প্রেম_আমার♥ #পার্ট-২৭,২৮♥ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ .

0
400

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-২৭♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
আমারা ৪ জন চোখে হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছি উদ্দেশ্য রুশো ভাইয়া নাক ফেটে টমেটো হয়ে যাওয়ার সেই বীভৎস দৃশ্য তৃতীয়বার দেখবো না। কিন্তু এবার “ঢিশুম” টাইপ কোনো সাউন্ড না আসায় বিস্ময়ে চোখ থেকে হাত সরিয়ে কি হচ্ছে দেখার জন্য চোখ খুললাম।
আমার সাথে বাকিরাও চোখ খুললো।
.
রাত্রি ইচ্ছেমতো কেকের ক্রিম হাতে নিয়ে রুশো ভাইয়ার পুরো মুখে মাখিয়ে চলেছে। আর রুশো ভাইয়া স্টিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপারটা বড়ই অদ্ভুদ! রুশো ভাইয়া তো চাইলেই সরে যেতে পারতো কিন্তু ভাইয়া ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আর রাত্রি ভাইয়াকে পুরো ভূত বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
.
ক্রিম মাখাতে মাখাতে এবার রাত্রি থামলো। আমি রাত্রির পাশে দাঁড়িয়ে কানে ফিসফিস করে বলে উঠলাম,

– কিরে? এবার রুশো ভাইয়ার নাকটা বেঁচে গেলো কিভাবে?
.
রাত্রি চোখ ছোটছোট করে আমার কানে ফিসফিসিয়ে উত্তর দিলো,
– আরে মারতে গিয়েইছিলাম প্রায় কিন্তু…অলরেডি নাক লাল ছিলো, এবার মারলে হাড্ডি ভেঙ্গে যেতো তাই ছেড়ে দিলাম। বাট তোর এই ভাইকে বুঝা। নেক্সট টাইম আমার পেছনে লাগলে নাক আর নাকের জায়গায় থাকবে না। হুহ!
.
আমাদের কথার মাঝেই রুশো ভাইয়ার চাপা আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো।
– “আহহহহহ” হেই আমি কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিনা। চোখ জ্বলছে। ছুটকি, অগ্নি ব্রো….! হেল্প মি প্লিজ।
.
ভাইয়ার চোখে হয়তো ক্রিম ঢুকে গিয়েছে। তাই তাড়াহুড়ো করে আমি ভাইয়ার কাছে গেলাম। ওদিকে অগ্নি ভাইয়া ছুট লাগালো পানি আনার জন্য। নীবিড় ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে ধরে এক সাইডে নিয়ে গেলো। রুশো ভাইয়া চোখ জ্বলার জন্য ছটফট করছে। আমি টেনশনে পরে গেলাম এবার। রাত্রিরোও মুখটা শুকিয়ে এলো। মুখে ক্রিম মাখালে ঠিক ছিলো কিন্তু চোখে পর্যন্ত দিতে গেলো কেনো?
.
– হলো এবার তোর শান্তি? রাত্রি তুই আসলেই রুশো ভাইয়ার সাথে একটু বেশি বেশিই করছিস! ভাইয়া এই পর্যন্ত ইচ্ছে করে কিছুই করে নি। ভাইয়া আমাকে ক্রিম মাখাতে এসেছিলো। কিন্তু আমি মাঝ থেকে সরে যাওয়ায় ভুলক্রমে তোর গালে গিয়ে লেগেছে।
.
আমার কথায় হয়তো রাত্রির রিয়ালাইজ হলো। আসলেই সে একটু বেশি বেশিই করছে।
.
– সরি অনন্যা..! আমি আসলে রাগের মাথায়…!
.
রাত্রিকে আর বলতে না দিয়ে থামিয়ে আমি আবারো বলে উঠলাম,
– সরি বলার হলে আমাকে না রুশো ভাইয়াকে বল।
.
অগ্নি ভাইয়া ততক্ষণে পানি আর টিস্যু নিয়ে হাজির হলো। রুশো ভাইয়া একের পর এক পানির ঝাপটা দিতে লাগলো। কিছুটা বেটার ফিল করার পর টিস্যু দিয়ে চোখের আশেপাশের ক্রিম গুলো আগে মুছে নিলো। ভাইয়ার বাম চোখটা একদম লাল হয়ে গিয়েছে। তখনই নিত্য আপু হাতে একটা ড্রপ নিয়ে এলো। হয়তো চোখে দেওয়ার ড্রপ হবে।
.
– রুশো ভাইয়া, এদিকে এসে বসো। এই ড্রপ টা দিলে জালা কমে যাবে।
.
অগ্নি ভাইয়া নিত্য আপুর কথা মতো রুশো ভাইয়াকে এনে সোফায় বসিয়ে দিলো। সাথে আমরাও পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। রুশো ভাইয়া চোখ বন্ধ করে রেখেছে। জালা করায় চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে ভাইয়া। তাও রুশো ভাইয়া হাসতে হাসতে বলছে,
.
