প্রমত্ত_অঙ্গনা #লেখিকা_আরোহী_নুর ৩৮,৩৯

0
354

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
৩৮,৩৯

আঁখি আসলো বাড়িতে,সারা রাস্তায় কান্না করেছে,চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে অল্প সময়ে,আজ নিজেকে নিঃস্ব লাগছে বড্ড,পৃথিবী অন্ধকার লাগছে,তাও নিজেকে সামলে নেওয়ার ব্যর্থ এক চেষ্টা করে বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলো,চিৎ হয়ে পরে আছে উভয় চোখের কোণ হয়ে বেয়ে পরছে জল।

আদৃত সার্জারি করে এসেই জানতে পারল আঁখি হাসপাতাল ছেড়েছে।মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল তার, এবার নিশ্চিত হলো আঁখির সাথে কিছু একটা তো হয়েছে যার ফলস্বরূপ ও এমনটা করছে,না আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না আদৃত,আঁখিকে হারিয়ে যাবার ভয় এবার বেড়ে গেল তার,আঁখি ব্যতীত এখন যেন এক মুহুর্তও নিশ্বাস নেওয়া মুশকিশ আদৃতের,আর দাঁড়াল না,সোজা আঁখির বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।কিন্তু গাড়িতে উঠার আগ মুহুর্তে হঠাৎ ফোন আসল তার।আরিয়ান মির্জা সাহেব কল করেছেন।ফন উঠাল সে।

″হ্যাঁ বাবা বলো?″

″কোথায় তুই আদৃত?কাজ শেষ?বাড়ি কবে ফিরছিস?জরুরি কথা ছিল।″

″হ্যাঁ বাবা কাজ শেষ, তবে এখন বাড়ি ফিরব না অন্য কোথাও যেতে হবে। এসে কথা বলছি।″

″তা কোথায় যাচ্ছিস?″

″আঁখির বাড়িতে,ও হঠাৎ করে কেমন জানি বিহেভ করছে,এমনকি হাসপাতালও ছেড়ে দিয়েছে,আমি ওর বাড়িতে যাচ্ছি। ″

″আদৃত তোর সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা তুই আগে বাড়ি আয়।″

″পরে আসলেও তো হবে বাবা।″

″বাবা থেকে এখন অন্য মেয়ে বড়?″

″এ কেমন কথা বলছ বাবা,আমার জন্য আল্লাহ তায়ালা পরেই তোমাদের অবস্থান, এ কথা তুমি কি করে ভাবতে পারো!″

″তবে জলদি চলে আয়।″

″কিন্তু বাবা…″

″আমি কোনো কিন্তু শুনতে চাই না আদৃত,তুই আসছিছ কি না বল?″

″ওকে আসছি।″

″হুম।″

আদৃত বাবার কথায় বাধ্য হয়ে আগে উনার কাছে গেল।

বর্তমানে নিজ কক্ষের বিছানায় বসে আছেন আরিয়ান মির্জা, পাশে বসিয়েছেন আদৃতকে,এবার নরম স্বরে বললেন তাকে।

″আদৃত,তোর বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে, আমার মতে তোর বিয়ে করে নেওয়া উচিত।″

″আমি বিয়ে করব বাবা,এ বিষয়ে আমি তোমার সাথে কথা বলব ভাবছি,দেখো বাবা আমি তোমার আর মায়ের সাথে বরাবরই ফ্রি হয়ে কথা বলি,আজকেও বলতে চাই।আমি আঁখিকে পছন্দ করি কথাটা তোমরা ছয় বছর আগ থেকেই জানো,আর আমি বিয়ে করলে ওকেই করব।″

″আদৃত,তুই প্রাপ্তবয়স্ক,তাছাড়া প্রতিষ্ঠিত,তোর উপর বিয়ে নিয়ে নিজের জোর আমি খাটাতে চাই না।কিন্তু আমিও কাউকে পছন্দ করেছি তোর জন্য,রিংকি মেয়েটা মন্দ না,তোকে পছন্দও করে,একসাথে কাজও করেছিস এতো বছর,দেখ আঁখি তোর অতীত ছিল আর এমনটা তো জরুরি নয় যে তাকেই আবার জীবনে জড়াতে হবে।″

″কী বলছ বাবা!আর রিংকিকে তো আমি আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছি,ও কোথা থেকে আসলো আবার?″

″ও আমেরিকা যায় নি,ও সেদিন ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেড়িয়েছিল কিন্তু আমি ওকে আটকাই,ও সবকিছু বলেছিল আমাকে তুই আঁখির জন্য ওর সাথে বা*জে ব্যবহার করেছিস,আর তোর মাও ওকে পছন্দ করেন না,তাই ওকে আমি আলাদা একটা ঘর ভাড়া রেখেছি,সঠিক সময় দেখে তোর সাথে কথা বলব বলে।″

