#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| দশম পর্ব |
৩ দিন পর আজ দেখা মিলল তিতিরের। তিতির কে দেখতে পেয়েই রাস্তার এপার থেকে জোরে ডেকে উঠলো ইরা। তিতির থমকে দাঁড়িয়ে খুঁজতে লাগল। ইরা হাত নাড়িয়ে দেখাল। চাঁপা শ্বাস ফেলল তিতির। ইরা হাত নাড়িয়ে এদিকে আসতে চাইলে তিতির তাকে না করে দিয়ে নিজেই পা বাড়াল। হাতে খুব জোরে একটা বারি মেরে বলল,
“কোথায় ডুব দিয়েছিল এতোদিন? তোর দেখা নেই কেন? কলেজেও যাচ্ছিস না শুনলাম!
“তোকে কে বলল?
“আয়াত বলল। গতকাল গিয়েছিলাম দেখা হলো ওর সাথে। গত তিন দিন ধরে নাকি কলেজে যাচ্ছিস না।
“হাম!
“এতো ক্লান্ত কেন লাগছে তোকে। কি হয়েছে?
“কিছুই হয় নি!
“তাহলে, আচ্ছা চল কোথাও বসি খানিকক্ষণ কথা বলি!
অতঃপর বড় বটগাছের নিচে বসল দুজন। ইরা ব্যাগ থেকে বাদাম বের করে তিতিরের দিকে বাড়াল। তিতির বাদাম হাতে নিয়ে মুখে দিল। কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে তার তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। ইরা বাদাম খেতে খেতে বলল,
“শুনলাম তুই নাকি টিউশনি করছিস?
“হুম!
“কাকে পড়াচ্ছিস!
“আমার এক বন্ধুর বোন কে। এবার মেট্রিক দেবে।
“ওহ কবে থেকে?
“হবে এই কয়েকদিন!
“মেয়েটা কি খুব সুন্দরী!
তিতির ইরার দিকে ফিরল। এতোক্ষণে দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকাল। ইরার চোখ দুটো স্থির। ইরার স্থির চোখ গুলোই অসাধারণ লাগে। তিতির পারলে ইরার এমন একটা স্থির মাখা মুখের ছবি এঁকে ঘরে টাঙিয়ে রাখতো। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে এই ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতো। ইরার বুক ধক ধক করছে তিতিরের উওর শোনার জন্য।
“মেয়েটা তোর থেকেও সুন্দরী!
ঢোক গিলল ইরা। হাসার চেষ্টা করে তিতিরের দিকে ফিরে বলল, আমি কি জিজ্ঞেস করেছি আমার থেকে সুন্দরী কি না।
তিতির হেসে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে বলে, “আমার ধারণা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটা তুই কিন্তু তাহিরা কে দেখার পর সেই ধারণা পাল্টে গেছে।
“ওহ আচ্ছা!
বলেই চুপ হয়ে গেলে ইরা। তিতিরের কেন জানি বেশ মজা লাগছে। সত্যি বলতে এমন কিছু না। তাহিরার মুখটা এখন অবদি ভালো করে দেখে নি তিতির। পড়ানোর সময় মাথা টা নিচু করেই রাখে সে। দরকার না পড়লে চোখ তুলে না। তবে তাহিরা যেমন’ই হোক না ইরা কে’ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে বলে মনে হয় তিতিরের। নিলু আপা এভাবে এভাবেই ওকে সাদা চামড়ার মেয়ে বলে ডাকে না।
হুট করেই দাঁড়িয়ে গেল ইরা। সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেল তিতির।
“কিরে চলে যাচ্ছিস নাকি?
“হুম,বাসায় যেতে হবে।
“এই তো এলি।
“কিন্তু এখন যেতে হবে।
“আচ্ছা আমিও যাবো চল একসাথে যাই!
অতঃপর দুজনে একসাথে বের হলো গেল। ইরার অস্বস্তি লাগছে, তিতিরের মুখ থেকে অন্য মেয়ের কথা শোনাটা ঠিক হয় নি। কিন্তু কথা টা তো সে নিজেই তুলেছিল। না ভুল হয়ে গেছে, বড্ড খারাপ হলো বিষয়টা। হঠাৎ তিতির বলে উঠল,
“আচ্ছা সেদিন তুই পাঞ্জাবির প্যাকেট টা আমায় দিলি কেন?
“রাখতে দিয়েছিলাম
“কার জন্য?
“কার আবার, আমার প্রিয় মানুষটার জন্য।
“আমার কাছে রাখার কি হলো?
