#আঁধারের_তারাবাজি
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_৩৩
অপারেশন থ্রিয়েটারে ঢুকতেই চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো বেডে শুয়ে থাকা সাদা চাদরে মোড়ানো মোমকে।ওপাশ থেকে একজন নার্স মাত্রই বুকের দিক থেকে চাদরটা তুলে মুখমন্ডল ঢেকে দিলো তার।সহ্য হলো না নভের।
“হেই,,,কি করছো এটা??সরো!”
বলতে বলতেই দৌড়ে মোমের কাছে এসে নার্সকে সরিয়ে দিলো।হাত বাড়ালো মোমের মুখের দিকের চাদরের দিকে।একিহ,,,নভের হাতটা এমন কাপছে কেন??থরথর করে কাপছে।কেন কাপছে?তা জানা নেই নভের।এই হাতে তো কত শত বার পিস্তল উঠেছে ছুরি চালিয়েছে তুখর ভাবে,এই হাত দিয়েই।কই,তখন তো এমন কাপে নি হাতটা?তাহলে আজ সামান্য মোমের মুখের চাদর সরাতে এমন কাঁপছে কেন??উৎস খুজে পেলো না নভ।খুজতে চাইলোও না।
এক টান মেরে সরালো মোমের মুখের উপর থেকে চাদরটা।সাথে সাথেই ভেসে উঠলো মোমের বিষাদে ভরা মুখশ্রী। যা দেখার সাথে সাথেই নভের নিঃশ্বাস নিচে পড়লো,সাথে শরীরটাও যেন একটু ঝুকে পড়লো।,,
কাপা কাপা হাতদুটো রাখলো মোমের টসটসে দুগালে,,,আলতো চাপর দিতে দিতে ডাকলো সে…
“মোম???এই মোম??ত্ তুমি ঘুমাচ্ছো??মাত্রই না হাসছিলে??আমায় ডাকছিলে?মুহুর্তেই তুমি ঘুমিয়ে পড়লে??”
চোখ ঘুরিয়ে তাকালো মোমের পুরো নিথর শরীরের দিকে,, ভ্রু কুচকে বললো..
“ত্ তুমি এটা কেন পড়েছো??শ্ শাড়ী?? শাড়ী কোথায় তোমার??আমার হলদেটে পরী??হলুদ শাড়ীটা কোথায়??”
আপন মনে এসব বলছে আর এলোমেলো দৃষ্টি দিচ্ছে মোমেতে নভ।,,,আগোছালো ভাবে তাকালো নার্স দুজনের দিকে…প্রশ্ন ছুড়লো…
“এ্ এই??তোমরা আমার মোমকে এটা কি পড়িয়েছো হ্যা???ও্ ওর হলুদ শাড়ী কোথায়??”
একটা নার্স অবাক হয়ে বললো..
“হলুদ শাড়ী??”
সাথে সাথেই নভ আলতো চিৎকার দিয়ে বললো..
“হ্যা হলুদ শাড়ী,,,আমার হলদেটে পরীর শাড়ীটা??এ্ একটু আগেই তো পড়েছিলো ও??আ্ আমার সামনে গেলো?? চ্ চুড়ি??”
বলেই নিজের হাত দিয়ে মোমের ডান হাতটা টেনে বের করলো চাদরের নিচ থেকে।কই কাচের চুড়িগুলো তো নেই??হাতে তো ক্যানোলার লতা লাগানো?…
আবার তাকালো নার্সগুলোর দিকে..
“এই ওর চুড়ি গুলো কি করেছো??আমার মোমের চুড়ি কেন খুললে??কে বলেছে আমার মোমের জিনিস ধরতে???”
চিৎকার করছে নভ,,পাগলের মতো।নার্স দুজন উত্তর দিতে পারলো না এই আজগুবি কথার, তারা একে অপরের মুখোনে চাওয়া চাওয়ি করছে শুধু,আর সাক্ষী হচ্ছে এক প্রেমিক পুরুষের পাগলামির,,,।
নভ ব্যস্ত হলো মোমেতে।উত্তেজিত তার কন্ঠ,ঘনঘন মোমকে জিজ্ঞেস করছে??
