#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৯।
ফারজাদ অল্প খাবার অর্ডার দিলেও জারা দিল বিস্তর খাবারের আইটেম। এত খাবার এই মেয়ে খাবে কী করে কে জানে। ফারজাদ অত শত না ভেবে নিজের খাবারে মনোযোগ দিল। জারা মুখের খাবারটা শেষ করে জিজ্ঞেস করল,
‘আব্বু আপনাকে কিছু বলেননি?'(উর্দু)
ফারজাদ তাকায়। স্মিত স্বরে বলে,
‘মিটিং এর কথা বলেছিলেন, তবে কী নিয়ে মিটিং তা বলেননি।'(উর্দু)
মেয়েটা হাসল। এখানে হাসার কী আছে ফারজাদ বুঝতে পারল না। জারা অপ্রতিভ স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘আমাকে আপনার কেমন লাগে?(উর্দু)
ফারজাদ অপ্রস্তুত হলো যেন এই প্রশ্নে। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না। উত্তর সাজানো নেই। কী বলবে সে? জারা ফের হাসল। বলল,
‘এইটুকু এক প্রশ্নের উত্তর দিতে এত সময়? আমি তো আরো কঠিন কঠিন প্রশ্ন ভেবে এসেছি।'(উর্দু)
ফারজাদের চোখে মুখে স্পষ্ট তার বিরক্তির ভাবটা প্রস্ফুটিত হচ্ছে। তাও যথাসম্ভব হাসার চেষ্টা চালাল সে। বলল,
‘বস ভালো মানুষ। আর আপনাকেও তিনি যথেষ্ঠ ভালো শিক্ষা দিয়েছেন, আপনিও খুব ভালো মানুষ।'(উর্দু)
জারা অধৈর্য সুরে জিজ্ঞেস করল,
‘মানুষ হিসেবে তো বুঝলাম, আর মেয়ে হিসেবে কেমন? পারফেক্ট না?’
ফারজাদ বিপাকে পড়ল যেন। রেস্টুরেন্ট ছেড়ে এক্ষুনি বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার। চাকরির মায়া না থাকলে এমনটাই করতো। আপাতত তা করতে না পেরে সহ্য করে নিচ্ছে সব। অপ্রস্তুত হয়ে সে জবাব দিল,
‘জি, পারফেক্ট।’
‘তাহলে তো আমাকে বিয়ে করতে আপনার কোনো অসুবিধা নেই?'(উর্দু)
আঁতকে উঠল ফারজাদ। বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে বলল,
‘বিয়ে?'(উর্দু)
জারা লজ্জামাখা স্বরে বলল,
‘জি, বিয়ে। আমার আপনাকে পছন্দ, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।'(উর্দু)
ফারজাদ চেয়ে আছে হতভম্ব হয়ে। মেয়েটা বলছে কী এসব? এই নিয়ে মিটিং করার জন্য বস আজকে তাকে এখানে পাঠিয়েছেন? রাগে দাঁতে দাঁত খিঁচে বসল সে। বসের মেয়ে না হলে এতক্ষণে মুখের উপর দু কথা শুনিয়ে বেরিয়ে যেত নিশ্চিত।
ফারজাদকে নীরব দেখে জারা জিজ্ঞেস করল,
‘কী ব্যাপার, ফারজাদ? আপনি কিছু বলছেন না কেন?'(উর্দু)
ফারজাদ সোজা হয়ে বসল। নিজেকে ধাতস্ত করে নিল। রেগে গেলে চলবে না, চাকরিটা খুইয়ে দেওয়া যাবে না। তাই মাথা ঠান্ডা করে নরম সুরে বলল,
‘এটা কী করে সম্ভব, ম্যাম? কোথায় আপনি আর কোথায় আমি? আমাদের কখনোই একসাথে মানাবে না। আপনি তো আমার থেকে আরো বেটার কাউকে ডিজার্ভ করেন। আমি আপনার জন্য একেবারেই যোগ্য না।'(উর্দু)
জারা উত্তেজিত হয়ে উঠল খানিক। বলল,
‘কী বলছেন এসব? কে বলেছে আপনি আমার জন্য যোগ্য না? আমি আপনার থেকে বেটার কাউকে পাব না, ইনফেক্ট আমার বেটার কাউকে চাই’ই না, আমার আপনাকেই চাই। আপনি হলেই আমার চলবে।'(উর্দু)
ফারজাদ জোরে নিশ্বাস ছাড়ল। রাগের মাত্রা বাড়ছে তার। সে তার টাইয়ের গিট’টা একটু ঢিলা করে সহজ ভাবে বসল। বলল,
