প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১২

0
305

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১২
__________________________

জয়তুন বেগমের আসার একটি বড়সড় কারণ রয়েছে৷ কারণটা আজ সকালে ব্রেকফাস্টের পর খোলাসা করবেন ভেবেছেন৷ ব্রেকফাস্ট করতে শাহজাহান পরিবার টেবিলে বসেছে৷ জবেদা বেগম এবং সুমিতা বেগম খাবার সার্ভ করছেন৷ মোস্তফা সাহেবের প্লেটে ব্রেড দিতে নিয়ে থেমে যান জবেদা বেগম৷ আগে সর্বদাই তিনি স্বামীকে ব্রেড দেয়ার পূর্বে জিজ্ঞেস করে নিতেন,
– ব্রেড ভেজে দিব?
জিজ্ঞেস করারও কারণ আছে বটে৷ মোস্তফা সাহেব প্রায়শই ভাজা ব্রেড খেতে পছন্দ করেন ব্রেকফাস্ট হিসেবে৷ সেই সূত্রে আজও জবেদা বেগমের অভ্যাস রয়েই গিয়েছে৷ জিজ্ঞেস না করলে যেমন তিনি শান্তি পাবেন না৷ শেষমেশ ধীরে প্রশ্ন করলেন,
– ব্রেড ভেজে আনব?
মোস্তফা সাহেব হালকা মাথা দোলালেন৷ দ্রুত ভঙ্গিতে জবেদা বেগম রান্নাঘরে ছুটলেন৷ বাকিরা নিজেদের খাবার নিজেই নিয়ে নিচ্ছে৷ যেমন অরু চারটি ব্রেড প্লেটে নিয়েছে৷ একটা ব্রেডে ভাজা ডিম রেখেছে ভালোভাবে৷ ডিমের উপর দিয়েছে সয়া সোশ তারউপর আবারো ডিম, তারপর আবারো সয়া সোষ, তারউপর পিসপিস করে কাটা তিনটি শশা৷ ব্যস, এগুলোর উপরে আরেকটা ব্রেড দিয়ে চেপে নিয়েছে৷ দু’হাতে সেটা মুখে তুলবে তখন অরুর ঘুমঘুম চোখ গেল পাশে৷ তার পাশেই তন্ময় বসে কাটা চামুচ দিয়ে ডিম, ব্রেড খাচ্ছে। এতো সুন্দর হাবভাব নিয়ে ক্লিন ভাবে খাচ্ছে যে অরুর বুকের বাম পাশে ব্যথা করছে৷ এতটা পারফেক্ট হয়ে কী হবে? এতো পারফেক্ট লোকটাকে কি অরুর সাথে মানাবে? মানাবে না! অরুর আজকাল মনে হয় তন্ময়ের পেছনে তার সরল অনুভূতি গুলো বিসর্জন করা, নেহাতি পাগলামি ৷ কোথায় তন্ময় আর কোথায় সে৷ তন্ময় তো তাকে এই জীবনে পছন্দই করবেনা৷ ভাবতে ভাবতে অরু তার বানানো বার্গারে বড়ো একটা কামড় বসালো৷ পরপর আরেকটা৷ মোট চার কামড়ে পুরোটা শেষ করে ফেললো৷ তারপর আরেকটা বার্গার বানানোর জন্য তৈরি হচ্ছে৷ একই ভাবে বার্গার বানিয়ে এটাও চার কামড়ে শেষ করে ফেলেছে৷ ডাইনিং টেবিল হতে সকলের শেষে অরু উঠলো৷ তখন বাড়ির সদস্যরা ড্রয়িংরুমে বসে৷ কারণ জয়তুন বেগম কিছু কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন৷ তন্ময়ের হাতে পানির গ্লাস! সে এটা এক্সাক্টলি কেন নিজের হাতে রেখেছে অজানা৷ তবে হুট করে গ্লাস অরুর হাতে ধরিয়ে দিলো৷ অরু বোকার মতো কিছুক্ষণ গ্লাসের দিক তাকিয়ে থেকে, এক টানে পানিটুকু খেয়ে বসলো৷ মনেই ছিলো না যে সে পানি খায়নি৷ এখন কী সে তন্ময়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বকা খাবে নাকি এক গ্লাস পানি দিয়ে বকা খাবে? অবশেষে অরু ডিসিশন নিয়েছে সে কোনো বকাই খাবে না৷ তন্ময়কে সোফায় বসতে দেখে খালি গ্লাস আলগোছে দীপ্তর পেছনে রাখল৷ যদি পানির কথা জিগ্যেস করে, অরু বলবে দীপ্ত খেয়ে নিয়েছে৷
মোস্তফা সাহেব ঘড়ির কাঁটায় চোখজোড়া ঘুরিয়ে বললেন,
– মা আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে৷ যদি তাড়াতাড়ি….
