কথা দিলাম ‘ 🌸❤️ ||পর্ব ~ ৩১|| @কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
276

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

দিয়ারা গিয়ে দেবাংশুকে কাঁধে হাত দিয়ে ডাকতেই দেবাংশু চমকে উঠলো। দিয়ারাকে কাঁদতে দেখে দেবাংশু পাশে তাকাতেই দেখলো আভাস বাবু রাস্তায় বসে আছেন নিস্তেজ হয়ে। ওনার মাথায় সিয়ারার কথাগুলো ঘুরছে,

“জানি না হয়তো শেষবারের জন্য আপনাকে এই ডাকটা ডেকে নিলাম। শুধু এটুকু বলবো, আপনার ছেলে আমাকে যেভাবে ভালোবেসেছে, সেভাবে ভালো না বাসলেও তাঁর থেকে কম ভালোবাসিনি আমি। আফসোস, ও আমাকে বুঝলো না।”

দেবাংশু ওনার কাছে গিয়ে বসতেই উনি বললো,

আভাস বাবু: আমার ছেলেটা এতো অবুঝ কেন বলো তো? মেয়েটা কত চেষ্টা করছিল ওকে সবটা বলার, সবটা বোঝানোর কিন্তু ও বুঝলো না। মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে, আজকে সকালে ওর কথা শুনেই আমার মনটা কেমন জানো কু ডাকতে শুরু করেছিল। মনে হচ্ছিলো সিয়া মা হয়তো অনেক দূরে চলে যাবে!

আভাস বাবু কানে সিয়ারার কথাগুলো সমানে বাঁজছে।

“ধরে নিন না আপনার ছেলে যাকে ভালোবেসে ছিলো সে একজন বিশ্বাসঘাতক ছিলো। মরে গেছে সে, আর ফিরবে না।”

আভাস বাবু: সিয়া মা যদি সত্যি আর না ফেরে তাহলে আমার ছেলেটার কি হবে? আজ ও যদি নিজের দোষে সিয়া মাকে হারায় তাহলে যে ও নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবে না। এতদিন যা’ও আটকে রেখেছিলাম তা’ও আর পারবো না। শেষ করে দেবে ও নিজেকে। দুটো জীবন শেষ হয়ে যাবে আর এই ভয়টাই আমি পাচ্ছিলাম।

আভাস বাবু ডুকরে কেঁদে উঠলে দেবাংশু নিজেকে শক্ত করে আভাস বাবুকে ভরসা দিয়ে বলে,

দেবাংশু: আমি নীচে যাচ্ছি আংকেল। আপনি চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হবে।

দিয়ারা: এইভাবে একের পর এক তোমরা যদি খুঁজতে যাও তাহলে কীভাবে হবে? ভিকি দা সেই যে নেমেছে এখনও ফিরলো না। এর থেকে বরং পুলিশকে ফোন করো। তুমি যেও না প্লিজ। (কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে)

দেবাংশু: আমি এদিক দিয়ে নামবো না রাস্তা দিয়ে যাবো। কিচ্ছু হবে না আমার, আসছি আমি। (দিয়ারাকে আশ্বাস দিয়ে)

দেবাংশু উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক পা এগোতেই দুর থেকে কিছু একটা দেখতে পেলো। বৃষ্টির গতির পরিমাণ কমে গেছে অনেক। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে এখন শুধু কিন্তু কুয়াশা ছেয়ে আছে তাই সে ঠিক দেখতে পাচ্ছে না। নিজে আর একটু এগিয়ে যেতেই দেবাংশু বুঝতে পারলো আর একটু জোর দিয়ে বললো,

দেব: দিয়া! আধভিক আসছে।

দেবাংশুর কথা শুনে দিয়ারার সাহায্য নিয়ে আভাস বাবু উঠে দাঁড়ালেন। আভাস বাবু দেবাংশুর কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলেন আধভিক অনেকটাই এগিয়ে এসেছে তাঁদের দিকে। আধভিক নিজের কোলে সিয়ারাকে নিয়ে এগিয়ে আসছে। ওদের কাছে এসেই আধভিক বললো,

আধভিক: বেশি কিছু হয়নি। মাথায় চোট পেয়েছে। ডক্টরকে কল করে হোটেলে ব্যাক করতে হবে রাইট নাও, ফাস্ট!! এখানে থাকাটা ঠিক হবে না বেশিক্ষণ।

আধভিকের কথার কেউ অমান্য করলো না এবং তাড়াতাড়ি সেই গাড়িতে উঠে পড়লো যে গাড়িতে আভাস বাবুরা ছিলেন। গাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে হোটেলের দিকে রওনা দেয় ওরা সবাই। পুরোটা রাস্তা আধভিক সিয়ারার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে রাখে।

