#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৩
কি করবে ভেবে পাচ্ছে না আরাবী। ওর কারনে একজন মানুষ এভাবে আঘাত পেয়েছে।চিন্তা করলেই কেমন যেন বিষাদে বুক ভাড় হয়ে আসে।র’ক্ত পরছে এখনও কপাল থেকে।আরাবী যে লোকটার হাতটা সরিয়ে একটু দেখবে কি অবস্থা হয়েছে। তারও উপায় নেই।কোথায় এই দৈত্যের মতো লোকটা। আর কোথায় আরাবী একটা আদুরে বিড়াল ছানা।ওমন জিরাফের মতো লম্বা মানুষটার মাথাটা কি আরাবী হাতের নাগালে পাবে?আরাবী শুকনো ঢোক গিলল।মেয়েলি রিনরিনে কণ্ঠে বলে উঠে,
‘ এই যে শুনছেন?ওভাবে কাটা জায়গাটা চেপে ধরে রাখবেন না।একটু এদিকে আসুন।র’ক্ত বন্ধ করতে হবে আগে।’
মিষ্টি কণ্ঠস্বরটা কানে এসে লাগতেই জায়ান তাকালো আরাবীর দিকে।স্থির হয়ে গেলো চাহনী।যেন একটুর জন্যেও মেয়েটার উপর থেকে নজর সরালে জায়ানের বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে। এদিকে আরাবী এদিক সেদিক তাকালো।তারপর দেখতে পেলো।ওই শিশুপার্কের ভেতরে একটা কাঠগোলাপ গাছের পাশেই বসার জন্যে বেঞ্চ আছে।আরাবী নরম স্বরে বলে উঠে,
‘ এইযে একটু কষ্ট করে আমার সাথে ওইখানটায় চলুন।’
আরাবী হাত দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গাটা দেখালো।তারপর পা বারালো সেদিকে যাওয়ার জন্যে। জায়ানও কেমন যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো আরাবীর পিছু পিছু যাচ্ছে।কাঠগোলাপ গাছের সামনে আসতেই আরাবী বলল,
‘ বেঞ্চিতে বসে পরুন।আমি আপনার ক্ষতস্থানটা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।’
জায়ান বিনাবাক্যে সেখানে বসে পরল।পর পর নিজের পুরুষালি গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ আপনিও বসুন।’
কন্ঠস্বরের আওয়াজে আরাবী ক্ষানিক কেঁপে উঠল।এতো গভীর আর গাম্ভীর্যতার সাথে কাউকে কখনও কথা বলতে শোনেনি আরাবী।তারপরেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘ আমি এখানে বসলে আপনার ব্যান্ডেজটা করতে পারবো না!’
‘ কেন?’
‘ নিজেকে দেখুন।আপনি কতো লম্বা।আমি বসলে ব্যান্ডেজ করবো কিভাবে?’
আরাবীর যুক্তিসংগত কথায় দমে গেলো জায়ান।পর পর ওর ভ্রু-জোড়া কুচকে আসে।ও কি একটু বেশিই লম্বা হয়ে গিয়েছে? নাহ, নাহ। তা হবে কেন?সে ঠিকই আছে।এই মেয়েটাই বেশি খাটো। ভ্রু-কুচকে বসে রইলো জায়ান।এদিকে আরাবী নিজের ব্যাগ থেকে ছোটো একটা ফার্স্টএইড বক্সটা বের করল।এটা ওর ব্যাগে সবসময়েই থাকে।কখন না কোন বিপদ হয়ে যায় বলা যায়?তখন দরকারে লেগে যাবে।এইভাবে এটা যেখানেই যায় নিজের সাথে নিয়ে যায়।এই যেমন আজ কাজে লেগে গেলো।এটা এখন না থাকলে কি করতো আরাবী?আশেপাশেও কিছু চেনে না যে।কিছু একটা ব্যবস্থা করবে।
আরাবী প্রথমে ওর রুমালটা পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিলো।তারপর আলতোভাবে জায়ানের ক্ষতস্থানটা পরিষ্কার করতে লাগল।খুব সাবধানে করছে। যাতে জায়ান বিন্দুমাত্রও ব্যথা না পায়।ক্ষতস্থানটার র’ক্তগুলো পরিষ্কার করা হয়ে গেলে।এইবার আরাবী অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন বের করল।তুলোর মাঝে হালকা একটু লাগিয়ে নিলো।তারপর জায়ানকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠে,
‘ শুনুন? এটা লাগালে একটু জ্বলবে। একটু ব্যথাটা সহ্য করে নিয়েন হ্যা?’
