খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৫৮ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
446

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৫৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

রজনীর আঁধার বিলুপ্ত হয়ে ধরনীর বুকে প্রভাতের আলো উপচে পড়েছে। বিষাদকে গ্রাস করে নিয়েছে এক টুকরো সুপ্ত অনুভূতি। তিক্ততা যখন হৃদয়কে বিষিয়ে তুলে ব্যস্ত, তখনই সুখানুভূতি তিক্ততাকে গুষে নেওয়ার কর্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। অনুভূতি গুলো সুখ-দুঃখের সংমিশ্রণে দোল খেলে যাচ্ছে। একদিকে যেমন সুখ বিষাদকে পাকড়াও করে ফেলছে। অপর দিকে প্রকৃতি তার দায়িত্ব পালন করেছে। সে অন্যের ক্ষতি চাইল সৃষ্টিকর্তা তাকে নরক যন্ত্রণা মিলিয়ে দিল। বিধাতার বিচার ভয়ংকরের রকমের সুন্দর। মানুষ তার কর্ম দ্বারা ফল পেয়ে যায়। তাইয়ান অষ্টাদশী কন্যাকে কোলে নিয়ে হসপিটালের মধ্যে প্রবেশ করল। অষ্টাদশীর মস্তক বেয়ে স্রোতের ন্যায় রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তাইয়ানের কোলে কোনো নারীকে দেখে মুনতাসিমের আঁখিযুগলে বিস্ময় ধরা দিল! তার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা বলছে। তাইয়ানের আঁখিযুগলে শেহনাজের জন্য অদ্ভুত লুকানো প্রণয় সে দেখেছে। তবে এই রমনীর দেখা সে পেল কোথায়? মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–এই মেয়েটা কে তাইয়ান?

–আমি আপনাকে সব বলছি স্যার, আগে মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে। তাইয়ান বাক্য গুলো শেষ করেই দ্রুত জরুরি বিভাগের দিকে ছুটে গেল। মুনতাসিম আড়দৃষ্টিতে তাইয়ানকে পর্যবেক্ষণ করে নিল। মেয়েটার মস্তকে আঘাত লেগেছে। ডক্টররা তাকে সর্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা দিয়েছে। তাইয়ান মুনতাসিমের কাছে আসতেই মুনতাসিম তাইয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–তুমি আবার বাড়ি যাও তাইয়ান। আমাদের বাড়ির প্রতিটি সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখো। যদিও আমি জানি কাজটা কার, তবে আব্বার সামনে মানুষটাকে উপস্থাপন করাটা জরুরি। তাইয়ান নির্লিপ্ত চোখে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। তাইয়ানের দৃষ্টিতে মুনতাসিম ঘৃণা দেখতে পেল। তাইয়ানের আঁখিযুগলে কতটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ তাইয়ানের কি হয়ে গেল! তাইয়ান তো ভেজালযুক্ত প্রণয় গড়ে তুলে না। তাইয়ানের দৃষ্টিতে সে কয়েকমাস হলো প্রণয় দেখে না। তবে কি দু’জনের বিচ্ছেদ তার আড়ালেই হয়ে গেল? মুনতাসিমের মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে আছে। শূন্য মস্তিষ্ক দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে অক্ষম হলো। প্রেয়সীর চিন্তা মন মস্তিষ্ককে গ্রাস করে নিয়েছে।