মোস্তফা সাহেবকে কথা শেষ করতে দিলেন না জয়তুন বেগম৷ নিজের ঝুলি হাতাতে হাতাতে বললেন,
– তাড়াতাড়ি? কীসের তাড়াতাড়ি! তাড়াতাড়ি নাই কোনো৷ কাজকর্ম ফেইলা দিয়া এইহান আইসা বসো৷ এইযে আমার পাশে বসো!
মোস্তফা সাহেব এগিয়ে এসে বসলেন৷ তিনি বসতেই জয়তুন বেগম বলতে শুরু করলেন,
– বয়স তো আমার কম হয় নাই৷ আইজ আছি কাল নাও থাকতে পারি৷ শরীরও এই ভালো এই খারাপ৷ তাই আমি চাই, মরার আগে তোমাদের হক্কলের সাথে বাড়িত সময় কাটাইতে৷ সামনেই রোজার ঈদ৷ মাত্র একটা মাস বাকি৷ আমি খুব করে চাই এইবারের রোজা সহ ঈদ, সিলেট করবা৷ আমার সাথে৷
ড্রয়িংরুম নিঃশব্দ বিরাজমান৷ মোস্তফা সাহেবও চুপ হয়ে আছেন৷ জবেদা বেগম মায়ের হাত চেপে ধরেছেন৷ কিছু বলবেন, কিন্তু কী বলবেন? তন্ময় বললো,
– পরিবারের মাথা বাবা৷ বাবা যা বলবেন তাই হবে৷ আমার ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে৷
বলেই সে বেরিয়ে পড়লো। তন্ময়ের দেখাদেখি ওহী সাহেবও একই কথা বলে কেটে পড়লেন৷ পরপর আনোয়ার সাহেবও৷ শাবিহাও ভাইয়ের মতো, বাবাকে ফাঁসিয়ে কেটে পড়েছে৷ পেছন পেছন অরু এবং দীপ্তও বেরিয়ে এসেছে নিজেদের স্কুল, কলেজের উদ্দেশ্যে। তন্ময় তখন গাড়ি স্টার্ট দিবে৷ অরু দৌড়ে তন্ময়ের পাশে উঠে বসলো বিনাআমন্ত্রণে৷ দীপ্ত পেছনের দিকে উঠে বসেছে৷ এখন তারা কেন উঠে বসেছে তা আর তন্ময়কে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতে হবেনা৷ গাড়ি স্টার্ট করেছে৷ অরু, দীপ্তকে কলেজ দিয়ে তারপর অফিস যাবে৷ অরু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তন্ময়কে দেখছে৷ হাত ঘড়িটা কী সুন্দর তন্ময়ের হাতে ফিট হয়ে আছে৷ দেখতেও আকর্ষণীয় লাগছে৷ অরু বললো,
– সিলেট যেতে কী রাজি হবে চাচ্চু?
দীপ্ত বললো,
– রাজি না হয়ে উপায় আছে? যেতে তো হবেই৷
– খুব ভালো হবে দীপ্ত৷ সেই উপলক্ষে ঘুরেফিরে আসা যাবে৷ আমি এবার জাফলং, মাদবকুন্ড জলপ্রপাত ঘুরবোই ঘুরবো৷ আমাকে না নিয়ে গেলে ওখান থেকে ফিরবো না। আর নাহলে আমি একাই যাবো৷ ‘
বলে অরু আঁড়চোখে তন্ময়ের দিক তাকাল৷ সিলেট দু’একবার গিয়েছে৷ কিন্তু কখনো এই সুন্দর জায়গা গুলোতে ঘুরতে যাবার সুযোগ পায়নি৷ এবার সে যাবেই যাবে। লাগলে একাই যাবে! দীপ্ত দুষ্টু সুরে বললো,
– তুমি পারবে কী? তোমার তো নভেম্বরের দিক ইন্টারের ফাইনাল এক্সাম৷ ঈদের দুমাস পরই পরিক্ষা৷ তোমাকে কি নিবে ঘুরতে, পড়াশোনা নদীতে ভাসিয়ে?