– আরে আমার কিছু হয়নি। তখন একটু জ্বলছিলো। নাও আই এম এবস্যুলুটলি ফাইন। ডোন্ট টেক এনি টাইপ অফ টেনশন।
.
– চুপপ কর তুই। দেখতেই পারছি কেমন আছিস। চোখ খোল ড্রপ টা দিয়ে দেবে নিত্য।
.
অগ্নি ভাইয়া কিছুটা রেগেই রাত্রির দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো। তাতে জেনো রাত্রি আরোও ভয় পেয়ে গেলো। নিত্য আপু রুশো ভাইয়ার চোখে ড্রপ দিয়ে কিছুক্ষণ চোখ মেলে ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে বললো।
এদিকে আমার রুশো ভাইয়ার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে। সবসময় ভাইটা আমার হাসিখুশি থাকে। সবাইকে হাসিতে মাতিয়ে রাখে। অথচ নিজের কিছু হলে বুঝতেই দেয় না। একবার আমাকে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পাওয়া থেকে আটকাতে নিজেই আমাকে ঘিরে ধরে পড়ে গিয়েছিলো। ভাইয়া আমাকে কভার করে পড়ায় আমার বিন্দুমাত্রও ব্যথা লাগে নি। সম্পূর্ণ আঘাত লেগেছিলো রুশো ভাইয়ার। অথচ তখনোও ভাইয়া হাসছিলো এই বলে,
.
– হ্যা রে ছুটকি। মাটিও দেখি তোর মতো নরম হয়ে গিয়েছে। এতো ওপর থেকে পড়লাম দুজনে, না তোর লাগলো আর না আমার।
.
আজো তাই আছে রুশো ভাইয়া। রাত্রি রুশো ভাইয়ার পাশে গিয়ে মাথা নিচু করে আমতাআমতা করে বলে উঠলো,
– স..সরি! আসলে আমি বুঝতে পারি নি যে চোখে চলে যাবে!
.
রুশো ভাইয়া বসা থেকে উঠে বসে রাত্রিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলে উঠলো,
– ওহ আম অল রাইট এটম বোম্ব, এন্ড ইউ নো হোয়াট? তোমার ওই রাগি ফেইস টাই আমার ভালো লাগে। সো এরুকুম সুরি টুরি বইলু না কিমন?
.
রুশো ভাইয়ার কথা শুনে না চাইতেও হেসে উঠলাম আমি। আমার সাথে সাথে হেসে উঠলো বাকি সবাই।
.
.
অগ্নি ভাইয়ার চাপ বেজায় বেরে গেলো। আব্বু বিজনেস সামলানোর দায়িত্ব এখনই ভাইয়ার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। ইভেন আব্বুর কালিগদেরও বলে দিয়েছে। নীবিড় ভাইয়ার আব্বু অবশ্য নীবিড় ভাইয়াকে এখনোই এসবে জড়াতে বলে নি। নীবিড় ভাইয়ার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। পড়ালেখা একেবারে শেষ করেই বিজনেসে হাত দিতে চান উনি। আর তো মাত্র কয়েকটা মাসই বাকি। কিন্তু আব্বুর চাপ বেড়ে গিয়েছে। তারওপর আব্বুর ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। এই শরীর নিয়ে একা কুলিয়ে উঠতে পারছেনা তাই এখনই অগ্নি ভাইয়াকে অগত্যা বিজনেসে ইনভলভ হতে হলো।
.
🌸
.
আজ নিয়ে এক সপ্তাহ হয়ে গেলো আমি সাদা বিলাইয়ের থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেরোচ্ছি। ভার্সিটিতে গেলে খুবই সাবধানে চলাফেরা করছি। মাঝে মাঝে সামনে পড়ে গেলেই সালাম দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেছি। আসলে উনার সামনে গেলেই কেমন যেনো হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। আমি নিজেও বুঝি না এরকম কেনো হয়।
তার ওপর সেদিনকের পুলে পরে যাওয়ার ঘটনার পর থেকে আমাকে দেখলে সবাই কেমন যেনো একটা রিয়াকশন দেয়। যেই রিয়াকশনের অর্থ আমি বুঝতে পারিনা। তবে এই রিয়াকশন আমার স্বাভাবিক মনে হয়না। বড্ড অস্বস্তি হয় আমার।
এসব ভাবছিলাম সাথে ভার্সিটির একটা পুল সাইড গাছের নিচে বসে চিপস খাচ্ছিলাম। হঠাৎ রাত্রির চিমটি খেয়ে ঘোর কাটলো আমার।
.
– এই অনন্যা, দেখ ওই চিরকুট টা আবার আসছে।
.