তিন ঘণ্টা পর,

সিয়ারা নিজের রুমে শুয়ে আছে। দিয়ারা গিয়ে চেঞ্জ করিয়ে দিয়েছে সিয়ারার ড্রেস। এখন ডক্টর চেক আপ করছেন। আধভিক এখনও ভেজা গায়েই দাঁড়িয়ে আছে সিয়ারার ঘরের বাইরে, লবিতে একটা জানলার বাইরে তাকিয়ে। সেই সময় আভাস বাবু ফ্রেশ হয়ে এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

আভাস বাবু: কীভাবে পেলে ওকে?

আধভিক একটু নড়ে চড়ে উঠে বলতে শুরু করলো,

ফ্ল্যাশব্যাক……………………………….

আধভিকের মাথায় আসে যে এখান থেকে নীচে গড়িয়ে গিয়ে মেইন রাস্তায় উঠবে সিয়ারা। তখন কোনো গাড়ি চলে এলে…আর ভাবতে পারলো না আধভিক। সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে যে জায়গাটুকু ধসে গেছে, ওই জায়গাটার পাশ দিয়ে নামতে শুরু করলো। তাড়াহুড়ো করায় আধভিকের পা পিছলে যায় এবং ও গড়িয়ে পরে যেতে থাকে কিন্তু বাঁচার জন্য চট জলদি একটা গাছ ধরে নেয়। ধীরে ধীরে গাছটা ধরে উঠে দাঁড়িয়ে আশে পাশে তাকিয়ে দেখতে থাকে সিয়ারাও গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে আটকে গেছে কি না। কিন্তু দেখতে না পাওয়ায় আধভিক আবারও নীচে নামে।

আধভিক: সিয়ু কোথায় তুমি? আ’ম স্যরি! তোমার কথা না শুনে আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি। বাট আজকে যা হয়েছে সেটা, সেটা….

আধভিকের হঠাৎই চোখ গেলো রাস্তার উপর। সে প্রায় নীচে নেমে এসেছে তাই রাস্তা দেখা যাচ্ছে এখন। আধভিক দৃশ্যটা দেখা মাত্রই একপ্রকার ছুটলো কারণ সিয়ারা রাস্তার উপর অচৈতন্য অবস্থায় পরে আছে। যেকোনো সময় গাড়ি চলে আসতে পারে। আধভিক গিয়ে সিয়ারার কাছে পৌঁছতেই পিছনে তাকিয়ে দেখলো গাড়ি আসছে। সাথে সাথে সিয়ারাকে টেনে নিয়ে পিছনে সরে এলো ও।

আধভিক: এই সিয়ু, সিয়ু! এই জান, চোখ খোলো না?

আধভিক সিয়ারার গালে হাল্কা ভাবে থাপ্পড় দিতে দিতে ডাকতে থাকে। সিয়ারার চোখে মুখে বৃষ্টির জল পরায় সিয়ারা কপাল কুঁচকে পিটপিট করে চোখ খুলে আধভিকের দিকে তাকায়। প্রথম দেখায় সব ঝাপসা লাগলে চোখ বন্ধ করে আবারও চোখ খুলতেই সিয়ারা স্পষ্ট আধভিককে দেখতে পায় কিন্তু কিছু বলার আগেই নিমিষে সিয়ারার চোখের সামনে আবারও সব ঝাপসা হয়ে যায়।

সিয়ারাকে চোখ খুলতে দেখে আধভিক স্বস্তি পায় কিন্তু আবারও সিয়ারা অজ্ঞান হয়ে গেলে আধভিক লক্ষ্য করে সিয়ারার কপালে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। হয়তো উপর থেকে গড়িয়ে পরার সময় কোনো পাথরে আঘাত পেয়েছে। আর সেই কারণেই হয়তো গতি হারিয়ে মাঝ রাস্তায় না উঠে, রাস্তার একটা পাশে এসে পরেছিলো। আধভিক কান্নারত অবস্থায় সিয়ারার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে,