″এখানে কথা বলার কী আছে বাবা,আমি ওকে পছন্দ করি না,তাছাড়া আমি এতবছর বিয়ে করি নি শুধু আঁখির পথ চেয়ে,বিয়ে করলে আমি আঁখিকেই করব নয়ত না।″

″দেখ আদৃত,তুই টিনএইজার না,ম্যাচিওর একজন ডাক্তার,তোর কাছ থেকে এমন কিছু কীভাবে আশা করা যায়?তুই তো জানিস সমাজে আমি আমার সম্মান কি করে গড়ে তুলেছি আর তুই কি চাস তা মুহুর্তেই নষ্ট হয়ে যাক।
অবিবাহিত হয়ে একজন ডিভোর্সিকে বিয়ে করা কতটা অসম্মানের হবে ভাবতে পারছিস?তাও মেনে নেওয়া যেত,কিন্তু আঁখি মাও হতে পারবে না,এতকিছু কোনো ছেলের বাবা কেমনে মেনে নেয়।?″

″বাবা,এসব কথা তুমি বলছ!সর্বকালের আদর্শ শিক্ষকের মুখে এমন কথা শুনব কখনও ভাবি নি।তুমি কখন থেকে নারী পুরুষ ভেদাভেদ করতে শুরু করলে বাবা?সমাজের আট দশটা লোকের মতো নারীদের দেখতে লাগলে!কেন বাবা এমন অনেক পুরুষই তো আছে যারা ডিভোর্সি হয়েও কুমারী মেয়েকে বিয়ে করছে,তাছাড়া বাবা হতে অক্ষম হলেও টাকার জোরে বিয়ে করে নিচ্ছে, কই তাদের নিয়ে তো সমাজ কিছু বলে না,তবে এমন কিছু নারীদের ক্ষেত্রে হলে সবাই আঙুল উঠায়,তুমি কবে থেকে এমন লোকদের সমর্থন করতে শুরু করলে!আঁখি তো তোমার কাছে মেয়ের সমতুল্য ছিল আর এখন ও মুহুর্তেই পর হয়ে গেল।এটাই হয়ত নিজ আর পরদের মধ্যে তফাত থাকে।
আঁখির কোনো দিক নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই বাবা,আর যেখানে কথা বাচ্চা নিয়ে তাহলে আমরা দু’জনই ডাক্তার ওসব দিক আমরা দেখে নিব।আর আমার শেষ কথা আমি যদি বিয়ে করি তবে আঁখিকেই করব।″

″আদৃত তুই কিন্তু অনুভুতির নিচে দমে গিয়ে এসব বলছিস,মা বাবা সন্তানের খারাপ কখনও চায় না,অবাধ্য সন্তানের পরিণতি কি হয় আঁখিকে দেখে বুঝতেই পারছিস।তাছাড়া তুই আঁখিকে বিয়ে করতে চাইলেও আঁখি কি তাই চায়।আমার মনে হয় না আঁখি কারো জীবনের সাথে নিজেকে জড়াতে চাইবে আর।″

″এতো শিওর কীভাবে বাবা তুমি?এর মানে তুমিই আঁখিকে কিছু বলেছ,তাই ও এমন করছে।″

″হ্যাঁ বলেছি,বলেছি আমার ছেলের জীবন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছি।ভুল কি বলেছি?″

″এটা তুমি কী করলে বাবা।অবশেষে তুমিও আঁখিকে কষ্ট দিলে,না জানি কতো ব্যথা নিয়ে ঘুরছে মনে।″

″কথাটা বলতে বলতেই আদৃত ছোটে বাইরের দিকে চলে গেল।″

″আদৃত কোথায় যাচ্ছিস?কথা শুন আমার।″

শায়েলা মির্জা কক্ষে আসতে নিলে আদৃত আর আরিয়ান মির্জাকে কথা বলতে দেখে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে যান,এতসময় উনি সবকিছু শুনছিলেন,এবার বেশ রেগে গিয়ে কর্কশ গলায় বলে উঠলেন।

″খুশি হয়ে গেছো তুমি আমার ছেলে আর মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে?কি পেলে তুমি এসব করে?তুমি কি মনে করো তুমি বলবে আর আদৃত বিয়ে করে নিবে,তাও তোমার ওই শাঁ*ক*চু*ন্নি রিংকিকে?আমার ছেলে ছয় বছর দেশে আসে নি আঁখির শোকে,এবার যখন অবশেষে সুখের কিছু ক্ষণ জীবনে আসছিল তখন তুমি তা কারতে পারলে!আজ তোমার সম্মান আমার ছেলের থেকে বড় হলো!″

″শায়েলা তুমি একটু বেশিই ভাবছ,প্রেম ভালোবাসা এসব শুধু আবেগ,আর আবেগ দিয়ে জীবন চলে না।″