তাইয়ান পথের ধারে রিয়াদ চৌধুরীর জন্য অপেক্ষা করছিল। মুনতাসিম কালকে রাতে সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। তাইয়ান তথ্য সংগ্রহ করে নিয়েই বের হচ্ছিল, এমন সময় রিয়াদ চৌধুরীর তাকে থামিয়ে দেয়। সে-ও তাইয়ানের সাথে যাবে বলে জানায়। তাইয়ান চৌধুরী গৃহের দিকে দৃষ্টিপাত করে ছিল। তখনই একটা কালো গাড়ির ভেতর থেকে একটা বস্তা রাস্তার মাঝে ফেলে দেওয়া হয়। কিছু ফেলার শব্দ কর্ণকুহরে আসতেই তাইয়ানের দৃষ্টি রাস্তার মাঝে যায়। বস্তার মুখ খুলে নারীর কেশগুলো দেখা যাচ্ছে। তাইয়ান তড়িৎ গতিতে বস্তার কাছে ছুটে যায়। বস্তার কাছে আসতেই তাইয়ানের দৃষ্টি অন্যদিকে চলে যায়। ততক্ষণে রিয়াদ চৌধুরীও চলে এসেছে। তাইয়ানকে দেখে তাইয়ানের কাছে আসতেই তার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। হঠাৎ করে ভেতরটা উথাল-পাতাল শুরু করে দিল। মুখশ্রী দিয়ে আপনা-আপনি বিশ্রী গালি চলে আসলো। তাইয়ান চিৎকার করে বলল কালো গাড়িটাকে ধরতে। রিয়াদ চৌধুরীর গায়ের চাদরটা মেয়ের কায়াতে জড়িয়ে দিল। চিৎকার দিয়ে অর্ধাঙ্গিনীকে ডাকল। আশেপাশে লোক জড়ো হয়ে গেল। চারিদিকে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। মেয়ের করুন অবস্থা দেখে সাহেলা চৌধুরী জ্ঞান হারালো। শেহনাজকে দ্রুত হসপিটালে নেওয়া হলো। ভাগ্যের পরিহাসে যার মৃত্যুর খবরে আনন্দ উল্লাস করতে চেয়েছিল। বাস্তবতার নির্মম সত্যে আজ তার সাথেই একই হসপিটালের ভর্তি হতে হলো শেহনাজের। শেহনাজের নির্মম অবস্থা দেখে বুক কাঁপল না মুনতািসমের। সে নিরব ভূমিকা পালন করছে। তখনই কর্ণকুহরে এসে পৌঁছাল কিছু সুখময় বাক্য, সাদা এপ্রন পড়া নার্সে এসে জানালো মেহেভীনের জ্ঞান ফিরেছে। মুনতাসিম দ্রুত গতিতে মেহেভীনের কেবিনের দিকে ছুটে গেল। মেহেভীন নিষ্পলক চাহনিতে চেয়ে আছে। সমস্ত মুখশ্রী মলিনতায় ছেয়ে গিয়েছে। মুনতাসিমকে দেখে বুকের মধ্যে শীতল হাওয়া বয়ে গেল। মানুষটা ঠিক আছে দেখে মানসিক ভাবে সুস্থ অনুভব করল মেহেভীন। মুনতাসিমের চোয়াল শক্ত হয়ে এল। সে মেহেভীনের কাছে এসে মেহেভীনকে তুলে বসালো। মুনতাসিম রক্তিম আঁখিযুগল নিয়ে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। সে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–এত জেদ কিসের আপনার? আমি আপনাকে চলে যেতে বলেছি। মরে যেতে বলিনি! শুকনো পাতার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলাম৷ আপনি এসে কুড়িয়ে নিলেন। তা-ও আবার পোড়ানোর জন্য। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন মুনতািসমের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মুনতাসিমের একটা বাক্যও তার বোধগম্য হয়নি। সে বোঝার চেষ্টা করছে। মুনতাসিম তাকে কি বলতে চাইছে? মেহেভীনের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি উপলব্ধি করতে পেরে মুনতাসিম চোয়াল শক্ত করে বলল,

–আপনি বি’ষ খেয়েছেন কেন? মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন বিস্ময় নয়নে মুনতাসিমের মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মেহেভীন গলায় ভিষণ ব্যথা অনুভব করল। তবুও সে সময় নিয়ে একটু একটু করে বাক্য উচ্চারন করে বলল,