জায়ান ফের ভ্রু-কুচকালো।আশ্চর্য? এই মেয়ে কি তাকে পাঁচ বছরের বাচ্চা ভাবছে নাকি?যে অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন লাগালে জ্বলবে আর সে কাঁদবে?
এদিকে জায়ানের ভ্রু-কুচকানো দেখে থতমত খেয়ে গেলো আরাবী।লোকটা এভাবে তাকাচ্ছে কেন?তবে কি লোকটা ওর উপর রাগ করেছে?ওর কারনেই তো লোকটার এই অবস্থা।মনটা খারাপ হয়ে গেলো আরাবীর।বিষন্ন মনে খুব সাবধানে জায়ানের ক্ষতস্থানটা পরিষ্কার করতে লাগল।আবার জ্বলে কিনা এটা ভেবে মাঝে মাঝে ফু দিয়ে দিচ্ছে।
এমন সময় দমকা হাওয়া বয়ে গেলো।কাঠগোলাপ গাছটার থেকে ঝরে পরল বেশ কয়েকটা কাঠগোলাপ।বাতাসের কারনে আরাবীর মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দেওয়া ছিলো তা মাথা থেকে পরে গেলো।আরাবীর ছোটো চুলগুলো ছোটাছুটি করতে লাগল।আর ঝরে পরা কাঠগোলাপ ফুলগুলোর মাঝে একটা ফুল এসে পরল আরাবীর চুলের ভাঁজে।আরাবীর সেদিকে খেয়াল নেই।সে তো ব্যস্ত জায়ানের সেবা করতে।এদিকে এমন মনোরম একটা দৃশ্য দেখতে পেয়ে জায়ান যেন স্থির হয়ে গিয়েছে।থমকে গিয়েছে ওর দৃষ্টি।মেয়েটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।যেন ফুলের মাঝে একটি ফুল।কি আশ্চর্য?এমন অদ্ভুত সব চিন্তাভাবনা কেন আসছে ওর মাথায়?অদ্ভুত অনুভূতি তো কোনোদিন হয়নি।তবে জায়ানের কাছে এই অনুভূতিটা চমৎকার লাগছে।ভালো লাগছে।
এদিকে আরাবী খুব সুন্দরভাবে জায়ানের ক্ষতস্থানটা ব্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর বলে উঠল,
‘ নিন ব্যান্ডেজ করা শেষ।অতোটা গভীর হয়নি ক্ষতটা।তবুও আমি সাজেস্ট করব একবার ডক্টর দেখিয়ে নিবেন।আমি শুধু প্রাথমিকভাবে একটু চিকিৎসা দিয়েছি।’
আরাবীর কথায় ধ্যানভগ্ন হয় জায়ানের।তাকায় আরাবীর দিকে।ভড়কে যায় আরাবী।এই লোকটার চোখের মাঝে কি যেন আছে।যতোবার আরাবী লোকটার চোখের দিকে তাকাতে চেষ্টা করে। কিন্তু একবারও সক্ষম হয় না মেয়েটা।অদ্ভুতভাবে দেহে কাঁপন ধরে যায়। ওই চোখের চাহনীতে।আরাবী দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।নিজেকে সামলে নিয়ে ফের বলে,
‘ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাকে এতো বড়ো একটা দূর্ঘটনা থেকে বাঁচানোর জন্যে।আমি আপনার এই অবদান কোনোদিন ভুলব না।থেংক ইয়্যু ভেরি মাচ।’
আরাবীর কথায় জায়ান উঠে দাঁড়ালো।গম্ভীরমুখে বলে উঠল,
‘ ইটস ওকে।তবে আগে থেকে খেয়াল রাখবেন।চোখটা আল্লাহ্ আশপাশ দেখার জন্যে দিয়েছে।সেটা সঠিক জায়গায় কাজে লাগান।’
