‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩৫||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
আধভিক সিয়ারাকে কোলে করে নিয়ে হোটেলে ঢুকলো এবং সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো কারণ সিয়ারার রুম ফাস্ট ফ্লোরে। সিঁড়ির কাছে যাওয়ার সময় উপর থেকেই আভাস বাবু ওদের দেখতে পেয়ে হাসলো এবং দিয়ারার ঘরের দিকে চলে গেলো ওকে খবর দিতে।
আধভিক সিয়ারার ঘরে ঢুকে ওকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে দিয়ারাকে ডাকতে যাওয়ার জন্য উঠতে গিয়েও বাঁধা পেলো। সিয়ারা শক্ত করে ওর জ্যাকেটের কলারটা ধরে রেখেছে। আধভিক সিয়ারার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো এবং আস্তে করে ওর হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে দরজার দিকে এগোতেই দেখলো দিয়ারা এসে পরেছে।
আধভিক: তুই এসে পরেছিস?
দিয়ারা: দি ঠিক আছে?
আধভিক: চিন্তার কিছু নেই। বৃষ্টিতে ভিজেছে, মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। তুই ওর ড্রেসটা চেঞ্জ করিয়ে দে। আমি ডক্টরকে কল করতে যাচ্ছি।
দিয়ারা: ঠিক আছে। তুমিও চেঞ্জ করে নাও নাহলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে। সকালেও ভিজেছো এখনও আবার ভিজলে এই ঠান্ডার মধ্যে। রাতও তো বাড়ছে নাকি?
আধভিক: আমি ডক্টরকে কল করে চেঞ্জ করে নিচ্ছি।
আধভিক চলে গেলে দিয়ারা নিজের দিদির গায়ে হাত দিয়ে দেখে হালকা গা টা গরম হচ্ছে। ও আস্তে করে সিয়ারাকে জাগানোর চেষ্টা করে এবং সিয়ারা তাতে সাড়াও দেয়। এরপর দিয়ারা ধীরে ধীরে সিয়ারাকে চেঞ্জ করিয়ে একটা টি শার্ট এবং লেডিজ ট্র্যাক প্যান্ট পড়িয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।
সিয়ারা: দি..দিয়া?
দিয়ারা: হ্যাঁ দি? কিছু বলবি?
সিয়ারা: আ..আভি? ও..ও কো..কোথায়?
দিয়ারা: চেঞ্জ করতে গেছে দি। তুই রেস্ট নে আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি ভিকিদাকে তোর কাছে।
দিয়ারা কথাটা বলতেই সিয়ারার ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটে উঠলো। দিয়ারা এতে মনে মনে ভীষণ খুশি হয়ে গেলো কারণ ওরা দুজন দুজনকে আবারও কাছে চাইছে সব মান অভিমান মিটিয়ে।
আধভিক: প্যারাসিটামল খাইয়ে দিতে বলেছে ডক্টর। বেশি গা গরম হলে জল পট্টি দিতে হবে।
আধভিক ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলে দিয়ারাকে। দিয়ারা হেসে আধভিককে বলে,
দিয়ারা: এইগুলো তো শরীরের অসুখের ওষুধ। দির তো মনের অসুখ হয়েছে। ওটার ওষুধ তো শুধু তোমার কাছেই আছে। আর মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো হয়ে যায় তাড়াতাড়ি।
আধভিক দিয়ারার কথা শুনে ভ্রূ কুঁচকে সিয়ারার দিকে তাকালে দেখে সিয়ারা একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কথার মানে বুঝতে পেরে আধভিক মনে মনে হাসে তবে গম্ভীর মুখে বলে দিয়ারাকে,
আধভিক: খুব বেরেছিস। যা ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।
দিয়ারা: যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি! কাবাব মেইন হাড্ডি হওয়ার কোনো সখ নেই আমার। হুহ!
আধভিক: তবে রে..??
আধভিক দিয়ারার দিকে এগোতেই দিয়ারা দৌঁড়ে পালায়। তবে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আধভিককে বলে,
দিয়ারা: দরকার পরলে কল করো আমায়। আর দরজাটা লক করতে ভুলো না জানো?
