অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ১০।

0
317

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১০।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনে চা খাচ্ছে আর আকাশ দেখছে ফারজাদ। মনটা মোটেও ঠিকঠাক লাগছে না। চাকরিটার জন্য বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার। সাথে ঐ জারার উপর রাগও হচ্ছে খুব। এভাবে বলা নেই কওয়া নেই সরাসরি কেউ বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে? তাও আবার মেয়ে মানুষ হয়ে? তার মধ্যে কি কোনো লজ্জাবোধ নেই?

বিষয়টা নিয়ে ভাবলেই বিরক্তি আসে তার মাঝে। তাই চিন্তা করল, আর ভাববে না। যা হবার হবে।
ঘরে ফিরে এল সে। খেয়াল করল, ফোনটা বাজছে। হাতে নিয়ে আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করার আগ্রহ বোধ করল না। রেখে দিল পূর্বের স্থানে। তারপর বিছানায় গিয়ে বসল।
ফোনটা এখনো বেজে যাচ্ছে। ফারজাদ চেয়ে আছে সেদিকেই। তাও রিসিভ করছে না সে। ইচ্ছে করছে না তার।

তিন থেকে চারবার কল দেওয়ার পরেও যখন কল রিসিভ হলো না তখন ভীষণ মন খারাপ হলো প্রিয়তার। অসহায় চোখের মিলির দিকে চাইল। বলল,

‘কল তো রিসিভ করছে না।'(উর্দু)

মিলি পারছে না এখনই কেঁদে দেয়। কেন ভাগ্য আজ তাদের সহায় হচ্ছে না? মধ্যবয়স্ক লোকটি এবার বিরক্ত বোধ করছেন। বললেন,

‘হয়েছে তোমাদের? আমাকে যেতে হবে তো।'(উর্দু)

প্রিয়তা ফোনটা ফিরিয়ে দেয় তাঁকে। তারপর মিলির দিকে চেয়ে বলে,

‘আমাদের একাই যেতে হবে, মিলি। ভয় পেও না, আমরা অবশ্যই পারব।'(উর্দু)

মিলি মন থেকে কোনো সাহস পাচ্ছে না। ভয়ে অন্তঃস্থল মুখিয়ে আছে তার। তাও সে নিজেকে ধাতস্ত করল। প্রিয়তার হাত ধরে বলল,

‘চলো তবে।’

প্রিয়তা আর মিলি হাঁটা ধরল। মধ্যবয়স্ক লোকটিও ততক্ষণে রাস্তা পার হয়ে গিয়েছে। তারা যখন হাঁটতে হাঁটতে অনেকটাই দূরে চলে আসে, তখনই কল ব্যাক হয়। লোকটি কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে ফারজাদ সালাম দিয়ে বলে,

‘এই নাম্বার থেকে একটু আগে কল এসেছিল।’

লোকটি তখন বলল,

‘জি জি, দুইজন মেয়ে কল দিয়েছিল।’

মেয়ের কথা শুনে অবাক হলো ফারজাদ। জিজ্ঞেস করল,

‘মেয়ে? কেন?’

‘তা তো আমি বলতে পারছি না। তবে, ওরা বলেছিল ওরা নাকি খুব বিপদে পড়েছে, তাই আমার থেকে ফোন নিয়ে আপনার নাম্বারে কল দিয়েছে।’

‘মেয়েগুলোর নাম পরিচয় জানেন কিছু?’

‘একজনের নাম বোধ হয় মিলি, আরেকজনেরটা জানি না।’

‘ওরা এখন নেই আপনার পাশে?’

‘না না, চলে গিয়েছে।’

ফারজাদ বুঝতে পারল না বিষয়টা। দুজন মেয়ে কেন তাকে কল করবে? কোন প্রয়োজনে? আর মিলি নামের কোনো মেয়েকে তো সে চিনেও না। অনেক ভেবে কোনো হিসাব মেলাতে না পেরে ফোন কাটল সে। এ যেন আরেক দুশ্চিন্তা। হুট করে এই দুইটা মেয়ে আবার কোথ থেকে এল?

প্রিয়তা আর মিলি হাঁটতে হাঁটতে এসে একটা বাজারের কাছে থামল। মিলি পেটে ধরে বলল,

‘আমার না ভীষণ খিদে পেয়েছে, আপু।’

খিদে প্রিয়তারও পেয়েছে। পেটে ডাকাডাকি করছে সেই কখন থেকেই। কিন্তু খাবে কী করে? খাবার কেনার টাকা নেই। প্রিয়তা আশেপাশে চোখ বুলাল। অনেক খাবারের দোকান চোখে পড়ল তার। শূণ্য হাতে, শূণ্য পেটে কেবল চেয়ে চেয়ে দেখল সে। অনুভব করতে পারল, খাবারের মূল্য। অসহনীয় অসহায়ত্বে চোখ ভিজে উঠল তার। মিলির হাত চেপে বলল,

‘টাকা নেই, হাত পাতলে হয়তো কেউ কিছু দিতে পারে।’

মিলি ফ্যালফ্যাল করে চাইল। বাবা মারা যাওয়ার পর মা অনেক কষ্ট করে তাকে বড়ো করেছে, তাও কোনোদিন খাওয়া পরার কষ্ট পেতে দেয়নি তাকে। অথচ আজ, পরিস্থিতি তাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে। সে কেঁদে ফেলল। বলল,

‘হাত পেতে খাব না, আপু। একেবারে বাড়ি ফিরেই খাব।’

প্রিয়তার চোখগুলো উষ্ণ জলে টইটুম্বর। এখনই জলোস্রোত নামবে যেন। সে নিজেকে সংযত করল। বলল,

‘কেঁদো না। আল্লাহ আছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।’

‘এখন কী করবে, আপু?’