“এই মোম??কি হলো,,সব কি করেছো??চুড়ি, নুপুর,শাড়ী,সব কি করেছো তুমি??এই??চোখ খোলো??একটু আগেই না হাসছিলে??এই, এই মোম???ওঠো না মোম??”
এই মুহুর্তে ভেতরে এলো ডক্টর। যে একটু আগেই বাইরে গিয়ে মোমকে মৃত ঘোষণা করেছিলো।অপারেশন থ্রিয়েটারে এভাবে যার তার প্রবেশ যে নিষিদ্ধ। নবকে তো বের করতে হবে।,,,,এসেই নভের এমন ছেলেমানুষী দেখে ডক্টর বললো…
“মি.রায়ানিশ,উনি আর বেচে নেই।আপনি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন,,,”
কথাটা শেষ করে পারলো না ডক্টর,,,নভ পেছন ফিরে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো ডক্টরের দিকে,আর চিৎকার করে বলে উঠলো…
“কি সব আজেবাজে কথা বলছেন,আমার মোমের কিচ্ছু হয়নি,আমি জানি।ও এভাবে মরতে পারে নাহ।”
ডক্টর দেখলো নভের লাল হয়ে যাওয়া চোখ দুটো।যেই চোখে স্পষ্ট পানি টলমল করছে।ঐ তো,কথার ফাঁকেই একফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো…
নভ আবারও ব্যাস্ত হলো মোমেতে,,এবার আর আগের মতো মিহি কন্ঠের ডাক নয়,ধমকাতে লাগলো তার মোমকে সে।আগের মতো সোহাগি ভাবে নয়,শক্ত করে চেপে ধরলো মোমের কাধ।ঘনঘন ঝাঁকাতে লাগলো তাকে,,,
“এই,,,,মোম,,,ওঠ,,।অনেক হয়েছে তোর এসব নাটক।আর নাহ।আমার কথা কানে যাচ্ছে না তোর??উত্তর কেন দিচ্ছিস না??ভয় কমে গেছে না আমাকে??ওঠ বলছি,,,,মেরে ফেলবো একদম তোকে,আমার কথা না শুনলে।কি হলো ওঠ,,,,এই,,,,এখনো চুপ করে আছিস কেন??সাড়া দে,,,সাড়া দে বলছি।,,,মোম আমার মাথা গরম করিস না বলতেছি।,,মোম??মোম??ওওঠ,,,মোম এইবার যদি সাড়া না দিস,কসম বলতাছি,থাপ্পড় দিবো তোকে আমি।,,,আমার কসম লাগে মোম ওঠ,,,সত্যি বলতাছি,আমি এইবাট জোরে জোরে থাপ্পড় দিবো,ব্যাথা পাবি কিন্তু মোম??ওওওঠ,,, ওওওঠ বলতাছি…”
নভের এমন পাগলামি দেখে কোনো উপায় না পেয়ে ডক্টর বাইরে থেকে তেজকে ডেকে আনলো।থ্রিয়েটারের ভেতরে ঢুকতেই নভের এমন বেহিসেবী পাগলামি দেখে তেজের আত্মা কেপে উঠলো। এসব কি করছে নভ?কি করে সামলামে তেজ এখন নভকে??
মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঝাঁকুনি দিচ্ছে মোমের।বিছানাও ঝাঁকাচ্ছে। আশপাশের সব জিনিসপত্রও ঝাঁকাচ্ছে।টান লেগে স্যালাইনের স্ট্যান্ডটা পড়ে ঝনঝন করে শব্দ করে উঠলো।তবে সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই নভের।এতোক্ষণে তো সে মোমকে জোরে জোরে থাপ্পড় মারতে লাগলো।এলোপাতাড়ি থাপ্পড় গুলো কোনোটা লাগছে মোমের গালে,কোনোটা কানের গোড়ায়,আবার কোনোটা মাথায়।
আর থেমে থাকতে পারলো না তেজ।পেছন থেকে গিয়ে ঝাপটে ধরলো নভকে..
“নভ,কি করছিস এসব।সরে আয় তুই…”
নভ শুনলো না,উল্টো বললো…
“তুই সরে যা তেজ।এই মেয়েকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।আমার কথা কেন শুনছে না ও??শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে।,,, এই,,ওওঠ বলছি..”