আধভিক ওদিকে এগোতেই দিয়ারা দৌঁড় দেয়। আধভিক একটু ঝুঁকে দেখে দিয়ারা দরজা দিয়ে দিয়েছে। হালকা হেসে দরজাটা বন্ধ করে দেয় আধভিক। এরপর সিয়ারার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওষুধটা খাইয়ে দেয় সিয়ারাকে। তারপর আধভিক উঠে যেতে নিলেই সিয়ারা আধভিকের হাতটা ধরে নেয়।
আধভিক: কিছু বলবে? (উদ্বেগ নিয়ে)
সিয়ারা কিছু বলে না। চুপ থাকে কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে আধভিকের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর গলায় মুখ গুঁজে দেয়। আধভিক সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় এবং নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে ফেলে। সিয়ারা আধভিকের গলায় নিজের নাক ঘষতে থাকে, ফলে ওর উষ্ণ নিশ্বাস আধভিক পুরোপুরি অনুভব করতে পারে। আধভিকের নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়, ওর মন চায় সিয়ারাকে নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ করে আদরে ভরিয়ে দিতে কিন্তু ও নিজের চাওয়াকে দমিয়ে দেয়। এই ভেবে যে, সিয়ারা এখন একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। সকাল হলে হয়তো কিছুই মনে থাকবে না ওর। আর তাই এটা একপ্রকার সুযোগ নেওয়া, যেটা আধভিক চায় না। এমনিতেই আজ সে বিনা অনুমতিতে হঠাৎ করেই সিয়ারার ঘনিষ্ঠ হয়েছিলো। সে আদৌ এটা পছন্দ করেছে কি না, চেয়েছে কি না আধভিক জানে না। আধভিক চায় সিয়ারা নিজে ওর কাছে আসুক। তবে, এখন সিয়ারা ওকে কাছে চাইছে আর সিয়ারাকে দূরে ঠেলে দেওয়ার মতো ক্ষমতা ওর নেই তাই সব কিছু ভেবে আধভিক সিয়ারার হাতটা এবং নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে বেডে হেলান দিয়ে বসে সিয়ারাকে নিজের বুকে টেনে নেয়।
সিয়ারা শক্ত করে আধভিককে জড়িয়ে ধরে তাঁর গলায় মুখ গুঁজে রাখে। শীত করছে ওর ভীষণ, হালকা কাঁপছে ও। আধভিক সেটা বুঝতে পেরে ব্ল্যাঙ্কেটটা ভালো ভাবে টেনে নিয়ে ঢেকে দেয় সিয়ারাকে। মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলাতে থাকলে সিয়ারা চুপটি করে আধভিকের বুকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকে। আধভিক ভাবে সিয়ারা ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু হঠাৎই ওর শরীরের মধ্যে দিয়ে একটা শিহরণ বয়ে যায়।
আধভিক: (মনে মনে — সিয়ু! এটা তুমি কি করছো? কেন করছো? এইভাবে আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিও না। এমনিতেই তুমি আমার এতটা কাছে আছো এতোগুলো দিন পর তারউপর আবার এসব…এগুলো ঠিক করছো না তুমি, একদম ঠিক করছো না। এটা একটা শাস্তির সমান আমার কাছে।)
আধভিক নিজের চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলার সাথে সাথেই আবারও একবার কেঁপে ওঠে। সিয়ারা আধভিকের শার্টের দুটো বোতাম খুলে বুকের বাম পাশে ঠিক যেই জায়গায় একটা ট্যাটু করা আছে সেখানে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। কিছু সময় অন্তর অন্তর সিয়ারা এমন করে দুবার। তিনবার করতে না করতেই আধভিকের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায় এবং সে সিয়ারার মুখটা নিজের দু হাত দ্বারা নিজের সামনে এনে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখে।