–আপনাকে ছুঁয়ে বলছি। আমি বি’ষ খাইনি। আমি বি’ষ খাওয়ার মতো মেয়েই না৷ যে জীবন আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। সে জীবন নষ্ট করার অধিকার আমার নেই। এত অল্পতে ভেঙে পড়ার মতো মেয়ে, আমি না৷ আমি জীবনে কম কঠিন পরিস্থিতির স্বীকার হইনি। যেখানে আমার আ’ত্ন’হ’ত্যা করার কথা ছিল। আমি সেখানে পাথরের ন্যায় শক্ত হয়েছি। সেখানে আপনার সামান্য মুখের কথায় আ’ত্নহত্যা’র মতো পাপ কাজ করে বসব! আর যদি আমি বি’ষ খেয়েও থাকি, তাহলে আপমার কি? আপনার জন্য তো আরো ভালো হবে। আপনার জীবনের অশান্তির মূল উৎস হলাম আমি। না থাকব আমি আর না থাকবে অশান্তি। আমার জন্য আপনাকে আর এতটুকু কষ্ট পেতে দিব না। যে মানুষটা ধরনীর নিয়মের উর্ধ্বে গিয়ে আমার ভালো চাইলো। আমি আমার জীবনের বিনিময়ে মানুষটার ভালো থাকা দিয়ে যাব। মেহেভীন আর কোনো বাক্য উচ্চারন করতে পারল না৷ মুনতাসিম নিজের অধরযুগলের সাথে মেহেভীনের অধরযুগল এক করে দিল। হৃদয়ের দহনে পুড়তে পুড়তে কয়লা হয়ে গিয়েছে সে। তার প্রেয়সী তাকে দ্বিগুন পোড়ানোর গল্প শোনাচ্ছে! সে পোড়াতে জানলে মুনতাসিম ভালোবাসা দিয়ে সেই আগুন নিভাতে জানে। মেহেভীন আঁখিযুগল বন্ধ করে ফেলছে। বুকের মধ্যের ধকধকানির শব্দ কর্ণকুহরে এসে বাড়ি খাচ্ছে। নিস্তেজ কায়াটা আরো নিস্তেজ হতে শুরু করেছে। অনুভূতিরা চারপাশে রাজত্ব করছে। বিষাদ গুলো হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। বাতাসে বাতাসে প্রনয়ের আদান-প্রদান ঘটছে। মুনতাসিম মেহেভীনের মস্তকটা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,

–হৃদয়টা পুড়তে পুড়তে একদম ছাই হয়ে গিয়েছে। ভেতরটা পোড়ার মতো এতটুকু অংশ অবশিষ্ট নেই। আপনি কি সেটা উপলব্ধি করতে পারছেন ম্যাডাম? যে আপনার মুখশ্রী দেখে বাহিরের সমস্ত ক্লান্তি মেটায়, আপনাকে দেখার ক্লান্তি সে কাকে দেখে মিটাবে? আপনি বললে আমি সেচ্ছায় মরে যাই। তবুও এত দুঃখ দেওয়ার কি আছে? আপনি সব বুঝেন শুধু আমায় বুঝেন না। মুনতাসিমের প্রতিটি বাক্য মেহেভীনের হৃদয় কাঁপিয়ে তুলল। সে নিস্তেজ কায়ার শক্তি প্রয়োগ করে মুনতািসমকে শক্ত হাতে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করার চেষ্টা করল। কিন্তু শক্তি তার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। মানুষটাকে আঁকড়ে ধরার মতো শক্তি ক্ষয় হয়েছে। সে কোনো বাক্য উচ্চারন করল না। মানুষটাকে একটু কাছ থেকে অনুভব করার চেষ্টা করল। এই মানুষটা তার মানসিক শান্তি। যাকে ছাড়া তার দম বন্ধ হয়ে আসে। রজনীর নিদ্রা দূরে দেশে পাড়ি জামায়। মানুষটার অভিমান তার বুকে পাহাড় সমান অশান্তি সৃষ্টি করে। মেহেভীনের গলা ব্যথা হওয়ায় সে কোনো বাক্য উচ্চারন করতে পারছে না। বাক্য গুলো কণ্ঠনালিতে আসার আগেই গলায় টান ধরছে। চুপচাপ সেই যন্ত্রনা টাকে উপভোগ করতে হচ্ছে। মুনতাসিম দূরে সরতে চাইলে মেহেভীন মুনতাসিমের এক হাত আঁকড়ে ধরল। মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–ভালো করে কথা বলেছি। তারমানে এটা ভাববেন না। আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আপনার কোনো ক্ষমা নেই। খাবার এসেছে খাবার গুলো খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবেন৷ আপনাকে হসপিটালে থাকতে হবে না। আমি আজই আপনাকে বাসায় নিয়ে যাব। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীনের কোনো ভাবান্তর হলো না৷ সে মুনতাসিমের হাত ধরে রাখল।