“নভ, পাগলামি করিস না,সরে আয় তুই…”
নভ নিজের সর্বশক্তি দিয়ে তেজকে ধাক্কা দিয়ে বললো…
“তুই,,আমায় ছাড় তেজ।”
তেজ ছিটকে পড়লো ফ্লোরে।নভের সুঠাম দেহের শক্তির কাছে তেজ নিতান্তই চুনোপুঁটি।,,,নিজেকে সামলে উঠে দাড়ালো তেজ।আবারো নভের কাছে আসতে নিয়ে থমকে গেলো একটা শব্দ শুনে।,,,সে একা নয় উপস্থিত ডক্টর আর নার্স দুজনও ভিষণ অবাক।এটা কি দেখছে তারা??
বেডের পাশে থাকা স্ক্রিনে টুট টুট শব্দ হচ্ছে। সাথে এতোক্ষণের সমান লাইন গুলোও আকাবাকা হয়ে চলতে শুরু করেছে।পাশে থাকা সংখ্যাও শূন্যের ঘর ছাড়িয়ে ৩,৫,৬ করে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।
অস্পষ্ট স্বরে তেজ বলে উঠলো…
“ম্ মোমের হার্টবিট ফ্লো করছে???”
ডক্টর যেন নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছে না,,,,
“ওও মাই গড,,,,সিস্টার…ইম্মিডিয়েটলি ইনকম্প্লিট ওটিটা রেডি করো।ক্যানেলাটা সেট করো পেশেন্টের হাতে।কুইক,,,”
এরপর ডক্টর তেজের দিকে তাকিয়ে দ্রুত বললো…
“আপনি প্লিজ এবার মি.রায়ানিশকে বাইরে নেওয়ার ব্যাবস্থা করুন।আমাকে আমার মতো চেষ্টা করতে দিন।”
তেজ মাথা নাড়িয়ে নভকে আবার টানত গেলো,,,তবে কোনো লাভ হলো না।,, নভের এসব দিকে কোনো হুশই নেই।তার মোমের যে হার্টবিট চলছে,সেই খবর সে খেয়াল করেও যেন করলো না।,,,
তেজ পারলো না একা নভকে সরাতে।বুদ্ধি করে একটু বাইরে গিয়ে ডাকলো নিশানকে…
“নিশান,দ্রুত এদিকে আয়,নভকে বাইরে আনতে হবে।মোমের হার্টবিট ফ্লো করছে…”
কথাটা যেন মুহুর্তেই চমকে দিলো সবাইকে।,,,নিশানও থমকালো,,,তেজ আবার ডাকলো..
“নিশান এখন অবাক হওয়ার সময় নয়,,প্লিজ দ্রুত আয়।”
স্তম্ভিত ফিরলো নিশানের।মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে গেলো।,,,একটু আগে নোয়ানও এসে উপস্থিত হয়েছে।,,সেও বললো..
“আমিও আসছি”
তেজ সম্মতি দিয়ে বললো..
“আয়,”
তিনজন মিলে কোনো রকমে নভকে বুঝিয়ে টেনে হিচড়ে বাইরে বের করে আনলো।সাথে সাথেই ডক্টর ভেতর থেকে অপারেশন থ্রিয়েটারের দরজা বন্ধ করে দিলো,যাতে নভ আর পাগলামি করে ভেতরে আসতে না পারে।
এদিকে “মোমের হার্টবিট ফ্লো করছে ” এই কথাটা শুনেই তড়িৎ গতিতে নোভার বুক থেকে মাথা তুললো মোয়ান।হাইপার হয়ে গেলো সে আবার…
“ব্ বোনি??বোনির হার্টবিট ফ্লো করছে??ও্্ আ্ আমার বোনি বেচে আছে??”
বলতে বলতেই নোভাকে ছাড়িয়ে উঠে দাড়ালো সে,,,দৌড়ে অপারেশন থ্রিয়েটারের কাছে যেতেই তেজ আটকে ধরলো তাকে।
“এই,এই,এই,,,,মোয়ান মোয়ান,,প্লিজ নিজেকে সামলাও,,,,”
বলেই নোভার দিকে তাকিয়ে তেজ বললো..
