লাহ আল্লাহ কর এছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই রে ভাই ।

– বললাম , তোরা বেশি বিচলিত হয়ে কিছু করিস না শফিক । ভাগ্যে যা আছে তাই হবে , খালার বাসায় গিয়ে মাঝে মাঝে খবর নিবি । হাসপাতালে তুলির অবস্থা কেমন কি ঘটে সেটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করিস । এতটুকু ।

– আচ্ছা গেলাম আমরা ।

– ঠিক আছে যাহহহ ।

,
,

বন্ধুদের এমন উপকার সত্যিই মুগ্ধ করে আমাকে , কলেজ জীবনে এসে তাদের সাথে পরিচয় । কিন্তু তারা এই পরিচয় এর জন্য আমাকে কতটা আপন ভেবে আজ আমার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছে । কিন্তু আমার যে কি হবে সেটাই বুঝতে পারছি না । জগতে কিছু বন্ধু ও আত্মীয় থাকে যারা কিন্তু যখন দুঃখ কষ্ট আসে তখন সেই দুঃখ কষ্টের ভাগ নিতে হবে এই ভয়ে সরে পড়ে । কিন্তু এখানে তাদের কোন দোষ নেই দোষ হচ্ছে প্রকৃতির কারণ আল্লাহ কিছু কিছু মানুষকে এমন করেই তৈরি করেছেন । তারপরেও কিছু কিছু মানুষ আছে যারা দুঃখ- কস্টের সময় পাশে এসে দাঁড়ায় । যদিও দুঃখ- কষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত বড় কোন অস্ত্র তাদের হাতে থাকে না । তাদের থাকে শুধু হৃদয় পূর্ণ ভালবাসা ।

হঠাৎ করে বৃষ্টির কথা খুব মনে পরছে , মনটা কেন যেন বলে উঠলো ” আচ্ছা একবার সে আসলে হয়না ? তার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পৃথিবী ভুল থাকতে পারতাম । ” আবার ভাবলাম , ভালো অবস্থায় যে আমাকে তার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দিল তার কথা চিন্তা করে মন খারাপ করে লাভ কি ? বৃষ্টি সবকিছু ভুলে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করছে , নতুন একটা পৃথিবী কল্পনা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত । তার সেই কল্পনার জগতে আমার কোন স্থান নেই , থাকার কথাও নেই । তবুও তার ভালো থাকা দেখে আমি কি কষ্ট পাবো ? ধুর কত বোকা আমি , সে ভাল আছে জেনে কেন অামার কষ্ট হবে ? বা সে ভাল নেই দেখে আমার মন খারাপ হবে , ভীষন কান্না পাবে , খুব করে করে বকে দিয়ে আসতে ইচ্ছে হবে বলতে মন চাইবে শরীরের ঠিকঠাক যন্তটাও নিতে পার না ? তার সেম্পু করা চুলে হাত দিয়ে বুলাতে ইচ্ছে করবে কেন ? পরন্ত বিকেলে কোন এক নদীর পাড়ে ,পাহারে অথবা পূর্নিমা রাতে তার হাতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে কেন হাঁটতে মন চাইবে ?

আমি বৃষ্টিকে পাঁচ বছর ধরে মনে মনে ভালবাসে স্থান দিয়ে রেখেছি । সেই ভালবাসা পাঁচ বছর ঘুমিয়ে ছিল তাই এখনো তারা ঘুমিয়ে গেছে । আমার ভালবাসা ঘুম থেকে জাগ্রত করে আদর করে দেবার মত বৃষ্টি নেই । নাহলে পরশু বিকেলে কত কথা বলার পরও সে আমাকে কত স্বাভাবিক ভাবে বললো আমাদের আর দেখা হবে না । কত বিচিত্র দৃশ্যের ঘটনা ঘটে গেছে আমাদের চতুর্পাশের দ্বারে । সত্যি বলতে কি , এই পৃথিবীতে যতগুলো কঠিন কাজ আছে তারমধ্য একটা কঠিন কাজ হলো কাউকে বুঝতে পারা । আমি যখন কারো সাথে অনেকটা পথ হাঁটবো কিন্তু তার তার মনের অবস্থা যদি তুমি বুঝতে না পারি ! তাহলে আমি তার আপন মানুষ কিভাবে হবো ? ভাঙা আয়নায় দাগ থেকে যায় সত্যি তবে সেই দাগ গুলোই জীবনের বাকি পথ মসৃন করে দেয় ।