শেহনাজের চিকিৎসা শুরু হয়ে গিয়েছে। অবস্থা খুব একটা ভালো না। রিয়াদ চৌধুরীর সমস্ত মুখশ্রী আঁধারে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। ভেতরটা অসহনীয় যন্ত্রনায় জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হচ্ছে। তখনই মুনতাসিম আসে সেখানে বাবার পাশে না বসে তাইয়ানের কাছে গিয়ে বলল,

–কিছু খবর বাতাসের সাথে ছড়িয়ে পড়ে তাইয়ান। কিন্তু খেয়াল রাখবে খবরের সাথে যেন আমার নাম না জড়ায়। যার মেয়ে তার নাম উল্লেখ করেই যেন খবর প্রচার করে। আমার নাম কোনো টিভি চ্যানেল প্রচার করলে সেই টিভি চ্যানেলকে আমি বিলুপ্ত করে দিব। এটা প্রতিটি টিভি চ্যানেলের মালিককে বলে দিও। রিয়াদ চৌধুরী ছেলের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করল। মুনতাসিম জীবনের প্রথম বাবার দৃষ্টি উপেক্ষা করল। তখনই পাশের কেবিন থেকে কারো উচ্চ স্বর কর্ণকুহরে এসে পৌঁছাল। তাইয়ান মুনতাসিম দু’জনেই গেল। তাইয়ানকে দেখেই রমনী তাইয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

–বাবুর আব্বু তুমি এসেছ? আমি তোমার জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছি। তুমি আমাকে রেখে কোথায় হারিয়েছিলে? আমি শহরের অলিতে-গলিতে তোমাকে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও তোমাকে পাইনি। তুমি এতটা স্বার্থপর কিভাবে হয়ে গেলে! নিজের সন্তানের কথা ভেবে তোমার বুক কাঁপেনি? রমনীর কথায় তাইয়ান বিস্ময় নয়নে রমনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। সে দ্রুত রমনীকে দূরে সরিয়ে দিল। মুহুর্তের মধ্যে মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠল। সে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–এই মেয়ে তোমার মস্তকে সমস্যা আছে? এসব তুমি কি বলছ? তুমি জানো আমি কে? আমি চাইলে তোমার কি করতে পারি, সেটা তোমার ধারনাতেও নেই। একটা থাপ্পড় দিব বাবার নাম ভুলিয়ে দিব। তুমি নিজেই একটা বাচ্চা আবার পরপুরুষকে বাবুর আব্বু ডাকতে তোমার লজ্জা করছে না!

–ঠিক টাইমে বিয়ে করলে তোমার বাবু আজ ধরনীর বুকে তোমার চুল টানত। আব্বা দেখছেন আপনার সামনে আপনার ছেলে আমাকে অপমান করছে। আপনার কি নাতির মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না। আপনি দাদা হতে চান না আব্বা। আপনার ছেলে আমার সাথে এমনটা কিভাবে করতে পারল? রমনীর কথায় তাইয়ান শব্দ করে কেশে উঠল৷ মুনতাসিমের মুখশ্রীর কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ সে গম্ভীর মুখশ্রী করে দাঁড়িয়ে আছে। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–আমি তো তাইয়ানের আব্বা না। মুনতাসিমের কথায় রমনীর মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। সে চুপসে যাওয়া কণ্ঠে বলল,

–আপনি তাইয়ানের বাবা না!

