#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤
#পর্বঃ ২❤
সূর্য ভাইয়া! উনি এখানে কি করছেন? কাল রাতে তো বলতেও শুনেছিলাম আজকে বাহিরে আসবেন না। এমনকি অফিসেও যাবেন না। তাহলে?
ভাবনার মাঝেই কানে এলো কারো তীক্ষ্ণ কন্ঠ….
একটি ছেলে: এই সালা গাড়ি থামানোর আর জায়গা পেলি না? রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামিয়েছিস? একটু হলেই তো গাড়ির নিচে চাপা পড়তাম। সালা… ( প্রচন্ড রেগে)
সূর্য এবার মুখ খুললেন।
সূর্য : অনেক বলেছেন ভাই। এবার আমি বলি। কি বলেন? ( ভ্রু নাচিয়ে)
ছেলেটি: সামনে থেকে সর সালা। তোর কথা পরে শুনব। এখন তোর কথা শোনার সময় নেই। এখন তো আমরা আমাদের কাজে ব্যস্ত।
কথাটা বলে সূর্য ভাইয়ার পাশ দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে নিলে উনি আমার ওপর হাত টেনে ধরেন। খুব শান্ত গলায় বলেন….
সূর্য : এতো সালা সালা করছেন কেন ভাই? আপনি আমার কোন জন্মের দুলাভাই?
পাশ থেকে আরেকটি ছেলে বলে ওঠে…..
দ্বিতীয় ছেলেটি: আমি বলছি। আমরা সবাই তোর এই জন্মের দুলাভাই। এবার মেয়েটাকে ছাড়। ( দাঁতে দাঁত চেপে) তোরও কি লাগবে নাকি ওকে? তাহলে আগে আমরা নিয়ে যাই তারপর তোকে দিব তোর যতদিন ইচ্ছা তুই……
ছেলেটি আর কিছু বলতে পারল না। সূর্য ভাইয়া খুব জোরে একটা ঘুষি দিল ছেলেটিকে। তা দেখে বাকী ৩ জন এগিয়ে আসে। সূর্য ভাইয়া সবাইকে মারছে। আমি ওখানেই থম মেরে দাঁড়িয়ে আছি। সূর্য ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে….
সূর্য : আলো গাড়িতে গিয়ে বস।
আমার কোনো ভাবাবেগ না দেখে ধমকে উঠেন উনি।
সূর্য: কি বলেছি শুনিস নি? ( ধমক দিয়ে)
ওনার ধমকে চমকে উঠি আমি। কিন্তু গাড়িতে গিয়ে বসি না। খুব ভয় করছে। শরীরে শক্তি লাগছে না একটুও। ওনার চোখমুখে রাগের আভা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে উঠেছে। আমি কখনো উনাকে এতোটা রাগতে দেখিনি। এমুহূর্তে ছেলেগুলোর থেকে উনাকে আমার বেশি ভয় লাগছে। ভাবনার মাঝেই চেঁচিয়ে উঠলেন উনি…..
সূর্য : তোদের লজ্জা করেনা মেয়েদের সাথে এতোটা বাজে বিহেব করতে? ওরা আমাদের মায়ের জাত। মাকে ছাড়া কখনোই আমরা দুনিয়ায় আসতে পারতাম না। আমাদের উচিত এই মায়ের জাতকে স্রদ্ধা করা সম্মান দেয়া। আর তোরা? ছিঃহ,, মানুষ এতোটা নিচু মেন্টালিটির কি করে হয়?( ওদেরকে মারতে মারতে)
প্রথম ছেলেটি: ভাই আমাদের ভুল হইছে। প্লিজ আমাগোরে ছাইড়া দেন। আর হইব না।
সূর্য : তোদেরকে যেতে দিব? লাইক সিরিয়াসলি? হাহাহা,, কখনোই না। ওর যায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলেও ভেবে দেখতাম। কিন্তু তোরা ভুল জিনিসে চোখ দিয়েছিস। আর ভুল করলে তো তার মাশুল অবশ্যই দিতে হবে তাই না? ( শয়তানি হাসি দিয়ে)
কথাটা বলেই পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন দিলেন….