রাত্রির কথায় চিপস খাওয়া থামিয়ে সামনে তাকালাম। সিফাত নামের হ্যাংলা ছেলেটা এদিকেই তার বেক্কেল মার্কা হাসি দিতে দিতে হেটে আসছে। ছেলেটাকে দেখে কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফুটে উঠলো আমার। এই ছেলেটা কে দেখলেই আমার গা পিত্তি জ্বলে উঠে। ১ সপ্তাহ ধরে শুধু গায়ে পরে পরে কথা বলতে আসে। শুধুমাত্র সিনিয়র বলে কিছু বলিনা। আমাদের সেম ব্যাচ হলে এতোক্ষণে হাত পা ভেঙ্গে রেখে দিতাম।
.
– হেই গার্লস কেমন আছো তোমরা?
.
– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ! (ব্যাট্টা ছেঁচড়া আমরা যেমনই থাকি তাতে তোর কি?)
.
– বাহ বেশ তো। তা কি করছো?
.
ব্যাট্টা কানা দেখতে পারেনা চিপস খাচ্ছি। খাওয়ায় ব্যাগড়া দিয়ে এখন জিগাস কি করি?
মেজাজটা বিগড়ে যাচ্ছে আমার। পাশে তাকিয়ে দেখি রাত্রিরোও একই অবস্থা! শুধুমাত্র ভদ্রতার খাতিরে দাঁতে দাঁত চেপে কোনোরকমে বলে উঠলাম,
.
– এইতো বসে বসে চিপস খাচ্ছিলাম। আপনি আসায় খাইতে ব্যাঘাত ঘটলো।
.
কথাটা এমনভাবে বললাম যাতে আমরা বিরক্ত বুঝে নিজের রাস্তা মেপে চলে যায় এই বিরক্তির ডিব্বাটা। কিন্তু যাওয়ার বদলে আবারোও সেই বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
.
– আরে শুধু চিপস খেলে তো গলা শুকিয়ে যাবে। এই নাও তোমার জন্য জুস নিয়ে এলাম। (হাতে থাকা জুসের বোতলটা এগিয়ে দিয়ে)
.
এবার আমি ভীষণ রেগে গেলাম। মানেটা কি? আমার জন্য জুস নিয়ে এসেছে। আমি কি লাগি তার? হুটহাট এসে এভাবে গায়ে পরে ভাব জমানোর মানে কি! রেগেমেগে যেই না আঙুল তুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই হুট করে কোথায় থেকে যেনো সাদা বিলাই টুপ করে আমাদের সামনে চলে আসে।
.
– সিফাত…! কি হচ্ছে এখানে? (গম্ভীর কন্ঠে)
.
সিফাত নামক ছেলেটা উনার গলা পেয়ে যেনো হকিচকিয়ে গেলো। পেছনে ঘুরে কাঁপাকাঁপা গলায় বল উঠলো,
– ভা…ভাই…! আসলে আপুটার গলা শুকিয়ে গেছিলো তাই আর কি জুস এনে দিচ্ছিলাম।
.
নীবিড় ভাইয়া কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থেকে আমাদের দিকে তাকালো। আমি তো এই ছেলের কান্ড দেখে চরম অবাক। বলে কি এই ছেলে হ্যা? এক ঠেলায় আপু হয়ে গেলাম? আর আমি নাকি জুস আনতে বলেছি!
রাত্রি আর আমি একে অপরের দিকে দিকে চাওয়া-চাওয়ি করছি। রাত্রি শুধু একবার নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা দুদিকে নাড়িয়ে না বোধক সম্মতি জানালো, যার অর্থ “যে না আমরা বলি নি জুস টুস আনাইতে!”
সাথেসাথেই বিকট এক আওয়াজে মাটিতে ছিটকে পড়লো ছেলেটা। এমনি এমনি ছিটকে পড়ে নি, পড়েছে সাদা বিলাইয়ের হাই পাওয়ার ওয়ালা হাতের চড় খেয়ে।
.
– আমাকে মিথ্যে বলিস! সাহস এতোদূর গেলো কিভাবে তোর?
.
– ভা…ভা…ভাই মাফ করে দেন। আর এমন ভুল হবে না ভাই।
.
নীবিড় ভাইয়া ছেলেটাকে নিচ থেকে কলার ধরে তুলে শান্ত গলায় বলে উঠলো,
– ভালো করে ওদের মুখ দেখে নে! নেক্সট টাইম ওদের আশেপাশেও যেনো না দেখি তোকে।
এখন ক্লাসে যা।
.
বলেই ছেড়ে দিলেন ছেলেটিকে। ছাড়া পাওয়া মাত্রই পেছনে না তাকিয়েই এক ছুট লাগালো ছেলেটা!
আমি আর রাত্রি এতোক্ষণ শুধু ” হা” করে দেখছিলাম সবকিছু। এবার আমি মুখ খুললাম।
.
– এতো জোড়ে কেউ থাপ্পড় মারে? দাঁত তো ভেঙ্গেই গিয়েছে বোধহয়!
.