″খুব সহজে বলে দিলে না আরিয়ান,একদিন আমার প্রেমে পাগল হয়ে বিষ অব্দি পান করেছিলে মনে আছে?তোমার বাবাও আমাদের বিয়ের কথায় এভাবে মানছিলেন না কারণ আমার পরিবার গরীব ছিল,কিন্তু তোমার জেদের কাছে হার মেনে গেলেন উনি, আর আজ তুমি বলছ এসব শুধু আবেগ।এর মানে কি আমাকে বিয়ে করে এখন তুমি পস্তাচ্ছো?″

″তুমি ভুল ভাবছ, আমি শুধু আমার ছেলের জীবন শুধরাতে চাইছি।″

″হ্যাঁ নিজের বেলা সব ঠিক,আর পরের বেলাই ভুল।তবে তুমি যাই করো আরিয়ান আমার ঘরের বউ তো শুধু আঁখিই হবে,আর যদি তুমি এখানে বাঁধা দাও আর এতে আমার ছেলের কিছু হয় তবে আমি তোমাকে ছাড়ব না,গলায় দড়ি দিয়ে ম*র*ব এই বলে দিলাম।″
____________
আঁখির বাড়িতে ঢুকতে পারল না আদৃত,আঁখি গার্ডদের বলে দিয়েছে আদৃত আসলে যাতে ভেতরে আসতে না দেয়।

″সরি স্যার,ম্যাম আমাদের বলে দিয়েছেন আপনাকে যাতে উনার পাশে কোনোভাবেই যেতে না দেই।″

″তোমাদের ম্যামকে বলে দাও আমি কথা না বলে যাব না।″

″স্যার এই মাত্র কল করলাম,ম্যাম উনার কথায় অটল।″

″আমিও দেখব কিভাবে অটল থাকে।″

এবার আদৃত রাস্তা থেকে জোরে জোরে আঁখিকে ডাকতে শুরু করল।

″ওই মন চোর বাইরে বেরোয়,আজ দেখব কিভাবে কথা না বলো,তোমাকে কথা বলতেই হবে,এই পাগল প্রেমিক তোমার সাথে কথা না বলে কোথায় যাবে না,ওই আঁখি শুনতে পাচ্ছো তুমি?আমার বাবার কথায় আমাকে পর করে দিতে পারবে তুমি?তুমি কি ভেবেছ আমি তোমার পিছু ছেড়ে দিব?″

আদৃত এসেছে আঁখি বারান্দা দিয়ে দেখেছে,আদৃতের চেঁচানো বাণী স্পষ্ট আঁখির কানে আসছে,আঁখি শুভ্রতার কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে চলেছে,পাশে জাহানারা রাহমান বসে আছেন,আঁখি উনাকেও সবকিছু জানিয়েছে।এবার উনি আঁখির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

″মা রে,যা হয়েছে ভুলে গিয়ে নতুন জীবন শুরু কর,তোর সাথে তো ওই প্রেমিক হৃদয়ও ছলনার স্বীকার হয়েছে,তোর জন্য জীবনে এগুতে পারে নি,যখন এতবছর এগুয় নি তবে আগামীতে এগুবে তার কি নিশ্চয়তা আছে?ওর কি অধিকার নেই জীবনে সুখী হওয়ার,কিছু মানুষের জন্য নিজের সাথে ওর জীবনটাও নষ্ট করবি?এতে তো তোর বা আদৃতের কোনো দোষ নেই।″

″আমি পারব না মা,আমি পারব না,আমি পারব না আমার আত্মসম্মান হারাতে।তুমি প্লিজ দোয়া করো আল্লাহ যাতে আমি আর উনাকে সঠিক পথ দেখান।″

বেশ খানিক্ষন হয়ে গেছে,আঁখি কান্না করে এখন বেশ শান্ত হয়েই মায়ের কোলে শুয়ে আছে, বাহির থেকে কম হচ্ছে না আদৃতের চেঁচামেচি, ডেকেই যাচ্ছে আঁখিকে।এদিকে ঝড় আসছে প্রবল বেগে।

″আঁখি আসবে না তো বাইরে?ঠিক আছে,আমিও এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব যতক্ষণ না তুমি নেমে আসছ।এখন যাই হয়ে যাক।″

