#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৯
আশিক নিজেকে সামলে নেয়। তারবর আরিয়াকে ওই অবস্থাতেই আগলে নিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে দরজা লাগায়। অতঃপর আরিয়াকে সোজা করে দাঁড়া করিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেসা করে,
“কী হয়েছে, আরু? তুমি হঠাৎ এরকম করছো কেন? কেউ কি কিছু বলেছে?”
আরিয়া মাথা নিচু করে না বোধক মাথা নাড়িয়ে চুপ করে আছে। তাতে যেন আশিকের চিন্তা আরও বাড়লো। সে আরিয়ার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ উঁচু করে ফের শুধায়,
“কী হয়েছে বলো না? তুমি এমন চুপ করে থাকলে তো আমার চিন্তা বাড়বে।”
আরিয়া বেড সাইড টেবিল থেকে প্রেগনেন্সি কিটটা এনে আশিকের হাতে দেয়। আশিক কিটটা দেখেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার চোখ-মুখের অবস্থা দেখে আরিয়া ধারণা করতে পারছে না, আশিকের মনে কী চলছে? আরিয়া বিছানায় বসে বলে,
“আমরা দুজনেই এখনও স্টুডেন্ট। বিয়েটাও হয়েছে একটা কাহিনীর মাধ্যমে। তুমি বিয়ের জন্যও প্রিপেয়ার ছিলে না, এখন নিশ্চয়ই বাচ্চার জন্যও প্রিপেয়ার না। সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ না, আমি জানি। আমি নিজেও বুঝতেছি….”
আরিয়ার কথার মাঝেই আশিক বলে উঠে,
“কতো কিছু গুছাতে হবে। তোমাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। এই তুমি বাড়ি এসে কিছু খেয়েছ? চোখ-মুখ ফ্যাকাশে লাগছে।”
আরিয়া অবাক হয়ে আশিকের মুখপানে চেয়ে আছে। আশিক তবে মেনে নিলো? আরিয়াকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে আশিক এগিয়ে আসলো। অতঃপর হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে আরিয়ার গালে হাত দিয়ে বলল,
“টেনশনে খাওনি তাই না? একটু বসো, আমি খাবার নিয়ে আসছি। এই সময় এতো কেয়ারলেস হলে হয়? একটু নিজের খেয়াল রাখতে হবে তো। তুমি একটু রাখবে, বাকিটা আমি রাখব।”
বলতে বলতে আরিয়ার দুই গালে সামান্য বাচ্চাদের মতো টেনে দিয়ে উঠে গেলো। আরিয়া সেখানেই অবাক হয়ে বসে আছে। আশিক এতো সহজে মেনে নিবে তা নিয়ে তার সন্দেহ ছিলো। যতোই হোক, এখনও গ্রাজুয়েশন শেষ করেনি। অজান্তেই আরিয়া হেসে ফেলল। জলদি করে বিছানা থেকে ফোন উঠিয়ে নিজের মাকে কল লাগালো।
_____
আর্শি, সোহা ও লিসা অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেছে। সোহার মন খারাপ খুব। কারণ রিক আজ তাকে নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিট করিয়েছে! রিক বুঝতে পেরেছিল, সোহা তার প্রতি মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই সোহাকে বুঝাতে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে সাথে করে নিয়ে এসেছিল। সোহা এখন মন খারাপ করে ফ্রেশ না হয়েই একদিকে মুখ করে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। আর্শি ও লিসা ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারলো। লিসা বলল,
“সি রিয়েলি ব্রোকেন। টাইম উইল হিল হার।”
“ইয়াহ।”
দুজনেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। আর্শি কিনে আনা ফ্রোজেন ফুডগুলো ভাজতে কিচেনে যায়। রান্না করার এক পর্যায়ে আর্শির মনে পড়ে তার শাশুড়িকে কল করার কথা। সে লিসাকে ডেকে একটু রান্নার দিকটা দেখতে বলে কিচেন থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে যায় কল করতে। মিসেস সন্ধ্যা তখন নেটে না থাকাতে আর্শি ফিরে আসে। ভাবলো পরে কল করবে।
______
আরিয়ার প্রেগনেন্সির খবর শুনে মিসেস আশালতা বেজায় খুশি। তিনি তো এই রাতের বেলাতেই আরিয়ার শ্বশুরবাড়ি যাবেন বলে মনস্থির করেছিলেন। অতঃপর স্বামী ও ছেলের কথা শুনে আগামীকাল যাবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু এখন থেকেই মেয়ের পছন্দের সবকিছু রান্না করবেন বলে কাজে লেগে পড়েছেন।
আরিয়ার খবরটা পেয়ে মিসেস নেহা ও মিস্টার হাসানও বেশ খুশি। তারাও দাদা-দাদী হবেন। খবরটা এখনও অবধি নাহিদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। খাবার টেবিলে আরিয়া বাদে সবাই উপস্থিত। তখনি মিসেস নেহা কথাটা তুললেন।
“শোন আশিক, কাল একবার আরিয়াকে নিয়ে হসপিটালে ডাক্তার দেখিয়ে আসিস। সব নরমাল কী-না, কোনো কম্পলিকেশন আছে কী-না জানা যাবে।”
আশিক খেতে খেতে মাথা নাড়ায়। তখন মুশফিকাও বলে উঠে,
“মা, আমিও সাথে যাই? আশিক একা পারবে? প্রথমবার বলে কথা। দুজনেই নার্ভাস থাকবে। সাথে আরেকজন থাকলে ভালো হয় না?”
