কথা দিলাম ‘ 🌸❤️ ||পর্ব ~ ২৮|| @কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
314

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ২৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সিয়ারার বিষয়টা মনে পরতেই ও উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। সেটা দেখে দিয়ারা নিজের ব্যাগ নিয়ে গেলে দেবাংশু জিজ্ঞেস করে,

দেবাংশু: (হতাশ হয়ে) তুই যাবি না আমাদের সাথে?

দিয়ারা: আব, আমি জানি না দেবদা। ভিকিদা আমাকে এখনও কিছু জানায়নি।

দেবাংশু: কেন? তুই আজ কাল আধভিকের কথায় উঠছিস বসছিস নাকি? (রেগে)

দিয়ারা: ভিকি দার নামে কোনো বাজে কথা আমি শুনতে চাইছি না দেবদা। প্লিজ! (উল্টো রাগ দেখিয়ে)

দেবাংশু: বাহবা? এতো ভালোবাসা?

দিয়ারা: শ্রদ্ধা বললে বেশি ভালো হবে। আজ অবধি ভিকিদা আমার জন্য যা যা করেছে তার সব কিছুর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ইভেন আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটাও ভিকিদার জন্যেই। তোমাকে এত ডিটেইলস বলার সময় নেই আমার সো বাই। নেক্সট দিন আমার সামনে কোনো খারাপ কথা বলতে এসো না ভিকিদার নামে, আমি মেনে নেব না।

দিয়ারা নিজের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো দেবাংশুকে পাশ কাটিয়ে। দেবাংশু অবাক ও বিরক্ত হয়ে বললো,

দেবাংশু: দুই বোন এক গোয়ালের গরু। আধভিকের নামে বাজে কথা বললেই দুটো কথা শুনিয়ে দেবে। ডিসগাস্টিং!

[আমার কিপ্যাডটা একটু প্রবলেম করছে, দেবাংশু নামটা লিখতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। তাই আমি কি দেবাংশু নামটা শুধু দেব লিখে চিহ্নিত করতে পারি? তাহলে খুব সুবিধা হয় আমার। আজকের পর্বে লিখবো না, আপনাদের অসুবিধা না হলে মন্তব্য করবেন তাহলেই লিখবো পরের পর্ব থেকে।]

সিয়ারা রেডি হয়ে বেড়াতেই দেখলো ঘরে কেউ নেই। মনে পড়ে গেলো দিয়ারার আজকে শুট আছে তাই ও চলে যাবে বলেছিল সকাল সকাল। আর বেশি কিছু না ভেবে সিয়ারা নিজের ব্যাগ গোছাতে শুরু করলো।

অন্যদিকে,

দিয়ারা আধভিকের অফিসে এসে দেখলো আধভিক কেবিনে বসে আছে চোখ বন্ধ করে। দিয়ারা প্রশ্ন করলো,

দিয়ারা: আজকে তো আমার একটা ফটোশুট ছিলো ম্যাগাজিনের জন্য। তুমি কি সেটা পোস্টপন করেছো?

আধভিক: হ্যাঁ। যা ফ্ল্যাটে গিয়ে রেডি হয়ে, লাগেজ গুছিয়েনে। আজকে দুপুরের ফ্লাইটে আমরা বাগডোগরা যাচ্ছি।

দিয়ারা: আমি গিয়ে কি করবো ভিকিদা? আমার তো কোনো কাজ নেই ওখানে।

আধভিক এইবার চোখ খুলে দিয়ারার দিকে তাকালে দিয়ারা একটু ঘাবড়ে যায় কারণ আধভিকের চোখজোড়া লাল হয়ে রয়েছে। যদিও এটা নতুন কিছু নয় এবং গতকাল রাতে কি ঘটেছে সেটার পর বিষয়টা অস্বাভাবিক লাগার কথা নয় দিয়ারার কাছে। তবুও কেন জানো সে ভয় পেয়ে গেল।

আধভিক: আমি বলেছি যখন তুই যাবি তখন তুই যাবি। কাজ থাকুক না থাকুক, সেসব জানার প্রয়োজন নেই। ঠিক আছে?

দিয়ারা: ঠিক আছে। বলছি…তোমার কি মাথা যন্ত্রণা করছে?

