অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ১৪।

0
759

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৪।

বসের কেবিনে ঢোকার পূর্ব মুহূর্তে বড়ো করে নিশ্বাস নিল ফারজাদ। প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে; বস কিছু বলার আগেই রিজাইন লেটার বসের হাতে ধরিয়ে দিবে। অযথা কোনো মেয়ের জন্য মোটেও সে অপমান সহ্য করবে না।
সে নক করলে, বস ভেতরে আসতে বলেন।ফারজাদ ভেতরে প্রবেশ করে ধীর গতিতে। বস চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। ফারজাদকে আপাদমস্তক পরখ করে বললেন,

‘আমার মেয়ের মাঝে কী সমস্যা?'(উর্দু)

অযাচিত প্রশ্নে চমকায় ফারজাদ। পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,

‘সমস্যা আমার মাঝে, স্যার। উনার জন্য আমি পারফেক্ট না।'(উর্দু)

‘ও না হয় তোমাকে পারফেক্ট বানিয়ে নিত।'(উর্দু)

ফারজাদ রাশভারী স্বরে বলল,

‘স্যার, ব্যাপারটা আমার ইচ্ছের। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কিছু করতে পারব না।'(উর্দু)

বস গম্ভীর স্বরে জবাব দিলেন,

‘অনেক বড়ো একটা সুযোগ তুমি হাতছাড়া করছো, ফারজাদ। আমার মেয়েকে বিয়ে করলে আমার এই চেয়ারটাও তোমার হতো, পরে আবার আফসোস করবে না তো?'(উর্দু)

ফারজাদ হাসল। বলল,

‘না, স্যার।'(উর্দু)

বস এগিয়ে এসে টেবিলে হাত রাখলেন। গলার স্বর নরম করে বললেন,

‘আমার মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে, ফারজাদ। যেদিন এই অফিসে প্রথম তোমায় দেখেছিল, সেদিন থেকেই। তোমাকে না পেলে ও কষ্ট পাবে ভীষণ। আরেকবার ভেবে সিদ্ধান্তটা নাও, ফারজাদ।'(উর্দু)

ফারজাদ নিশ্বাস ফেলল। মাথা নামিয়ে অনুরোধের সুরে বলল,

‘এভাবে বলবেন না, স্যার। যদি সম্ভব হতো, আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিতাম না। তবে এই ব্যাপারে আমি সত্যিই অপারক, আমাকে ক্ষমা করবেন।'(উর্দু)

বস ততক্ষণাৎ কঠিন স্বরে বললেন,

‘এর বিনিময়ে কিন্তু আমি তোমাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে পারি।'(উর্দু)

ফারজাদ ম্লান হাসল। রিজাইন লেটারটা বসের ডেস্কের উপর রেখে বলল,

‘আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না, স্যার। এই যে রিজাইন লেটার আমি দিয়ে যাচ্ছি। আমার কোনো ব্যবহারে অসন্তোষ হয়ে থাকলে, আমি আবারও দুঃখিত। আসছি স্যার, আসসালামু আলাইকুম।'(উর্দু)

বসকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল ফারজাদ। বস হতভম্ব হয়ে পড়লেন। তিনি এতটাও আশা করেননি। ভেবেছিলেন, ভয় দেখালে হয়তো রাজী হয়ে যাবে। কিন্তু হবে যে তার বিপরীত, সেটা কে জানতো।

ফারজাদকে এত দ্রুত আজ অফিস ছাড়তে দেখে তার বাকি সহকর্মীরাও অবাক হয়েছে বেশ। একজন গিয়ে তার কারণ জানতে চাইলেও ফারজাদ বলে, পরে জানাবে; আপাতত সে একটু একা থাকতে চায়।
ফারজাদ বেরিয়ে গেল। হেঁটেই চলল সে। অফিসের গাড়িটাও বুঝিয়ে দিয়ে এসেছে। তার কাজে খুশি হয়েই বস তাকে গাড়িটা নিজের কাছে রাখতে দিয়েছিলেন। যেহেতু আজ থেকে আর এই অফিসে সে চাকরি করছে না, সেহেতু এই গাড়িও আজ থেকে তার নয়।

