“তোর মতো জঘন্য, কুৎসিত মেয়েকে আমি ভালবাসি না।কী আছে তোর?না আছে রুপ আর না কোনো গুন। কী দেখে আমি তোকে ভালোবাসবো বল? কী যোগ্যতা আছে তোর?”
“এমন বলোনা না প্লিজ। আমি যে মরে যাব। তোমাকে ছাড়া যে আমি অস্তিত্বহীন।”
” মরে একটু মুক্তি দে আমাকে। আচ্ছা তোর মরার রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়।কি বলিস। সেই তিনটি শব্দ বলি তোকে যা বললে আমি মুক্তি পাবো।”
“নাহ,,না প্লিজ নাহ।বলোনা,, দয়া করো। প্লিজ নাহ”
আচমকা চোখ মেলে তাকাল এক ২২ বছর বয়সী কন্যা। ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা। ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ধরফরিয়ে উঠে বসলো সে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো তার অবস্থান। একটি ছোট ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে সে। ঘরের মধ্যে একটি খাট, আলমারি, একটি চেয়ার, একটি টেবিল অবস্থিত। নিজের ঘরে শুয়ে ছিল ভেবে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তাহলে কি আবার সেই দুঃস্বপ্ন দেখছিল সে। হ্যাঁ দুঃস্বপ্নই তো দেখছিল।আহ্! কি নিদারুন ব্যথা।বুক টা চিনচিনে ব্যথায় ককিয়ে উঠছে। মাথা টা ভার ভার লাগছে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচ টা বেজে তেরো মিনিট।আর সময় নষ্ট না করে ছুটে গেলো ওয়াশরুমে। ওযু করে বেরিয়ে আসলো। নামাজ আদায় করে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিল। নামাজ পড়ে জায়নামাজ রেখে দিল আলমারি তে। ছোট ঘরটির একপাশে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের বুকে শুভ্র নীলাম্বর গুলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো মেয়েটি। পাখি উড়ে যাচ্ছে আপন গতিতে।তাদের বাঁধা দেওয়ার কেও নেই।না আছে তাদের কোনো পিছুটান। আচ্ছা সে পাখি হলে কি মুক্তি পেতো এই যন্ত্রনা থেকে। পেতো হয়তো।
“কিরে কখন উঠলি?”
ঘরে প্রবেশ করে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো দিয়া। ভাবনার জগতে ডুবে ছিল মেয়েটি। প্রিয় বান্ধবীর প্রশ্নে ভাবনার জগতে ছেদ পড়ল।একটু বিরক্ত হলো বটে তবুও মুখে বিরক্তির ছাপ নেই। আকাশের দিকে তাকিয়েই অনুভূতিহীন উওর দিল মেয়েটি
“কিছুক্ষণ আগে।”
পাশে এসে দাঁড়িয়ে মেয়েটির বাহুতে হাত রাখল দিয়া। আবেগঘন কণ্ঠে বলল
“কি হয়েছে সূরা?মন খারাপ? আবার কি দুঃস্বপ্ন দেখেছিস?”
দিয়ার কথার কোনো উত্তর দিল না সূরা। শুধু মৃদু হাসলো সে।সেই হাসি তে নেই কোনো প্রানোচ্ছলতা, শুধু মিশে আছে একরাশ হতাশা, বিষাদ,কষ্ট। দিয়ার আর বুঝতে বাকি নেই যে তার প্রান প্রিয় বান্ধবী এবারও তার কথার কোনো উত্তর করবে না। মেয়েটি এমন কেন বুঝে পায়না দিয়া।তিন বছর থেকে তারা দুজন একসাথে আছে। একটা ছোট রুম,একটা রান্নাঘর, আর ছোট ড্রয়িং রুম। দিয়া বাসা সেয়ার করার জন্য একজন কে খুঁজছিল।তখনি আকস্মিকভাবে সূরার সাথে পরিচয় হয়। কথায় কথায় জানতে পারে সেও বাসা খুঁজছে। তখনি দিয়া তার সাথে থাকার কথা বলে। সূরাও রাজি হয়ে যায়। তিন বছর হয়ে গেছে তাদের পরিচিত হওয়া। কিন্তু দেখে মনে হয় তারা আরো অনেক আগে থেকেই পরিচিত।এ যেনো আত্মার সম্পর্ক। কিন্তু মেয়েটাকে আজো রহস্যময় লাগে দিয়ার কাছে।বড্ড অদ্ভুত মেয়েটি।
“কিরে ভাবনার জগতের রানী।আর কতো প্রেসার দিবি তোর এই ছোট মাথায়।আর একটু প্রেসার দিলে তো নির্ঘাত স্ট্রোক করবি।”
দিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েই স্বাভাবিক ভাবেই কথা টা বললো সূরা। দিয়া এবার সূরার দিকে তাকিয়ে দেখল সূরা এখনো আকাশ দেখতে ব্যস্ত।আজ প্রথম না সূরা প্রায় এভাবে অনুভূতিহীন চোখে আকাশ দেখে।সে চোখের ভাষা বুঝতে সক্ষম হয় না দিয়া। দিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখে মুখে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো
“এই তুই আকাশের মাঝে কি এতো দেখিস রে। সকাল সকাল আকাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরিস। তোর কি বোর ফিল হয়না?”