“সে এখন এখানে নেই, যেদিন এখানে আসবে সেদিন এসে তোর থেকে প্যাকেটটা তোর থেকে নিয়ে যাবো। সাবধানে রাখিস ওটা।
“তোর কাছে রাখ না, শুধু শুধু আমায় কেন জড়াচ্ছিস।
“জড়াচ্ছি না। বাসায় রাখা সম্ভব না হলেই তোর কাছে রাখছি। কেন রাখতে পারবি না তুই, আমার বন্ধু হয়ে এতোটুকু উপকারী কি করবি না?
তিতির হেসে বলল, কেন করবো না অবশ্যই করবো। কিন্তু সেই প্রিয় মানুষটা এখন কোথায়?
ইরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, জানি না! ওই তো বাস চলে এসেছে। গেলাম আমি!
বলেই দৌড়ে বাসের দিকে চলে গেল। তিতির খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। অতঃপর নিজের পথের দিকে পা বাড়াল সে!
——–
“তুমি এই কয়েকদিন আসো নি কেন?
থরথর করে কেঁপে উঠলো শ্রেয়া। পেছন থেকে এই গলা ভেসে আসছে। সাহস হচ্ছে না পেছন ফিরে তাকানোর। আজ মায়ের শরীরটা ভালো না। তাই আসতে পারে নি। তাই বলে একা আসে নি। তিতির ভাইয়া এসে স্কুল গেটের কাছে দিয়ে গেছে। তাকে এক প্যাকেট বিস্কুট ও কিনে দিয়েছে। বলে দিয়েছে, তোর ছুটির সময় আমি আসতে পারব না। তুই একদম এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকবি না। লোকজন থাকতে থাকতে তাদের সাথে হাঁটা ধরবি। বুঝলি!
“আচ্ছা!
“কারো সাথে কোন কথা বলার দরকার নেই। শুনলাম সেদিন নাকি এখানে ঝামেলা হয়েছিল। এমন ঝামেলা আজ হলে কিন্তু ধারে কাছে যাবি না খবরদার!
শ্রেয়া মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল! অতঃপর ভাইয়ের কথা মেনে লোকজন থাকতে থাকতে তাঁদের সাথে করে চলে এলো। চায়ের দোকানের দিকে অবশ্য একবার তাকিয়েছিল কিন্তু মামুন কে দেখতে পায় নি। তার হাতের অবস্থা সম্পর্কেও একবার ভেবেছিল! কিন্তু বাড়ির গলির কাছে আসতেই একা হয়ে গেল সে। আর তখন’ই এই গলার স্বর পেল সে। ভয়ে তার আত্না শুকিয়ে যাচ্ছে। তার পুরো শরীর কাঁপছে। পেছন থেকে আবারো সেই কন্ঠ। নিম্নস্বরে বলে উঠল, “শ্রেয়া”!
ভয়ে তটস্থ শ্রেয়া। তবুও কেন জানি পেছন ফিরল সে। মামুন কে দেখে তার শরীর জমে গেল। সেদিনের ঘটনা মনে করতেই ভয়ে তার শরীর শিউরে উঠল। কিন্তু হঠাৎ এর মাঝেও মামুনের ঠোঁটের কোনে হাসি দেখল শ্রেয়া। খানিকটা অবাক ও হলো! মামুন কিছু বলার চেষ্টা করতে গিয়েও বলল না। হঠাৎ করেই দ্রুত সরে গেল সে। শ্রেয়া নির্বাক হয়ে গেল। এক পা এগিয়ে সামনে আসতেই তার মনে হলো পেছন থেকে কেউ আসছে। সাথে সাথেই পেছনে ফিরল শ্রেয়া। ফরহাদ কে দেখে থমতম খেয়ে বলল,
“ভাইয়া আপনি!
ফরহাদ হেসে বলল, তুমি এখানে যে। আমি তো তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম।
“আমার কাছে?
‘হুম, তিতির বলল যদি সময় হয় তাহলে যেন তোমাকে নিয়ে আসতে যাই, তাই এলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে আমার দেরি হয়ে গেল।
“না ভাইয়া, দেরি হয় নি চলুন।
“চলো। ক্লাস কেমন হলো?