নীবিড় ভাইয়া ডোন্টকেয়ার ভাব নিয়ে পকেটে দুহাত গুঁজে বলে উঠলেন,
– তোমার এতো দরদ উতলে পরলে নিজের দাঁত গুলো খুলে ওকে লাগিয়ে দিও।
.
উনার কথা শুনে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলাম আমি। প্রসঙ্গটা বদলানোর জন্য বলে উঠলাম,
– ভা..ভাইয়া কোথায়?
.
– সেটা তো আমি তোমার কাছেই জানতে আসছিলাম যে অগ্নি কোথায়! অফিস থেকে সোজা ভার্সিটি আসার কথা ছিলো। এখনোও এলো না কেনো?
.
– আমিও ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একটু দরকার আছে। নেক্সট ক্লাস ১২ টায় আছে আমার। তাই এখানে বসে অপেক্ষা করছিলাম।
.
নীবিড় ভাইয়া আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে গেইটের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। হঠাৎ আমার হাত টেনে ধরে দৌড়তে লাগলেন। আর রাত্রিকে বললেন “আমরা আসছি। লেট হতে পারে। ক্লাস করে চলে যেও।”
আমি দাঁড়িয়ে থাকলে পড়ে যাবো তাই উনার সাথে পা মিলিয়ে দৌড়োতে লাগলাম।
.
– আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? বলবেন তো!
.
– চুপ চাপ আমার সাথে এসো। কোথায় যাচ্ছি সেটা গেলেই বুঝতে পারবে।
.
বলেই আমাকে গ্যারেজের পাশে দাঁড় করিয়ে বাইক বের করে আনলেন।
– আ…আমিও কি বাইকে যাবো?
– নাহ…! তোমার জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করবো মহারাণী!
স্টুপিড! চুপচাপ পেছনে উঠে পড়ো। (ধমক দিয়ে)
.
আমি উনার ধমক শুনে কেঁপে উঠলাম। একরাশ অনিচ্ছা সত্ত্বেও পেছনে উঠে বসলাম। আমি বসা মাত্রই উনি বাইক স্টার্ট দিয়ে ছুটে চললেন অজানায়। আল্লাহ মালুম আমাকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিতে যাচ্ছেন না তো উনি?
.
.
.
.
চলবে…………………………..💕
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-২৮♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌸
.
টেবিলের এক কোণায় চেয়ার টেনে বসে একের পর এক পানির গ্লাস খালি করে চলেছি আমি। আমার পাশে রুশো ভাইয়া দাঁত দিয়ে নখ কামড়ে চলেছে। আমাদের সামনেই নিত্য আপু থরথর করে কাঁপছে। পাশে অগ্নি ভাইয়া নিজের ঘাম মুছতে মুছতেই শহীদ হয়ে যাবে বোধহয়।
সবাই যে যার জায়গায় স্থির থেকে ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে নীবির ভাইয়ার দিকে। নীবিড় ভাইয়া এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি হাতের দুমুঠো শক্ত করে ধরে রেখেছন। থরথর করে কাঁপছে উনার ঠোঁটজোড়া। হয়তো বা নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উনি।
.
🍁
.
#কিছুক্ষণ_আগের_অনাকাঙ্ক্ষিত_ঘটনা…!
.
আমি সাদা বিলাইকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছি কিন্তু উনি যেনো শুনেও শুনছেন না। আপন মনে ডোন্টকেয়ার ভাব নিয়ে বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন উনি। হঠাৎ আমার চোখ যায় আমাদের সামনে খানিকটা দূরে থাকা কারের ওপর। কারটা দেখে আমি বেশ অবাক হয়ে পড়ি। কারণ কারটা আর কারোর নয়,স্বয়ং আমাদের প্রাইভেট কার। যেটা নিয়ে ভাইয়স অফিসে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছিলো। তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য নীবিড় ভাইয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে উঠলাম,
.
– ভাইয়া…! ওটা তো আমাদের কার। আপনি কি আমাদের কার ফলো করছেন?
.
উনি বোধহয় আমার প্রশ্ন শুনে বেশ বিরক্ত হলেন। অনেকটা ঝাঁঝালো কন্ঠেই সামনে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
– হাও স্টুপিড! কার দেখেও কি মনে প্রশ্ন জাগছে না তোমার ভাই এদিকে কোথায় যাচ্ছে? এদিকে না তোমার বাড়ি আর না অফিস! ভার্সিটি তো ক্রস করেই এসেছে। নাও জাস্ট কিপ সাইলেন্ট।
.
🌹
.
৫ মিনিট যাবৎ ভার্সিটির গেইটে পায়চারী করছে রুশো। অনন্যা একটা এসাইনমেন্ট রেখে গেয়েছিলো বাসায়, তাই দিতে পাঠিয়েছে মনি তাকে। কিন্তু বিপত্তি ঘটছে এখানে, অনন্যার ফোন বন্ধ। বেশ কয়েকবার কল করার পরও কোনো রেসপন্স না পেয়ে রুশোর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠছে। যেহেতু এখন ক্লাস টাইম ও না তাহলে নিশ্চয় ক্যাম্পাসের ভেতরেই কোথাও ঘোরাঘুরি করছে অনন্যা, তাই রুশোর ধারণা।
.