দিয়ার রাগকে পাত্তা না দিয়ে স্মিত হাসলো সূরা। সূরা জানে মেয়েটি একটুতেই রেগে যায়। ধৈর্য্য নামক জিনিসটা তার থেকে শতাধিক দুরে অবস্থিত। স্বাভাবিক ভাবেই বললো সূরা
“আকাশের বুকে শুভ্র নীলাম্বর গুলোর লুকোচুরি খেলা দেখি। আকাশ এতো বড় তবুও নীলাম্বর গুলো লুকোচুরি খেলে তার সাথে। যেনো তারা বলে তুমি এক ছোট বস্তুর কাছে হেরে যাচ্ছো। কিন্তু লজ্জা পেয়ো না আমরা তোমায় আরাল করে রাখছি।বড্ড নিষ্ঠুর এই শুভ্র নীলাম্বর। যে তাদের বুকে আগলে রাখে তাকেই লজ্জা পেতে দেখে খিলখিলিয়ে হাসে।বড্ড নিষ্ঠুর।”
দিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার জানা আছে তার বান্ধবী সোজা কথার মেয়ে না।
★★★★★★
চৈত্রের শুরু। দিবাকর তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছে অনেক আগেই।ঝলসে দিচ্ছে ধরনী।কর্ম ব্যস্ত মানব জাতি প্রভাত হতেই ছুটে চলে জীবিকার সন্ধানে।সকালের নাস্তা করে দুই বান্ধবী বাসা থেকে বের হয় আপন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। প্রায় পনের মিনিট অপেক্ষা করেও একটিও রিক্সা না পেয়ে দুইজনই বেশ বিরক্ত সেটা তাদের মুখে ফুটে উঠেছে।আজ কী সকল রিক্সাচালক মামা অবরোধে বসেছে।এই গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানে ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়া। কিন্তু এই পরীক্ষা দিতে দুজনের কেউই ইচ্ছুক না। বিরক্ত লাগছে সূরার।ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে সে।দূর থেকে এই বিরক্তি মাখা মুখটা একজন বেশ উপভোগ করছে। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে সামনের মেয়েটি কে দেখছে।কালো রঙের মার্সিডিজ গাড়িটি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় মানবটি। সূরা যেনো আরো বিরক্ত হলো। কপালে আরো ভাঁজ ফেলে না দেখার ভান করলো সে। কিন্তু দিয়া একটু বেশিই খুশি হলো। গদগদ ভাব তার মুখোস্রি জুড়ে। ছেলেটি গাড়ি থেকে নামা মাত্র দিয়া একগাল হেসে বলে উঠলো
“আরে স্যার আপনি।কেমন আছেন?”
মানবটির চোখ এখনো সূরা তে আবদ্ধ। সেভাবেই শান্ত,নরম, গাম্ভীর্য বজায় রেখেই বললো সে
“আসলে একটু কাজ ছিল তাই এদিকে এসেছিলাম। তোমরা কলেজ যাবে?আমাকে বলো আমি নামিয়ে দিচ্ছি।”
“মিথ্যুক”
সূরা কথাটি বলার সাথে সাথে পাশ থেকে দিয়া গুতো দিল সূরা কে। মানবটির দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে কিছু বলার জন্য মুখ খুলার আগেই সূরা কঠিন স্বরে বলে উঠলো
“দেখুন ডা.মাকহুল সিকদার মিসবাহ্ আপনাকে এর আগেও বলেছি এখনো বলছি নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখুন আমার থেকে।নইলে ..
মিসবাহ্ সূরার কথা শেষ হতে দিল না। ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো
“কেনো তুমি কি করনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নাকি করনা ভাইরাস, যে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখব?”
চোখ রাঙিয়ে দাঁত কটমট করে তাকালো সূরা। তার দৃষ্টি কে উপেক্ষা করে মিসবাহ্ ঠোঁটে বাঁকা হাসি বজায় রেখেই বললো
“করনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী হও বা করনা ভাইরাস, হলেই বা কি যাই আসে।ইনসিরাহ্ সূরা নামের ভাইরাস প্রতিনিয়ত আমার বুকের বাম পাশের স্পন্দিত মাংসপিণ্ডটা খুবলে খুবলে খাচ্ছে। স্পন্দন প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ার জোগাড়।আহ্!একি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। তোমার উষ্ণতা পেলেই বুঝি শান্তি পাবে বুকের যন্ত্রটি।দেবে কি একটু উষ্ণতা?”
“অসভ্য লোক”
সূরা বিরবিরিয়ে অস্পষ্ট স্বরে কথাটি বলে আর একমুহুর্ত দাঁড়ালো না। দিয়ার হাত ধরে সামনে হাঁটতে শুরু করল। তাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিসবাহ্। বড্ড নিষ্ঠুর তার প্রেয়সী। বুকে চিনচিনে ব্যথা হতেই ডান হাত রাখল বাম পাশের স্পন্দিত যন্ত্রটায়। স্মিত হেসে বিরবির করলো
“তুমি কি বোঝনা হে মোর প্রেয়সী। সমুদ্রসম প্রনয় নিয়ে তোমার তীরে অপেক্ষারত এই আমি। তুমি মোর নিষ্ঠুর প্রেয়সী। আমার প্রনয়নী। আমার পবিত্র শিউলি ফুল। আমার সুরজান।”
চলবে……
#সূচনা_পর্ব
#শিশির_ভেজা_শিউলি
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা
★★নতুন পেজ নতুন লেখিকা। লেখায় কোনো ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন।পাঠক পাঠিকাদের ভালোবাসা পাব আশা করছি। পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)