মিসেস নেহা খুশি হলেন। ইদানীং উনার কাছে মুশফিকাকে ভালোই লাগছে। স্বামীর বলা চরিত্রের সাথে এই মুশফিকার মিল দেখছেন না। মানুষ বদলায়, কথাটা তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বললেন,
“হ্যাঁ যাও। ওরা দুজনই ছোটো। এসব ব্যাপারে খুব একটা কিছু বুঝবে না। তুমি সাথে গেলে ভরসা পাবে।”
নাহিদ খেতে খেতে সবার দিকে একবার করে চোখ বুলাচ্ছে। সে সবার আরিয়াকে নিয়ে এতো কেয়ারের কারণটা ঠিক ভাবে ধরতে পারছে না। তখন মিস্টার হাসান বলে উঠেন,
“তুমিও সাথে যাও, নেহা। যাকে ভরসা করে পাঠাচ্ছো, তারও তো এসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই। তিনজনেই এসব বিষয়ে অনভিজ্ঞ। তুমি অভিজ্ঞ, সাথে গেলে আরও সাহস পাবে। বাড়িতে প্রথম নাতি-নাতনি আসতে চলেছে বলে কথা!”
নাহিদ এবার থমকালো। মুশফিকার দিকে তাকায় তো একবার মায়ের দিকে, তো আরেকবার আশিকের দিকে। মিস্টার হাসান সেটা লক্ষ্য করে বলেন,
“এভাবে তাকাচ্ছো কেন? তুমিও জেঠা হচ্ছো।”
নাহিদ অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“আরিয়া প্রেগন্যান্ট?”
মিসেস নেহা বললেন,
“হ্যাঁ। প্রেগনেন্সি কিট দিয়ে টেস্ট করে জেনেছে। কালকে মেডিকেল টেস্ট করলে একদম শিউর হওয়া যাবে।”
নাহিদ আবার খাওয়া শুরু করলো। তৎক্ষণাৎ কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। খাবার টেবিলে উপস্থিত সবাই কিছুটা অন্যরকম দৃষ্টিতে চাইলো। নাহিদের খাওয়া প্রায় শেষের দিকেই ছিল। সে খাওয়া শেষ করে উঠে যেতে যেতে আশিককে বলল,
“কংগ্রাচুলেশনস। বেস্ট অফ লাক।”
অতঃপর উপরে উঠে চলে গেলো। নাহিদ যেতেই মিসেস নেহা বললেন,
“ও মেনে নিতে শুরু করেছে। যাক ভালো লাগছে।”
মুশফিকা বাদে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও, মুশফিকা মনে মনে হাঁসফাস করছে। নাহিদের পরিকল্পনা তো সে জানে!
______
আর্শির কাছেও আরিয়ার খবরটা পৌঁছে গেছে। আরিয়াই কল করে বলেছে। আর্শি তো মহা খুশি। তার ছোট্টো বোনটা কী-না মা হতে চলেছে! তার খুশির তুলনা হয় না। আরিয়া কিঞ্চিত মন খারাপ করে বলে,
“আপু, ভেবেছিলাম আমি আগে খালা হবো। তোমার বাচ্চাকে নিয়ে কতো প্ল্যান ছিল আমার। কিন্তু দেখো তুমিই আগে খালা হচ্ছো। আর আমার খালা হওয়ার কোনো লক্ষণই আমি দেখতে পাচ্ছি না। এটা কি ঠিক বলো?”
আর্শি হেসে উঠলো। বলল,
“তোর দুলাভাই থাকে সুদূর কানাডায়। আর আমি থাকি ইটালিতে। তোর খালা হতে দেরি আছে।”
“তাই বললে হবে? তোমাদের এতো রোমান্টিক একটা হা*নিমু*ন ট্যুর ছিল। আর আমি খালা হবো না? নট ফেয়ার!”
আর্শি কিঞ্চিত রাগ দেখিয়ে বলল,
“চুপ! বড়ো বোনের সম্পর্কে এভাবে বলে? দিন দিন তুই ঠোঁ*টকা*টা স্বভাবের হয়ে যাচ্ছিস!”
আরিয়া সেসবে পাত্তা দিলো না। বলল,
“সে যাই হই। আমার ছেলের সাথে তোমার মেয়ের বিয়ে দিব! বুঝলে?”
আর্শি অবাক হয়ে বলল,
“তোর ছেলেই এখনও দুনিয়াতে আসলো না! আর তুই বিয়ের চিন্তা করিস! এই তুই ফোন রাখ। অনেক রাত হয়েছে।”
“না না। তুমি আগে বলো।”
“ঘুমা বোন। মানুষের ভাগ্য কি আমরা বলতে পারি? যা ভাগ্যে আছে হবে। ঘুমা। রাখছি।”
“আচ্ছা।”
আর্শি মুচকি হেসে বিদায় জানিয়ে কল কে*টে দেয়। বাংলাদেশে এখন রাত এগারোটা। তাহলে আজকে আর তার শাশুড়ি ও ননদের সাথে কথা বলা হলো না। এতো রাতে কল করাটাও নিশ্চয়ই ভালো দেখাবে না। তাহলে আগামীকাল সকালেই কল করবে। স্নিগ্ধা আপু কেন তার উপর রাগ, তা সে নিজেও জানে না। পূর্বে কোনো ভুল করেছে কী-না যে এর জন্য রাগ? তা তো তার জানতে হবে। ফুঁস করে ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে খানিক হাসলো। বোনের কথাগুলোই তার এই হাসির কারণ।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।