আদৃত এবার নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল সেখানে আঁখির কক্ষের পানে তাকিয়ে, মুহুর্তেই নামল ঝড়,যাকে বলে প্রবল প্রলয়ঙ্কারী,গতকাল বৃষ্টিতে ভিজায় আদৃতের হালকা জ্বর এসেছিল তা জানে আঁখি,এখন আবারও একটা ঝড় উপর দিয়ে গেলে কি হতে পারে আন্দাজ করে নিতে পারছে,আদৃতকে নিয়ে মনে শুরু হয়েছে আশঙ্কা,আদৃতের কষ্ট কখনও মেনে নিতে পারে না আঁখি, ঝড় বেড়েই চলেছে,আঁখি এবার ছোটে গেল বারান্দায়।গিয়ে দেখল আদৃত রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার কক্ষের পানেই তাকিয়ে আছে,আঁখিকে দেখতে পেয়ে মুখে প্রাপ্তির এক হাসি ফুটিয়ে নিল মুহুর্তেই,আঁখি বুঝতে পারল অতিরিক্ত ঝড়ের বেগ তার শরীরকে দূর্বল করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।কক্ষ থেকে এবার শুভ্রতা বলল।

″আঁখি আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিত, উনি সারারাত এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে উনার শরীর খারাপ করবে অনেক,বিপদজনক কিছুও হতে পারে।″

আঁখি আর কিছু না ভেবে ছোটে বেড়িয়ে গেল।
একদম আদৃতের সামনে গিয়ে থামল।

″আমি জানতাম তুমি আসবে আঁখি।″

″কী শুরু করেছেন আপনি এসব?আপনি ছোটো বাচ্চা না যে এমন জেদ ধরে বসে থাকবেন,বৃষ্টিতে এভাবে ভিজলে কি হবে জানেন না!″

″তোমাকে না পেলে বাঁচা যে এমনিতেই দূরুহ হবে আঁখি।তোমার প্রেমে তো আমার এ মন বাচ্চা থেকেও অবুঝ ।তুমি যে আমার নিশ্বাসে মিশে গেছ আঁখি,একবার হাতটা ধরো দিশা পাব।″

″আমি আপনাকে ভালোবাসি না,কতবার বলব।″

″তোমাকে বাসতে হবে না,আমার একার ভালোবাসা আমাদের দু’জনের জন্যই যথেষ্ট,তুমি প্লিজ একবার হ্যাঁ বলো বাবাকে আমি মানিয়ে নিব।″

″আংকেল মেনে গেলেও আমি বিয়ে করব না আপনাকে।আপনি চলে যান প্লিজ, আমি আপনাকে ভালোবাসি না।″

এবার আদৃত টান দিয়ে আঁখিকে আবার নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে চেপে ধরল তাকে।আঁখির বাম হাত নিতের হাতে তুলে বিশ্বাস ও অধিকার সহিত বলল।

″যদি ভালোই বাসো না তবে এখনও আংটিটা খুলো নি কেন?আমার ভালোবাসার প্রতিক এখনও কেন তোমার শরীরে বিদ্যমান?বলতে পারবে?
কারণ তুমি আমার ভালোবাসো আঁখি,আমার দেওয়া ভালোবাসার অংশগুলো তুমি কখনই নিজে থেকে আলাদা করতে চাও না।″

″সব ভুল, সব মিথ্যে,আমি আপনাকে ভালোবাসি না,এই আংটি না খোলা নিয়েই যদি এতো কিছু হয় তবে এই নিন আপনার আংটি আর চলে যান প্লিজ।″

আদৃতকে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজ থেকে ছাড়িয়ে হাতের আংটিটা খুলে আদৃতের হাতে দিয়ে কথাগুলো চেঁচিয়ে বলল আঁখি।

″তুমি আংটিটা খুলে দিলে আঁখি,একটুও হাত কাপল না তোমার?″

″আপনাকে ভালোবাসি না,তাই হাত মোটেও কাঁপে নি।″

″এমনটা বলো না আঁখি,তুমি বিহনে পাগল হয়ে যাব আমি,আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় এখন তুমি ছাড়া,দয়া করে পর করে দিও না,ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় বড্ড,অন্যের সাজা তুমি আমাকে দিয় না।″

″প্লিজ ডা.আদৃত আমার আর এসব ভালো লাগছে না,চলে যান প্লিজ,আমি আপনার যথেষ্ট সম্মান করি আমি চাই না আমার কোনো কথায় বা আচরণে আপনি কষ্ট পান।প্লিজ চলে যান।″

″চলে গেলে খুশি হবে!″

″হবো।″

″কখনও সামনে না আসলে ভালো থাকবে!″

″হ্যাঁ থাকব,থাকব থাকব,চলে যান প্লিজ,বিরক্ত করে তুলেছেন আপনি বড্ড।″

বুকে পাথর রেখে মিছে কথাগুলো বলে আবারও বাড়ির ভিতর ছোটে চলে আসল আঁখি,আদৃতের পৃথিবীতে যেন মুহুর্তেই অন্ধকার নামল,বুকে বিরাজমান হলো শুন্যতা,মস্তিষ্ক যেন কাজ করা বন্ধ করে দিল।
_____________