,
,

রোটারি স্কুলের পাশে বায়তুল আমান জামে মসজিদ এ আসরের আজান শোনা যাচ্ছে । আমি শুয়ে ছিলাম , আজান শুনে বসে পরলাম , মশা গুলো বেশি বিরক্ত করছে । এই মুহূর্তে একটা ঘটনা ঘটে গেল যেটা আমি ভাবতে পারিনি । আমার সামনে বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে , মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট । দুজনের মাঝখানে শুধু লোহার শিক দিয়ে আসামি কয়েদ করা । বৃষ্টি কে দেখে চমকে উঠলাম , বসা থেকে উঠে তার সামনে গেলাম । বৃষ্টি আমার দিকে তাকিয়ে আছে , আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি । অদূরে থানার এক পুলিশ টেবিলে বসে খাতা পত্রে কি যেন লেখালেখি করছে ।

– বৃষ্টি বললো , আপনার সাথে এমনটা নাহলেও পারতো ।

– বললাম , নিজের কপাল খারাপ তাই কারো প্রতি অভিযোগ নেই । জীবনের একটা সমাপ্তি রেখা চলে এসেছে আমার সামনে । যদি আবেদন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারি তাহলে তো ভালো , নাহলে জীবন টা সমাপ্ত হয়ে যাবে । মৃত্যুতে ভয় কিংবা ক্ষতি নেই আমার , কিন্তু সেই মৃত্যুটা যদি মৃত্যুর পরেও তাড়া করে তাহলে আফসোস ।

– সকাল বেলা পত্রিকায় খবরটা পড়ে আপনার নাম টা দেখে অবাক হলাম । বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি থতমত খেয়ে গেল , আর আমিও স্বাভাবিক ভংগী করে বেরিয়ে পরলাম । কিন্তু মনে মনে এক তিব্র চিন্তা বাসা বেঁধেছে মনের মধ্যে ।

– এখন আর মিথ্যা মায়া করে লাভ কি ? আমার জীবন অদ্ভুত এই জীবনের সাথে কারো চোখের দু ফোঁটা অশ্রু মেশাতে চাই না ।

– বৃষ্টি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই থানার মধ্যে রকি আসলো । আমাকে বললো , সজীব তোর বলা মেসের মধ্যে চলে এসেছে । তিনি মনে হয় তোর বিষয় টা জেনে গেছে তাই সরাসরি চলে এসেছে । জাফর ভাই আর শফিক কথা বলছে আমি পিছন থেকে চলে আসলাম । কি হবে এখন ?

– বাবা কি থানায় আসবে ?

– জানিনা ।

,
,

হঠাৎ করে পিছনে দাঁড়িয়ে চিকন সেই পুলিশ বললো , একটা আসামি ধরে তো মহাবিপদে পরে গেলাম । সকাল বিকাল এককভাবে সিরিয়াল দিয়ে শুধু আসতেই থাকে মানুষ । এই যে মিঃ সজীব , আজকে রাতের মধ্যে সবার সাথে দেখা করে নেও । আগামীকাল সকালে তোমাকে খুলনা জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ এসেছে । মামলার সবকিছু লিখে সাজানো শেষ ।

চলবে…

বিঃদ্রঃ – পড়তে বিরক্ত হলে জানাবেন , আর সবাই গঠনমূলক আলোচনা করবেন । ধন্যবাদ ।

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here