–না।

–আমি তো আপনার সাথে মজা করছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই তাইয়ানের বড় ভাই। তাইয়ানের সাথে গাড়িতে যে ছিল সেটা আপনাদের বাবা। আমি আপনার বোনের মতো মামা হয়ে আপনার অনাগত ভাগনের প্রতি অবিচার হতে দিবেন? রমনী মিথ্যার বলছে তা মুনতািসমের বিচক্ষণ আঁখিযুগল স্পষ্ট বলে দিচ্ছে। সে রমনীর কথায় তাল মিলিয়ে বলল,

–এটা তো ঘোর অন্যায়! আমি মামা হয়ে এত বড় অন্যায় ভাগনের প্রতি হতে দিতে পারি না। তোমার কি চাই বোন? তুমি ভাইকে বলো তোমার ভাই সকল সমস্যার সমাধান করে দিবে। মুনতাসিমের কথায় রমনীর সমস্ত মুখশ্রী চকচক করে উঠল। আঁখিযুগলে আশার আলো দেখতে পেল সে। তার অভিনয় এত সুন্দর সেটা আগে জানা ছিল না। কি সুন্দর মানুষ টাকে বোকা বানিয়ে ফেলল। মানুষটা তা ঘুনাক্ষরেও টের পেল না! সে খুশিতে আহ্লাদ করে বলল,

–আমার বেশি কিছু চাই না। আমি আমার স্বামীর সাথে আপনার বাড়িতে থাকতে চাই। বাচ্চাটা হয়ে গেলেই চলে যাব। আমি জানি আমার স্বামী আমাকে আর ভালোবাসে না। সে পর নারীতে আসক্ত হয়ে গিয়েছে। রমনীর কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল তাইয়ান। সে রমনীর দিকে দু’কদম এগিয়ে গিয়ে বলল,

–আমার নামে যদি আর একটা বাজে কথা বলেছ। তাহলে এখানেই খু’ন করে ফেলব। আমি তোমাকে চিনি না। পথের মাঝে গাড়ির সামনে এসে পড়েছিলে, তাই তোমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি। তোমার ধান্দা আমি বুঝেছি। তোমার কত টাকা চাই বলো? আমি তোমাকে তোমার ক্ষতি পূরন দিয়ে দিচ্ছি।

–আমার ভালোবাসাকে তুমি টাকার সাথে পরিমাপ করছ বাবুর আব্বু? আমার ভালোবাসায় তো কোনো কমতি ছিল না। তাহলে কেন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে? তাইয়ান মুনতাসিমের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করল। সে নিস্তেজ কণ্ঠে বলল,

–আমি এই মেয়েটাকে চিনি না স্যার। ও মিথ্যা কথা বলছে। হসপিটালে আসার সময় গাড়ির সামনে পড়েছিল। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি৷ মুনতাসিম কোনো কথা না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। তাইয়ানের ভেতরটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। বিধাতা তাকে কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন করল! কোনো দিকেই সে স্থির হতে পারছে না। কিছু সময়ের জন্য শেহনাজের কথা মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ঘৃণায় জর্জরিত হৃদয়টাও শেহনাজের করুন অবস্থা দেখে কাঁপছে না। সে শেহনাজকে শতবার নিষিধ করেছে। সর্তক করেছে তবুও শেহনাজ উন্মাদের মতো কাজ করেছে। দীর্ঘ কয়েক মাস তাদের কথা হয় না। বিচ্ছেদের যন্ত্রনায় কত রজনী তাইয়ান কাতরেছে। হাহাকারের রাত চিৎকার করে প্রেয়ীকে কাছে চেয়েছে। প্রেয়সী আসেনি। যার চিন্তায় সে বুকটা ভরা যন্ত্রনায় দিন পার করেছে। সে অন্যের বুকে সুখ খুঁজে নিয়েছে। মানুষটার প্রতি আগের ন্যায় ভালোবাসা নেই। কিন্তু অনুভূতি গুলো মাঝে মাঝে ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়।