‘দেখুন ম্যাম, বললেই সবকিছু হয়ে যায় না। আর সত্যি বলতে, আমি বিয়েতে বিশ্বাসী না। আমি বিয়ে করতে চাই না। আমি একা আছি ভালো আছি। অযথা নিজের জীবনে ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। আমার কাছে একা থাকাটাই বেটার অপশন।'(উর্দু)
জারা ভ্রু কুঁচকাল। বলল,
‘এমন আবার হয় না-কি? বিয়ে করতেই হবে, এটা বাধ্যতামূলক। হয়তো কিছুদিন পর করবেন, কিন্তু করতে তো হবেই। আর আমি না হয় সেই কিছুদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম; আমার কোনো সমস্যা নেই।'(উর্দু)
ফারজাদের মুখ থেকে “চ” জাতীয় শব্দ বেরিয়ে এল। জারা বুঝল, তার কথায় ফারজাদ বিরক্ত হচ্ছে বেশ। তাই সে বলল,
‘আপনাকে বিরক্ত করে থাকলে আমি দুঃখিত। আপনি সময় নিন, ভাবুন। আমার কোনো অসুবিধা নেই, তাও আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না, প্লিজ।'(উর্দু)
ফারজাদ কী বলবে বুঝতে পারছে না। তাও সে এগিয়ে এসে বলল,
‘বোঝার চেষ্টা করুন, এটা সম্ভব না। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না। আপনি আমার বসের মেয়ে, সেই হিসেবে আমি আপনাকে যথেষ্ঠ সম্মান করি। নিজের সম্মানটা ধরে রাখুন, প্লিজ। আমি অনুরোধ করছি।'(উর্দু)
জারা আর কিছু বলল না জবাবে। চুপচাপ খেয়ে বেরিয়ে গেল সে। ফারজাদ মনে মনে ধরেই নিল, চাকরিটা তার গিয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। আর যায় হোক, একটা চাকরির জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে সে অবশ্যই যাবে না।
_________
জঙ্গলের এক পাশ দিয়ে মেয়ে দুটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে চলছে। পায়ে তাদের ব্যথা করছে খুব। তারা কোথায় আছে, কোথায় যাচ্ছে কিচ্ছু জানে না। শুধু জানে, এখান থেকে পালাতে হবে। সন্ধ্যা নামার পথে। বিকেলের মার্তন্ডের কমলা রঙ পশ্চিম দিকটা ঝলসে দিচ্ছে যেন। এখনই একটা ব্যবস্থা করতে না পারলে পরে বিপদে পড়বে আরো। প্রিয়তা আশেপাশে চোখ বুলাল। জঙ্গলের চারপাশে অজস্র গাছগাছালি ছাড়া আর কিছুই দেখল না সে। হাঁটতে হাঁটতে পাশের মেয়েটির নাম সে জেনে নিয়েছে। সে তাকে বলল,
‘মিলি, সন্ধ্যা নামলে যে ভীষণ বিপদে পড়ব আমরা।'(উর্দু)
মিলি মেয়েটা প্রিয়তার চেয়ে বয়সে ছোট। আরো বেশি ভীত হয়ে উঠল সে। বলল,
‘এখন কী করব, আপু? আমরা কি বাঁচতে পারব না?'(উর্দু)
প্রিয়তা তাকে সাহস দিয়ে বলল,
‘কিছু একটা তো করতেই হবে। আরেকটু হাঁটো, সামনে রাস্তা আছে মনে হচ্ছে।'(উর্দু)
তারা পায়ের ব্যথায় অস্থির। তবু ক্ষান্ত হচ্ছে না। ঐদিকে নারী পাচার চক্রের কাছে তাদের নিখোঁজ হওয়ার খবর পৌঁছে গিয়েছে। এইদিকটা তন্ন তন্ন করে খুঁজছে সবাই। প্রিয়তা আর মিলি জঙ্গলের পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় এসেছে তাও জানে না। প্রিয়তা কেবল এইটুকুই বুঝতে পারছে, সামনে রাস্তা আছে। সেখান থেকে আসা গাড়ির শব্দ সে শুনতে পাচ্ছে।
________
বাসায় ফিরেই ক্লান্ত ভঙিতে সোফায় বসে পড়ল ফারজাদ। তাকে এত উদাসীন দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লেন দিলরুবা বেগম। জিজ্ঞেস করলেন,
‘কী হয়েছে, বাবা? আজ খুব বেশিই বিষন্ন লাগছে যে?’