আধভিক: আ’ম রিয়েলি রিয়েলি স্যরি সিয়ু! আমি ভাবিনি এতো কিছু ঘটে যাবে। আমি তোমার সব কথা শুনবো জান, সব কথা। আমার ভুল হয়ে গেছে অনেক বড়ো। আমি বুঝতে পারিনি তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি অতীতকে আগলে রেখে বর্তমানকে অবহেলা করেছি। আর না, আমি আর তোমাকে কষ্ট দেবো না, অবহেলা করবো না। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সো মাচ! তোমাকে ছাড়া বাঁচা, সত্যি আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আধভিক সিয়ারার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে সিয়ারাকে কোলে তুলে নেয়। হাঁটতে থাকে রাস্তার একদম পাশ ধরে। ধীরে ধীরে এগোতে এগোতে যখন দেখে বৃষ্টি তাঁর গতি হারিয়েছে তখন সে নিজের গতি বাড়ায়। দূর থেকে ধীরে ধীরে ওর চোখের সামনে স্পষ্ট হয় দেবাংশু দাঁড়িয়ে আছে এবং ওর পিছনে দিয়ারা আর ওর ড্যাড আভাস বাবু।

প্রেজেন্ট………………………………..

আধভিক একটা হতাশা সহিত নিশ্বাস ছাড়ে। আভাস বাবু আধভিকের অবস্থা দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছেন সে অনুতপ্ত ভীষণ পরিমাণে। তবে কি এইবার সব ঠিক হবে? নাকি আবারও এলোমেলো হয়ে যাবে সব?

দিয়ারা: ভিকি দা!

আধভিক পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দিয়ারাকে নিজের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সোজা হয়ে দাঁড়ায়। উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,

আধভিক: সিয়ু ঠিক আছে দিয়া? জ্ঞান ফিরেছে ওর?

দিয়ারা: হ্যাঁ ঠিক আছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে। দেবদা আছে ওর কাছে।

আধভিক: আমি দেখা করে আসছি।

আধভিক সিয়ারার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই দিয়ারা আধভিকের বাহু ধরে ওকে বাঁধা দিলো। আধভিক দিয়ারার দিকে তাকাতেই দেখলো দিয়ারা নীচের দিকে তাকিয়ে আছে।

আধভিক: আমাকে আটকাচ্ছিস কেন দিয়া? যেতে দে আমায়।

দিয়ারা: যাওয়ার আগে আমার কথাগুলো শুনে যাও ভিকিদা।

দিয়ারার এমন গাম্ভীর্যপূর্ণ কণ্ঠস্বর শুনে আভাস বাবু ও আধভিক দুজনেই অবাক হয়। তবে আধভিক এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না তাই দিয়ারার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

আধভিক: আমি তোর সব কথা পরে শুনবো। আগে আমি সিয়ুর সাথে দেখা করতে চাই।

দিয়ারা: দি তোমাকে দু বছর আগে নিজের ইচ্ছায় ছেড়ে যায়নি ভিকিদা। ও বাধ্য হয়েছিলো তোমাকে ছেড়ে যেতে।

দিয়ারার কথাটা আধভিকের কানে আসতেই আধভিকের পা থেমে যায় নিজের জায়গায়। সঙ্গে সঙ্গে আধভিকের কানে কিছু মুহুর্ত আগে সিয়ারার কথা ভেসে ওঠে।

“আমি তোমাকে দুবছর আগে নিজের ইচ্ছায় ছেড়ে যাইনি আধভিক। বাধ্য হয়েছিলাম তোমাকে ছেড়ে যেতে।”

আধভিক: তুই জানিস এই বিষয়ে?

দিয়ারা: হ্যাঁ জানি আর তোমাকেও জানাতে চাই। অনেক তো এড়িয়ে গেলে, এইবার সত্যের মুখোমুখি তোমাকে হতে হবে।

দিয়ারা এক এক করে সবটা বলতে শুরু করে ঠিক তেমন ভাবে, যেমন ভাবে সিয়ারা ওকে বলেছিলো ওর সাথে দেখা হওয়ার দিন। যেই মুহুর্তে সে উল্লেখ করছিলো, ঠিক কীভাবে সিয়ারা মায়ের কাছে তাঁর ভালোবাসার ভিক্ষা চাইছিলো, সেই সময় দিয়ারার চোখের কোণ হয়ে, গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল।

সবটা শোনার পর আধভিক পিছিয়ে যায়। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে গাল হয়ে। মূহুর্তেই তা আড়াল করে নেয় আধভিক।

দিয়ারা: দি এই কথাগুলো তোমাকে বলার চেষ্টা করছিলো সেই পার্টির দিন থেকে। ইভেন পার্টির দিন ও জেনে বুঝে ওরকম একটা ড্রেস পড়েনি। ওর কাছে তোমার নাম করে কেউ ওই ড্রেসটা পাঠিয়ে ছিলো। তাই নিজের অস্বস্তি বোধ হওয়া সত্বেও ড্রেসটা পরেছে। শুধুমাত্র তোমার জন্য। দি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে।

