মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী #Writer_Neel_Noor #পর্ব ১

0
1033

আজ টাকার বিনিময়ে আমি বিক্রিতা। এক পাগলের জন্য আমাকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমাকেই বিক্রি করছে আমার জন্মদাত্রী মা।বড্ড হাস্যকর এই দুনিয়ার খেলা। কত হাতজোড় করলাম, মায়ের পা পর্যন্ত ধরলাম, চিৎকার করে কান্না করলাম, এত আকুলতা ব্যাকুলতা, তবুও আমি ভাগ্যের লিখন খন্ডাতে পারলাম না। নাহ্!! সত্যি ই পারলাম না!!

আমার সামনেই মা কে এক ব্যাগ ভর্তি টাকা দিল, বাবার মতো বৃদ্ধ বয়সের লোকটি। দূর থেকে মায়ের স্বামী যেন জয়ের হাসি দিল। মায়ের চোখে চোখ পড়তেই, মা নজর সরিয়ে ফেলল। তবে কি মা আমার থেকে কিছু গোপন করছে? আমার মা তো এমন ছিল না…..
এর মধ্যে ই বৃদ্ধ লোকটা আমার হাত ধরে বলল – আজ থেকে চিরদিনের জন্য আপনাদের অধিকার মায়ার থেকে শেষ হয়ে গেল। আপনারা কখনোই ওকে আপনাদের মেয়ে বলে পরিচয় দিতে পারবেন না।
এটা বলার সাথে সাথে ই, লোকটি কিছু কাগজ বের করে মা বাবা কে সিগনেচার দিতে বলল। তারা চুপচাপ কাগজগুলো তে সই করে দিল। আজ আমি আবার ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে রইলাম, আমাকে ….কাঁপা কাঁপা হাতে মা মৃত্যু যন্ত্রনা দিল।

বুক ফেটে চিৎকার করে কান্না করতে চাইলে ও পারলাম না, চুপচাপ কাঠের তৈরি সোপিস মূর্তির মতো গাড়িতে উঠে বসলাম। মিনিট দুয়েক পর ই গাড়ি তার আপন গতিতেই চলতে শুরু করল। সবকিছু চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছে….

আমি মায়া। আমার বাবা আমাকে ছোট বেলায় মায়া_বন বলে ডাকত। খুবই অদ্ভুত তাই না? বাবার কল্পনাতে আমি নাকি বন রানী নন্দিনীর মতোই সুন্দর, আমার চোখে গভীর মায়া, যে কেউ ই আলিঙ্গন করতে পাগল হবে। হয়তো !! কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বাবা তুমি মিথ্যা বলেছো, তুমি ই আমার বনবিহারী ছিলে, এই তো দেখ, আজ তুমি নেই, আমার অস্তিত্ব ই নেই, আজ আমার মা…টাকার বিনিময়ে আমাকে অস্তিত্ববিহীন করে দিল, কি করে পারল বাবা, আজ আমি বিক্রিতা বাবা!! বিক্রিতা!!

চোখ থেকে টপ টপ পানি গড়িয়ে পড়ছে, এই চোখের পানি ও কত্তো নির্লজ্জ,
সে কি জানে না, তার পড়তে মানা!!
যেদিন বাবা হয়েছে আকাশের তারা,
মা হয়েছেন অন্যের মা ও স্ত্রী!!
সেদিন থেকেই ই তো চোখের পানি পড়তে মানা!! তবুও কত্তো নির্লজ্জ সে,
এখন ও ঝরায় পানি…..

হঠাৎ করেই গাড়ি ব্রেক কষল!! নিমিষেই চোখ দুটো মেলতে বাধ্য আমি, পাশের বৃদ্ধ লোকটা বলল- কান্না করো না, চোখের পানি মুছে নেও।
আর আমার সাথে চলো…(বলেই সে গাড়ি থেকে নেমে গেল)

অবাক হয়ে বাহিরে তাকালাম, কনকনে শীতে, ল্যামপোস্ট এর বাতি জ্বলছে চারদিকে!! বড় করে একটা লেখা, মনটাকে থমকে দিল…”কাজি অফিস”
সেদিন মা ও মায়ের স্বামীর কথায় বুঝতে পেরেছিলাম, বিয়ে টা হবে পাগলের সাথে, তবে বৃদ্ধ লোকটা ছাড়া তো কেউ ই দেখছি না? একা একা কাজি অফিস এ যাব, বিয়ে কি এই বৃদ্ধ লোকটার সাথে হবে…(বলতে বলতেই ভেতরে প্রবেশ করলাম)

ভেতরে প্রবেশ করতে ই একটা ভারী কিছু আমার মাথায় আঘাত হানলো। ব্যাথায় আহ্ করে কুঁকড়ে উঠলাম। নিমিষেই হাত তালি বেজে উঠল, লাফিয়ে লাফিয়ে একজন বলতে শুরু করল – ইয়েএএএএ, আমি নতুন বউ কে মেরেছি!! কি আনন্দ!! কি আনন্দ!!
চমকে তাকালাম। সামনে সুন্দর একটা ছেলে, ব্রাউন চোখ, সুন্দর পোষাক, চুল দাড়ি গুলো অগোছালো, তবুও নজর কাড়তে সক্ষম!! কিন্তু তার ব্যবহার…আর বুঝতে বাকি রইলো না!!