সিয়ারা আধভিকের ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই ওর ঠোঁট দুটো নিজেদের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে এবং সেই ব্যবধানে জায়গা পায় আধভিকের ঠোঁট। আধভিক নিজের মতো করে সিয়ারার ঠোঁটের স্বাদ নিতে থাকার কিছুক্ষণের মধ্যেই সিয়ারার প্রতিক্রিয়া পায়। আধভিক উত্তেজিত হয়ে পরে সিয়ারার আদর অনুভব করার জন্য তাই নিজে থেমে গিয়ে সিয়ারাকে শাসন করতে দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সিয়ারা সরে এসে আবারও আধভিকের বুকের মাঝে মাথা রেখে নিজের ভেজা ঠোঁট সেই ট্যাটুটার উপর ছুঁয়ে দেয়। আধভিক সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সিয়ারাকে। ধীরে ধীরে সিয়ারা সত্যি ঘুমিয়ে পড়ে আধভিকের বুকের মাঝে। আর আধভিকও সিয়ারাকে বুকে নিয়ে বেডের পিছনে মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে থাকে।
হঠাৎই খুব গরম উত্তাপের আভাস পায় আধভিক। চোখটা একটু লেগে গেছিলো তাঁর। জেগে গিয়ে বুঝতে পারে সিয়ারার জ্বর এসেছে, গা পুড়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে সিয়ারাকে শুয়ে শুয়ে দিয়ে একটা বাটিতে জল নেয় এবং নিজের রুমালটা তাতে ভিজিয়ে জল পট্টি দেওয়া শুরু করে সিয়ারাকে। অনেকক্ষণ এরকম ভাবে চলার পর থার্মোমিটার নিয়ে এসে সিয়ারার জ্বরটা মাপতেই দেখে কিছুটা কমেছে। তাই আরেকটা প্যারাসিটামল খাইয়ে দেয় ওকে এবং নিজে একটা খেয়ে নিয়ে, সোফায় গিয়ে শুয়ে পরে।
সকালে,
দিয়ারা একবার নক করে দরজায় কিন্তু কেউ আসে না। ঘুমাচ্ছে ভেবে দরজাটা খুলে ভিতরে যায় দিয়ারা। দেখে, সিয়ারা ঘুমাচ্ছে বিছানায় আর আধভিক ঘুমাচ্ছে সোফায়। সিয়ারার কাছে এগিয়ে গিয়ে দিয়ারা একবার চেক করে নেয় জ্বর আছে কি না।
দিয়ারা: যাক বাবা জ্বর নেই। কিন্তু এরা উঠবে কখন? আমি কি একবার ডাকবো? না থাক। ঘুমাচ্ছে ঘুমাক, আমি বরং যাই। আরেকটু পরে আসবো, ব্রেকফাস্ট করার জন্য বলতে। ততক্ষণ আরেকটু রেস্ট নিয়ে নিক।
দিয়ারা বিড়বিড় করে নিজে নিজেই কথাগুলো বলে দুজনকে একবার দেখে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। দিয়ারা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সিয়ারা জেগে যায়। একটু এদিক ওদিক চোখ ঘুরাতেই দেখে সোফায় আধভিক ঘুমাচ্ছে। একটু উঠে বসে ভ্রু কুঁচকে সব কিছু মনে করার চেষ্টা করতেই এক এক করে গতরাতের সব ঘটনাই ওর মনে পরে যায়।
সিয়ারা: (মনে মনে — ইশ! কালকে রাতে আমি নিজের থেকে কীভাবে… আধভিক যদি এইবার এটা নিয়ে আমায় টিজ করে? ধুর! আমি ওর সামনে যাবো কীভাবে? কেন যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না নিজেকে কে জানে। এখন, এখন কি হবে…)
সিয়ারা শুয়ে পরে নিজের মুখ দুহাত দিয়ে ঢেকে ফেলে গতরাতের ঘটনা মনে করে। যেখানে ও নিজে আধভিকের কাছে গেছিলো এবং তাঁকে সিডিউস করে নিজের কাছে টেনেছিল। আধভিক হয়তো ভেবেছে সিয়ারা জ্বরের ঘোরে এসব করেছে তাই ওর কিছু মনে থাকবে না কিন্তু এমনটা নয়। তখন সিয়ারার জ্ঞান ছিলো এবং সে কি করছে সেই বিষয়ে পুরোপুরি অবগত ছিলো।
আধভিকের ঘুমটা ভাঙতেই আধভিক চট জলদি উঠে বসে সিয়ারার দিকে তাকায়। দেখে সিয়ারা বিছানায় আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আধভিক একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মাথা নীচু করে চোখ বুজে। তারপর আরেকবার সিয়ারার দিকে তাকাতেই দেখে সিয়ারাও চোখ মেলে ওর দিকে তাকিয়েছে। চোখে চোখ পড়তেই সিয়ারা মুহুর্তে নিজের চোখ সরিয়ে নিলো অন্যদিকে।
আধভিক: (মনে মনে — ওর কি আদৌ গতকাল রাতে কি হয়েছিল মনে আছে? নাকি শুধুই রাস্তায় বৃষ্টিতে যা হয়েছিলো সেটাই মনে আছে। তাই জন্যেই কি চোখ সরিয়ে নিলো এভাবে?) আব, তুমি ঠিক আছো?