ফারজাদ হাঁটতে হাঁটতে এক চায়ের দোকানের সামনে থামল। একটা কড়া লিকারের রং চা অর্ডার দিল সে। মনের ভেতরে ঝড় বইছে ভীষণ। চাকরি তো ছেড়ে দিয়েছে, এবার মা বোনকে খাওয়াবে কী? অন্য একটা চাকরি পাওয়া তো আর মুখের কথা না। চিন্তায় চিন্তায় অস্থিরতা বাড়ল তার। মাসের শেষের এত এত খরচ কী করে সামাল দিবে। একটা ভালো বেতনের চাকরি না পেলে তো এসব সে সামলে উঠতে পারবে না।

চা এসেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টিভির দিকে তাকাল। টিভিতে সংবাদ চলছে। আজকের ব্রেকিং নিউজে দেখল, একদল নারী পাচার চক্র ধরা পড়েছে, সাথে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু নারী। সাংবাদিক সেসব মেয়েদের দেখাচ্ছেন। ফারজাদ মনোযোগ দিল। কালকের ঐ মেয়েটাকেও দেখছে সে। নামটা মনে করল, হ্যাঁ হ্যাঁ, মিলি। ঐ তো মেয়েটা, একজন মহিলার পাশে চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। সে অবাক হলো বেশ, এক রাতের মধ্যেই সব ধরা পড়ে গেল! সাংবাদিক খবরে বলছেন, নারী পাচার চক্রের কয়েকজন সহযোগীকে ধরা গেলেও, এর মূল হোতা রয়েছে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাকে ধরা না অবধি এই তদন্ত চলতেই থাকবে। ফারজাদের তখন মনে হলো, এই মূল হতো আবার ঐ ওয়াদি নয়তো? সে চা’টা শেষ করে দ্রুত বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

_______

মৌমির খুশি যেন আর ধরছেই না। প্রিয়তাকে দেখে মারাত্মক খুশি সে। নাস্তা সেরে দুজন চায়ের কাপ সাথে বাগানে এসে দাঁড়িয়েছে। দিলরুবা বেগমও এলেন। প্রিয়তা বেশ হেসে হেসে মৌমির সাথে কথা বললেও চোখে মুখে তার দুশ্চিন্তার প্রগাঢ় ছাপ। দিলরুবা বেগম বুঝতে পারছেন বেশ। তিনি প্রিয়তার মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘কষ্ট পেও না, মা। আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না। ওয়াদি তার কৃতকর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করবে।’

প্রিয়তা অবাক চোখে চাইল। দিলরুবা বেগম সেই দৃষ্টি বুঝতে পেরে বললেন,

‘ফারজাদ সব বলেছে আমায়। তুমি তো ভীষণ সাহসী, তোমার জায়গায় আমি হলে কখনোই এসব করতে পারতাম না। এমন সাহসী’ই থেকো সবসময়। কঠিন থেকে কঠিন বিপদেও হাল ছেড়ে দিও না। মনে রাখবে, মানুষ যতটা ভয়ংকর, ততটাই নির্বোধ, শুধু এই বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা আলাদা সময়ে কাজ করে; আর তোমাকেও সেই সময়টাকেই কাজে লাগাতে হবে।’

প্রিয়তার বিষন্ন চিত্তে এক পশলা মেঘ জমল। বৃষ্টি পড়ার আগ মুহুর্তের ন্যায় চোখের কার্ণিশ ছেয়ে গেল তপ্ত জলে। দিলরুবা বেগম তার গালে হাত রেখে বললেন,

‘কেঁদো না। কাঁদলে শত্রুপক্ষ তোমায় দূর্বল ভাববে। দূর্বল হওয়া যাবে না; শক্ত হাতে, শক্ত মনে লড়াই করতে হবে।’