অরু ভয় পেয়ে গেল৷ চোখজোড়া বড়সড় করে ফেললো মুহুর্তেই৷ পরিক্ষার কথা ভুলেই বসেছিলো একপ্রকার৷ তারমানে তাকে নেওয়া হবেনা? কাঁদোকাঁদো নয়নে তাকাল তন্ময়ের দিক৷ তন্ময় তখন গাড়ি চালাতে ব্যস্ত৷ তার দৃষ্টি অবস্থান করছে সামনে৷ অরু বলল,
– আমি বইপত্র নিয়ে গেলে হবেনা? মাত্র কিছুদিনের ব্যাপার! আমাকে নিবেন সঙ্গে তন্ময় ভাই?
– নিব না৷
তন্ময়ের সোজাসাপটা প্রত্যাখ্যান শুনে অরু কষ্ট পেল৷ বুকে হাত চেপে বলল,
– আপনি কে? আমাকে নিবে চাচ্চু! আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে…
তন্ময় ঘুরে চোখ রাঙাতেই অরু চুপ মেরে গেল৷ মুখের উপর আঙুল ঠেকিয়ে সে নিজেকেই নিজে, নিশ্চুপ রেখেছে৷ গাড়ি এসে থেমেছে কলেজের সামনে৷ অরু এবং দীপ্ত নেমে আসলো৷ অরু যেতে নিয়ে আবারো ফিরে আসলো৷ দ্রুত কন্ঠে বলে
গেল,
– আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে নিব না বলার৷ আমি যাবোই যাবো!
এক দৌড়ে অরু কলেজের ভেতর চলে এসেছে৷ উঁকি দিয়ে দেখল গাড়িটা এখনো দাঁড়িয়ে৷ অরুও দাঁড়িয়ে রইলো৷ যখন তন্ময়ের গাড়িটা গিয়েছে সেও সেখানে থেকে চলে এসেছে৷ সামনে নজর পড়তেই দেখল, আজ মারজির সাথে সুমনা দাঁড়িয়ে৷ দাঁড়িয়ে বললে ভুল হবে৷ মারজিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে সুমনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা। কেন?
অরু দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল৷ মারজি তাকে দেখেই চোখমুখ অন্ধকার করে ফেলেছে৷ যেমন অভিযোগ করছে৷ ওদের সামনে গিয়ে প্রশ্ন করলো,
– কী হয়েছে?
মারজি রেগে বললো,
– দেখ এই মেয়ে গুলো কীসব বকছে! একেকটির মাথায় সমস্যা৷
– আজেবাজে বকছে ত? মাথায় সমস্যা নাহলে দাঁতে৷ দাঁতে সমস্যা হলে আকাশ ভাইয়ের ক্লিনিকে ভর্তি করে দিব!
বলেই অরু হাসলো৷ পরপর শব্দ করে হাসতে হাসতে মারজির হাত ধরে চলে যাচ্ছে৷ পেছনে সুমনার চেঁচামেচি সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করলো৷ শুনতেই পায়নি এমন হাবভাব নিয়ে রেখেছে৷ মারজি বিরক্ত স্বরে বললো,
– মেয়েটা প্রচন্ড নষ্ট!
——
বিকেলে অফিস থেকে ওয়ান আওর ছুটি নিয়ে বেরিয়েছে শাবিহা৷ ক্লোজ ফ্রেন্ড তামান্না এসেছে দেখা করতে৷ আর্জেন্ট কথা আছে নাকি৷ শাবিহা রেস্টুরেন্ট ঢুকে দেখল তামান্না বসে কফি খাচ্ছে৷ সে ওপর পাশে গিয়ে বসলো৷ তামান্না হেসে শুধালো,
– সমস্যা হয়নি তো কোনো?
– না না৷ তুই বল, কী অবস্থা?
– এইতো আলহামদুলিল্লাহ৷ তোকে সুসংবাদ দেওয়ার আছে৷
– কীসের?
তামান্না ব্যাগ থেকে লাল রঙের একটা কার্ড বের করে এগিয়ে দিলো৷ বিয়ের কার্ড৷ শাবিহার চোখজোড়া বড়বড় হয়ে গিয়েছে৷ চমকে তাকাল তামান্নার দিক৷ তামান্না লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
– দোস্ত, বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে৷
– কংগ্রাচুলেশনস!
– থ্যাংকস৷ তোর কিন্তু আসতেই হবে হলুদে৷ এবং নাচতেও হবে৷
– না না প্লিজ! আমি খুব ব্যস্ত৷ এগু…
– এসব শুনবো না৷ ব্যস্ত ট্যস্ত সাইডে রাখ৷ আর তন্ময় ভাই, অরু, দীপ্ত ওদের সঙ্গে আনতে একদম ভুলবি না৷
শাবিহা চিন্তায় পড়ে গেল৷ এভাবেই কিছুদিন আগে ছুটি নিয়েছিল পরিক্ষার জন্য৷ এখন আবার?