ফারজাদ উঠে বসল। মা’কে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল সে। ভাবল, সব শুনে নির্ঘাত মা ভীষণ আফসোস করবেন। বলবেন, “কেন তুমি বিয়েতে রাজী হলে না, যেখানে মেয়ে তোমাকে নিজ থেকে প্রস্তাব দিয়েছে। এত বড়ো সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করে?” এই নিয়ে আগামী এক সপ্তাহ তিনি মাথা খাবেন নির্ঘাত। ফারজাদ আর সেই ভয়ে কিছু বলেনি। শুধু বলল,
‘একটু মাথা ধরেছে, আম্মি। মৌমিকে বলবেন, এক কাপ চা করে আমার ঘরে দিয়ে আসতে।’
সে ব্যাগ নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। দিলরুবা বেগম মৌমিকে না ডেকে নিজেই চা বানাতে যান।
________
হাঁটতে হাঁটতে সত্যি সত্যিই রাস্তায় উঠে এল দুজন। দুজনেরই চোখ মুখ আনন্দে চকচক করছে। এই বুঝি মুক্ত তারা। রাস্তায় অহরহ গাড়ি। পথচারীও আছে বেশ। এবার কাউকে একটা ডেকে এই জায়গাটার নাম জানতে হবে আগে। প্রিয়তা আশেপাশে চেয়ে একজন মধ্যবয়স্ক লোক দেখতে পেল, রাস্তা পার হবে হয়তো। তারা দ্রুত সেই লোকের কাছে গেল। মিলি লোকটাকে জিজ্ঞেস করল,
‘আংকেল, এই জায়গাটার নাম কী?'(উর্দু)
‘লাইয়াহ্ বাজার।'(উর্দু)
মিলি চিনল না ঠিক। প্রিয়তা তো আরো আগে চিনল না। দুজন চাইল দুজনের মুখের দিকে। মিলি ফের জিজ্ঞেস করল,
‘এখান থেকে করাচি কত দূর?'(উর্দু)
লোকটি ড্যাবড্যাব করে চেয়ে বললেন,
‘অনেক দূর। করাচি যাবে না-কি?'(উর্দু)
মিলি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
‘জি জি।'(উর্দু)
লোকটি এবার দুজন মেয়েকে পরখ করলেন ভালো ভাবে। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন,
‘বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো, তাই না?'(উর্দু)
মিলি বলল,
‘না না, আংকেল। আপনি আমাদের ভুল বুঝছেন। আমরা বড়ো বিপদে পড়েছি। আচ্ছা আংকেল, আপনার ফোনটা একটু দেয়া যাবে, আমি একটু বাড়িতে কল করব।'(উর্দু)
লোকটি সন্দিহান চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ফোনটা বের করে দিলেন। মিলি দ্রুত কল লাগাল তার মায়ের নাম্বারে। নাম্বার বন্ধ বলছে। দুশ্চিন্তায় পড়ে সে। মা ছাড়া তার তো আর কেউ নেই, এবার কাকে কল দিবে? সে তাই দ্রুত প্রিয়তার কাছে ফোন দেয়। বলে,
‘তোমার কোনো আত্মীয়কে কল দাও, আমার আম্মির ফোন বন্ধ বলছে।’
ফোন হাতে চেয়ে থাকে প্রিয়তা। তার এখানে আত্মীয় বলতে কেউ নেই। এক ভালোবাসার মানুষ ছিল, সেও ধোঁকা দিয়েছে তাকে। এখন কাকে কল দিবে? কাকে কল দিয়ে বলবে একটু সাহায্য করতে? তখনই হঠাৎ তার মনে পড়ল, দিলরুবা বেগমের কথা। উনার নাম্বারটা তার ফোনে রয়ে গেলেও উনার ছেলের কার্ডটা এখনো তার কাছে আছে। প্রিয়তা দ্রুত তার কামিজের পকেটে হাত দিল। পেয়ে গেল সে। মুখে চমৎকার হাসি ফুটল যেন। কার্ড থেকে নাম্বার তুলে দ্রুত কল লাগাল সে।
চলবে….
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/