মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী #Writer_Neel_Noor #পর্ব ৩

0
623

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
#Writer_Neel_Noor
#পর্ব ৩

(মায়ার অতীত)….

আমার বাবা, আমি আর মা। ছোট্ট একটা পরিবার! ছোট্ট একটা সংসার। বাবা মায়ের প্রেমের বিয়ে। আমার নানা অনেক প্রভাবশালী আর ধনী, কিন্তু বাবা?….

আমার বাবা ছিলেন এতিম। সে এতিমখানা থেকে ই বড় হয়েছেন। মায়ের সাথে ছিল প্রেমের সম্পর্ক। তারপর পালিয়ে বিয়ে। বিয়ের বছর ঘুরতে ই আমার জন্ম। তারপর মা বাবা আর আমি, মিলে খেলে খুব সুন্দর হাসি খুশি পরিবার।
বিপত্তি ঘটল সেদিন থেকে, যেদিন বাবার চাকরি টা চলে যায়। আমার বাবা ছিলেন সৎ একজন মানুষ। ঘুষ তিনি সহ্য করতে পারেন না। এটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় বাবার জীবনে। একসময় বাধ্য হয়েই চাকরি টা ছাড়তে হয়। তখন আমার বয়স কেবল পাঁচ। আমার আজ ও মনে আছে বাবার কান্না, সে কি নিরব কান্না। বাবার কষ্ট, এখানে সেখানে, এই বন্ধু তো সেই বন্ধু, কত জায়গায় ঘুরেছে একটা ভালো চাকরির জন্য।

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে, বাবা চাকরি তো পেয়েছিলেন তবে সেটা আমাদের পরিবারের খরচ চালানোর জন্য সহজ না। বাধ্য হয়ে, মা ও বাবার কাছে আবদার করে, সে চাকরি করবে। দুজন একসাথে সংসার চালাবে।

জানেন, আমার বাবার ঘোর আপত্তি।সে কোন মতেই রাজি না, মায়ের আকুতি মিনতি সেদিন বাবার আপত্তি ও হার মেনে গেল। মা এক কদম এগিয়ে গেল, কিন্তু আমি আর বাবা যেন জীবন থেকে সেদিন ই পিছিয়ে গেলাম।

দেখতে দেখতে আরো বছর দুয়েক চলে গেল। আমার বয়স আট বছর। এই অল্প বয়সে আমি অনেক কিছু ই বুঝি। তবে এটা বুঝতে আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে, কেন বাবা মায়ের দূরত্ব বাড়ল!! কেন ই বা বাবা আত্মহত্যা করল?

রোজ দিনের মতো, সেদিন ও আমি স্কুলের জন্য রেডি হচ্ছিলাম। আমার বাবা আমার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে বলল – মায়া_বন!! একটা কথা দিবে আমায়?

আমি আবার কথায় খুব বিশ্বাসী!! আমি খুব ই উৎসুক হয়ে বললাম – সব কথা তোমার জন্য বাবা।
(বলেই ফিক করে হেসে উঠলাম)

বাবা আমার কপালে একটা পরশ দিয়ে বলল- জীবনে সবাইকে ভালোবাসবা, আপন করে নিবা, সাহায্য করবা বিনামূল্যে, প্রয়োজনে জরুরি মানুষ হবা, পুরো দুনিয়ার মানুষের বিশ্বস্ত হয়ে উঠবা.. ‌তবে কাউকে ধোকা দিবে না, আর বিশ্বাস করবা না। ঠিকাছে!!

সেদিন কথাটার মানে না বুঝলেও, বাবার দিকে হাঁসি মুখে তাকিয়ে, বলেছিলাম -আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর স্কুল চলে গেলাম।।
কিন্তু আমি যদি জানতাম, আমি আমার বাবাকে শেষ বারের মত দেখবো, কখনো ই আমি আর স্কুলে যেতাম না….