হুট করে তার নজর গেল সামনে৷ দেখল অয়ন আসছে এদিকেই৷ শাবিহা নড়েচড়ে বসলো৷ এই ছেলে এখানে কী করছে? তামান্না অয়নকে দেখে হেসে বললো,
– আরে তুই এখানে?
– এইতো এককাপ কফি খেতে এলাম৷
– আয় আমাদের সাথে বোস৷ দিনদিন বড় হয়ে যাচ্ছিস! লম্বাচওড়া আর কতো হবি? কেউ বলবে তুই আমাদের ছোট্ট ভাই?
অয়ন স্বাভাবিক ভাবে ঠিক শাবিহার সাথে বসেছে ছুঁয়ে ছুঁয়ে৷ শাবিহা কিছুটা চেপে গেল৷ অয়ন ফাজলামো সুরে বলল,
– তাহলে ভেবে নেক তোমাদের প্রেমিক আমি৷ আপত্তি আছে কী শাবিহা আপু?
শাবিহার চোখমুখ অন্ধকার হয়ে থাকলেও তামান্না ভীষণ খুশি৷ সে হাসতে হাসতে বলল,
– প্রেমিক বললে বিশ্বাস করতেই পারে৷ তোকে দেখে তো ছোট ভাই লাগেনা, তাই না শাবিহা? অয়ন চোখের পলকে কেমন বড় হয়ে গেল। এইতো কিছুদিন আগে খেলতে দেখেছি৷ আর এখন ছেলে বিজনেস করে৷ তা প্রেম-ট্রেম করিস নাকি?
– না। মেয়ে পাই না তো! তোমার চোখে ভালো মেয়ে থাকলে বলতে পারো৷ একটা প্রেম করা দরকার৷ তোমার চোখে না থাকলে শাবিহা আপুর চেনাজানা নিশ্চয়ই ভালো মেয়ে আছে৷ আছে না শাবিহা আপু?
তামান্না বলল,
– মজা করছিস? তোকে মেয়ে খুঁজে দিতে হবে আমাদের? সুন্দরী মেয়েরা তোর জন্য লাইন পেতে বসে৷
অয়ন হেসে বলল,
– অর্ডার দাও কী খাবে৷
– তুই খাওয়াবি?
– হু৷
– আচ্ছা তাহলে অর্ডার দিলাম কিন্তু৷
– হু৷
অয়ন শাবিহার দিক তাকাল৷ যে আপাতত চোখমুখ অন্ধকার করে বসে৷ অয়ন কন্ঠ নরম করে ধীর গলায় বলল,
– আপনার জন্য কী অর্ডার দিব? মিল্কসেক?
শাবিহা অভিমানী চোখে তাকাল৷ এতক্ষণের অভিমান মুহুর্তেই ধুয়েমুছে গেল তার৷ বুকের উপর ধামাচাপা দেওয়া পাথরটাও উঠে গেল৷
– খাব না৷
– মাইর খাবেন?
শাবিহা বড়বড় চোখ করে তাকাল। যেমন সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা৷ অয়ন আবেদনময়ী কন্ঠে বলল,
– কথা না শুনলে মাইর দিব আপনাকে৷ আদুরে মাইর৷
লজ্জায় শাবিহার কান গরম হয়ে গিয়েছে৷ কোনোমতে নিজেকে সামলে তামান্নার দিক তাকিয়ে রইলো৷ অয়নের দিক আর তাকানোর সাহস পেলো না৷ বুকের ভেতর সবকিছু উলটপালট হয়ে আছে৷ অয়ন নিজে থেকে শাবিহার জন্য অর্ডার করেছে৷ অর্ডার আসতে দশ মিনিট সময় নিয়েছে৷ খেতে খেতে তামান্না বলল,
– তোদের বাড়িতে কার্ড চলে গিয়েছে৷ হলুদে সুন্দর মতো চলে আসবি৷
– আসলে কী দিবে?
– কি চাই?
– একটা গার্লফ্রেন্ড!
বলেই উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো৷ তামান্নাও হাসছে৷ দুজনের কথোপকথনের মধ্যে শাবিহা চুপচাপ খাচ্ছে৷ একপর্যায়ে তামান্নাকে যেতে হবে৷ সে বেশিক্ষণ থাকতে পারবেনা বিদায় এখনই চলে যেতে হবে৷ অয়ন বললো,
– আমি দিয়ে আসবো?