আধভিক: আর আমি সেই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারিনি।

আধভিক নিজের চোখের জল আবারও মুছে নেয় কথাটা বলে। আভাস বাবু ওর দিকে এগিয়ে এসে বলেন,

আভাস বাবু: আমি জানতাম তোদের দুজনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। নাহলে এইভাবে তোরা দুজন কষ্ট পেতিস না।

আধভিক: যখন প্রথমবার ও আমাকে দূরে সরিয়েছিলো তখনও যেমন কষ্ট পেয়েছিল এখনও তো কষ্ট পেতে পারে? এই বিষয়টা আমার মাথাতেই আসেনি। আমি ভাবিইনি যে ও আমার জন্য ঠিক ততটাই কষ্ট পেয়েছে যতটা আমি ওর জন্য পেয়েছি। কারণ আমি কখনও ওকে, ওর ভালোবাসাকে বিশ্বাসই করিনি। ও চলে যাওয়ার পর সবসময় এটাই ভেবেছি যে, আমিই ওকে ভালোবেসে ছিলাম। অন্যের কথা শুনে…

আধভিক থেমে গেলো। পিছন ঘুরে নিজের ঠোঁট চেপে কোনো মতে কান্নাটা রোধ করে, বুড়ো আঙুল দিয়ে চোখের কোণ থেকে জল মুছে নিয়ে সামনে ফিরলো। দিয়ারাকে বললো,

আধভিক: থ্যাংক ইউ আমাকে পুরো বিষয়টা জানানোর জন্য। নাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না ওর সামনে দাঁড়ানোর মত মুখই নেই আমার। বুঝতেই পারতাম না, মুখেই বলে এসেছি ভালোবাসি। আদতে ভালো বাসতেই পারিনি। (তাচ্ছিল্য হাসলো) ভালো তো বেসেছে সিয়ারা। মুখে না বলে কাজে করে দেখিয়েছে, দোষ না থাকা সত্বেও সব মেনে নিয়েছে মুখ বুজে। এসব জানার পরেও ওর সামনে যাওয়ার ক্ষমতা নেই আমার।

আভাস বাবু: এইটা করে তুই আরও বেশি করে প্রমাণ করে দিবি তুই সিয়ারাকে ভালো বাসিসনি। কেন জানিস? কারণ তুই সব সত্যি জেনে, নিজের ভুল জেনে তা শুধরানোর চেষ্টা না করে পালিয়ে যাচ্ছিস। সিয়ারা কিন্তু তা করেনি ভিকি। তুই তো নিজেই বললি ও দোষ না করেও মুখ বুজে সব মেনে নিয়েছে। কেন? কেন মেনে নিয়েছে?

দিয়ারা: কারণ দি তোমাকে ভালোবাসে, সবটা ঠিক করতে চেয়েছিলো। ও বুঝেছিলো তুমি এখনও ওকেই ভালোবাসো আর ওকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছো ওর মতোই। এখানে আসার আগে দিও তোমার মতই ভাবছিলো যে ও কষ্টে আছে, তুমি ভালো আছো। কিন্তু যখনই বুঝলো ওর ধারণা ভুল, ও ভুল বুঝছেন তোমাকে তখনই সবটা ঠিক করতে মরিয়া হয়ে উঠলো।

আভাস বাবু: হাল ছেড়েই দিয়েছিল মেয়েটা তবে আমি যেই বললাম তোকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ আছে, একটা শেষ চেষ্টা করে দেখতে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলো। আর তুই এটুকুতেই হার মেনে যাবি? সত্যি কি তুই সিয়ারাকে ভালোবাসিস না?

দিয়ারা: শুধু কি মুখেই বলেছো তুমি দি কে ভালোবাসো? তাই সব জানার পরেও ওকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবে না?

আধভিক: আমি কখনও বলে বোঝাতে পারবো না হাউ মাচ আই লাভ হার! ও আমার জীবন! ওকে ছাড়া আমার পুরো পৃথিবীটাই থেমে গেছিলো। বাঁচবো না ওকে ছাড়া আমি। (জোর দিয়ে)

আভাস বাবু: তাহলে কিসের অপেক্ষা করছিস? যা ওর কাছে।

আধভিক: আমি ওর কাছে গেলে ওর শুধু আমার বলা খারাপ কথাগুলোই মনে পড়বে ড্যাড। আজকেও আমি ওকে অনেক খারাপ কথা শুনিয়েছি। আর পার্টির দিন আমি যা যা বলেছি সেসব মনে করলে নিজেরই নিজেকে…

আধভিক দু হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয়। চাঁপা কণ্ঠে বলে,