‘একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।’

‘কী গাড়ি?’

‘একটা ট্রাক। এইসব পেঁয়াজ রসুনের ট্রাকগুলো অনেক দূর পর্যন্ত যাতায়াত করে। এইগুলো দিয়ে আমরা খুব সহজেই করাচি চলে যেতে পারব।’

‘কিন্তু এসব ট্রাকে আমরা উঠব কী করে? ট্রাকের মালিক কি আমাদের নিবে?’

‘লুকিয়ে উঠব।’

‘লুকিয়ে?’

অবাক হলো মিলি।

‘হ্যাঁ। সিনেমায় দেখোনি? ঐ ট্রিক’টাই আজকে আমরা কাজে লাগাব।’

মিলি ইতস্তত সুরে বলল,

‘সিনেমাতে তো সব সম্ভব, আপু। বাস্তবে এসব সম্ভব নাকি?’

‘কেন সম্ভব না? চাইলেই সব সম্ভব। চলো তুমি।’

প্রিয়তা মিলিকে টেনে নিয়ে একটা পেঁয়াজের ট্রাকের সামনে দাঁড়াল। ট্রাকের মালিক একজন লোকের সাথে কথা বলছেন। অন্য একজন লোক পেঁয়াজ তুলে দিচ্ছে তার ট্রাকে। প্রিয়তা মিলির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘এটাতেই উঠব আমরা।’

মিলি অনিশ্চিত দৃষ্টিতে একবার পরখ করে নিল সব। মন বলছে, এটা সম্ভব না। তাও প্রিয়তার উপর ভরসা রাখল সে।
পেঁয়াজ তোলা শেষ হতেই লোকটি অন্যদিকে গেল। প্রিয়তা বলল,

‘এই সুযোগ মিলি, এখনই উঠতে হবে। উঠে আমরা ঐ বড়ো বস্তাগুলোর পেছনে লুকিয়ে যাব, তাহলেই আর বুঝবে না।’

মিলি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,

‘আচ্ছা।’

কিন্তু ঐ যে মিলির আফসোস, ভাগ্য আজ তাদের সহায় হচ্ছে না। এবারও তাই ব্যর্থ তারা। বড়ো ট্রাক হওয়াতে মিলি বা প্রিয়তা কেউই ট্রাকের উপর উঠতে পারছে না। অনেক চেষ্টা করেও না। উল্টো উঠতে গিয়ে হাত ছিলে গিয়েছে প্রিয়তার। প্রথমে না বুঝলেও পরে দেখল, র ক্ত ঝরছে। তা দেখে মিলিও ভয় পেয়ে যায়। প্রিয়তার হাত চেপে বলে উঠে,

‘আপু, র ক্ত পড়ছে। এবার থেমে যাও, পারবে না।’

প্রিয়তার রাগ হচ্ছে খুব। কেন পারছে না সে? কেন?
রাগে ধপ করে সে মাটিতে বসে পড়ল। মিলিও বসল তার পাশে। অসহায় সুরে বলল,

‘এভাবে হবে না, আপু। এখান থেকে যেতে হলে আমাদের কারোর সাহায্য লাগবে। তাছাড়া আর উপায় নেই।’

প্রিয়তা তার দিকে চেয়ে বলল,

‘কে করবে আমাদের সাহায্য?’

‘এক কাজ করো, তুমি বরং আবার তোমার বাড়িতে কল দাও। এমনও তো হতে পারে তখন ঐ মানুষটা ব্যস্ত ছিল, পরে হয়তো কল ব্যাক করে আর আমাদের পায়নি। এখন একবার দিয়ে দেখো না।’

প্রিয়তা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বাড়ি কি আর এখানে আছে যে বাড়ির লোককে কল দিবে? কল তো দিয়েছিল অচেনা অজানা এক মানুষকে। যার সাথে পরিচয় কেবল কয়েক ঘন্টার।

প্রিয়তাকে ভাবতে দেখে মিলি তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,

‘আপু, এত কী ভাবছো? চলো, আবার কারোর কাছ থেকে ফোন নিয়ে একটা কল দেই।’

প্রিয়তা দ্বিধা মিশ্রিত স্বরে বলল,

‘ঠিক আছে, চলো।’

একজন পথচারী মহিলার কাছে সাহায্য চাইল তারা। ভদ্র মহিলা ফোন দিতে রাজীও হলেন। ফোন পেয়ে মিলি আবারও তার মায়ের নাম্বারে কল দিল। এবারও একই ভাবে নাম্বার বন্ধ বলছে। মিলির এবার কষ্ট হলো খুব। সে ফোনটা প্রিয়তার হাতে তুলে দিয়ে বলল,

‘তুমি এবার কল দিয়ে দেখো।’

প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে কল লাগাল। মনে মনে খুব করে দোয়া করল যেন, কলটা রিসিভ হয়। এবারও দুইবার ফোন বাজে। কল আর রিসিভ হয়না। প্রিয়তার চোখ মুখ শুকনো। একরাতেই চোখের নিচে কালি পড়েছে বেশ। তার পাতলা ঠোঁট যুগল কাঁপছে। কান্না পাচ্ছে খুব। সে ফোনটা ফিরিয়ে দিতে নিলেই টুং টুং করে শব্দ করে উঠে। প্রিয়তার হৃদস্পন্দন যেন ফিরে আসে এতে। বড়ো নিশ্বাস ফেলে কল রিসিভ করে সঙ্গে সঙ্গেই। ওপাশ থেকে শান্ত স্বরে ফারজাদ বলে,

‘কে বলছেন?’

ঢোক গিলল প্রিয়তা। শুকনো ঠোঁটগুলো ভিজিয়ে নিল জিভ দিয়ে। অতঃপর বলল,

‘আমি প্রিয়তা।’

চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here