এই বলে জায়ান সামনের দিকে পা বাড়ালো।ড্রাইভার চাচা কল দিচ্ছে।ওর গাড়ি ঠিক হয়ে গিয়েছে।জায়ান আর একবারও তাকালো না।সোজা নিজের গাড়িতে গিয়ে বসল।এদিকে ড্রাইভার চাচা জায়ানের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে নানান প্রশ্ন করল।জায়ান কোনোরকম তাকে শান্ত করল বিষয়টা বুঝিয়ে।এরপর অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।অফিসে আসতেই সবাই জায়ানকে গুড মর্নিং উইশ করল।আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলো না তারা।কারন জায়ান বেশি কথা বলা পছন্দ করে না।অফিসে এসেই জায়ান সবার আগে নিজের বাবার কেভিনে গেলো।নিহান সাহেব তো ছেলের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখেই অস্থির হয়ে উঠলেন,
‘ জায়ান?এটা কি করে হলো?আবার কি কোথাও মারামারি করেছ তুমি?’
জায়ান বিরক্ত হলো তার বাবার কথায়।বলল,
‘ ডু ইয়্যু থিংক আ`ম স্টিল অ্যা কিড?হোয়াটস দ্যা পোয়েন্ট ওফ আস্কিং দিছ কুয়েশ্চেন্স বাবা?’
‘ তাহলে মাথায় আঘাত পেলে কিভাবে?’
‘ গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।যেখানে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ওখানে পার্ক ছিলো।আর সেখানে বাচ্চারা একটা পেয়ারা গাছে ঢিল ছুঁড়ছিলো।যা ভুলবশত আমার মাথায় এসে লেগে যায়।দ্যাটস ইট। অল্প একটু কেটেছে।ডোন্ট বি স্যাড।’
কিন্তু বাবার মন এতো সহজে কি মানে?মনে মনে ঠিকই চিন্তা করছেন তিনি।চিন্তির সুরে তিনি বলেন,
‘ আমি তো যেমন তেমন।তোমার মা এই আঘাত দেখলে পাগল হয়ে যাবে।’
জায়ান টেবিল থেকে একটা ফাইল নিয়ে চ্যাক করছিলো।নিহান সাহেবের কথা শুনে উত্তর দেয়,
‘ আই ক্যান হ্যান্ডেল হার।ডোন্ট ওয়ারি!’
একটু থেমে আবার বলে,
‘ ইন্টারভিউ কে নিচ্ছে?’
‘ ইফতি নিচ্ছে, সাথে ম্যানেজার সোলাইমান আছে। তুমি গিয়ে একবার চ্যাক করো গিয়ে।আফটার ওল এমপ্লইটা তোমার জন্যে সিলেক্ট করা হবে।তোমার পিএ হিসেবে।’
জায়ান চোখ উল্টিয়ে ফেলল।কণ্ঠে তার স্পষ্ট বিরক্তি,
‘ এটার কি কোনো দরকার আছে?আগেও একবার এমন করেছ।দ্যাট ড্যাম গার্ল।এখনও মনে পরল রাগে আমার মাথা গরম হয়ে যায়।এইবার কোনো মেয়েকে আমার পিএ বানাবে না বাবা।’
নিহান সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।বললেন,
‘ আব্বু যদি কেউ নিজের যোগ্যতায় চাকরিটা পায়।তাকে কিভাবে মানা করা যায় বলো?’