রাত্রি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হাটাহাটি করছিলো। হঠাৎ গেইটের দিকে চোখ যেতেই খানিকটা অবাক হয় রাত্রি। তার মনে প্রশ্ন জাগে, “রুশো এখানে কেনো?” পর মুহূর্তে ভাবলো নিশ্চয় অনন্যার জন্য এসেছে। কিন্তু নীবিড় তো অনন্যাকে ধরে নিয়ে কোথাও একটা চলে গিয়েছে। রুশো তো অনন্যাকে খুঁজে পাবে না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ধীর পায়ে গেইটের দিকে এগোতে লাগে রাত্রি, উদ্দেশ্য ফট করে রুশোকে জানিয়ে ফট করে চলে আসবে।
.
রুশো কেবল বাধ্য হয়ে ভেতরে ঢুকবে তার আগেই রাত্রির গলা পেয়ে থেমে যায়। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখে সে রাত্রি তাকে হাতে দেখিয়ে থামতে বলে ঠিক তার দিকেই এগিয়ে আসছে। রুশো সেখানেই রাত্রিকে দেখে থেকে যায়। রাত্রির থেকে চোখ সরাতেই পারছে না জেনো সে। পুরো ১ টা সপ্তাহ রাত্রির দেখা মেলে নি রুশোর তৃষ্ণার্ত চোখদুটোর। সেই তৃষ্ণারই নিবারণ করে চলেছে আজ তার অবাধ্য চোখ জোড়া যেনো। রুশো জানে না কেনো এমন অদ্ভুত অনুভূতি হয় তার রাত্রির জন্য। কই আগে তো কখনোও কোনো মেয়ের জন্য এমন অনুভূতি হয় নি। বুকের ভেতরে উথালপাতাল হয় নি তো আগে এমন। তবে কি সে মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে রাত্রির? সত্যিই কি তাই?
.
রাত্রি রুশোর সামনে এসে রুশোকে আবারো ডাক দেয়,”ভাইয়া” বলে। কিন্তু রুশোর কোনো ভাবাবেগ হয় না তাতে। রাত্রির কাছে রুশোর এমন চাহিনী দেখে বেশ অস্বস্তি হতে লাগে। শেষমেশ রুশোর ধ্যান ভাঙ্গানোর জন্য তার সামনে তুড়ি বাজিয়ে ওঠে। এবার রুশোর ধ্যান ভাঙ্গে। আমতা আমতা করে বলে উঠে,
.
– উপপস..! তুমি এসেছো খেয়ালই করি নি আমি। স্টোরি নিয়ে ভাবছিলাম।
বাই দ্য ওয়ে কেমন আছো এটম বোম্ব? (ভ্রু নাচিয়ে)
.
আবারোও “এটম বোম্ব” বলায় বেশ রাগ হয় রাত্রির। অথচ বেচারী বোঝেই না যে রুশো তাকে রাগানোর জন্যই ওকে “এটম বোম্ব বলে ডাকে। রাত্রি রুশোর প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে বলে উঠে,
.
– আপনার ছুটকি ভার্সিটিতে নেই। একটু আগে নীবিড় ভাইয়া ওকে টেনে কোথায় যেনো নিয়ে চলে গিয়েছে।
.
রুশো প্রথমে রাত্রির কথা ভালো করে গায়ে লাগায় নি। পরমুহূর্তে মুহূর্তে বুঝতে পেরে বিস্ময়ে চিৎকার করে বসে সে।
– ওহ আচ্ছা!…….হোয়াট???? 😲

– আজ্ঞে হ্যা!

– ওহ মাই গড! কোন দিকে গিয়েছে বলতে পারো?

– এইতো দক্ষিণ দিকের রোড ধরে বাইক নিয়ে গিয়েছে। গিয়েছে তাও ১০ মিনিট হয়েছে।
.
রাত্রি কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই রুশো হাওয়া! এতো স্পিডে কারে উঠে স্টার্ট দিয়ে চলে গেল রুশো যে রাত্রি আহম্মক বলে গেন। আনমনেই তার মুখ থেকে বেড়িয়ে গেলো,”যাক বাবা! কচ্ছপের মতো থেকে হুট করে খরগোশের মতো চলে গেলো!”
.
🌷
.