ছেলেটি আমার দিকে এগিয়ে এলো। খপ করে আমার হাত ধরে বলল – এই বউ!! তুমি কি আমার বউ, চলো বিয়ে করি!!(বলেই হাসতে শুরু করলো)
না না তোমাকে বিয়ে করব না, আমার বিহারিনী কষ্ট পাবে, ও আসবে, আসবে তো…(আমার হাত টা ছেড়ে তার মাথার চুল গুলো ধরে হাঁটু গেড়ে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো, আর বিহারিনী, বিহারিনী বলে ঝপতে থাকল!!)

উপস্থিত এখানে সবাই ই থামানোর চেষ্টা করছে!! কিন্তু থামছেই না। আরো এগ্রেসিভ হয়ে উঠল। সবাইকে জোর করে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল, আচমকা আমার গলা চেপে ধরে বললো- তুই, মেরেছিস আমার বিহারিনী কে, তুই!! এখন আমাকে বিয়ে করতে এসেছিস!! মেরে ফেলবো, তোকে….

দম আটকে আসছে। ছেলেটি কে থামানোর চেষ্টা করছে সবাই। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না, গলাটা বেশ শক্ত করে ধরেছে, আমি অগোছালো কন্ঠে বললাম – বিহারিনী আপনার কাছে ফিরে আসবে, সে বলেছে!!

বলার সাথে সাথেই আমার গলা থেকে তার হাত আলগা হয়ে গেল, আমার দুই কাঁধ খামচে ধরে বললো- কিহ, তুমি সত্যি বলছো!! কবে আসবে… আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না…

এখানে একটা মহিলা আর সেই বৃদ্ধ লোকটা হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তাকানোর ই কথা, কারণ তারা সবাই ভাবছে, আমি বিহারিনী কে কীভাবে চিনি?

আমি কাঁপা কাঁপা ভাঙা গলায় বললাম- আপনি ঐ চেয়ারে বসেন, আমি ও আসতেছি, তারপর বসে বিহারিনীর সম্পর্কে সব কিছু বলব, ঠিকাছে!!

বিহারিনীর আসার কথা বলতে ই , ছেলেটির চোখ টপ টপ করে দুফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ে, এক আশার আলো চোখে খেলে উঠল, বাধ্য ছেলের মতো কাজির সামনে গিয়ে চেয়ারে বসে পরলো।

ছেলেটির সাথে থাকা মহিলাটি আমাকে জড়িয়ে ধরল। বলল – তুমি ই পারবে আমার ছেলেকে ঠিক করতে!! মা রে, আমার ছেলেটা কে ঠিক করে দে, দেখ তোর কথা কি সুন্দর মেনে নিল… তুমি কি বিহারিনী কে চিনতে?

আমি থমকে দাঁড়ালাম, বললাম – বিহারিনী কে? আমি চিনি না। ও বিহারিনীর কথা বারবার বলতেছিল তাই, ওর থেকে বাঁচতে আমি বিহারিনীর কথা বলেছি….

_________

বিয়ে হয়ে গেল। তবে কিছু শর্তে!! শর্তগুলো না হয় তোলা ই থাক। সময়ের অগোচরে ই প্রকাশ হোক।
গাড়িতে আবার একসঙ্গে সবাই রওনা দিলাম। কোথায় যাচ্ছি জানি না, তবে আমি কিছু ক্ষন পর পর ই ছেলেটির দিকে তাকাচ্ছি, যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে….অচথ এই ছেলে আমার স্বামী!! স্বামী নিয়ে কতো ই কল্পনা করেছিলাম, সব মেয়েদের ই কিছু না কিছু আকাঙ্ক্ষা থাকে, চাওয়া থাকে, তবে আমি যেন প্রথম থেকেই কেনা বস্তুর মতো, কাঠপুতুলী!!

তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম, খেয়াল নেই। হঠাৎ করেই কারো ডাকে আচমকা থমকে উঠলাম, একটা মেয়ে বলল – বউমনি, আম্নে গাড়ি থেকে নামেন, আইসা পড়ছেন তো!! বড় কাকু, কাকিমা নামতে বলছে।

পাশে তাকিয়ে দেখলাম, ছেলেটা নেই। এর মধ্যে ই হঠাৎ করেই আমার হাত ধরে টান দিতেই আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে কারো বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হলাম…..

চলবে…

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
#Writer_Neel_Noor
#পর্ব ১

অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য, আর পেজে লাইক ফলো দিয়ে কমেন্ট করে রাখেন বাকি পর্ব পোস্ট করেই কমেন্ট বক্সে দিয়ে দেবো লিংক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here