‘ আগেরবারও তুমি একই কথা বলেছ।তার নমুনা নিশ্চয়ই দেখেছিলে?’
‘ হ্যা মানছি ওই মেয়েটা খারাপ ছিলো।তাই বলে একজন দিয়ে কি তুমি সবাইকে জাজ করতে পারো না। তোমার মা,ছোটআম্মু,নূর ওরা কি ওই মেয়েটার মতো বলো?’
জায়ান এই বিষয়ে আর কথা বাড়াতে চাইছে না।তাই কেভিন থেকে বের হতে হতে বলে,
‘ আই ডোন্ট ওয়ান্না টক এবাউট দিছ এনিমোর।আ`ম গোয়িং টু মাই কেভিন।’
‘ আজ বাড়ি চলে যাও।অফিস করার দরকার নেই।’
নিহান সাহেব চিন্তিত হয়ে কথাটা বললেন।কিন্তু কে শুনে কার কথা? জায়ান নিজ মত মতো চলে গেলো।নিহান সাহেব ছেলের প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে হতাশ নিশ্বাস ছাড়লেন।এই ছেলেটা যে কিভাবে এমন গম্ভীর,রগচটা স্বভাবের হয়েছে কে জানে?ছেলেটাকে নিয়ে তার ভীষণ চিন্তা হয়।ছেলেটাকে বিয়েও দিতে চাইছেন তিনি।শুনেছে বিয়ে করলে নাকি ছেলেরা ভালো হয়ে যায়।কিন্তু ছেলে তার বত্রিশ বছরে পা দিয়ে ফেলেছে।কিন্তু বিয়ের কথা শুনলেই রেগেমেগে আগুনের গোলা হয়ে যায়।কি যে করবে সে এই ছেলেটাকে নিয়ে।
—-
‘ আমাকে ভেতরে যেতে তো দিবেন?এভাবে গেটের কাছ থেকে তারিয়ে দেওয়ার মানে কি?’
আরাবীর কণ্ঠে স্পষ্ট কান্নার আভাস।এই কোম্পানিটাতেই চাকরি নেওয়ার অনেক ইচ্ছা আরাবীর।ফাহিমও খুব করে চায় এই কোম্পানিতে যেন আরাবী চাকরিটা পায়।কিন্তু এভাবে যে দোরগোড়ায় এসেও ওকে ফিরে যেতে হবে এটা কোনোভাবেই মানতে পারছে না আরাবী।এদিকে আরাবীর এতো আকুতিমিনুতি শুনেও দারোয়ান একটুও গললো না।বরংচ নিজ কথায় অটল থেকে বলে,
‘ দেখেন আপামনি ম্যানেজার সাহেব কইছে।ইন্টারভিউ নেওয়া শেষ।আর কাউকে ভেতরে যাইতে দেওয়া যাইবো না।তার কথা না মানলে যে আমার চাকরি থাকব না।’
আরাবী কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।এভাবে যে এতো দেরি হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি আরাবী।কিন্তু উপায়ও তো ছিলো না কোনো।একটা লোক তার জন্যে আঘাত পেয়েছে।আর সে কিভাবে পারতো লোকটাকে ওই অবস্থায় ফেলে আসতে?এতোটা নিষ্ঠুর আরাবী না।যে নিজের লাভের জন্যে সে অন্যের এভাবে ক্ষতি করবে।আরাবী নিজেকে সামলালো।এভাবে ভেঙে পরল হবে না।শেষবারের মতো চেষ্টা করবে সে।তাই শান্ত কণ্ঠে বলে,
‘ চাচা একবার ম্যানেজার স্যারকে ডেকে দিননা প্লিজ।আমি একটু উনার সাথে কথা বলেই চলে যাবো।’
দারোয়ানের বুঝি এইবার একটু মায়া হলো।
‘ আচ্ছা,দাঁড়াও উনারে ডাকতেছি।’
দারোয়ান টেলিফোনের মাধ্যমে ম্যানেজারের সাথে কথা বলল।মিনিট পনেরো পর ম্যানেজারকে দেখা গেলো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল আরাবী।যাক ম্যানেজার এসেছে।দেখা যাক এইবার কিছু করতে পারে কিনা সে।ম্যানেজার এসেই বলেন,
‘ কি সমস্যা এভাবে আমাকে নিচে ডাকলে কেন?’