“নোভা,প্লিজ মোয়ানকে একটু সামলাও।আমি নভকেই সামলে উঠতে পারছি না।”
আকস্মিক ভাবে উঠে যাওয়ায় নোভা আটকাতে পারেনি মোয়ানকে।ভাগ্যিস তেজ আটকে ধরলো তাকে।,,,,নোভা দ্রুত উঠে দাড়িয়ে এগিয়ে গেলো মোয়ানের দিকে।চোখ মুখ শক্ত করে দাড়ালো মোয়ানের সামনে।মোয়ানের হাত ধরে টানতে টানতে বললো..
“এদিকে আসুন আপনি,, আসুন বলছি..”
মোয়ানকে নিয়ে করিডোরের চেয়ারে জোর করে বসিয়ে ধমক দিয়ে বললো..
“বসুন এখানে।এক পাও নড়বেন না এখান থেকে।”
মোয়ান বাচ্চাদের মতো বারবার অপারেশন থ্রিয়েটারের দিকে আঙুল তাক করে বলছে..
“অভয়া,,আ্ আমার বোনি??আমার বোনি ব্ বেচে আছে।ওও্ ওর কিছু হয়নি,ত্ তাই না??আ্ আল্লাহ, আল্লাহ আ্ আমার কলিজা ক্ কেড়ে নেয়নি??ত্ তাই না??”
নোভা ঝুকে মোয়ানের চোখ মুছে দিচ্ছে বারবার।আর তাকে শান্তনা দিয়ে বলছে..
”হ্যা,,,আপনার বোনির কিচ্ছু হয়নি।একদম ঠিক আছে কিউটিপাই।,,আল্লাহ আপনার কলিজা কেড়ে নেয়নি।এখন প্লিজ শান্ত হন আপনি??”
মোয়াম বাচ্চাদের মতো বলতে লাগলো..
“অভয়া,,,অভয়া আমি দেখবো,,আ্ আমি আমার কলিজাটাকে দেখবো একটু, আমায় ভেতরে যেতে দিন??”
নোভা কোমল কন্ঠে বললো…
“হ্যা দেখবেন তো??ওকে একটু সুস্থ হতে দিন,,একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ।তারপর দেখবেন আপনার কলিজাকে।হুম??”
মোয়ান শব্দ করে কেদে উঠলো…
“আ্ আমার বোনি,,,আল্লাহ আমার বোনিকে ফিরিয়ে দিয়েছে।,, আমার কলিজাটাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।,,ব্ বোনি,,,,”
নোভা ব্যাস্ত হলো মোয়ানকে সামলাতে।মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলো…
“আল্লাহ,,,,উনার মতো একজন ভাই যেন প্রত্যেকটা বোনের হৃদয় জুড়ে থাকে।যে ভাই পাশে থাকলে পৃথিবীর কোনো অপশক্তি সেই বোনকে ছুতে পর্যন্ত না পারে।”
—–
এভাবেই বিষাদের মাঝে কেটে গেলো চার চারটা দিন।ঐ দিন অপারেশনের পর মোমকে আই সি ইউ তে দেওয়া হয়েছে।ডক্টর জানিয়েছে ৭২ ঘন্টার মধ্যে মোমের জ্ঞান না ফিরলে তাদের আর কিছু করার থাকবে না।
৭২ ঘন্টা, মানে তিন দিন।,,,তিনদিনের জায়গায় চারদিন হয়ে গেলো।ফেরেনি মোমের জ্ঞান। তবে ডক্টর ভেবেছিলো জ্ঞান না ফিরলে মোম মারা যাবে তিনদিন পরেই।তবে এমনটাও হয়নি।মোমের হার্টবিট পয়েন্ট ৭৬ থেকে ৮৪ তে বারবার ওঠানামা করছে।
তিন দিন আগেই বাংলাদেশের টপ নিউরোলজিস্ট ১২ জন এসে উপস্থিত হয়েছে।তারা এখনো এখানেই আছে।প্রতি মুহুর্তেই মোমের চেকআপ চলছে অভিজ্ঞ ডক্টরদের দ্বারা। মোমের কান্ডিশন দেখে সবাই ধরে নিলো মোম বেচে আছে।তবে সে এই মুহুর্তে কোমায় চলে গেছে।কবে ফিরে আসবে জানা নেই।আদেও বেচে ফিরবে নাকি এই অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করবে তাও জানা নেই।
—-