সূর্য : হ্যালো কই তোরা? আমি একটা লোকেশন দিচ্ছি ইমিডিয়েটলি এখানে চলে আয়। মনে রাখবি ১০ মিনিটের মধ্যে এখানে দেখতে চাই তোকে।
এইটুকু বলেই ফোনটা কেটে দিলেন উনি। ওপর পাশ থেকে কি বলেন কিছুই শুনতে পেলাম না।
আমি এখনো একইভাবে দাঁড়িয়ে আছি। কি বলব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সত্যি বলতে গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। উনি ছেলেগুলোকে এতোই মেরেছে যে ওরা উঠে পালাতে পর্যন্ত পারছে না। উনি কি মানুষ নাকি অন্যকিছু? কেউ কাউকে এভাবে মারে? ছেলেগুলো যদি মরে যায় তখন কি হবে? আচ্ছা উনি এতটা রেগে যাওয়ার কারণ কি? শুধুই উনার কাজিন বলে?
♥
প্রায় ১৫/২০ মিনিটের মাথায় রোহান ভাইয়া, রাজু ভাইয়া আর রাহুল ভাইয়া এলো। ওনারা সূর্য ভাইয়ার ফ্রেন্ড। আর রোহান ভাইয়া বেস্ট ফ্রেন্ড।
সূর্য : এতোক্ষণ লাগে আসতে? জাহাজে করে আসছিলি নাকি উড়োজাহাজে? ডাফার!
রোহান ভাইয়া: আচ্ছা দোস্ত সরি। এবার বল কেন ডেকেছিস? আর ওরা কারা? ওদের এই অবস্থা কেন? ( অবাক হয়ে)
সূর্য : সরি ফরি পরে। এতো কোশ্চেন কেন করিস তুই? কারা কি এসব পরে। আগে ওদের কি করবি কর।( রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে)
রোহান ভাইয়া : কেন কি করেছে ওরা?
সূর্য : সেটা ওদেরকেই জিজ্ঞেসা কর। কিন্তু আমার সামনে থেকে এই মুহূর্তে যদি ওদেরকে নিয়ে যা। তা নাহলে আমি ওদেরকে খুন করে ফেলব।
কথাটা বলেই সামনের ছেলেটাকে আবার একটা লাথি দেয়। ওই ছেলেটাই আমার হাত ধরেছিল। সামান্য হাতটাই ধরেছে এতেই এতো মারার কি আছে? আশ্চর্য! ছেলেগুলোকে এতো মেরেছে। বাঁচবে নাকি সন্দেহ। তাও নাকি উনার রাগ কমছে না। কি রাগরে বাবা। অদ্ভুত! আর দাঁড়াতে পারলাম না। চোখের সামনে সব আস্তে আস্তে ঘোলাটে হয়ে আসছে। শরীরের ভর ছেড়ে দিলাম। মাটিতে পড়ার আগেই কেউ যেন আমাকে ধরে ফেলল। তারপর কি হলো আর কিছুই বলতে পারছি না।
★★ কারো ডাকে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালাম। চেখ খুলে বোঝার ট্রাই করলাম কোথায় আছি। কিছুক্ষণের ভিতরই বুঝতে পারলাম আমি গাড়িতে আছি। সূর্যই আমাকে ডাকছেন। এখন উনার চোখমুখে একটুও রাগ নেই। খুবই স্বাভাবিক। বাট খুব ঘামাছেন উনি। অথচ এসি চলছে। হয়তো টেনশনে আছেন কিছু নিয়ে। আমার ভাবনার মাঝেই ডেকে উঠলেন উনি…..
সূর্য : তুই ঠিক আছিস আলো? আমি কতোটা ভয় পেয়েছি জানিস?
আমি:……….