ভাইয়ার কার একটা ক্যাফেতে গিয়ে থামতে দেখে নীবিড় ভাইয়াও বাইক থামিয়ে আমাকে নামতে ইশারা করলেন। সাথে নিজেও নেমে গেলেন। আমাকে ভাইয়ার ওপর নজর রাখতে বলে বাইকটা রোডের এক সাইডে পার্ক করে এলেন।
অগ্নি ভাইয়া কার থেকে বেড়িয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চললো ক্যাফের ভেতরে। ভাইয়াকে দেখে যা বুঝলাম ভাইয়া ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছে। নীবিড় ভাইয়া আমাকে কমান্ডারদের মতো “ফলো মি!” বলেই ধীর পায়ে এগোতে লাগলেন ক্যাফের ভেতরে। এমন একটা জায়গায় গিয়ে থামলেন যেখান থেকে ভাইয়াকে দেখা গেলেও ভাইয়া আমাদের দেখতে পারবে না। কারণ ভাইয়া চেয়ারের উল্টো দিকে বসেছে। আমি শুধু অবাকের ওপর অবাক হয়ে চলেছি।
আমি আরোও অবাকের শীর্ষস্থানে পৌঁছোলাম ভাইয়ার সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে। ভাইয়ার সামনে মাস্ক পরিহিতা একটা মেয়ে বসে আছে। আগে সাদা এপ্রোন জড়ানো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো মেডিকেলের স্টুডেন্ট। কিন্তু মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা থাকায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না মেয়েটার মুখ।
.
মেয়েটা কথা বলতে বলতে ভাইয়ার হাত চেপে ধরে কান্না করা শুরু করে দিলো যা দেখে আমি পুরাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। অগ্নি ভাইয়ার মুখ দেখা না গেলেও ভাইয়ার মুভমেন্ট দেখে বোঝ যাচ্ছে যে ভাইয়া মেয়েটাকে কান্না করতে বারণ করছে।
এসব দেখে আমার মনের মাঝে হাজারোও প্রশ্ন হাবুডুবু খেয়ে চলেছে যেনো।
হঠাৎ নীবিড় ভাইয়ার দিকে চোখ যাওয়ায় আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। উনার চোখ থেকে যেনো লাভা ছড়াচ্ছে। সেই লাভায় যেনো ধ্বংস করে দেবেন উনি সবকিছু।
এরমধ্যেই কোথায় থেকে যেনো রুশো ভাইয়া আমাদের পাশ কাটিয়ে দৌড়ে ক্যাফের ভেতরে ঢুকে যায়। সবই যেনো আমার মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। রুশো ভাইয়া আবার এখানে কোথায় থেকে আসলো?
রুশো ভাইয়া ভেতরে ঢোকা মাত্রই অগ্নি ভাইয়া আর সাথে থাকা মেয়েটা ধরফড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।
.
অগ্নি ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে আমতাআমতা করে বলে উঠে,
– রু..রুশো..! তুই?
.
রুশো ভাইয়া তাড়াহুড়ো করে ঢুকায় অগ্নি ভাইয়াকে খেয়াল করেনি তখন। ভাইয়ার গলা পেয়ে উল্টো দিকে ঘুরেই রুশো ভাইয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। রুশো ভাইয়া অগ্নি ভাইয়াকে টাইডলি হাগ করে পাশে থাকা মেয়েটাকে দেখে জিজ্ঞাসা করে উঠলো,
.
– ব্রো হু ইজ সি?
.
রুশোর ভাইয়ার প্রশ্ন করায় মেয়েটা নিজের মাস্ক খুলে ফেললো। আর সাথেসাথেই আমার চোখ রসগোল্লার আকার ধারণ করলো। আমি বিস্ময়ে “আয়ায়ায়ায়ায়া…”!” করে চেঁচিয়ে বসলাম। আমার চিৎকার শুনে অগ্নি ভাইয়া, রুশো ভাইয়া আর নিত্য আপু ঘাড় ঘুরিয়ে এই আওয়াজের উৎস খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
নীবিড় ভাইয়া এবার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলেন সাথে পিছুপিছু এলাম আমিও। নীবিড় ভাইয়াকে দেখেই নিত্য আপু অগ্নি ভাইয়ার হাত খাঁমচে ধরলো। অগ্নি ভাইয়া কাঁপাকাঁপা গলায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই উনি হাতের পাঁচ আঙুল মেলে ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে বসে পড়তে বললেন।
.
🍂
.
#বর্তমানে………..
.
আমি রুশো ভাইয়ার হাতে গুঁতো মেরে ফিসফিস করে বলে উঠলাম,
– রুশো ভাইয়া..! কি হতে চলেছে?
.
রুশো ভাইয়া আমার কথা শুনে নখ কাঁটতে কাঁটতেই দু কাঁধ উঁচু করে ঠোঁট উল্টালো। যার অর্থ ভাইয়াও আমার মতো একই পরিস্থিতিতে।
.
হঠাৎ নীবিড় ভাইয়া নিচের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন,
– “বেইমান….!”
.