মসজিদের জায়নামাজে পাশাপাশি দুজন বসে নামাজ আদায় করছে।দুজনই বিদ্ধস্ত। সম্পর্কের দিক থেকে ভিন্ন হলেও দুজনের প্রার্থনা একটি মাত্র ফুলকে নিয়ে।হ্যা,মোয়ান আল্লাহর কাছে একজন ভাই হিসেবে প্রার্থনা করছে তার কলিজার টুকরা বোনির জন্য আর নভ প্রার্থনা করছে একজন স্বামী এবং একজন প্রেমিক পুরুষ হিসেবে তার বউ, তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য।
হসপিটালের দুপাশে দুদিকে মসজিদ ও মন্দির থাকাটা যেন সৃষ্টিকর্তার দান।সকলে তার নিজের প্রান মানুষদের জন্য যাতে সময়ে সময়ে এসে প্রার্থনার হাত তুলতে পারে সৃষ্টিকর্তার কাছে।সেই সুবাদেই এই চার দিন ধরে মোয়ান আর নভ,দুজনই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছে মোমের জন্য।
মোয়ান আগে থেকেই নামাজি।তবে নভ আল্লাহর প্রতি অনুগত না হলেও অনানুগতও নয়।সে বিশ্বাস করে তার সৃষ্টিকর্তাকে।তাই তো সবসময় না হলেও এখন তার প্রানের জন্য আল্লাহর কাছে হাত তুলতে এসেছে সে।সে জানে আল্লাহ তার প্রতি নারাজ হলেও সে যার জন্য চাইতে এসেছে, মোম,,?আল্লাহ মোমের প্রতি নারাজ হবে না কখনোই।তাইতো এখন মোমের হয়েই আল্লাহর দরবারে এসে দাড়ায় সে।,,
মসজিদের দরজায় দাড়িয়ে এমন দৃশ্য দেখছে দুই সুপুত্রের দুই বাবা।,, মোয়ান আর নভকে দেখে ভেতরটা ভেঙেচুরে যাচ্ছে জয়নালের।সে যে এতোগুলো দিন নিজেকে একা ভাবতো,তার মেয়ের জন্য কেউ নেই ভাবতো।কিন্তু এখন সে মনে প্রানে বিশ্বাস করে মোয়ানের মতো একটা বড় ভাই আর নভের মতো একজন জীবনসঙ্গীই একসাথে হাজার জনের বিরুদ্ধে লড়তে পারে তার মোমমার জন্য।
চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো তার।অবন দেখলো,তার মনও যে বিষন্ন।এই চারটা দিন নিজের ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারেনি সে।বুকটা কেপে উঠে তার।আপসোস করলো মনে মনে তিনি,পলি যে কখনোই নিজের ছেলে মেয়ের প্রতি যত্নবান নয়,তার আরো একটা প্রমান পেলো এই কয়েক দিনে।,,শুধু নভ নয়,মোয়ানের জন্যও অন্তর জ্বলে অবনের।ছেলেটাও যে বোনের জন্য পাগলপ্রায়।অবন ভাবলো..
“মোমমাকে ছাড়া এই দুটো ছেলে কতদিন বাঁচবে আল্লাহ???একটা মাসও কি টিকবে??মনে তো হয় না।,,,”
হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে জয়নালের পিঠে হাত দিয়ে বললো অবন…
“নিজেকে সামলান বেয়াই সাহেব।নিজেকে সামলান।”
ততক্ষণে উঠে এলো মোয়ান আর নভ।দুজনেরই মাথায় সাদা রঙের ছোট্ট রুমাল বাধা।এই সময় মসজিদের দরজায় দুই বাবাকে দেখে একটু অবাক হলো মোয়ান আর নভ।তারা তো এই সময় আসে না??,,মোয়ান ভাঙা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো..
“ত্ তোমরা এখানে?”
অবন মাথা ঝুকালো,,,আস্তে করে বললো…
“আসো হসপিটালে।মোমমাকে দেখবে চলো”
+++চলবে+++
[আর হয়তো একটা পর্ব দিয়ে শেষ করে দিতে পারি।ভেবেছিলাম এই পর্বেই সমাপ্তি দেবো।তবে লিখতে লিখতে অনেক বড় হয়ে গেছে।তাই আরেক পর্ব বাড়ালাম।]