পদ্মমির #পর্ব_3 #ইলমা_বেহেরোজ

0
1863

#পদ্মমির
#পর্ব_3
#ইলমা_বেহেরোজ

পদ্ম নীড়ে পা রাখতেই কাঁচা বেলি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ চৈতন্যে অদ্ভুত এক দোলা দিয়ে যায়; এই ঘ্রাণ রূপকথা জগতের স্বাগত শুভেচ্ছা! পদ্মজার উপস্থিতি যেকোনো মুহূর্তকে, যেকোনো আবহকে রূপকথার রূপ দিতে পারে। বাড়ির সামনে গাছভর্তি বেলি ফুল। বাতাসে শীতলতা। শীতল বাতাসের সাথে বেলির মন মাতানো সুঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে। ও ছয়টি বেলি ফুল ছিঁড়ে বুকপকেটে নিল।

আর কয়েক কদম- তার শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে। বুকজুড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে প্রবল উত্তেজনা।

কুয়েতের এপার্টমেন্টে ওতিয়া নগ্ন হয়েও হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি, শরীরের সামান্য লোমকূপও কাঁপাতে পারেনি, অথচ এখানে পদ্মজা আর কয়েক কদম দূরে ভেবেই আমির পুড়ে যাচ্ছে। টের পাচ্ছে, পাঁজরের গায়ে ধড়াস ধড়াস বারি খাচ্ছে হৃৎপিণ্ড।

আমির চাবি ঘুরিয়ে সাবধানে দরজা খুলল যাতে শব্দ না হয়। বৈঠকখানায় নীল বাতি জ্বলছে। ব্যাগপত্র রেখে পা টিপে টিপে দ্বিতীয় তলায় উঠে আসল।

বেডরুমে প্রবেশ করতেই সুখকর ব্যথায় মুচড়ে উঠল

বুক। কাত হয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে পদ্মজা। পরনে বেডরুমে প্রবেশ করতেই সুখকর ব্যথায় মুচড়ে উঠল বুক। কাত হয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে পদ্মজা। পরনে কালো ব্লাউজ, খয়েরি শাড়ি, হাতে স্বর্ণের বালা। সোনালি আলোয় তার ক্রিম রঙা মুখ, গলা, কোমর, হাত, পা জ্বলজ্বল করছে।

আমির পোশাক পরিবর্তন করে সাদা ফতুয়া আর পায়জামা পরল। বেলি ফুলগুলো হাতে নিয়ে পদ্মজার পাশে শুয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিল। শান্তি! পদ্মজা ঘুমের ঘোরে বেলি ফুলের তীব্র ঘ্রাণ টের পাচ্ছে। এই রুমে ফুলের এতো তীব্র ঘ্রাণ আসে না। আমির মুখের উপর ঝুঁকে ঘুমন্ত বধূর রূপ পর্যবেক্ষণ করছে। যখনই সে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে পদ্মজার গায়ের ঘ্রাণ নিতে চাইল, পদ্মজা চোখ খুলল।

‘আপনি!’ ও চিৎকার করল। ওর হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেছে। দুই হাতে জাপটে ধরল আমিরকে। কাঁদতে শুরু করল। আমির শব্দ করে হেসে উঠল, পদ্মজাকে টেনে নিল বুকের উপর, চেপে ধরল শরীরের সঙ্গে। প্রতিটি শিরা উপশিরা দপদপ করছে।

পদ্মজার বিশ্বাস হচ্ছে না আমির এসেছে। তার

স্বামী… মাথার মুকুট। স্ত্রী হিসেবে ও চমৎকার।

আমিরকে রাজার মতো সম্মান করে, মান্য করে

আর ভীষণ ভালোবাসে। পদ্মজা মুখ তুলে আমিরকে

দেখল, চোখমুখ আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে ফোঁপানোদেখল, চোখমুখ আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে ফোঁপানো শুরু করল। আকস্মিক খুশিতে উন্মাদ হয়ে গেছে পদ্মজা। কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিচ্ছে। বিয়ের পর এটা ছিল তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার দূরত্ব।

কেউ প্রচন্ড ভালোবাসার পর, সর্বক্ষণ বিশেষ অনুভব করানোর পর যদি হঠাৎ দূরে চলে যায় পৃথিবীর সবকিছু তখন বড্ড নিষ্ঠুর মনে হয়। বিগত দিনগুলো কীভাবে কাটিয়েছে শুধু ও আর সৃষ্টিকর্তা জানে।

মুহূর্তে উষ্ণ হয়ে উঠে দুটি দেহ। যেন ভাঁপ ছড়াচ্ছে। একে- অপরকে বৃষ্টি রূপে টেনে নেয় নিজেদের মরুভূমিময় রুক্ষ আঙিনায়। অতৃপ্ত, অসুখী দুটি দেহ-মন লাভ করে তৃপ্তময় স্বর্গীয় সুখ। আমির ফিসফিসিয়ে উচ্চারণ করে, ‘পদ্মবতী… আমার রানী।’

শেষ রাত থেকে সকাল অবধি বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পর পরিবেশ সতেজ হয়ে উঠেছে ঠিক পদ্মজার মনের মতোন। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে। বৃষ্টির পর মাটি থেকে বিশেষ যে গন্ধ বেরোয় সেটিকে গবেষকরা বলেন পেট্রিকোর। বাংলায় সোঁদা গন্ধ। পদ্মজার পছন্দের ঘ্রাণ। জানালা দিয়ে মৃদু ঘ্রাণ নাকে আসছে। বৃষ্টি হবার পরদিন বাগানে গিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকে সে।

কিন্তু আজ ব্যস্ততার জন্য যেতে পারছে না। রাতে কিন্তু আজ ব্যস্ততার জন্য যেতে পারছে না। রাতে এতোটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল যে, আমির খেয়েছে কি না জিজ্ঞেস করার কথা মাথাতেই এলো না। যখন মাথায় আসল তখন ফজরের আযান শোনা যাচ্ছিল, আমিরও ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।

তবুও পদ্মজা মৃদুস্বরে ডেকেছিল, ‘শুনছেন, খেয়ে ঘুমান?’

আমির চোখ বোজা অবস্থায় পদ্মজাকে জড়িয়ে ধরে মৃদু গলায় জবাব দিয়েছিল, ‘খেয়ে এসেছি।’

আমির দেশে পৌঁছেছিল বিকালে। পদ্মজাকে হঠাৎ চমকে দিবে বলে মধ্যরাতে বাড়িতে ঢুকেছে। যতবার বাইরে গিয়েছে, বাড়ি ফিরেছে মধ্যরাতে, শেষ রাতে অথবা ভোরে। ঘুম থেকে জেগে আমিরকে দেখে পদ্মজা যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সেটি আমিরের বড্ড পছন্দের। তবে এবারের প্রতিক্রিয়া দীর্ঘ দূরত্বের জন্য বেশি স্পর্শকাতর ছিল।

কড়াইয়ে তেল ঢেলে মাছগুলো প্রস্তুত করে পদ্মজা। তেল গরম হয়ে গেলে মাছ ছাড়ার সময় চুলার আঁচ একেবারে কমিয়ে, কড়াইয়ের খুব কাছে থেকে হালকা করে মাছ ছাড়ল, যাতে তেল ছিটে না আসে।

‘কোথায় তুমি?’ আমিরের গলা।

পদ্মজা চোখ তুলে তাকায় সিঁড়িতে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here