নীবিড় ভাইয়ার এই একটা কথা শুনেই আত্মা কেপে উঠলো আমাদের সবার। এর মধ্যে আমি আবারোও বোতল থেকে পানি ঢালতে নিলেই বোতল পানিশূন্য আবিষ্কার করলাম। গলা শুকিয়ে আসছে আমার। ভীষণ আরোও এক ট্যাংকি পানির বড্ড প্রয়োজন।
.
নিত্য আপু ভয়ে ভয়ে বলতে শুরু করলো,
– ভাইয়া..! এখানে অগ্নির কোনো দোষ নেই। আমিই দুবছর ধরে ওকে……
.
আর কিছু বলতে পারলো না নিত্য আপু। অগ্নি ভাইয়া নিত্য আপুকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
– নিত্যর কথা শুনিস না নীবিড়। আমি বলছি। আসলে আমিই নিত্যকে অনেক আগে থেকে পছন্দ করতাম।
ওকে এই নিয়ে বহুবার ফোর্স করেছি আমি। আর আজকেও ওকে আমিই ব্লাকমেইল করে আসতে বলেছি ট্রাস্ট মি। ওর কোনো দোষ নেই। আমি বেইমানি করেছি তোর সাথে। কোনো শাস্তি দেওয়ার থাকলে আমাকে দে। আমাকে মার।
.
নীবিড় ভাইয়া একদম শান্ত গলায় মাথা নিচু করেই বলে উঠলেন,”আর কতো মিথ্যে বলবি?”
বলেই মাথা তুলে তাকালেন।
.
– না নীবিড়, আমি সত্যি বলছি..! আমি….
.
অগ্নি ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে নীবিড় ভাইয়া “ব্যাস…!” বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। উনার গর্জনে কেঁপে উঠলাম আমি। নিত্য আপু তো পারেনা এখনই কেঁদে দেয়। এদিকে রুশো ভাইয়া নখ খেতে খেতে আঙুলই খেয়ে ফেলবে বোধহয়।
নীবিড় ভাইয়া বসা থেকে চট করে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলেন,
.
– কি মনে করেছিলিস তোরা? নীবিড়কে ফাঁকি দিয়ে যাবি? এই নীবিড়কে বোকা বানাবি? কি মনে করেছিস, আমি কিছু বুঝবোনা হ্যা? আমাকে এভাবে ঠকালি তোরা? আরে তুই না আমার বেস্টফ্রেন্ড আর নিত্য তুই? তুই তো আমার নিজের বোন। কিভাবে পারলি এমন করতে? ভয় করলো না একবারোও?
এর মূল্য তোদের দিতে হবে। দিতেই হবে।
তোরা রেডি হয়ে যা শাস্তির জন্য। আগামী সপ্তাহে তোদের “এংগেজমেন্ট!”
.
নীবিড় ভাইয়ার কথা শুনে সটাং করে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমরা সবাই। আনমনেই আমার মুখ থেকে বেড়িয়ে গেলো, “হা?” নীবিড় ভাইয়া আমাকে কিছুটা ব্যঙ্গ করে বলে উঠলেন,
– “হা নয় হ্যা!”
.
– মানে কি নীবিড়? কি যা তা বলছিস?
.
নীবিড় ভাইয়া পকেটে দুহাত গুঁজে স্ট্রেট হয়ে দাঁড়িয়ে কপালে পরে থাকা চুলগুলোতে ঠোঁট বাকিয়ে ফুঁ দিলেন। আবারোও বলে উঠলেন উনি,
.
– কেনো তোরা যা তা করত পারিস আর আমি বললেই দোষ? অবশ্য, বলছি না জাস্ট করেও দেখাবো।
আরে শালা, তুই কেমনে লুকোলি আমার থেকে এতো বড় কথাটা? নিত্য নাহয় ছোট , ভয়ে আমাকে বলতে পারেনি। তুই তো বলতে পারতি? আরে আমি নিজে দাঁড়িয়ে তোদের দুজনের বিয়ে দিতাম। কি ভেবেছিলিস আমি তোদের ব্যাপারে জানলে তোদের মেনে নেবো না? এই চিনলি তোরা আমাকে? আরে তোরা দুজনই আমার কলিজার দুইটা টুকরা। তোদের মতো পারফেক্ট কাপল কি আর দুটো হয়? সেই আগে থেকেই আমি ভেবে রেখেছিলাম তোদের দুটোকে একসাথে বাঁধবো আর তোরা যে এভাবে নিজে থেকেই নিজেদের ধরা দিবি তা বুঝতেই পারিনি আগে।
আর নিত্য, তোর চয়েজের সাথে সাথে ধৈর্যও আছে বলতে হবে। দু দুটো বছর অগ্নিকে জ্বালিয়েছিস! ইম্প্রেসিভ!
.