আধভিক: এটা নতুন কিছু নয় আমার জন্য। সয়ে গেছে এইসব ছোটো খাটো যন্ত্রণাগুলো আমার। বড়ো বড়ো আঘাত বুকে নিয়ে এখনও বেঁচে আছি, এগুলো নগণ্য। (তাচ্ছিল্য হেসে)

দিয়ারা বুঝতে পারলো আধভিক গতরাতের কথাই বোঝাতে চেয়েছে। সেও কম কষ্ট পায়নি গতরাতের বিষয়ে তার মানে নিশ্চয় বড়ো কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। যাঁর দরুন দুজনেই কষ্ট পাচ্ছে। দিয়ারা সবটা বলার জন্য বললো,

দিয়ারা: ভিকিদা, আমার তোমাকে কিছু বলার আছে। খুব জরুরী।

আধভিক: আপাতত আমাদের ফ্লাইটটা খুব জরুরী। ওখানে গিয়ে সব শুনবো যা রেডি হয়েনে এখন গিয়ে।

কথাগুলো বলে আধভিক নিজের মুখ দু হাত দিয়ে ঢেকে বসলো। দিয়ারা চেয়েও আর কিছু বলতে পারলো না কারণ সত্যি হাতে সময় কম। তাই সে চটজলদি বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে নিজের ফ্ল্যাটের উদ্দ্যেশ্যে।

ইন দম দম এয়ারপোর্ট,

আভাস বাবু, আধভিক এবং দিয়ারা এয়ারপোর্টে পৌঁছে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো সিয়ারা এবং দেবাংশু ফরমালিটিস কমপ্লিট করছে। ওরাও সেসব কমপ্লিট করে, বাসে করে নিজেদের প্রাইভেট জেটের কাছে চলে গেলো। ইতিমধ্যে সবাই এসে পরেছে এবং লাগেজও তোলা হয় গেছে।

জেটে বসার পর সিয়ারার হঠাৎ চোখটা আধভিকের দিকে গেলো যে কি না তাঁর বিপরীত দিকের রো তে জানলার কাছে বসে আছে। আধভিকের পাশেই রয়েছেন আভাস বাবু এবং অপরদিকে দিয়ারা। সিয়ারা বোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে হঠাৎই দুজনের চোখ পরে যায় এবং দিয়ারা উঠে এসে সিয়ারার মুখোমুখি বসে। দিয়ারা বসতেই দেবাংশু অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

দিয়ারা: (মনে মনে — যাহ বাবা! এর আবার কি হলো?…ওহ, সকালের বলা কথাগুলো মনে হয় গায়ে লেগেছে বাবুর। আমিও দেখি, কতক্ষন এমন ভাবে থাকতে পারেন মশাই।) এই দি?

সিয়ারা কোনো উত্তর না দিয়ে দিয়ারাকে হাত ধরে নিজের সামনের দিকে টেনে নিয়ে কানে কানে বললো,

সিয়ারা: কি হয়েছে তোর ভিকিদার? এভাবে বসে আছে কেন সে?

সিয়ারা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছে আধভিকের চোখ লাল হয়ে রয়েছে। ওর দিকে যে তাকাবে না এটা বুঝতেই পেরেছিলো ও। কিন্তু এতটা চুপচাপ থাকার কারণ বুঝতে পারছে না সিয়ারা। দিয়ারা উত্তর দিতে যাবে তার আগেই দেবাংশু উঠে চলে গেলো ওদের স্পেস দেওয়ার জন্য।

দিয়ারা: এটা তোর কাছে অস্বাভাবিক হলেও আমাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক বিষয় দি। এই দু বছরে বেশির ভাগ রাত ভিকিদা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। যেদিন যেদিন নেশাটা বেশি হয়ে যেত, রাতে ঘুমাতো না তারপরের দিন সকালেই এমন দেখা যেত। নেশা করার পরেও মানুষটার নাকি ঘুম হয় না, ভাবতে পারছিস দি? এক/দু ঘন্টা ঘুমাতো তারপরেই নাকি ঘুম ভেঙে যেতো আর ছটফট করতো।

