#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
৭
#writer_Neel_Noor
নিজের রুমে এসে এখন আমি চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছি…এতো এতো রহস্য কেন এই বাড়িতে? খুব যত্ন করে ডায়েরি আর সেই প্রুভ গুলো রেখেছি। কি করবো!! কিছু ই বুঝতে পারছি না…ডায়েরিটা পড়ব… এক তো সাহস পাচ্ছি না, দ্বিতীয় তো আমি অসুস্থ ফিল করছি। এইগুলো ভাবতে ভাবতে ই, আমি টেবিলে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। রাইটার -নীলনূর
মধ্য রাত, রুম থেকে ঠক ঠক আওয়াজ আসছে। আমার ঘুম অনেক পাতলা। খুব সহজেই ঘুম ভেঙ্গে গেল…প্রথম এ ভয় পেলে ও, সাহস নিয়ে এদিক সেদিক তাকালাম…একটা অভয়/ছায়া ঠিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে…
দরজা তো খোলা, জোৎস্নার আলোতে সম্পূর্ণ পরিষ্কার না বোঝা গেলে ও এটা একটা পুরুষের ছায়া, তা বোঝা যায়… আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম – কে..কে ওখানে?
একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো বললো- আমি আপনার শুভাকাঙ্খী!! আমি ইচ্ছে করলেই ভেতরে প্রবেশ করতে পারতাম, রুমের। কিন্তু, বিনা অনুমতিতে, তাছাড়া আমার পারমিশন নেই, এভাবে কোন মেয়ের রুমের ভেতরে আসার…তাই বাহিরে থেকেই ঠক ঠক আওয়াজ করছিলাম, যাতে আপনার ঘুম ভাঙ্গে।
চমকে উঠলাম। কে সে? তবুও হিম্মত জুটিয়ে বলেই ফেললাম – এতো ই অনুমতি/বিনামতি বুঝেন, তাহলে মাঝ রাতে এখানে আসছেন কেন? কে আপনি? আমি কিন্তু এখন ই চিৎকার দিব!!
ছেলেটি বলল- তাহলে আপনার ই অসুবিধা। শশুর বাড়ীর সবাই আপনাকে মন্দ বলবে। তাছাড়া, (পকেট থেকে একটা বক্স বের করে) এটা আপনার জন্য (বলেই, বারান্দার দরজার সামনে রাখল) , আমার কাজ ছিল আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়া, সবার অগোচরে!!
ছেলেটি চোখের সামনে দুতলা বাড়ির বারান্দা থেকে নিচে নেমে গেল। আমি রুমের লাইট অন করেই, বক্স টার দিকে এগিয়ে গেলাম, বক্স টা হাতে তুলে বারান্দা দিয়ে এদিকে সেদিকে তাকালাম, নাহ্!! ছেলেটির হদিস আর পেলাম না!! সে যেন বিশাল এই বাগানের কালো কুচকুচে অন্ধকার এ হারিয়ে গেছে….
_____
অন্যদিকে পরিকল্পনা যেন বের হয়েই আসছিল। দুজন মহিলা আর দুজন পুরুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। গবেষণা একটাই!! রাজের বউ কে কিভাবে সরানো যায়…যদি ও সবটা জানে, তাহলে ওকে কি করা যায়….
______
বক্স টা হাতে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বক্স টা খুলতেই, একটা লকেট সামনে পেলাম। সুন্দর একটা পেনডেট, সেটা খুলতেই, তার ভেতর দুটি ছবি…ছবিটা দেখেই বিদ্যুৎ এর মতো ঝটকা খেলাম!!
কারন ছবিটা আমার মায়ের। সাথে শশুর বাবা সহ, আর চাচা শশুর এবং আর একটা পুরুষের ছবি। ইয়ং বয়সের ছবি, অনেক পুরোনো!! বুক পিঞ্জর থেকে ধক ধক ধক করে আওয়াজ আসছে ই…থামার নাম নেই।
বক্স টায় তাকাতেই আরো একটা কাগজ পেলাম। কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটা খুলতে ই,
“ভাবী বলব নাকি বোন!! সম্পর্কের বেড়াজালে দুইটাই আটকে আছেন। হাওলাদার বাড়ির সকল কিছু ই আমার অজানা নয়। ছলে, বলে কৌশলে এ বাড়িতে প্রতিশোধ, আর সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছেই…!! প্রথম টার্গেট আপনার স্বামী।
খুব গোপনে তার সাথে অন্যায় হচ্ছে। মানছি, সে তার ভুলের শাস্তি পাচ্ছে, কিন্তু ওটা আমি তাকে দিব, অন্যরা না!!
গল্পের খলনায়ক চরিত্রে অভিনীত আমার লেখনীতে, শাস্তি তাকে আমি ই দিব। রাজ কে অন্য ডাক্তার দেখান!!
শুভাকাঙ্খী R
চিঠিপত্র টা পড়ে শকড হয়ে গেলাম। “আর ” আর তে কে? এটা কি রুদ্র ? রাজ কি করেছে?? উফ্ মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। মন মস্তিষ্ক থেকে একটাই কথা বের হচ্ছে, ” অষ্টাদশীতে কি এতো রহস্য, জীবন এ কোন দিশারায়”।
রুদ্র!! রুদ্র!! বলতেই, আমি দৌড়ে আলমারি টা খুললাম। রক্ত কালচে রঙের ডায়েরি টা হাতে নিলাম। এক পা এক পা করে, বারান্দায় গেলাম। দোলনায় চুপ করে বসলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করে ডায়েরিটা উল্টালাম…
রক্ত কালচে ভাবের ডায়েরিটা আমার নিজের রক্তেই কালচে গেছে। ধপধপে সাদা ডায়েরি টা তখন থেকেই কালচে গেছে যখন সজনী রানীর মনে অন্যের বসবাস। খুব ই বিচক্ষণ, শান্ত স্বভাবের ছেলেটাও আজ অবুঝ এর মতো কান্না করছে….
সজনী পাখি খুব ই অবুঝ, ঠিক তার নামের মতোই!! বিহারিনী!! তার টানা টানা চোখ, গোল গোল গালময়, উজ্জ্বল গায়ের রং, লম্বা লম্বা ব্রাউন চুল, গোলাপি ঠোঁট , হলহলে শরীর…ঠিক যেন রুপকন্যা, রাজকুমারী।
তাইতো নামটা তার বিহারিনী_হরিনী!! ” রুদ্রের_বিহারিনী_হরিণী….
________
ষোড়শী বয়সে আমার হৃদয়কে ঘায়েল!! এ কেমন দোষ দোষী তুমি বিহারিনী!! সদ্য ডাক্তারি পাশ করা ছেলেটা ডাক্তার হওয়ার আগেই রোগীতে পরিনত হওয়া, এটা মোটেও ছোট্ট বিষয় নয়, তোমাকে এ শাস্তি সারাজীবন পেতে হবে….
(আজ পার্ট টা একটু ছোট ই হবে, আপনারা খালি নেক্সট নেক্সট করেন, ভালো গঠন মূলক কমেন্ট ও তো করতে পারেন, যেন উৎসাহ পেতে পারি…)
চলবে….