নীবিড় ভাইয়ার কথা আমরা সকলে এতোক্ষণ নীরব দর্শকের মতো শুনছিলাম। একটা টু সাউন্ডও করি নি কেউই। কারণ কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতেই ছিলাম না আমরা। প্রত্যেকের মুখ “হা” সাইজ ধারণ করেছে। যেনো খুবই অনায়াসেই গোলগাপ্পা ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে।
নিত্য আপুর চোখ ছলছল করছে। অগ্নি ভাইয়া যেনো ভাষা হাড়িয়ে ফেলেছে। এদিকে আমি আর রুশো ভাইয়া সবার মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি।
.
নীবিড় ভাইয়া এবার দু হাত বাড়িয়ে ঠোঁট উলটে বলে উঠলো,
– কোথায় ভাবলাম সিনেমার মতো দুজনে এসে জড়িয়ে ধরে ভ্যা ভ্যা করবি তানা রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছি!
(রুশো ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে) কি ড্রিমার এমনটাইতো হয় তাইনা?
.
রুশো ভাইয়া লাফিয়ে উঠে বলে উঠলো,
– ইয়াহ ইয়াহ!
.
অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপু একবার নিজেদের দিকে তাকিয়ে পর মুহূর্তে নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে এক ছুটে ঝাঁপিয়ে পড়লো উনার ওপর। নিত্য আপু তো খুশিতে কেঁদেই দিলো। ইশশ কি সুন্দর মুহূর্ত। সাদা বিলাই টাকে আমি যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটাও খারাপ উনি নন। আসলেই উনি ভালো। সবার সাথেই ভালো। শুধু আমার সাথেই উনার শত্রুতা বোধহয়।
পাশ ফিরে রুশো ভাইয়ার দিকে তাকানো মাত্রই দেখি ভাইয়া এই মুহূর্তটা ক্যামেরা বন্দি করে নিচ্ছে। আসলে রুশো ভাইয়া এমনই। সবসময় ক্যামেরা আর ল্যাপটপ নিয়ে ঘুরে। ক্যামেরায় যখন তখন ছবি তুলে আর ল্যাপটপে যেখানে সেখানে বসে লিখালিখি করে। এমনকি অফিসেও।
.
– আরে আরে হয়েছে হয়েছে। এবার ছাড় পড়ে যাবো তো আমি।
.
নীবিড় ভাইয়া উপরিউক্ত উক্তি শুনে চোখ মুছতে মুছতে নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়া উনাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
.
– এ ব্যাটা, তুই বুঝলি কিভাবে রে বলতো?
.
অগ্নি ভাইয়ার প্রশ্নে মুচকি হাসলেন উনি। ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই বলে উঠলেন,
– একটা কথা কি জানিস? না তুই ঠিক মতো মিথ্যে বলতে পারিস আর না নিত্য। তোর হঠাৎ হঠাৎ করে হাওয়া হয়ে যাওয়া। যখন তখন মন খারাপ করে থাকা। এসবেই আমার আগে থেকে সন্দেহ হতো। আর রইলো তোদের মনের কথা জানা। সেটা তো তোদের চোখ দেখলেই ধরে ফেলা যায়। যদিও সবাই সেটা পারবে না তবে আমি পারি।
.
উনার কথার মাঝেই সাইকেল চালিয়ে হাত উঠিয়ে বলে উঠলাম আমি, “আমিও প্রায় ধরেই ফেলেছিলাম!”
আমার কথায় চোখ ছোট ছোট করে অগ্নি ভাইয়া আমার দিকে তাকালো। নিত্য আপু লজ্জায় পড়ে গেলো। রুশো ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া আমার বাচ্চামো দেখে ফিক করে হেসে দিলো।
পর মুহূর্তে নিত্য আপু মুখটা মলিন করে বলে উঠলো,
.
– কিন্তু ভাইয়া…! আব্বু যে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। কাল রাতে আমি আব্বুকে এই নিয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে শুনেছি।
.
নীবিড় ভাইয়া নিজের সিল্কি চুলগুলোতে আঙুল চালিয়ে বলে উঠলো,
– শুনেছিস! কারণ আমি তোকে শুনিয়েছি। কাল আব্বুকে বলেছিলাম তোকে শুনিয়ে শুনিয়ে বিয়ের কথা বলতে। নাহলে তো এভাবে হাতে-নাতে ধরতে পারতাম না।
.
বলেই হাসলেন উনি। আর নিত্য আপু রেগেমেগে তেড়ে গিয়ে নীবিড় ভাইয়া গায়ে কিল-ঘুষি বসাতে লাগলো।
আমরা সবাই হেসে ফেললাম দুই ভাই বোনের এমন খুনশুটি দেখে। বাপরে কতো বুদ্ধি নিয়ে চলেন সাদাবিলাই। ভাবা যায়?
রুশো ভাইয়া তো খুশিতে আমার হাত ধরে লাফাতে লাগলো। আমরা দুজনেই জোড়ে বলে উঠলাম,
.
– হিপ হিপ হুড়রে…..! বাসায় লাগবে এবার বিয়ে……!
.
.
.
.
চলবে…………………….💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here