স্কুল ছুটি হলে বাসায় এসে ই দেখি বাড়ির সামনে খুব ভীড়, সবাইকে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতে ই দেখি বাবার ঝুলন্ত দেহ দুলছে, মা দরজার সামনে এলোমেলো অবস্থায় বসে আছে । আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না, বাবা বলে চিৎকার দিয়ে সেখানে ই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। রাইটার -নীলনূর

—–
বাবা মারা যাওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পর মা ঐ বাড়ি ছেড়ে দেয়, আমাকে নিয়ে অন্য আরেকটি বাড়িতে উঠে। এটাও কিছু ছিল না, তবে সবচেয়ে বিষ্ময়কর ঘটনা ঘটে তখন, যখন বাবা যাওয়ার ৪০ দিন পর মা নতুন কাউকে বিয়ে করে….

হয়তো এই কারণে ই বাবা বলেছিলেন, সবাইকে মন উজাড় করে দিতে, কিন্তু বিশ্বাস না করতে!!

______

এই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। মাকে ঘৃনা করলেও, যাওয়ার আর কোনো জায়গা ছিল না, তাই তাদের সাথে ই থাকতাম। তবে, মা কখনো ই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নাই, আমার সব অধিকার আমাকে দিয়ে গেছে।
বাবা মৃত্যুর আগে একটা নোট লিখেছেন মায়ের উদ্দেশ্য, ” আমি না হয় তোকে বেঁধে রাখতে পারলাম না, আমাদের মেয়েটাকে অন্তত তার প্রাপ্য টুকু দিস!!”

হয়তো সেজন্য ই মা আমাকে এতো দিন দেখে শুনে রেখেছিল, ততটুকু অধিকার দিয়েছিল, যতটুকু তার অন্য ছেলেমেয়েদের দিয়েছেন।
______

কিন্তু কথায় আছে না? পর পরই হয়!! মায়ের স্বামী যে আমাকে কুনজর এ দেখতেন, তা বুঝতে পেরেছিলাম যখন দশম শ্রেণীতে পরি। মাকে এগুলো বলেছিলাম, সেদিন কি মারটার ই মেরেছিল আমাকে। তারপর থেকেই আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য মা উঠে পড়ে লাগল। আমি জানি না, আমার শ্বশুরের সাথে মায়ের কিভাবে পরিচয় হলো, তবে, এসএসসি পরীক্ষার শেষ ই আমাকে বিক্রি করে দিল…..
______

(বর্তমান….)

চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না, তাই চুপচাপ উঠে দাঁড়ালাম, রুমের দিকে পা বাড়াতেই রেহানা ভাবী প্রশ্ন‌ করল – তোমার বাবা কেন আত্মহত্যা করল, কখনো জানতে পেরেছো?

বুকফাটা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিয়ে বললাম – নিয়তির খন্ডন!!মায়ের সাথে লোকটার সম্পর্ক ছিল দুই বছর, চাকরি সুবাদে ই তাদের পরিচয়, তারপর প্রেমে পরিণত হওয়া… সবকিছু ই বাবার মনে দাগ কেটে রয়। বাবা তাদের আপত্তিকর অবস্থায় একসাথে ধরেছিল সেদিন, তাই সে সহ্য করতে পারে নাই!! সহ্য করতে পারে নাই, শখের নারীতে অন্যের বসবাস, অন্যের বাহুডোরে!!

কথাটা বলেই রুমের ভেতর চলে গেলাম, খুব ই খারাপ লাগছে, মানুষিক ভাবে ও, শারীরিক ভাবে ও … চুপচাপ শুয়ে পড়লাম একটু ঘুমানোর আশায়!!

_____

অন্যদিকে, হাসপাতালের করিডোরে, একদল নার্স ও প্রশিক্ষ ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে, একসাথে বসে আলোচনা করছে, ছয় মাস ধরে কোমায় আছে এক মেয়ে, আইসিইউ তে এডমিট আছে, অবস্থা করুণ, বাঁচবে কি না, কেউ ই জানে না? বাঁচলে ও কবে জ্ঞান ফিরবে, সকলের ই অজানা….

মেয়েটির গরন, চেহারা, সবকিছু তে ই যেন মেঘপুরের রাজকন্যাদের মতো লাগে, এমন অবস্থায় ও যেন অপরুপ সুন্দর লাগছে, যেন ঘুমন্ত রাজকন্যা!! হাসপাতালের এমডির ছেলের তত্ত্বাবধনে মেয়েটার চিকিৎসা চলছে….সবার কাছেই অজানা, অচেনা!! কে এই মেয়েটি? কী ই বা তার পরিচয়??

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here