দিয়ারা থামলো এটুকু বলে। দিদির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে আধভিকের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আধভিকের কোনো হেলদোল নেই সে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে, পিছন দিকে মাথা এলিয়ে বসে আছে।

দিয়ারা: গতরাতে যা হয়েছে তাতে এমন হওয়াটা…

দিয়ারার কথা শেষ হওয়ার আগে সিয়ারা একটা বাম হাতে দিলো ওর। দিয়ে বললো,

সিয়ারা: এইটা দিয়ে একটু ম্যাসেজ করে দিতে বল ঠিক হয়ে যাবে নিমিষে। যা, দেরী করিস না।

আর কথা না বাড়িয়ে দিয়ারা উঠে চলে গেলো। আভাস বাবুর কানে কানে কথাটা বলে হাতে দিল বামটা ওনার। কিছুক্ষণ বাদে আভাস বাবু ধীরে ধীরে বামটা আধভিকের কপালে দিয়ে ম্যাসাজ করে দেন। কিছু মুহুর্ত পর হঠাৎ করেই আধভিক দিয়ারাকে বলে ওঠে,

আধভিক: তোর দিদিকে বলে দিস আমার উপর জানো দয়া না দেখায়। আধভিক রায় চৌধুরীর কাওর দয়ার প্রয়োজন নেই।

আধভিক আভাস বাবুর হাতটা ধরে ওনার দিকে তাকালে উনি হাত নামিয়ে মাথা নিচু করে নেন। আধভিক দিয়ারার দিকে তাকালে দিয়ারা চোখ নামিয়ে নেয়। এরপর জানলার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় আধভিক, কারণ সে আড় চোখে খেয়াল করেছে সিয়ারা তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে।

সিয়ারা: (মনে মনে — এতটা অবহেলা, ঘৃণা পাওয়ার মতোও কিছু করিনি আমি আধভিক। একটা সুযোগ তো আমিও ডিসার্ভ করতাম। কিন্তু তুমি আমাকে কোনো সুযোগ দিলে না, একের পর এক দোষারোপ করে গেলে আমায়। ঠিক আছে, তোমায় কিছু না জানিয়ে ছেড়ে চলে গিয়ে ভুল করেছিলাম। সেটার শাস্তি হিসেবেই এসব আমি মাথা পেতে নিলাম।)

সিয়ারা নিজের চোখের কোণে থাকা জলটা আড়াল করে নিয়ে জানলার দিকে তাকালো। অন্যদিকে, আধভিক মনে মনে ভাবছে,

আধভিক: (মনে মনে — কাল যেটা দেখেছি সেগুলো কি সত্যি? নাকি এর পিছনে অন্য কোনো বিষয় আছে? ওরকম ভাবে এক তরফা অ্যাকিউস করা কি ঠিক হলো সিয়ারাকে? উফ! আমি আর কিছু ভাবতেই চাইছি না। কেন ফিরে এলে সিয়ারা? কেন? আমার আর এই অশান্তি ভালো লাগছে না।)

বাগডোগরা পৌঁছানোর পর সেখান থেকে গাড়ি করে সবাই রওনা দিল দার্জিলিংয়ের উদ্দ্যেশ্যে। দার্জিলিংয়ের ফাইভ স্টার হোটেলে পৌঁছানোর পর সিয়ারা নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলো। দিয়ারা ফ্রেশ হয়ে সিয়ারার রুমে এসে ওকে ঘুমাতে দেখলে আর কিছু বলে না।

দিয়ারা: (মনে মনে — দেবা দেবী দুজনেই সমান। যদিও ভিকিদার ঘুমানোর যথেষ্ট কারণ আছে। তবে এই মেয়েটা? এই মেয়েটা ঘুমিয়ে পরলো? ধুর, ভেবেছিলাম ভিকিদাকে সবটা বলবো কিন্তু সুযোগই তো পাচ্ছি না। কি যে করি…)

এইসব ভাবতে ভাবতেই দিয়ারা নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছিলো তখন কেউ ওর হাতটা পিছন দিয়ে টেনে ধরলো। পিছন ফিরতেই দেখলো দেবাংশু দাঁড়িয়ে আছে।

দিয়ারা: কিছু বলবে?