সিয়ারা শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো, আধভিকের দিকে তাকালো না। আধভিক আর কথা না বাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দিয়ারাকে ডেকে নিজের ঘরে চলে গেলো। দিয়ারা ঘরে এসে সিয়ারার কাছে বসতেই সিয়ারা দিয়ারার দিকে তাকালো।
দিয়ারা: ঠিক আছিস তুই? দেখি জ্বরটা নেমেছে কি না?
সিয়ারা: ঠিক আছি এখন।
দিয়ারা হাত দিয়ে একবার সিয়ারার কপালে ছুঁয়ে তাপমাত্রা মেপে নিলো। তারপর বললো,
দিয়ারা: এরকম যত্ন পেলে তো যে কেউ ঠিক হয়ে যাবে।
সিয়ারা: মানে?
দিয়ারা: আবার জিজ্ঞেস করছিস? রাতের বেলা বরের কোলে চড়ে হোটেল ফিরলি। তারপর সারারাত বরের…
সিয়ারা: এক চড় দেবো। চুপ! বেশি বেড়েছিস না?
সিয়ারা কপট রাগ দেখিয়ে কথাটা বললেও মনে মনে বেশ লজ্জা পেয়েছে। ও ভাবছে দিয়ারা সব কীভাবে জানলো?
দিয়ারা: আরে? ভিকিদা সারারাত তোর পাশে বসে জল পট্টি দিয়েছে। এতে আবার কি বাড়াবাড়ি করলাম? (অসহায় ভাবে)
সিয়ারা: (অবাক হয়ে) হ্যাঁ? তু..তুই কীভাবে জানলি ও সারারাত জল পট্টি দিয়েছে?
দিয়ারা: কেন ওই তো? ওই তো সেন্টার টেবিলে জলের বাটি রাখা।
দিয়ারা ইশারা করতেই সিয়ারা দেখলো সত্যি সেন্টার টেবিলে জলের বাটিটা রাখা আছে। সিয়ারা একটি অবাক হলো কারণ এই বিষয়টা সে টের পায়নি। সেইসময় দিয়ারা সিয়ারাকে কুনুই দিয়ে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করে,
দিয়ারা: দেখে মনে হচ্ছে তুই এই বিষয়টায় কথা বলছিলি না। তার থেকে বেশি কিছু হয়েছে নাকি তাহলে? হম হম? (মুচকি হেসে)
সিয়ারা রাগী দৃষ্টিতে দিয়ারার দিকে তাকালে দিয়ারা ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বসে। সিয়ারা দিয়ারাকে সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখলো দিয়ারা টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে রাখছে।
সিয়ারা: এখানে আনতে গেলি কেন? আমি সবার সাথে একসাথেই খেতাম।
দিয়ারা: ভিকিদা বললো যে এখনই বাইরে না যেতে তাহলে ঠাণ্ডা হাওয়া লাগবে। আভাস আংকেলও বললো যে ঘরেই খাবারটা দিতে। আমিও তোর সাথেই খাবো।
সিয়ারা: তারমানে আমি আজকে বাইরেও বেড়াতে পারবো না? (করুন ভাবে)
দিয়ারা: আজ্ঞে। আমি আছি তো? আমি থাকবো তোর সাথে। সো নো মন খারাপ ওকেই?