আধভিক: আমি পারবো না ড্যাড। আমি পারবো না ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। (মুখ থেকে হাত সরিয়ে) রাগের মাথায় আমি যা বলেছি তারপর আমি নিজের কাছেই নিজে ছোটো হয়ে গেছি। আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সাহস হচ্ছে না সেখানে ওর সামনে কীভাবে যাবো? কি বলবো? এসব যদি নাও জানতাম তাও আমি যেতাম না ওর সামনে। বাইরে থেকে দেখেই চলে আসতাম আমি।

আভাস বাবু আর দিয়ারা বুঝতে পারে আধভিক মারাত্মক পরিমাণে অপরাধ বোধে ভুগছে। সে নিজের ভুলগুলো নিজেই উপলব্ধি করতে পেরেছে যার ফলে একরাশ আত্মগ্লানি এসে ওকে ভর করেছে। কিন্তু এইভাবে চলতে থাকলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। দুটো জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আধভিক আর সিয়ারা যে একে অপরকে ছাড়া পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সেটা অনেক আগেই আভাস বাবু বুঝেছেন। উনি আধভিকের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

আভাস বাবু: ভুল কি শুধু তুই সিয়ামাকে বুঝেছিস? সিয়ামা তোকে ভুল বুঝছে না?

আধভিক অবাক চোখে তাকালো আভাস বাবুর দিকে। আভাস বাবু ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করতেই আধভিক নিজের ঘরে চলে গেল। আভাস বাবু একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন আর সামান্য হাসলেন।

দিয়ারা: ভিকিদা সবটা সামলে নেবে তো আংকেল? (ভয়ে ভয়ে)

আভাস বাবু: আশা করছি সামলে নেবে। ও চেঞ্জ করতে গেছে যা মনে হয়, কিন্তু এত দেরি করলো। ঠাণ্ডা না লেগে যায়। এই ঠান্ডার পরিবেশে ভিজে গায়ে এতক্ষণ ছিলো।

দিয়ারা: ও দিয়ের কাছে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

আভাস বাবু দিয়ারার কথা শুনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভ্রু কুঁচকে তাঁকাতেই দিয়ারা বললো,

দিয়ারা: ভিকিদার কথা অনুযায়ী দি হয়তো এখন রেগে আছে ওর উপর। তাই আবহাওয়াও গরম দির ঘরে। এইজন্য দিয়ের কাছে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে বললাম। হে হে, আমি আসি।

দিয়ারা ফুরুৎ করে সরে যায় ওখান থেকে আর আভাস বাবু হেসে ফেলেন। তারপর নিজের ঘরে চলে যান। এদিকে, আধভিক ধীরে ধীরে সিয়ারার ঘরে দরজা খোলে সাহস করে। চেঞ্জও করেনি এখনও অবধি সে। চেঞ্জ করতে গিয়েও ঘুরে সিয়ারার ঘরের কাছে চলে এসেছে। আভাস বাবুর কথাটা মাথায় যাওয়ার পর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না আধভিক, অস্থিরতা কাজ করছে।

সিয়ারা ধীরে ধীরে উঠে বসেছে। ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখলো সোফায় দেবাংশু পিছন দিকে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছে। গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে ওর, তাই একটু জল খাওয়ার জন্য এগাবে তখনই দেখে ওর ঘরের দরজাটা খুলে গেলো। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার সাথে চোখে চোখ পড়তেই ওর বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে। এই মানুষটাকেই তো জ্ঞান ফেরার পর সবার আগে খুঁজেছে সিয়ারা। তবে আগের কথাগুলো মনে পরতেই সিয়ারার মনে ভির করে অভিমানের কালো মেঘ। চোখ ফিরিয়ে নেয় সে আধভিকের দিক থেকে।

আধভিক: (মনে মনে — চোখ ফিরিয়ে নিয়েছো মেনে নিচ্ছি সিয়ু। মুখ ফিরিয়ে নিও না। আমি যেই ভুলটা করেছি তুমি করো না সেটা। আমি নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো তোমাকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনার। আমাকে ফিরিয়ে না দিয়ে, ফিরিয়ে নিও তোমার জীবনে।)

সিয়ারা জলের গ্লাস নেওয়ার জন্য একটু এগোতেই আধভিক ভিতরে ঢুকে, তাড়াতাড়ি করে জলের গ্লাসটা নিয়ে ওর হাতে দেয়।

আধভিক: সিয়ু আমি…

সিয়ারা: আমাকে এই নামে ডাকার অধিকার আপনার নেই মিস্টার রায় চৌধুরী। আমাকে কেউ “সিয়ু” নামে ডাকুক সেটা আমি চাই না।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here