সূর্য : কিছু বলছিস না কেন? কি করছিলি এই রাস্তায়? এখানে তোর কি হ্যাঁ? সেই ১২ টায় তিথির বাসা থেকে বেড়িয়েছিস। এখন তিনটে বাজে।
আমি এখনো চুপ।
সূর্য : একটাবারও কি আমাদের কথা ভেবেছিস? যদি আজকে তোর কিছু হয়ে যেত তাহলে আমাদের কি হতো? আর কখনো এমন করিস না প্লিজ। আমরা সবাই তোকে ভীষণ ভালোবাসি। তোকে আমরা হারাতে পারবো না। তুই না থাকলে আমি কার পেছনে লাগব? কার সাথে ঝগড়া করব বল? প্লিজ…( করুন স্বরে)
উনার বলা প্রতিটা কথা মন ছুয়ে যাচ্ছে আমার। কতটা কাকুতিমিনতি জড়ানো কথাগুলো। কতোটা আবেগ জড়িয়ে আছে কথাগুলোতে। এবার আর আর আমি চুপ থাকতে পারলাম না। ফুপিয়ে উঠলাম আমি। কেঁদেই যাচ্ছি। কেন কাঁদছি জানি না। তবে খুব কান্না পাচ্ছে। খুব! আমাকে কাঁদতে দেখে উনি বললেন…
সূর্য : আরে আরে তুই কাঁদছিস কেন? আমি তো বকি নি। আচ্ছা বাবা সরি,, আর বকবো না। এইতো কান ধরলাম। তুই তো জানিস তোর কান্না সহ্য হয় না। ছোট থেকে কখনো তোকে কাঁদতে দিই নি।
এইটুকু বলেই একহাতে জড়িয়ে নিলেন আমায়। একহাতে ড্রাইভ করছেন আর অন্যহাতে আমায় জড়িয়ে আছেন। খুব ভালো লাগছে। খুব শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব শান্তি আছে এখানেই। ওনার হার্ট খুব ফার্স্ট বিট করছেন। সেই আওয়াজটাও খুব কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু এই শান্তিটা তো ক্ষনস্থায়ী। উনি তো আমার নন। অন্য কারো উনি। কথাগুলো ভাবতেই আরো কান্না পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে কেঁদে সেই চোখের জলে উনাকে ভাসিয়ে দিই। ভাসিয়ে দিই সব কষ্ট,সব দুঃখ, সব যন্ত্রণা। ভাসিয়ে দিই ভালোবাসা নামের এই স্বার্থপর শব্দটাকে।
♥
রাত ৮ টা বেজে ১০ মিনিট। সাড়া বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আপু ব্লু রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে। দেখতে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে। একদম পরীর মতো। আমি পড়েছি কালো রঙের একটা লেহেঙ্গা। আপুর জন্য ড্রেস কেনার সময় নাকি আমার জন্যে এটা কিনেছে আপু চয়েজ করে৷ সাথে পড়েছি মেচিং চুরি, চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। আপুর জোড়াজুড়িতেই এতো সাজ। আপু আর আমি দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম ঠিকই। কিন্তু আমার দুটি চোখ তো রীতিমতো সেই চিরচেনা মুখটি খুঁজে চলেছে। আজই তো লাস্টবারের মতো দেখব। আজকের পর তো আর কখনো দেখার অধিকার থাকবে না। যদিও এখনো নেি। কিন্তু বিয়েটা তো হয়নি তাই দেখতে পারব। কিন্তু বিয়েটা হলে নিজেরই বোনের স্বামীর দিকে কোন মুখে তাকাবো?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো সাথে চাপা কষ্ট। দরজার দিকে তাকাতেই সেই কাক্ষিত মুখটি দেখতে পেলাম। এতোক্ষণে যেন আমার অপেক্ষার শেষ হলো।
মাথায় কারো চাটির আঘাতে ঘোর কাটলো। সূর্য ভাইয়া আমার ঠিক সামনে দাঁড়ানো। কালো এবং নীলের সংমিশ্রণে পাঞ্জাবি, ডানহাতে ব্রান্ডের ঘড়ি। মুখে সেই পাগল করা টোল পড়া হাসি। এই হাসিতে আমি শতবার কোটিবারও মরতে রাজি।
সূর্য : এই ফাজিল মেয়ে কি দেখছিস এমন করে? ডাকছি শুনিস না?( মাথায় চাটি মেরে)
আমি: হ্যাঁ,,ককই ককি দেখলাম? কিচ্ছু নাহ।( থতমত খেয়ে)
সূর্য : তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? হবু দুলাভাইয়ের দিকে কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকে ফাজিল মেয়ে?
ওনার কথাটা যেন আমার বুকে গিয়ে বিধল। চোখের কোনে হাজারও বিন্দু বিন্দু জল ভীর ড়মিয়েছে যেকোনো মুহূর্তেই তাড়া স্রোতোধারা নদীর ন্যায় বয়ে চলবে। কোনোমতে নিজোে সামলে নিয়ে ধরা গলায় বললাম…..
আমি: সরি ভাইয়া…
সূর্য : আরে বোকা আমি তো মজা করছিলাম। এনিওয়ে তোকে এই রঙটা কে পড়তে বলেছে? একদম পেতনির মতো লাগছে। যেকোনো মুহূর্তে যেকেউই তোকে দেখে হার্ট অ্যাটাক করবে। ( দুষ্টু হাসি দিয়ে)
আমি: আচ্ছা তাহলে আমি চেন্জ করে আসি।
কথাটা বলে চলে যেতে নিলে উনি আমার ডান হাতটা টেনে ধরে বলেন….
চলবে
{সরি ছোট করে দেওয়ার জন্য এবং একদিন অপেক্ষা করানোর জন্য।। নেক্সট পার্ট থেকে ইনশাল্লাহ বড় করে দিব।। এবং রেগুলার দেওয়ার ট্রাই করব।। ধন্যবাদ ❤❤}