প্রিয়তা চোখ মুছল। বলল,

‘আপনি ভীষণ ভালো।’

মৌমি কিছু জানে না বলে, জানার আগ্রহ দেখাল। দিলরুবা বেগম বললেন,

‘পরে বলব সব। আপাতত ওকে নিয়ে ভেতরে যা। দুপুরের রোদ বাড়ছে।’

তারা ভেতরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ফারজাদ বাড়ি ফেরে। ফারজাদকে এই অসময় বাড়ি দেখে দিলরুবা বেগম একটু বেশিই অবাক হোন। জিজ্ঞেস করেন,

‘তুমি এসময়?’

ফারজাদ ভাবল, চাকরি ছাড়ার কথাটা মা’কে এখনই বলা যাবে না। তাই প্রসন্ন হেসে বলল,

‘বস আজ হাফ টাইম করে বাড়ি চলে গিয়েছেন, আমি আর বসে থেকে কী করব, তাই চলে এসেছি।’

যুতসুই জবাব পেয়েও মনে শান্তি পেলেন না দিলরুবা বেগম। কাল থেকেই ছেলেটার ব্যবহার তাঁকে ভাবাচ্ছে। এইটুকু তিনি আন্দাজ করতে পারছেন যে, সে অবশ্যই তাঁর কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু বুঝতে পারছেন না, কী সেটে।

ফারজাদ টিভি অন করতে করতে বলল,

‘আজকের খবর দেখেছেন, আম্মি?’

‘না তো। কেন, কী হয়েছে?’

ফারজাদ টিভি অন করে খবরের চ্যানেল লাগাল। বলল,

‘দেখুন, ঐ নারী পাচার চক্রের কিছু লোক ধরা পড়েছে। তবে, মূল হোতাকে ধরা যায়নি। আমার কী মনে হয় জানেন আম্মি, এই সবকিছুর পেছনে ঐ ওয়াদির অনেক বড়ো একটা হাত আছে।’

দিলরুবা বেগম চিন্তিত সুরে বললেন,

‘আমারও তাই মনে হয়। আহারে, মেয়েটার জন্য মায়া হয় আমার, এভাবে ছেলেটা ধোঁকা দিতে পারল!’

ফারজাদ কপাল কুঁচকালে দিলরুবা বেগম অপ্রস্তুত হাসলেন। বললেন,

‘তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।’

ফারজাদ ঘড়ি দেখে বলল,

‘হ্যাঁ, ফ্রেশ হয়ে আবার বের হতে হবে। থানা থেকে কল এসেছিল, উনাকে নিয়ে আবার একবার থানায় যেতে বলেছে।’

‘দুপুরে খেয়ে যেও তাহলে।’

‘আচ্ছা।’

_______

‘শালা, তোদের দিয়ে একটা কাজ যদি হতো।'(উর্দু)

‘ভাই, সব দোষ ঐ মেয়েটার।'(উর্দু)

‘এখন তোদের জন্য আমাকে ফাঁসতে হবে।'(উর্দু)

‘আপনি কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দেন, ভাই। এর আগেও একবার ধরা খেয়েছিল, কয়টা দিন পার হলে দেখবেন এমনিতেই সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।'(উর্দু)

‘আরে শালা, ঐ মেয়েটাকে আগে খুঁজে বের করতে হবে। এই মেয়ে আমার হাত ছাড়া হয়ে গেলে আমি পাগল হয়ে যাব, আমার এতদিনের পরিশ্রম সব শেষ হয়ে যাবে।'(উর্দু)

‘কিন্তু ভাই, ঐ মেয়েকে এখন কোথায় খুঁজে পাবেন?'(উর্দু)

‘যেখান থেকেই হোক বের করতে হবে। ওকে আমি
এক কোটির বিনিময়ে বিক্রি করেছি, আমি এই এক কোটি টাকা এখন কোনোভাবেই হাত ছাড়া করতে পারব না। কোনোভাবেই না।'(উর্দু)

চলবে…

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here