রিদিকা আজ মেকআপ এর মাধ্যমে নিজের কুৎসিত দিক ঢাকার চেষ্টা করল,আদ্রিশের দেওয়া একটা শাড়ী পরে বেশ সাজগোছ করে নিয়েছে,আদ্রিশকে আজ কাছে টানবে সে,তার ডাকে দিতে হবেই আজ আদ্রিশকে সাড়া,অবশ্য এতো মেক আপ করেছে যাতে তার আসল চেহারা ঢেকে গেছে অনেকাংশেই, বেশ খারাপ দেখাচ্ছে না তাকে,এবার আদ্রিশ এলো কক্ষে,আসতেই রিদিকা তাকে জড়িয়ে ধরল ছুটে এসে।

″তুমি এসেছ?দেখ না তোমার জন্য সেজেছি আমি আজ,বলো না কেমন লাগছে,কতো দিন হয় পাশে আসো না, ছুঁয়েও দেখো না আমায়।″

আদ্রিশ প্রবল এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল রিদিকাকে ফ্লোরে।

″বললাম না আমার সামনে না আসতে,চুপচাপ আমার কক্ষের বাইরে চলে যা তোর ওই অলুক্ষুণে চেহারা নিয়ে।তোর জন্যই আজ সব হারিয়েছি,আর কথা রইল তোর রুপের,মেকআপ দিয়ে যেভাবেই ঢাক নিজেকে কুৎসিত রূপ ঢাকতে পারবি না।তোর দিকে তাকাতেও কেমন জানি ভয় হয় এখন।নিজেই হয়ত নিজেকে দেখার ক্ষমতা কুলিয়ে উঠতে পারিস না এখন আর আসিস আমার কাছে আসার বাহানা খোঁজতে,তোর মতো মেয়ের পাশ ঘেঁষতেও রুচিতে বাধবে আমার।″

চলবে…..

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৩৯)

আঁখি নিজের কক্ষে নিজেকে বন্ধ করে কেঁদে চলেছে নিঃশব্দে।বাম হাতের অনামিকা আঙুলের দিকে তাকাতে যেন কান্নার বেগ আরও বেড়ে গেল আঁখির।

″আমি ওটা খুলতে চাই নি ডা.সাহেব,সত্যিই ওটা খুলতে গিয়ে আমার বুকটা কেঁপে উঠেছিল তখন,আপনার ভালোবেসে দেওয়া যেকোনো অংশই যে আমার কাছে অমূল্য,আংটিটা যে মনে করিয়ে দিত আমায় আমি আপনাকে ফিরে পেয়েছি আবারও,কিন্তু হয়ত ভাগ্য তা চায় না,তাই তো চেয়েও আমি ধরে রাখতে পারি নি আপনাকে,আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
কেন সেদিন আমাকে ভুল বুঝে চলে গেলেন?সেদিন আপনি যদি এভাবে পিছু পরতেন,আমাকে পাওয়ার সংগ্রাম করতেন তবে আজ হয়ত আমরা এমন জায়গায় থাকতাম না।কেন এমনটা হলো আমাদের সাথে?″

আদৃত বাড়িতে পৌঁছাল, পা যেন তার চলছেই না,আঁখিকে ফিরে পাওয়ার কোনো দিশা পাচ্ছে না সে,না তো বেঁচে থাকার কোনো মানে খোঁজে পাচ্ছে। তখন আরিয়ান মির্জা ড্রয়িংরুমে বসে আদৃতের অপেক্ষা করছিলেন,মা দরজার আশেপাশে করছিলেন পায়চারী।আদৃতকে দেখে মা ছোটে গেলেন তার কাছে,বাবাও উঠে দাঁড়ালেন।

″বাবা তুই ঠিক আছিস তো?ঝড়ে ভিজেছিস কেন?তোর তো ঠান্ডা লেগে আছে এমনিতেই,কক্ষে চল।″

″তুমি সরো শায়েলা আমাকে কথা বলতে দাও ওর সাথে।″
″কোথায় গিয়েছিলি আদৃত?″

আদৃত অশ্রশিক্ত চোখ তুলে বসে যাওয়া কন্ঠে উত্তর দিলো।

″আঁখির কাছে গিয়েছিলাম বাবা,ফিরিয়ে দিয়েছে।″

″দেখলি তো,দেখ আদৃত আঁখ প্রতিষ্ঠিত আছে ওর জীবন নিয়ে কী চিন্তা আর, তুইও এখন জীবনে এগিয়ে যা।″

″আমার এগিয়ে যাওয়ার না তো আছে কোনো ইচ্ছে আর না তো আমি বাধ্য,আমি বিয়ে করলে আঁখিকেই করব,নয়ত অবিবাহিতই মরব,এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশন।″

কর্কশ গলায় জবাব দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলে আরিয়ান মির্জা বললেন।