“খুব ভালো।
“গরম পড়েছে অনেক, কোক খাবে একটা।
শ্রেয়া মাথা নাড়ল। ফরহাদ হেসে সামনের দিকে তাকাল। শ্রেয়া এই ফাঁকে পিছনে ফিরে তাকাল। মামুন কে দেখতে পেল সে। দূর থেকে তাকেই দেখতে পেল সে। মামুন কি তবে এই কারণেই দৌড়ে চলে গেল। এই কথা ভেবে কেন জানি মনটা হঠাৎ করেই খুব খারাপ হয়ে গেল।
—–
জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি শ্রেয়া আর ফরহাদ একসাথে আসছে। শ্রেয়া খুব কথা বলছে ফরহাদের সাথে। বলতে হবে লোকটা বেশ চালাক। এই কয়েকদিনের মাঝেই তিতির আর শ্রেয়ার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে। শ্রেয়া এখন তার কাছেও পড়তে যায়। মা ভাবছে, শ্রেয়ার টিউটর হিসেবে ফরহাদ কেই রাখতে।
তিতিরের সাথে প্রায়’ই ছাদে বসে গল্প করতে দেখা তাকে উনাকে। মাঝে মাঝে আমিও দেখি ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে। আমাকে দেখলেই আর্ধেক খাওয়া সিগারেট টা ছুড়ে ফেলে দেন। তবুও আমি সামনে যাই না। ফিরে আসি! আমার মনে হচ্ছে লোকটা কষ্ট পাবে। ভীষণ কষ্ট পাবে! শুধু শুধু এতো কিছু করছে হয়তো বুঝতে পারছে না এর পরিণাম কি হতে পারে!
আগামীকাল যাবো আবরারের সাথে দেখা করতে। আজ অনেকদিন হলো তার সাথে কথা হয় না। একবার টেলিফোনও করে নি ও। আমি টেবিলে বসলাম। সাদা কাগজে লিখতে শুরু করলাম,
প্রিয়তম,
আজ তোমাকে ভিন্ন কিছু লেখতে যাচ্ছি। রাগ করো না, আমার মনে হয় না এই চিঠি পড়ে তুমি রাগ করবে। তবুও ব্যতীক্রম অনেককিছুই ঘটে। তাই আমিও আজ সেরকমই কিছু লিখছি। তোমাকে বার বার বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছি, বলা হয় নি একটি ছেলের কথা। ছেলেটির সম্পর্কে তোমাকে বললে তুমি বলবে আমি তার সম্পর্কে একটু বেশিই বলছি বা একটু বেশিই জানি। তবুও আমি বলবো,বলতে ইচ্ছে করছে আমার। ছেলেটার নাম ফরহাদ! তাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম টিএসসি রোড থেকে খানিকটা পথ হাঁটার পথ মেইন রোড পেরিয়ে একটা গলির ভেতর। রোজ তাকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনে হতে লাগল ছেলেটা বোধহয় আমার জন্য’ই এখানে আসে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কখনো তার সাথে একটিবার দাঁড়িয়ে কথা বলি নি। একদিন হলো কি, ছেলেটা তার কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে এলো। সেদিন এসেই ছেলেটা ফেসে গেল। ধরিয়ে দিলাম তাকে আমি পুলিশের হাতে। বন্ধুদের বাঁচাতে গিয়ে সে মার খেলো। কিন্তু পরদিন হলো কি জানো? আমি ভেবেছিলাম হয়তো সে আর আসবে না, কিন্তু সে এলো। সাথে করে তিতিরের দেওয়া কলমটা নিয়ে এলো। লক্ষ্মীটি, জানো সেদিন প্রথমবার ফরহাদের সাথে আমি কথা বলেছিলাম। আমি জিজ্ঞেস অবদি করেছিলাম এখানে কেন আসে সে। কিন্তু ফরহাদ খুব ভিতু ধরনের লোক। কিছু বলতে পারে নি আমায়। একটা কথা বলি, রাগ করো না। কেন জানি আমি ফরহাদের সাথে তোমাকে খানিকটা গুলিয়ে ফেলি। তুমি যেমন উদাসীন সেও উদাসীন। তবে এটার কারণ ভিন্ন। তুমি আমাকে নিয়ে উদাসীন আর সে নিজেকে নিয়ে। ফরহাদ আমাকে বার বার তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় তোমার সাথে কাটানো আমার প্রথম দিনের কথা। আমি কিন্তু তাকে তোমার কথাও বলেছিলাম কিন্তু এরপরও সে এসে একটা কান্ড ঘটালো। আমাদের বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিল। কেন জানো? না থাক তোমাকে বলবো না। আমার মনে হয় এতো টুকু পড়ার পর তোমার হিংসে হচ্ছে। আজ আমার উদাসীন প্রেমিক খানিকটা হলেও আমার জন্য চিন্তা হচ্ছে। আমি চাই চিন্তা হোক, হওয়া দরকার! তাই নয় কি?
#চলবে….
[ ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল ]