প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ১১(বর্ধিতাংশ)

0
627

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১১(বর্ধিতাংশ)

অফিসে’র কাজেই ইদানীং বুদ হয়ে থাকছে আদনান। যথাসম্ভব চেষ্টা নিজেকে শান্ত রাখা। কাজে কাজে ব্যাস্ত রাখা। নিজের ভেতরের কষ্ট কাউকে দেখাতে ইচ্ছুক না ও। আদনানে’র নিজের উপর ও মাঝেমধ্যে ঘৃণা জন্মায়৷ মনে হয় যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। আদনান এটার ই যোগ্য। এই কষ্ট, দুঃখ, বুকের চিনচিন ব্যাথা আর রাতে ঘুম না আসা সকল কিছুর জন্য দায়ী আদনান নিজেই। কতটাই না ঘৃণিত তার ভালোবাসা। নিজের আপন বড় ভাইয়ের ভালোবাসা’র মানুষ’কে ভালোবাসাটা অবশ্যই পাপ। জেনে শুনে আদনান সেই পাপে পা দিয়েছিলো। ফলাফল সরুপ নিজেই দগ্ধ হচ্ছে তার অনলে। ভালোবাসা’র প্রত্যেকটা স্ফুরণ তাকে জ্বালিয়ে মা’রছে রোজ রোজ। আদনান জানে না কিভাবে মুক্তি মিলবে। আদৌ কি কোনদিন ভুলতে পারবে তোঁষা’কে? ল্যাপটপে চলমান আঙুলগুলো নিমিষেই থেমে যায় আদনানে’র। এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে ফকফকা স্ক্রিনটা। কল্পনায় হঠাৎ ই যেন ভেসে উঠে কিছুদিন আগেই ঘটনা যখন হুট করে বাবা-চাচা তার রুমে প্রবেশ করে।

~তুরাগ আর তুহিন আদনানে’র রুমে আসতেই আদনান ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করে,

— কিছু কি বলবে আব্বু?

তুরাগ একবার ছোট ভাই’কে দেখে। তুহিন কিছু না বলে কাউচে বসতেই তুরাগ ও বসেন। ইশারায় ছেলেকে বসতে বলেন। আদনান ভ্রু কুঁচকায়। এমন শান্ত আচরণ বাবা-চাচ্চুর তার হজম হয় না। জিজ্ঞেস করে,

— চাচ্চু কিছু কি হয়েছে? আমার রুমে আসতে হলো যে? আমাকে ডাকলেই পারতে।

গলা খেঁকান তুরাগ। তুহিন ঠান্ডা মাথায় বলেন,

— গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো আদনান।

— এভাবে কেন বলছো? বলো কি কথা।

এবার তুরাগ কথা বাড়ালেন না। ছেলের পানে তাকিয়ে কিছুটা আদেশের ভঙ্গিতে বললেন,

— পুতুল’কে বিয়ে দিতে চাইছি।

আদনানে’র বুকে যেন ধাক্কা লাগে একটা। ও জানে এমনটাই হওয়ার কথা। তোঁষা’র সাথে তো আরহামে’র বিয়ে সেই ছোট থেকেই ঠিক করা তাহলে কেন আজ আদনানে’র খারাপ লাগা কাজ করছে? মাথা নিচু করেই আদনান বললো,

— হু। আমার দায়িত্বগুলো বলে দিও। সামলে নিব আমি। ভাই কি আসছে এর মধ্যে?

তুরাগ যেন খলবলিয়ে উঠলেন,

— কোথায় আসবে ঐ পাগল? তুমি বিয়ে করবে পুতুল’কে। আর কোন কথা চাইছি না।

আদনান এক মুহুর্তের জন্য থমকে যায়। মাত্র কি বললো ওর বাবা? পুতুল’কে বিয়ে করবে আদনান? তাহলে আরহাম? সে এসে যদি এমন দেখে তখন কি করবে?
এমনটা না আদনান রাজি নয় বা কিছু। তবে মুহুর্তেই তার মনে হয় এটা মোটেও ঠিক হবে না। নিজের আপন বড় ভাইয়ের ভালোবাসা’কে বিয়ে করা?
তবে বাবা-চাচা’র কথা আর মনের গহীনে থাকা তোঁষা’র জন্য এক অপ্রকাশিত অনুভূতি তাকে জেড়া করলো। আদনান প্রকাশ করে না নিজের অনুভূতি তবে রাজি হয়ে যায়,

— পুতুলে’র জন্য যেটা ভালো হয় তাই করো।

তুরাগ ছেলের কাঁধ চাপড়ে দেন। তুহিন আদনানে’র হাত ধরে বললো,

— বাবা আমার মেয়েটা অবুঝ। তুই তো জানিস ই। ওকে একটু গুছিয়ে নিও। একটু জেদী, মানিয়ে নিও।

আদনান জড়িয়ে ধরে ওর চাচ্চু’কে। ওর মনে যে কতটা আবেগ জমানো ছিলো তা প্রকাশ করতে অক্ষম হয় আদনান। উপচে পড়া সকল অনুভূতি’র জোয়ারে ভুলে বসে কতটা গর্হিত কাজ করতে যাচ্ছে সে। আদৌ কি তোঁষা রাজি কি না তাও একটাবার তার চিন্তায় আসে না।

তোঁষা যেদিন যখন কলেজ থেকে ফিরলো তখন মা তাকে খুব আদর করে আগলে নেন। নিজ হাতে খায়িয়ে দিতে দিতে বলেন,