দেবাংশু: এড়িয়ে চলছিস কেন আমাকে? সকালের ঘটনার জন্য?

দিয়ারা: কোথায় এড়িয়ে চললাম? সুযোগ কোথায় পেলাম তেমন কথা বলার?

দেবাংশু: সত্যি তাই?

দিয়ারা: হ্যাঁ। আমি ঘরে যাচ্ছি, ঘুম পাচ্ছে আমার। তুমিও শুয়ে পরো এতটা জার্নির পর টায়ার্ড নিশ্চই।

দিয়ারা কথাটুকু বলে ঘরে ঢুকে যায় কিন্তু দেবাংশু নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে ঠাঁয়। কিছু মুহুর্ত পরই দিয়ারা আবার বেরিয়ে এসে বলে,

দিয়ারা: নাহ মানে আটকাবেও না? আবার যাবেও না? কি চাইছো টা কি তুমি? (রেগে)

দেবাংশু: তোকে!

দিয়ারা: হম? কি?

দেবাংশু: (আমতা আমতা করে) আব, ইয়ে মানে তোর সাথে কথা বলতে চাইছি। তুই তো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলি।

দিয়ারা: (একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে) কি বলবে বলো?

দেবাংশু: স্যরি! সকালে আমার ওভাবে বলা উচিত হয়নি। আমি অত কিছু না ভেবেই বলে ফেলেছি। (মাথা নিচু করে নিয়ে)

দিয়ারা: (হাসিমুখে) ঠিক আছে। এইবার যাও গিয়ে শুয়ে পরো। কারণ কালকে সকালে তোমাদের বেড়াতে হবে। আমি ঘরে ঘুমাবো আমার কোনো অসুবিধা নেই দেরী করে ঘুমালে।

দেবাংশু: তুই যাবি না আমাদের সাথে? (উত্তেজিত হয়ে)

দিয়ারা একটু অবাক হয়ে তাকালো দেবাংশুর দিকে। সঙ্গে সঙ্গে দেবাংশু কথাটা ঘুরিয়ে বললো,

দেবাংশু: না মানে হোটেলে একা থাকবি? সেটা কি ভালো হবে? তার থেকে আমাদের সাথে গেলে তোর সময় কেটে যাবে। বোর হতে হবে না ঘরে বসে।

দিয়ারা: (মুচকি হেসে) সেটাই তো ভেবেছিলাম আমি তবে আমার ঘুম পূরণ না হলে তো আমি উঠতে পারবো না তখন আমাকে হোটেলে একা একা বোরই হতে হবে। (দুঃখ দুঃখ মুখে করে)

দেবাংশু: না না তুই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর। অনেক জার্নি হয়েছে আজকে, তুইও টায়ার্ড আর আমিও। গুড নাইট, সকালে দেখা হবে।

দিয়ারা: গুড নাইট! (হাসিমুখে)

দেবাংশু হালকা হেসে দিয়ারার গালটা আলতো করে টেনে দিয়ে চলে গেলো। দিয়ারা নিজের গালে হাত দিল, ঠিক সেই জায়গায় যেখানে দেবাংশু ধরেছিলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো,

দিয়ারা: এই ছেলেটা পুরোই পাগল! কিন্তু হঠাৎ এমন ব্যবহার করছে কেন ও? ধুর, আমি বেশি ভাবছি।

দিয়ারা ঘরে গিয়ে শুয়ে পরে তাড়াতাড়ি। এদিকে দেবাংশুও ঘরে এসে নিজে নিজের বলতে থাকে,

দেবাংশু: যতই নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি ততই লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছি দিয়ার সামনে। এমন কেন হচ্ছে আমার সাথে? এমনটা হলে কীভাবে হবে? এরপর থেকে সাবধানে থাকতে হবে।

দেবাংশুও ঘুমিয়ে পরে সুধাংশু বাবুকে ফোন করে। উনি যেহেতু আসেননি তাই চিন্তা করতে পারেন সেই ভেবেই দেবাংশু ফোন করে নিজেদের খবর দিয়ে ওনারও খোঁজ নিয়ে নিলো তারপর ঘুমিয়ে পরলো।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here