″এমনটা হলে তোকে আমার আর আঁখির মধ্য থেকে একজনকে বেঁচে নিতে হবে আদৃত।″

বাবার কথায় থমকে দাঁড়াল আদৃত,অবাক হয়ে তাকালো বাবার মুখের পানে।

″দু’জনের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হবে, মানে কি বোঝাতে চাইছ বাবা!″

″এটাই যে তুই আঁখিকে জীবনে আনতে চাইলে আমাকে ছেড়ে দিতে হবে।তুই নিজেকে আমার ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে পারবি না,আমি ভাবব তুই কখনোই আমার জীবনে ছিলি না,আর তুই যদি আমাকে বেছে নিস তবে তোকে আঁখিকে ভুলে যেতে হবে,আর আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে হবে।এখন বল,এখনও যদি তোর আঁখিকে চাই তবে চলে যা আমি তোকে আটকাব না।″

″তোমাকে বলার মতো ভাষা আমি হারিয়ে গেছি বাবা।যাকে আমি জীবনে আদর্শ মানতাম সেই এমনটা করল আমার সাথে।তোমার কাছ থেকে আমি এটা আশা করি নি বাবা,গর্ব করে বলতাম আমার বাবা কখনও নিজের ইচ্ছে আমার উপর ছুঁড়ে ফেলে না,উনি আমার বাবার থেকেও বেস্ট ফ্রেন্ড বেশি,কিন্তু আফসোস।
চিন্তা করো না বাবা,তোমাকে নিরাশ করব না,আমার কারণে তোমার সম্মান কখনও যাবে না,আর আমি এমন সন্তান যে পৃথিবী আমার বিপরীতে চলে গেলেও আমি কখনই মা বাবার অবাধ্য যাব না,তাদের ছেড়ে যাব না,তবে আমি আঁখিকেও ছাড়তে পারব না,কিন্তু উভয় জিনিসের সমাধান আমি দিবই।″

অতঃপর নিজের কক্ষের দিকে চলে গেল আদৃত,শায়েলা মির্জা পিছন গেলেন,আদৃত কক্ষে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল,শায়েলা মির্জা বাইরে থেকে ডেকে যাচ্ছেন ওকে।

″বাবা আমার কথাটা শুন,তোর বাবার কথা শুনিস না,বুড়ো বয়সে পাগল হয়েছে,তুই বেড়িয়ে আয়,আমি তোর বাবার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে দিব,তুই আয় মায়ের কাছে।″

আদৃত ভিতরে ঢুকেই এটা ওটা ভাঙতে শুরু করেছে অতিরিক্ত রাগে,ভাঙার এক পর্যায়ে হাঁটু গেড়ে বসে পরে ফ্লোরে, হাতের মুঠোতে এখনও আঁখির ফিরিয়ে দেওয়া সেই আংটি,আংটিটার গায়ে চুমু দিয়ে এবার অনেক শব্দ করে কেঁদে উঠল।

″কেন আল্লাহ ওকে আমার কপালে রাখলেন না?তাই বুঝি কখনও কাউকে অবহেলা করতে নেই,কখনও না বুঝে অবহেলা করেছি ওকে আজ বুঝতে পারছি তখন আমার অবহেলায় ওর কতটা খারাপ লাগত,আমি ওর অবহেলা আর নিতে পারছি না,আমি বাঁচব না ওকে ছাড়া,ও যখন ভাগ্যেই ছিল না তবে কেন আনলেন ওকে আমার জীবনে?কেন?ওকে কি ভিক্ষে হিসেবেও আমাকে দেওয়া যায় না?″

এতসময় শায়েলা মির্জা কক্ষের ভিতরের ভাঙাচোরার শব্দের সহিত আদৃতের কান্নার শব্দও অনেকাংশেই শুনতে পারছিলেন বাহির থেকে,কিন্তু এখন কিছুই শুনতে পারছেন না,কক্ষ টা কেমন জানি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।শায়েলা মির্জার মনে চলতে শুরু হয়েছে আশঙ্কা, মায়ের মনের এ আশঙ্কা যেন বলে দিতে পারছে অনেক কিছুই,এবার উনি চেঁচিয়ে ডাকতে শুরু করলেন।

″আদৃত,বাবা কী হয়েছে?চুপ করে গেলি কেনো?দরজা খোল।″
″কে কোথায় আছো,জলদি আসে আমার ছেলে দরজা খুলছে না,কেউ আসে,আমার ছেলে না আবার কিছু করে যায়।″

ঘরের সবাই সেখানে ছোটে আসলেন,সবাই আদৃতকে ডাকছেন তবে কেউ সাড়া শব্দ পাচ্ছে না তার।সবাই এতে ঘাবড়ে যায়,বাকিরা দরজা ভাঙার চেষ্টা করলেও সিয়াম ঘরের বাইরের দিকটায় বেড়িয়ে আদৃতের কক্ষের নিচে যায়,অতঃপর আদৃতের বারান্দা দিয়ে ঢোকে,বারান্দার দরজা খোলা থাকায় সহজে কক্ষে প্রবেশ করে যায়।