রজনীর মধ্য প্রহর চলছে। বিকট শব্দে নিদ্রা ভাঙে সবার। সবাই দ্রুত শেহনাজের কেবিনে যায়। সে পাগলের মতো চিৎকার করছে। শেহনাজের এমন অবস্থা দেখে মেহেভীন অবাক হলো! শেহনাজ যে হসপিটালে ভর্তি সে কথা মুনতাসিম তাকে বলেনি। শেহনাজ চিৎকার করে বলছে। আমার কাছে তোমরা এসো না। আমি একটা নোংরা মেয়ে। আমি পাপী। আমি পাপ করেছি। আমাকে বিধাতা শাস্তি দিয়েছে। আমি তো এমন শাস্তি চাইনি। আমাকে এতটা শাস্তি বিধাতা কেন দিল? ও বাবা আমাকে জন্মের পর বি’ষ দিয়ে মারলে না কেন? সমস্ত কায়া জুড়ে অসহনীয় যন্ত্রনা করছে। আমাকে তোমরা মেরে ফেলো। আমার মতো মেয়ের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। ও ভাই আমি না তোমার অনেক ক্ষতি করেছি। আমাকে তুমি শাস্তি দাও ভাই। তোমার সাথে বেইমানি করার শাস্তি যদি হয় মৃত্যুদণ্ড। তাহলে আমি কেন এখনো বেঁচে আছি? তোমরা চলে যাও। আমার সাথে কথা বললে তোমরাও নোংরা হয়ে যাবে। আল্লাহ তুমি আমায় কি শাস্তি দিলে। আমি কিভাবে বাঁচব। আমাকে মৃত্যু কেন দিলে না? আমাকে তোমরা বাঁচিয়েছ কেন? আমাকে শাস্তি দাও মুনতাসিম ভাই। চিৎকার চেচামেচি শুনে রমনীও এসে উপস্থিত হয় সেখানে। আশেপাশে লোক জড়ো হয়েছে। ডক্টর নার্সরা শেহনাজকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। শেহনাজ কাউকে তার আশেপাশে ঠেকতে দিচ্ছে না৷ তখনই মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “তোমার শাস্তি হলো বেঁচে থাকা।” মুনতাসিমের কথায় সকলের মুখশ্রীতে বিষণ্ণ ধরা দিল। উপস্থিত সকলের আঁখিযুগল মুনতাসিমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

চলবে…..

(অসুস্থ মস্তিষ্কে কি লিখলাম কি জানি! মাথার যন্ত্রনা আমার অর্ধেক জীবন নিয়ে ফেলছে। দীর্ঘ চারদিন যাবত যে যন্ত্রনা সহ্য করেছি। বেঁচে আছি এটাই অনেক। ডক্টর দেখলাম, ডক্টরের ঔষধ খেয়েও কাজ হচ্ছে না। সবাই একটু দোয়া করবেন। মা গল্প লিখতে দিচ্ছে না। ভাবছে গল্প লিখার জন্য ফোন ব্যবহার করি বেশি, তাই ফোন হাতে দেয় না। আর ফোন হাতে দিলেও গল্প লিখতে দেয় না। জানিনা কি পাপ করেছি! যার শাস্তি আল্লাহ আমায় দিচ্ছে। সবাই আমার জন্য একটু দোয়া করে দিবেন। আজকের পর্বটা অনেক কষ্টে লিখেছি। কতবার ভেবেছি এক হাজার শব্দে পোস্ট করব। কিন্তু আপনারা মন ছোট করবেন। তাই দুই হাজার শব্দেই লিখতে হলো। সবাই রেসপন্স করবেন। দ্রুত গল্প দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here