– না না, গাড়ি আছে সাথে৷ তুই বরং শাবিহাকে দিয়ে আয়৷
তামান্না চলে যেতেই অয়ন এবার পুরোপুরি শাবিহার দিক ঘুরে বসলো৷ শাবিহা উঠতে উঠতে বলল,
– আমি একাই যেতে পারব৷
অয়ন শাবিহার হাত টেনে পুনরায় বসিয়ে দিলো৷ শাবিহার চোখমুখ ভালোভাবে দেখে খাবারের প্লেট সামনে দিয়ে বলল,
– খেয়ে শেষ করুন তারপর৷
– তুমি এভাবে তাকিয়ে থাকলে খাবো কীভাবে?
– অভ্যাস করে নিন৷
শাবিহা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে খেতে লাগলো৷ খাওয়া শেষ করে বসে রইলো৷ অয়ন উঠে গিয়েছে৷ টাকা পরিশোধ করে এসে দেখে শাবিহা নেই৷ একাই বেরিয়ে৷ এখনো রেগে নিশ্চয়ই৷ অয়ন দৌড়ে বেরোলো৷ শাবিহা রিকশা ডাকছে৷ অয়ন তার হাত চেপে ধরলো৷ টেনে বাইকের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলল,
– এখনো রেগে আছেন? আমি মজা করেছি তখন৷ আমার গার্লফ্রেন্ড কেন লাগবে! আপনি আছেন তো?
শাবিহার খুব রাগ হলো অয়নের প্রতি৷ একটু আগে স্বেচ্ছায় কতগুলো কথা বলে তাকে কষ্ট দিলো৷ এখন আবার কী সুন্দর করে কষ্ট গুলো ধুয়েমুছে সরিয়ে দিলো৷ কেন এমনটা করবে! শাবিহা কী তার হাতের পুতুল নাকি।
—-
অরু জয়তুন বেগমের রুমে৷ ঘুরঘুর করছে৷ একসময় সেখান থেকে সুমিতা বেগমের পিছু গেল, সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করে ড্রয়িংরুমে বসলো৷ কিছুক্ষণ টিভি দেখে উঠে দাঁড়ালো৷ কোনো কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছেনা৷ চলে এলো বারান্দায়৷ গালে হাত চেপে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলো৷ নয়টা বেজে গিয়েছে৷ এখনো তন্ময় ফেরেনি৷ ফিরতে ফিরতে সাড়ে নয়টা বাজবে হয়তো৷ অরুর এখনই ঘুম ধরেছে৷ ঘুমালে আজ আর উঠতে পারবেনা৷ তন্ময়কে কীভাবে দেখবে? অরু বইপত্র বুকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করছে তো খুলছে৷ একসময় দুলে পড়ে যেতে নিচ্ছিলো৷ নিজেকে কোনোরকমে সামলে তন্ময়ের রুমের দরজা খুলল৷ টেবিলে নিজের বইপত্র রেখে চেয়ারে বসলো৷ দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে পড়েছে৷ তন্ময় যখন রুমে ঢুকেছে ঘুড়ির কাটা তখন দশটা পনেরোতে৷ অরুকে দেখে কিছুক্ষণ ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো৷ যেমন ঘুমন্ত অরুকে দেখছে৷ তারপর শব্দহীন ভাবে ওয়াশরুম ফ্রেশ হতে চলে গিয়েছে৷ বেরিয়ে তাওয়াল বিছানায় ফেলে টেবিলের কাছে গেল৷ আলগোছে অরুকে পাজাকোলে তুলে নিলো৷ অরু কিছুটা নড়েচড়ে উঠেছে৷ তন্ময়ের বুকে কিছু একটা খোঁজাখুঁজি করে, মাথাটা আরামসে হেলিয়ে রাখল৷ সেভাবেই তাকে নিয়ে তন্ময় অরুর রুমে গিয়েছে৷ বিছানায় শুইয়ে উঠতে নিয়ে খেয়াল করলো অরু তার টি-শার্ট খামচে ধরে আছে৷ ছাড়াতে চাইলেই ছাড়ছে না৷ একপর্যায়ে ঘুমের মধ্যে অরু বিরক্ত হয়ে চোখজোড়া আধোআধো খুলেছে৷ তন্ময়ের দিক তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললো,
– এমন কেন করেন! আমার থেকে শুধু পালিয়ে যান কেন! আমাকে কেন সবসময় এড়িয়ে চলেন৷
– তাহলে কী করবো?
– আমার সাথে থাকবেন৷ সবসময়৷
– থাকব৷
অরু হাসলো৷ তন্ময়ের হাত জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো৷ অস্পষ্ট স্বরে আরো কিছু কথা বলল, তবে তা শোনা গেল না৷ তন্ময় চেয়ার টেনে পাশেই বসে রইলো৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here