আদৃত বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে,চোখ দু’টো লাল বর্ণ ধারণ করে গেছে,ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে আর বার বার বিছানার চাদর খামছে ধরছে।সিয়াম লক্ষ্য করল নিচে একটা খালি প্যাকেট পরে আছে,সিয়াম ছুটে গেল আদৃতের কাছে।

আঁখি নিজেকে শান্ত করে নিয়েছে।জাহানারা মা আর শুভ্রতা,আদিলকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসেছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলাপ করবে বলে।

″ভাইয়া আপনি বিজনেসটা চালিয়ে যান সবকিছু আমি দেখব,যা লাগে বলবেন আমায়।মা আপু তোমাদের যা লাগে আমার কর্মচারীদের দিয়ে আনিয়ে নিবে,আমি ওদের সবকিছু বুঝিয়ে বলেছি তোমাদের এখানে কোনো সমস্যা হবে না।″

″কেন আঁখি?কোথায় যাচ্ছো তুমি?″

″আমি দেশ ছেড়ে চলে যাব ভাইয়া,দু’দিন আর আছি মাত্র,কিছু প্রয়োজনীয় কাজে দু’দিন দেরি করা।″

″কেন রে বোন আমাদের ছেড়ে চলে যাবি?″

″তোমাদের ছেড়ে যাওয়ার তো কোনো ইচ্ছে নেই ভাইয়া,কিন্তু যেতে হবে,চিন্তা করো না প্রতিনিয়ত তোমাদের খোঁজ নিব।″

″অভীমানটা বুঝি আমাদের সাথে, তাই চলে যাচ্ছিস?″

তিনবছর পর মায়ের গলার স্বর চিনতে মোটেও ভুল হয় নি আঁখির,পিছন মুড়ে সয়ং মাকে দেখতে পেয়ে নিজেকে আটকে রাখতে পারল না,ছোটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল।

″মাম্মাম তুমি এসেছ!ক্ষমা করে দিয়েছ আমায়?আর মুখ ফিরিয়ে নিবে নাতো।″

″কেন তোর কি মনে হয় আমি এতই পাষাণ!তোর বাবাকে যথেষ্ট সম্মান করি তাই উনার সম্মানের উপর দিয়ে তোকে বুকে টেনে নিতে পারি নি,কিন্তু আজ আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না,আমি তো জানতামই না তুই আমাদের হাসপাতালে জয়েন করেছিস,কিন্তু আজ যখন জানতে পারলাম ওই বাপ বেটার কারণে আমার মেয়ে এতো কষ্ট পেয়েছে তখন আর নিজেকে আটকাতে পারি নি,ছোটে চলে এসেছি।″

″বাবা আর ভাইয়া আসে নি?″

″দাদু দিদুও এসেছেন।″

পিছন থেকে আঁখির দাদু আমিন খান বলে উঠলেন।
আঁখি তাকিয়ে দেখল মাইশা ব্যতীত পুরো খান বাড়িরই সেখানে উপস্থিত।
আঁখিকে আবাক করে দিয়ে তার বাবা বললেন।

″ভুল তো সন্তানেরা করতেই পারে কিন্তু তার মানে এই নয় বাবা মা তাদের সন্তানকে খারাপ সময়ে একা ছেড়ে দেয়।আমায় ক্ষমা করে দিস মা,দম্যের নিচে মেয়ের ভালোবাসা দমাতে গিয়েছিলাম,তবে ভুলে গিয়েছিলাম দিনশেষে এই বাবা তার মেয়ের কাছেই পরাজিত, আসবি না বাবার বুকে,বুকটা যে আজ তিনটে বছর ধরে হাহাকার করছে।″

আঁখি ছোটে চলে গেল তার বাবার বুকে।

″আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা,আমি আর কখনও তোমাদের অবাধ্য যাব না,তোমরা যা বলবে আমি তাই করব,আমাকে ক্ষমা করে দাও।″

এবার আশরাফ খান আঁখির চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন।

″আমি কিন্তু আমার মেয়েকে দূর্বল হয়ে পরে কান্না করার শিক্ষা দেই নি।আর যেন কাঁদতে না দেখি।″

″হুম তো শুধু মা বাবাদের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া হবে না কি?আমিও তো বড় ভাই হই,আমার কাছে ক্ষমা চা,তাও পা ধরে।″

″তোর কাছে ক্ষমা চাইতে আমার বয়েই গেছে।″

″তবে দাঁড়া তোকে এখনই দেখাচ্ছি।″

″মাম্মাম দেখো না তোমার পাগল মহিষটা ক্ষেপে গেছে।″

আঁখির কথা শুনে সবাই হেসে দিলো,এমন খুনসুটি আঁখি আহিলের যে লেগেই থাকত,এবার হাসিমুখে এগিয়ে গিয়েই আঁখি আহিলকে জড়িয়ে ধরল।