দারোয়ান আরাবীকে দেখিয়ে বলে,
‘ এই আপামনি আপনার সাথে দেখা না কইর এখান থাইকা যাইবো না জেদ ধরছে।তাই তো উপায় না পাইয়া আপনারে ডাকলাম।’
ম্যানেজার বোধহয় বেজায় বিরক্ত হলেন এমন কথা শুনে।তারপরেও ভদ্রতার সহিত কথা বলতে লাগলেন।কারন সে যদি কোনো মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।এই কথা তার স্যারের কানে যায়।তবে তার চাকরিটা আর থাকবে না।তিনি বলেন,
‘ জি বলেন।কি দরকার আমাকে দিয়ে?’
আরাবী জিহবা দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিলো।তারপর বিস্তারিতভাবে বিষয়টা খুলে বলল ম্যানেজারকে।
সব শুনে ম্যানেজার বলেন,
‘ হুম বুঝলাম বিষয়টা।তবে এখন আমার হাতে আর করার কিছু নেই।আপনি টাইম মতো পৌছাতে পারেননি।এটা আপনার প্রবলেম।এখানে আমরা কি করব বলুন?তাছাড়া ইন্টারভিউ নেওয়াও শেষ।স্যার এতোক্ষণে নির্ধারনও করে ফেলেছেন মনে হয়।কাকে সিলেক্ট করবেন।আপনি আসতে পারেন এখন।’
ম্যানেজারটা আর একমিনিটও দাঁড়ালো না।হনহন করে চলে গেলো।এদিকে আরাবী আর সুযোগও পেলো না কিছু বলার।মনটা বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেলো আরাবীর।আজকের মতো এতো মন খারাপ তার কোনোদিন হয়নি।কি জবাব দিবে ফাহিমকে ও?প্রথমবার ফাহিমকে ছাড়া কোনো কাজে বেরিয়েছে আরাবী।আর সেটাও ঠিকঠাক করতে পারলো না?তাহলে চাকরিটা করবে কিভাবে?(এই গল্পের লেখিকা সাদিয়া জাহান উম্মি)।ওর মন খারাপটা মনে হয় আকাশটাও অনুভব করল।তাই তো ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করল।এপরেই ঝুমঝুমিয়ে নামল অঝোর ধারায় বৃষ্টি।ভিজিয়ে দিলো আরাবীকে।আকাশের দিকে তাকালো আরাবী।কিন্তু বৃষ্টির প্রকোপের কারনে ঠিকঠাক তাকাতেও পারছে না।আরাবী মলিন হাসল।মনেমনে আওড়ালো,
‘আকাশটা আজ রাগ করেছে,
কাঁদছে অঝোর ধারায় !
মনটা আমার উদাস তাই,
কেমনে বলো সারায় !
এমন ক্ষণে, গৃহ কোণে থাকতে চায় না মন !
মেঘলা আকাশ বলতো দেখি !
আমি ও যদি কাঁদতে থাকি;
লাগবে তোমার কেমন ?