সিয়ারা কিছু না বলে চুপচাপ সোফায় বসে খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া হয়ে গেলে দিয়ারা প্লেট নিয়ে বাইরে যেতেই সিয়ারা জ্যাকেটটা গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে দাঁড়ালো। দেখলো নীচে হোটেলের এন্ট্রেন্সে আধভিক, আভাস বাব, দেবাংশু এবং ডিরেক্টর সবাই মিলে কথা বলছে আর কফি খাচ্ছে। সিয়ারা অবাক হলো আধভিককে সাধারণ একটা জ্যাকেট পরে থাকতে দেখে।
সিয়ারা: এই ছেলেটা কি? আমরা সবাই ঠান্ডায় কাঁপছি এই মোটা জ্যাকেট পরেও আর এই ছেলেটা একটা হালকা জ্যাকেট পরে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে? ঠাণ্ডা লাগছে না নাকি? আর কফির কাপও তো নেই ওর হাতে। (বিড়বিড় করে)
সিয়ারা ভাবনা শেষ হতেই দেবাংশু আর ডিরেক্টর বেরিয়ে গেলো। এদিকে আভাস বাবু কিছু একটা নিয়ে আধভিককে বকা ঝকা করছে বলে মনে হলো কিন্তু আধভিক তাতে কান দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। সে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে নিজের মতো করে। সিয়ারা বিষয়টা বুঝতে আরেকটু এগিয়ে আসতেই আধভিক মাথা তুলে তাকালো সিয়ারার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে সিয়ারা আধভিকের চোখের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো বিষয়টা কি।
সিয়ারা: (মনে মনে — ওহ তো এই ব্যাপার? সকাল সকাল মশাই ওইসব গিলেছেন। দেখো, চোখটা কেমন লাল হয়ে গেছে দেখো? উফ! সারাক্ষণ শুধু নেশার মধ্যে বুঁদ হয়ে বসে থাকবে। আমি একটা সিগারেট খেয়েছি দেখে গায়ে ফোস্কা পরে গেছে। ইচ্ছা করেই বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে উনি এমন করলেও আমার এরকমই হয়ে ফোস্কা পরে সেটা বুঝলো না। নাহলে ওইসব খাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। এইসব নেশার জিনিস যন্ত্রণা কমাতে তো পারে না বরং আরো বেশি করে মনে করিয়ে দেয়। এর থেকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরা ভালো। আমাকে কথা দিয়েছিলো এইসব খাবে না তারপরেও কথা রাখেনি।)
আভাস বাবু: সিয়া মা! তুমি এখানে কি করছো? তোমাকে তো আমি ঘরে রেস্ট নিতে বললাম।
আভাস বাবুর কথায় সিয়ারা আধভিকের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো আর আমতা আমতা করে বললো,
সিয়ারা: হ্যাঁ আসলে, এমনিই একটু হাঁটছিলাম আংকেল।
সিয়ারার চোখ বারবার আধভিকের দিকে চলে যাচ্ছে। সিয়ারা দেখলো আধভিক পিছতে পিছতে হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলো।
সিয়ারা: ও কোথায় গেলো আংকেল?
আভাস বাবু: জানি না। সকাল সকাল নেশা করে বসে আছে। মাথা গরম করিয়ে দেয় আমার। সব সময় অবুঝের মত কাজ করে, সবসময়! (রেগে, বিরক্ত হয়ে)
সিয়ারা: জেনে বুঝে কেউ অবুঝের মত কাজ করে না আংকেল। পরিস্থিতি অনেক সময় বাধ্য করে।
সিয়ারা নিজের ঘরে চলে যায়। ব্যালকনি দিয়ে দেখে আধভিক নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো। কিছু না বলে নিজের বিছানায় এসে কম্বলের ভিতর ঢুকে বসে ও। ভাবতে থাকে, এইসময় এই পাহাড়ি রাস্তায় আধভিক বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলো? ধীরে ধীরে চিন্তা বাড়ে সিয়ারার।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]