″ক্ষমা করে দিস ভাইয়া আমার।″

″পাগলি একটা আমি কি কখনও তোর উপর রাগ করে বেশিদিন থাকতে পেরেছি।ক্ষমা করে দিস,তকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।″

তখনই আশরাফ খানের ফোন বেজে উঠল।

″হ্যাঁ সামিরা বলো।″

″স্যার ডাক্তার আদৃত বিষ পান করেছেন,উনাকে উনার পরিবার আমাদের হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন,আমরা এমারজেন্সিতে উনাকে ঢুকিয়েছি,ডাক্তারেরা উনাকে দেখছেন।″

″ওকে আমি আসছি।″

″কি হয়েছে বাবা?″

″আদৃত সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে,ওকে এমারজেন্সিতে ঢুকানো হয়েছে।″

″কি!″
আর কিছু না বলেই আঁখি বাহিরের দিকে ছুটতে শুরু করল।

হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আরিয়ান মির্জা,চোখের পানি বয়ে চলেছে। আদৃতকে গাড়িতে করে নিয়ে আসার সময় আদৃতের জ্ঞান ছিল,সিয়াম গাড়ি ড্রাইব করছিল আর আদৃতকে শায়েলা মির্জা আর উনি উনাদের মধ্যেখানে বসিয়ে নিয়ে এসেছিলেন।তখন যখন কেঁদে কেঁদে আরিয়ান মির্জা বলেছিলেন।

″তুই কেন এমনটা করলি আদৃত?আমি তো এমন কিছু চাই নি?আমার সন্তানই না থাকলে আমি সম্মান দিয়ে কি করব?

তখন অনেক কষ্ট করে জবাব দিয়েছিল আদৃত।

″বাবা আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না,কিন্তু আঁখিকে ছেড়ে দেওয়ার সাধ্যও আমার নেই।প্লিজ আমায় বাঁচিয়ো না বাবা,কারণ বেঁচে থাকলে আমি আঁখির পিছু ছাড়ব না কখনও।″

কথাটা বলার পর জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছিল আদৃত,এবার বুঝতে পারলেন আরিয়ান মির্জা সম্মানের দোহাই দিয়ে তিনি নিজের ছেলের প্রাণ চাইছিলেন তার কাছ থেকে,ছেলের এই অবস্থার জন্য নিজেই দায়ী কীভাবে মেনে নিবে বাবা।

শায়েলা মির্জা চিৎকার করে করে কাঁদছেন।

″আমার ছেলেকে কেউ বাঁচিয়ে দাও,আমার ছেলের কিছু হলে আমি মরে যাব,আমি তোমাকে ছাড়ব না আরিয়ান,আমি তোমাকে ছাড়ব না,তুমি আমার ছেলে ফিরিয়ে দাও,নইলে আমি তোমাকে আসত রাখব না,কথাটা বলে এসেই আরিয়ান মির্জার কলার চেঁপে ধরলে সিয়াম আর ইশিতা উনাকে ছাড়িয়ে নেয় কিন্তু সেই ক্ষণেই উনি জ্ঞান হারান।

আঁখি ছোটে আসে হাসপাতাল,তার পরিবারও চলে আসে সেখানে,আঁখির চোখে মুখে জলের ছাপ,সাথে দুশ্চিন্তারও আভাস।পেরেশান হয়ে এসেই এমারজেন্সিতে ঢুকে পরল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আঁখি বেড়িয়ে এলো অন্য দু’জন ডাক্তার সহিত, আরিয়ান মির্জা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

″আদৃত কেমন আছে মা?″

″উনি আউট ওফ ডেঞ্জার,বিষ খুব স্ট্রোং ছিল তা বের করে দিতে পারলেও উনার যথেষ্ট দূর্বলতা থাকবে বেশ ক’দিন,তাড়াতাড়ি নিয়ে আসায় উনার প্রাণ বেঁচে গেছে।″

কথাটা বলে চোখের উপচে পরা জল মুছে নিলো আঁখি।আরিয়ান মির্জা এবার অনুতাপের স্বরে বললেন।

″আমায় ক্ষমা করে দাও আঁখি,আমি সম্মানের ভয়ে এতটা অধমে পরিণত হয়েছিলাম যে সব অনুভুতি মাটি চাঁপা দিতে গিয়েছিলাম।আমায় ক্ষমা করে দাও।আমার ছেলে তোমাকে ছাড়া বাঁচবে না,আর আমার ছেলের প্রাণ আমার কাছে বড়।আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও,চলে আসো আমার ছেলের জীবনে ফিরে।″

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here