—কে এম আব্দুল্লাহ রিয়াদ
আর কিছু ভাবলো না আরাবী।এখন বাসায় ফিরতে হবে।রিকশা বা সিএনজির জন্যে দাঁড়িয়ে রইলো।কিন্তু আজ যেন রিকশা আর সিএনজি ওয়ালারা ওর সাথে শত্রুতামো করছে।কিছুতেও আরাবী একটা রিকশা বা সিএনজি পাচ্ছে না।
______
হেটে হেটে ম্যানেজারের সাথে কথা বলছে জায়ান। ওর অনুপস্থিতিতে কি কি হয়েছে তা জেনে নিচ্ছে।ওর উদ্দেশ্য ইফতির কাছে যাবে।কারন ইন্টারভিউটা ওই নিয়েছে।
জায়ানদের অফিসের বিল্ডিংয়ের সামনের দেয়ালটা পুরো কাচের।অনায়াসে বাহিরের সব দেখা যায়।এভাবেই জায়ান হাটতে হাটতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।কিন্তু কিছু একটা দেখতে পেয়ে আবারও থেমে যায় জায়ান।পূর্ণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায় জায়ান।নাহ,ভুল দেখছে না।এটা সকালের সেই মেয়েটাই।কিন্তু এই মেয়ে এখানে কি করছে?আর এমন বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে কেন?পাগল নাকি?যদি ঠান্ডা লেগে যায়?যদি জ্বর আসে?তখন কি হবে?জায়ান ম্যানেজারকে ডেকে উঠল,
‘ সোলাইমান সাহেব।’
ম্যানেজার সোলাইমান দ্রুত জবাব দিলেন,
‘ জি স্যার।’
জায়ান হাতের ইশারায় আরাবীকে দেখালো।তারপর বলল,
‘ ওই মেয়েটা আমাদের অফিসের সামনে কি করছে?খবর নিয়ে আসুন তো।’
ম্যানেজার সোলাইমান মেয়েটাকে দেখে নিলো।আরাবীকে চিনতে পেরেই বলে,
‘ আরে স্যার।মেয়েটা আমাদের অফিসেই এসেছিলো।ইইন্টারভিউ দেওয়ার ক্যান্ডিডেটদের মাঝে এই মেয়ের নাম ছিলো।কিন্তু ঠিক টাইমে আসতে পারেনি।সব শেষ তখন এসেছে।তাই আমি মানা করে দিয়েছি।’
সব শুনে কেন যেন জায়ানের প্রচুর রাগ লাগল।রাগি চোখে তাকালো ম্যানেজার সোলাইমানের দিকে।এমনভাবে তাকালো যেন অনেক বড়ো কোনো অপরাধ করে ফেলেছে সে।সোলাইমান শুকনো ঢোক গিলল।কাঁপা গলায় বলতে চাইলো,
‘ স্যার আমি মিসবিহেইভ করিনি তো।ভালোভাবেই বলে….’
আর বলতে পারল না সে।তার আগেই জায়ান তাকে থামিয়ে দিলো,
‘ ডোন্ট স্যে অ্যা ওয়ার্ড।জাস্ট সাট ইয়্যুর মাউথ।’
তারপর আবার বাহিরে আরাবীর দিকে তাকালো।দেখল আরাবী একটা সিএনজি দাঁড় করিয়েছে।এরপর সে সিএনজিটায় উঠে বসতেই।তা চোখের পলকে চলে গেলো।
জায়ান এটুকু দৃশ্য দেখে দাঁতেদাঁত চিপে বলল,
‘ ম্যানেজার সোলাইমান। আই ওয়ান্ট কমপ্লিট ডিটেইলস ওফ দ্যাট গার্ল।দ্যা ওয়ার্ক শ্যুড বি ডান কুইকলি।আদারওয়াইজ ইট উইল বি ব্যাড ফোর ইউ।’
কথাগুলো বলেই রেগে গটগট পায়ে চলে গেলো জায়ান।আর ভয়ে সিটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ম্যানেজার সোলাইমান।
#চলবে______
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। এতো বড়ো দিলাম।আপনাদের রেস্পন্স না পেলে।কিভাবে লিখব বলেন?