— তোঁষা, আমরা বড়’রা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি তুমি বড়দের সম্মান করো।

তোঁষা খেতে খেতেই উত্তর করে,

— আমিও আশা করব তোমরা নিজেদের সম্মান বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছো।

মেয়ের কথার ভঙ্গিতে শুনে ওর মা বুঝেন ততটা সহজে তোঁষা রাজি হবে না। না চাইতেও বারংবার তাকে নিজেকে শক্ত খোলসে আবৃত্ত করতে হয়। না চাইতেও তোঁষা’র প্রতি কঠোর থেকেও কঠোর হতে হচ্ছে ইদানীং। তোঁষা’কে খায়িয়ে মুখ মুছে দিয়ে ওর বরাবর বসেন তিনি। ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে দিতে দিতে অবলীলায় জানায়,

— তোমার বিয়ে ঠিক করেছি আমরা। তুমি যেমন পছন্দ করো ঠিক তেমনই ছেলে। উচ্চতা,চেহারা সব এক। শুধু পেশা ভিন্ন।

— মানে?

— আদনান।

তোঁষা যেন অগ্নিশর্মা হয়ে যায় মুহুর্তে। চিরবিরিয়ে উঠে ওর মস্তিষ্ক। দাঁড়িয়ে গিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,

— পাগল হয়েছো? পাগল তোমরা? অসুস্থ মানুষ।

বলেই দৌড়ে থেকে বের হয়ে আদনানে’র কাছে যেতে নিলো তোঁষা। সবাই নাহয় পাগল হয়েছে তাই বলে কি আদনান ভাই ও পাগল হলো? সে কি জানে না তোঁষা আরহাম’কে ভালোবাসে? জানে। সবাই জানে। তবুও এইরকম একটা কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাবে সে কিভাবে রাজি হয়? আদনানে’র রুমে এই প্রথম কোন নক না করেই তোঁষা ঢুকে পড়াতে কিছুটা চমকায় আদনান। ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তোঁষা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,

— নিজের বড় ভাইয়ের হবু বউ’কে বিয়ে করতে চাইতে লজ্জা করলো না আপনার আদনান ভাই? বিবেগে বাঁধলো না একটুও? কতটা জঘন্য আপনি! আমি জানাব আরহাম ভাই’কে।
চেহারা এক হলেই মানুষ এক হয় না৷ চরিত্রহীন লোক আপনি…..

চড় খেয়ে তব্দা খেয়ে রইলো তোঁষা। ওর মা ওর মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে নিতে বললো,

— মুখ সামলা তোঁষা। তোর বিয়ে আমি আদনানে’র সাথেই দিব। দেখি কে থামায় আমাকে।

তোঁষা মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা বাবা’র কাছে যায়। তুহিন বুঝে মেয়ে’কে। আদরে তোঁষা’কে বুকে টেনে নিতে চাইলেই তোঁষা চিল্লিয়ে উঠে। তুরাগ আর চাচি বের হতেই তোঁষা সবার সামনে হুমকি দিয়ে বলে,

— আমাকে জোর করছো তাই না? আমি ই যদি না থাকি তখন কাকে নিয়ে এসব নিয়ে? আমার লা’শকে দিও বিয়ে।

“লা’শ” শব্দটা কানে বাজে উপস্থিত পাঁচজনের কানে। ওর চাচি দৌড়ে এসে তোঁষা’কে ঝাপ্টে বুকে চেপে ধরেন। তোঁষা’র ভালো লাগে চাচি নামক মানুষ’টাকে। মনে হয় আরহাম ভাই কাছে তার। এই নারী’র নাড়ি নেড়া ধন তার আরহাম ভাই। চাচি ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিজের সাথে নিতেই তুরাগ তিরিক্ষি ভাবে আদনান’কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— বিয়ে হওয়ার পরপর ই নাতি নাতনি চাই আমার আদনান। নিশ্চিত আরহাম এতটাও নীচে নামবে না যে নিজের ভাইয়ের সংসার ভেঙে তোঁষা’কে নিয়ে যাবে। বাচ্চা থাকলে সুবিধা হবে। আরহাম তখন কিছু করতে পারবে না।

আদনান শুনলো। বুঝলো। ও জানে কেন ওর সাথে তোঁষা’র বিয়ে দিতে চাইছে সবাই। সবাই ভাবছে আরহাম আর যা ই করুক না কেন নিজের ভাইয়ের বউ এর দিকে নজর দিবে না বা ভাইয়ের ক্ষতি করবে না। সেখানে বাইরের কারো সাথে তোঁষা’র বিয়ে দিলে আরহাম হয়তো খু’ন করতেও পিছু পা হবে না। তাই তো শেখ বাড়ীর সকলে মিলে পরিকল্পনাটা করলো। আদনান সুযোগ নিলো। চাইলো তোঁষা’কে। তবুও যখন ও প্রশ্ন করলো,

— তোঁষা কোনদিন মানিয়ে নিবে না আমাকে। তখন? একটা বাচ্চা, একটা সংসার, একটা বিয়ের কথা হচ্ছে এখানে?

তখনই উত্তর করে তোঁষা’র মা,

— মেয়ে মানুষ। যে পাত্রে ঢালবে তার আকার ই ধারণ করবে। আমার মেয়ে। চিনি আমি। একটু আদর পেলেই গলে যাবে।

আদনান কথা বললো না। তার খুব করে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো,”তাহলে কেন পুতুল’টাকে আদর দিয়ে বুঝিয়ে ও আরহাম ভাই থেকে আগলে রাখলেন না?”

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here